কুষ্টিয়ায় বালুঘাটে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মুখোশধারীদের হামলা, গুলিবিদ্ধ ১
Published: 19th, February 2025 GMT
কুষ্টিয়ায় গড়াই নদের বালুঘাটে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালানোর ঘটনা ঘটেছে। হামলাকারীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে বালুঘাটে থাকা এক ব্যক্তি পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। রাতেই তাঁকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের কয়া বালুর ঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহত সবুজ আলী (৪২) ওই ঘাটের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক। তিনি কুষ্টিয়া পৌর এলাকার ঢাকা-মিনা এলাকার শহিদুল বিশ্বাসের ছেলে।
এদিকে বালুঘাটে হামলা ও গুলিবর্ষণের একটি ভিডিও রাতেই ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে কুমারখালী থানা-পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
বালুঘাটের ইজারা নেওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক জাহিদুল ইসলাম জানান, কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকায় কয়া-রায়ডাঙ্গা এলাকায় গড়াই নদে খনন করা বালুর স্তূপ অপসারণের জন্য ইজারা নেয় তাঁর প্রতিষ্ঠান। গত বছরের ৩০ জুন অনুমোদন পেলেও চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে কাজ শুরু করেন। যত দিন অপসারণ না হবে, তত দিন বালু তোলার কাজ চলবে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত সবুজ আলীর ভাষ্য, গতকাল রাত ১১টার দিকে ১০ থেকে ১২ জন ব্যক্তি অস্ত্র নিয়ে বালুর ঘাটে আসেন। তাঁদের সবার মুখে মুখোশ ছিল। ঘাটে এসেই তাঁরা তাঁর পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করেন। তিন থেকে চারজনের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। তাঁরা এলোপাতাড়ি গুলিও ছোড়েন। ঘরে থাকা প্রায় দুই লাখ টাকা নিয়ে নেন তাঁরা।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, বালুঘাটে দুটি ট্রাক বালু তোলার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। দুজন মুখোশধারী ব্যক্তি অস্ত্র নিয়ে সেখানে আসেন। কয়েক সেকেন্ড পর আরও কয়েকজন আসেন। একজনকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। দুজন বালুঘাটের অস্থায়ী একটি ছোট ঘরের ভেতর প্রবেশ করেন। এ সময় বালুঘাটে থাকা দুজন শ্রমিক দ্রুত হেঁটে চলে যান। কয়েক মিনিট পর অস্ত্রধারীরা গুলি করতে করতে সেখান থেকে চলে যান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রত্যক্ষদর্শী এক শ্রমিক বলেন, ‘মুখোশধারী তিনজনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখেছি। তাঁদের চেনা যাচ্ছে না, তবে তাঁরা কাদের লোক হতে পারে, তা ধারণা করতে পারছি।’
কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কামুক্ত।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সোলায়মান শেখ বলেন, বালুর ঘাটে মুখোশধারীদের গুলিতে একজন আহত হয়েছেন। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে পুলিশ মাঠে কাজ করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বালুঘাটের এক ঠিকাদার বলেন, গত কয়েক মাস বালুঘাটে আতঙ্ক ছড়াতে ও নিয়ন্ত্রণ নিতে চরমপন্থী সংগঠনের লোকজন অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছেন। কয়েক দিন আগে পাউবো কার্যালয় এলাকায় গুলিবর্ষণ করা হয়। এ ছাড়া খোকসা জিলাপিতলা বালুঘাটে গুলিবর্ষণ করা হয়েছিল। পুরো গড়াই নদে কুষ্টিয়া অংশে চরমপন্থীদের তৎপরতা বেড়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভোলায় সংঘর্ষ ঠেকাতে যাওয়া বিএনপি নেতাকে পিটিয়ে হত্যা
ভোলায় জমির বিরোধ নিয়ে সংঘর্ষে এক বিএনপি নেতাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে সদর উপজেলার ভেলুমিয়া ইউনিয়নের কুঞ্জপট্টি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ওই বিএনপি নেতা সংঘর্ষ ঠেকাতে গিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
এদিকে এ হত্যাকাণ্ডের পর নিহত ব্যক্তির স্বজন, এলাকাবাসী, বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা ভোলা-ভেলুমিয়া সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন।
নিহত ব্যক্তির নাম জামাল উদ্দিন হাওলাদার (৬০)। তিনি ভেলুমিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি।
এলাকাবাসী, নিহতের স্বজন, গ্রাম পুলিশ ও ভোলা সদর থানা-পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কুঞ্জপট্টি মৌজায় মো. ইব্রাহীম রাঢ়ি নামের এক ব্যক্তি ৫ শতক জমি কেনেন। তবে পাশের জমির মালিক মো. আলম ব্যাপারী ওই জমি তাঁর বলে দাবি করেন। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে কয়েক বছর ধরে বিরোধ চলছে। এ নিয়ে অনেকবার সংঘর্ষ-সংঘাত হয়েছে। গতকাল সোমবার ঈদের দিনেও এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এর জের ধরে আজ বেলা ১১টার দিকে দুই পক্ষ লাঠিয়াল ভাড়া করে জমি দখল করতে যায়। এ সময় দুই পক্ষের সংঘর্ষ ঠেকাতে গিয়ে গুরুতর আহত হন স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. জামাল উদ্দিন হাওলাদার। বিকেলে বরিশালে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, বিএনপি নেতা জামাল উদ্দিন বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘তোমরা মারামারি বন্ধ করো, আমি তোমাদের সমস্যা সমাধান করে দেব।’ এ সময় জামাল উদ্দিনের মাথায় ও শরীরে এলোপাতাড়ি পেটানো শুরু করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাঁকে প্রথমে ভোলা সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। কিন্তু বাড়ি আনার সময় পথে নড়ে উঠলে তাঁকে আবার বরিশালের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নেওয়া হয়। সেখানের চিকিৎসক বিকেল ৫টার দিকে পরীক্ষা করে তাঁকে আবার মৃত ঘোষণা করেন।
ভেলুমিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, জামাল উদ্দিন দুই পক্ষের সংঘর্ষ ঠেকাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ইব্রাহীম রাঢ়ির ছেলে তাঁর মাথায় প্রথম আঘাত করেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে স্থানীয় লোকজন ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন।
ভোলা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু সাহাদাৎ মো. হাচনাইন পারভেজ বলেন, এ ঘটনায় কোনো পক্ষের অভিযোগ পাননি। পেলে ব্যবস্থা নেবেন। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হবে।