‘মার্কিন সহাযতা বন্ধ হলে ৬ মাস টিকে থাকতে পারবে ইউক্রেন’
Published: 19th, February 2025 GMT
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে সৌদি আরবের রিয়াদে অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার প্রতিনিধিদের মধ্যকার আলোচনায় ডাকা হয়নি খোদ ইউক্রেনকে। এ পরিস্থিতিতে ইউরোপের প্রতিক্রিয়া নিয়ে ফ্রান্সের প্যারিসে জরুরি বৈঠকে বসতে যাচ্ছে ইউরোপীয় পক্ষগুলো। এর আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, মার্কিন সামরিক সহায়তা বন্ধ হয়ে গেলে তাঁর দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে পড়তে পারে।
এনবিসি নিউজের ‘মিট দ্য প্রেস’ আয়োজনে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে জেলেনস্কি বলেন, ‘সম্ভাবনা বেশ কম। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া টিকে থাকার সম্ভাবনা বেশ কম।’
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্র–রাশিয়া যখন আলোচনার টেবিলে, জেলেনস্কি তখন এরদোয়ানের কাছে১৫ ঘণ্টা আগেওয়াশিংটনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক তিক্ত করার মতো উদ্যোগ এরই মধ্যে নিয়ে ফেলেছে জেলেনস্কি প্রশাসন। সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখার বিনিময়ে ইউক্রেনের বিরল মাটির খনিজ সম্পদে অধিকার পাওয়ার প্রস্তাবিত মার্কিন চুক্তি নাকচ করে দিয়েছেন জেলেনস্কি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বিবৃতি, রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টদের সঙ্গে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত ফোনালাপের পরিপ্রেক্ষিতে জেলেনস্কির এই নাকচ করার ঘটনা কিয়েভের প্রতি ওয়াশিংটনের দীর্ঘমেয়াদি সমর্থনের বিষয়ে নতুন করে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
কিয়েভ যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নিরবচ্ছিন্ন সহায়তা পাবে কি না, সেটা এখনো অনিশ্চিত। না পেলে, সেই শূন্যস্থান পূরণ নিয়ে ইউরোপের দেশগুলোও বেশ চাপে পড়েছে।
১৪ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি জার্মানির মিউনিখে অনুষ্ঠিত নিরাপত্তা সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে ট্রাম্পের পদক্ষেপ ও মন্তব্যের জবাবে ইউরোপের ‘নিজস্ব সামরিক বাহিনী’ গড়ার বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন জেলেনস্কি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, ‘আমরা এই সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিতে পারি না, যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি বিষয়ে ইউরোপকে “না” বলতে পারে, যা তাদের জন্য হুমকির।’
আরও পড়ুনযত দ্রুত সম্ভব মস্কো ও ওয়াশিংটনে দূতাবাস সচল করবে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া১৪ ঘণ্টা আগেইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক ডেপুটি হেড অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইহর রোমানেনঙ্কো আল–জাজিরাকে বলেন, ইউরোপের দেশগুলো যে পরিমাণ সহায়তা দিতে চাইছে, ইউক্রেনের প্রয়োজন তার চেয়ে বেশি।
সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার বিকল্প হতে পারবে না ইউরোপ। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা ছাড়া ইউক্রেন বেশি দিন টিকে থাকতে পারবে না। আমরা সম্ভবত ছয় মাস টিকতে পারব।’
এমন কিছু রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা আছে, যা ইউক্রেনের প্রতি ইউরোপের দেশগুলোর সহায়তায় সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারে।
আরও পড়ুনসৌদি সফর স্থগিত করলেন জেলেনস্কি, কিন্তু কেন১ ঘণ্টা আগেহাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান আর স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো—উভয়ই কিয়েভকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এ পরিস্থিতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সর্বাত্মক সিদ্ধান্তকে আটকে দিতে পারে। এরই মধ্যে জার্মানির অতি-ডানপন্থী দল এএফডি পার্টি জনমত জরিপগুলোয় এগিয়ে আছে। এটা ইউরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলেছে।
আরও পড়ুনপ্রয়োজন হলে জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলবেন পুতিন: ক্রেমলিন১৬ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন র প র ইউর প র
এছাড়াও পড়ুন:
উন্নয়ন ও বিশ্বায়নকে নতুনভাবে দেখা
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের পথ মসৃণ নয়। তাতে আসে বিভিন্ন ধরনের সংকট ও ধাক্কা। উচ্চ মূল্যস্ফীতি পথের কাঁটা হয়ে উঠেছে আবার। অনেক দেশ মধ্যম আয়ের স্তরে আটকে থাকছে দীর্ঘদিন। বিশ্বায়ন নিয়ে অসন্তোষ দীর্ঘকালের। এখন উন্নত দেশের দক্ষিণপন্থিরাও অসন্তুষ্ট– যদিও ভিন্ন কারণে। এই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে উন্নয়নের চ্যালেঞ্জগুলোকে নতুনভাবে দেখা এবং পুনর্বিবেচনা করা দরকার। এ কাজ করা হয়েছে ড. রিজওয়ানুল ইসলামের সদ্য প্রকাশিত বই উন্নয়ন ও বিশ্বায়ন-এ (প্রকাশক: বাতিঘর)।
আলোচ্য বইটির শুরুতেই বলা হয়েছে, উন্নয়নের নির্দেশক হিসেবে শুধু জিডিপির প্রবৃদ্ধি অথবা মাথাপিছু আয়ের দিকে তাকালে চলবে না। কারণ অনেক দেশেই প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রায় থেকে যাচ্ছে অনিশ্চয়তা। বাংলাদেশে আয়ের দিকে থেকে নিচের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষের জীবনমান নড়বড়ে; তারা খাদের তলায় পড়ে যায় সামান্য ধাক্কায়। যেমনটি হয়েছিল কভিড মহামারির সময়। এখন আবার হচ্ছে মূল্যস্ফীতির ধাক্কায়।
ড. ইসলাম মনে করিয়ে দিচ্ছেন, মূল্যস্ফীতি বিভিন্ন কারণে হতে পারে। সুতরাং তার বিরুদ্ধে যুদ্ধেও বিভিন্ন ধরনের হাতিয়ার ব্যবহার করতে হয়। বিশ্বব্যাপী সুদহার বাড়ানো হয়েছে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই যে, শুধু এর মাধ্যমেই যুদ্ধে জয়ী হওয়া যায়। তিনি মনে করেন, বাস্তব অবস্থা আমলে নিয়ে কর্মকৌশল নির্ধারণ করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। সেখানে চাহিদা কমানোর পাশাপাশি সরবরাহ বাড়ানোর এবং ভোক্তার কাছে পণ্য পৌঁছানোর ব্যবস্থার দিকে নজর দিতে হবে। তা ছাড়া সুদের হার বাড়ানোর ফলে বিনিয়োগ, উৎপাদন ও কর্মসংস্থানের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়ছে এবং অর্থনীতি ক্র্যাশ ল্যান্ডিংয়ের দিকে যাচ্ছে কিনা, তা-ও দেখতে হবে।
বইটিতে মধ্যম আয়ের স্তর থেকে উত্তরণ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, এ চ্যালেঞ্জ দুই ধাপের– নিম্নমধ্যম থেকে উচ্চমধ্যমে এবং সেখান থেকে উচ্চ আয়ের পর্যায়ে ওঠা। লাগাতারভাবে প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য প্রয়োজন শুধু বিনিয়োগের পরিমাণ নয়; প্রযুক্তিগত দক্ষতা, শ্রমের দক্ষতা এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর নৈপুণ্য। সব শর্ত পূরণ করে বার্ষিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারলে বাংলাদেশ আগামী দশ বছরে উচ্চমধ্যম আয়ের পর্যায়ে উঠতে পারবে। এবং উচ্চ আয়ের স্তরে পৌঁছাতে লাগবে আরও প্রায় ২২ বছর– অর্থাৎ এখন থেকে প্রায় ৩২ বছর!
বইটিতে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব নিয়ে একটি অধ্যায় রয়েছে, যেখানে কর্মসংস্থানের ওপর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক প্রযুক্তির প্রভাব আলোচনা করা হয়েছে। তার মূল উপসংহার এই যে সার্বিকভাবে কর্মসংস্থান না কমলেও কাজের ধরন বদলাবে। সে অনুযায়ী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ না দেওয়া হলে অনেকেই পিছিয়ে পড়বেন।
বিশ্বায়ন সম্পর্কে বইটিতে দুটি অধ্যায় রয়েছে। একটিতে আলোচনা করা হয়েছে শ্রম ও শ্রমিকের ওপর বিশ্বায়নের প্রভাব, আর অন্যটি বিশ্বায়নকে নতুনভাবে সাজানোর বিষয়। বিশ্বায়ন নিয়ে অসন্তোষের মূল কারণ সুফলের বণ্টনে অসাম্য। তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে দেখানো হয়েছে, অনেক দেশেই মোট উৎপাদনে শ্রমের ভাগ কমেছে এবং শ্রমিককে মোকাবিলা করতে হচ্ছে কষ্টের জীবন। কর্মপরিবেশ অনেক ক্ষেত্রেই নিম্নমানের। মৌলিক অধিকার থেকে তারা থাকে বঞ্চিত। অভিবাসী শ্রমিককে বিভিন্ন ধরনের অন্যায় আচরণ এমনকি প্রতারণার শিকার হতে হয়।
রক্ষণশীলরা মনে করছেন, বিশ্বায়নের মাত্রা বেড়ে যাওয়াতে চীনের ওপর নির্ভরতা বেড়েছে। চীনকে ঠেকানোর জন্য শুরু হয়েছে বাণিজ্যযুদ্ধ। ড. ইসলাম মনে করেন, এটি চলতে থাকলে বিশ্বায়নের মৃত্যুঘণ্টা বাজবে। তিনি বিশ্বায়নকে নতুনভাবে দেখার এবং রিগ্লোবালাইজেশনের পক্ষে। তবে তাঁর মতে, ডব্লিউটিও যেসব সংস্কারের কথা বলছে সেগুলো অপর্যাপ্ত। কর্মসংস্থান এবং শ্রমের বিশ্বায়নের কথা কেউ বলছে না। বিশ্ব বাণিজ্য ও পুঁজির প্রবাহ যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি দৃষ্টি দিতে হবে শ্রমিকের জীবনমান, কর্মপরিবেশ ও অধিকারের দিকে।
উপসংহারে বইটিতে বলা হয়েছে, উন্নয়ন কৌশলকে দেখতে হবে নতুনভাবে, যেখানে প্রবৃদ্ধি হবে মাধ্যম, মূল লক্ষ্য হবে মানুষের জীবনমান। ড. রিজওয়ানুল ইসলামের বইটিতে রয়েছে উন্নয়নের সমসাময়িক চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ। তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে করা এই বিশ্লেষণ থেকে ছাত্র-শিক্ষক-গবেষক ছাড়াও একটি বড় পাঠকগোষ্ঠী উপকৃত হবে।