ভারতের জন্য ২১ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা বাতিলে সমর্থন দিলেন ট্রাম্প
Published: 19th, February 2025 GMT
ভারতের জন্য বরাদ্দ ২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের আর্থিক সহায়তা বন্ধের পক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি জানিয়েছেন, ভারত ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি তার শ্রদ্ধা রয়েছে, তবে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য ভারতকে অর্থ অনুদান দেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের জন্য নির্ধারিত বড় অঙ্কের সহায়তা বাতিল করেছে, যার মধ্যে ভারতের জন্য বরাদ্দ ২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অনুদানও অন্তর্ভুক্ত। ইলন মাস্কের নেতৃত্বাধীন নতুন দপ্তর ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিসিয়েন্সি (ডিওজিই) এই ঘোষণা দেয়।
ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো বাসভবনে এক বক্তব্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “কেন আমরা ভারতকে ২১ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছি? তারা ইতোমধ্যেই অনেক বেশি অর্থ পেয়েছে। তারা আমাদের দৃষ্টিতে বিশ্বের সর্বোচ্চ কর প্রদানকারী দেশগুলোর মধ্যে একটি, অথচ আমাদের পক্ষে ভারতের বাজারে প্রবেশ করা বেশ কঠিন, কারণ তাদের শুল্ক হার অত্যন্ত বেশি। আমি ভারত এবং প্রধানমন্ত্রী মোদির প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তবে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য ২১ মিলিয়ন ডলার? ভারতে? এর প্রয়োজনীয়তা কী?”
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন বাজেট কমানোর লক্ষ্যে ভারত, বাংলাদেশসহ একাধিক দেশের জন্য নির্ধারিত মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের তহবিল বাতিল করছে। এরই অংশ হিসেবে ইলন মাস্কের ডিওজিই গত রোববার ঘোষণা দেয় যে, ভারতের নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর লক্ষ্যে বরাদ্দকৃত ২১ মিলিয়ন ডলারের অনুদান বাতিল করা হবে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই অর্থ মূলত ভারতের নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি বৃদ্ধির জন্য নির্ধারিত ছিল। তবে সহায়তা বাতিলের ফলে এই কর্মসূচি আর বাস্তবায়িত হবে না।
প্রসঙ্গত, ট্রাম্প ও মোদির সাম্প্রতিক এক বৈঠকের কয়েকদিন পরেই এই সহায়তা বাতিলের ঘোষণা আসে। যদিও ওই বৈঠকে মার্কিন-ভারত সম্পর্ক শক্তিশালী করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল, তবে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়নি বা সংবাদ সম্মেলনেও এ বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
এদিকে, মার্কিন প্রশাসনের বাজেট কাটছাঁট নীতি অনুসারে ভবিষ্যতে আরও কয়েকটি দেশের জন্য অনুদান বাতিল হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
টেসলার পর মাস্কের স্টারলিংকের ব্যবসায়ও ধাক্কা
বিপদেই পড়ে গেছেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক। রাজনীতিতে নাম লেখানোর পর একের পর এক ঝামেলা লেগেই আছে তাঁর জীবনে। টেসলার শেয়ারের দাম কমছে, তাতে কমছে নিজের সম্পদমূল্য। আবার বিক্রয়কেন্দ্রের সামনে মানুষ বিক্ষোভও করছে। পাশাপাশি এবার মাস্কের মালিকানাধীন স্পেসএক্সের অন্তর্ভুক্ত স্যাটেলাইট ইন্টারনেট কোম্পানি স্টারলিংকের ব্যবসাও মার খেতে শুরু করেছে। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস–এর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের জমানায় মাস্ক কেন্দ্রীয় সরকারের আরও কাজ পাবেন এমন আশা রয়েছে। এতে ইলন মাস্কের ব্যবসা আরও ফুলে–ফেঁপে উঠবে—এমনটাই ধারণা ছিল সবার। পাশাপাশি বিশ্বের নতুন বাজারেও যাওয়ার কথা স্টারলিংকের। বর্তমানে তুরস্ক, মরক্কো ও বাংলাদেশের সঙ্গে স্টারলিংকের ব্যবসায়িক আলোচনা হচ্ছে। ভারতে ইতিমধ্যে দুটি কোম্পানির সঙ্গে তাদের চুক্তি হয়েছে। তাতে সব মিলিয়ে আরও প্রায় ১০০ কোটি মানুষের দ্বারপ্রান্তে চলে যাওয়ার কথা ইলন মাস্কের। ইতিমধ্যে হোয়াইট হাউসে স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের আরও কিছু প্রোগ্রামও স্টারলিংকের পাওয়ার কথা।
কিন্তু রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ায় ইলন মাস্কের কোম্পানির বৈশ্বিক সম্প্রসারণ ব্যাহত হচ্ছে। এখন যে দেশেই ইলন মাস্কের কোম্পানি চুক্তি করতে যাক না কেন, তারা এখন রাজনৈতিকভাবেও সেটি বিবেচনা করবে। ইতিমধ্যে যেসব জায়গায় স্টারলিংক ব্যবসা করছে, সেখানেও তারা প্রত্যাঘাতের সম্মুখীন হচ্ছে।
সম্প্রতি কানাডার একটি প্রদেশ কানাডীয় পণ্যের মার্কিন শুল্ক আরোপের প্রতিবাদে স্টারলিংকের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে। ইউরোপের নেতারা এত দিন ইউক্রেনে স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট ব্যবহারের ওকালতি করতেন। কিন্তু সেই ইউরোপের নেতাদের রীতিমতো তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছেন ইলন মাস্ক। ফলে তাঁরা এখন বিকল্প খুঁজছে। ডয়চে ব্যাংকের বিশ্লেষক এডিসন উ বলেছেন, ভূরাজনৈতিক কারণে স্যাটেলাইট যোগাযোগের জগতে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে গেছে। স্টারলিংক এই জগতের সেরা; কিন্তু তারাই একমাত্র সেবাদাতা নয়।
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, টেসলায় থাকা তাঁর শেয়ারের বাজারমূল্য ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারে নেমেছে। তবে চলতি বছর স্টারলিংকের রাজস্ব আয় অনেকটা বাড়বে বলে মনে করে মর্গ্যান স্ট্যানলি। চলতি বছর স্টারলিংক ১ হাজার ৬৩০ কোটি ডলার রাজস্ব আয় করবে, যা ২০২৪ সালের চেয়ে ৭৪ শতাংশ বেশি। একই সঙ্গে তাদের গ্রাহকসংখ্যাও দ্বিগুণ হবে। অন্যদিকে স্পেস এক্স রকেটের ব্যবসা থেকে চলতি বছর ৫৮০ কোটি ডলার রাজস্ব আয় করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা গত বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি। স্টারলিংক বর্তমানে বিশ্বের ১১৮টি দেশে ৭ হাজার ছোট আকৃতির স্যাটেলাইট স্থাপন করেছে।
স্টারলিংকের সুবিধা হলো, কোম্পানির রাজস্ব আয়ের বড় একটি অংশ আসে মার্কিন ফেডারেল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন চুক্তি থেকে। দেশটির ফেডারেল সরকারের সঙ্গে স্টারলিংকের বর্তমানে ৩৫০ কোটি ডলারের ৩৯টি চুক্তি রয়েছে। আবার দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তাদের বেশ কিছু চুক্তি আছে।
যেখানে যেখানে বিপদে স্টারলিংকইলন মাস্ক বিশ্বের শীর্ষ ধনী। শুধু যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে ব্যবসা করলেই তার চলবে না। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সরকার ও কোম্পানির সঙ্গেও তাঁকে ব্যবসা করতে হবে। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে তিনি ঠিক সেখানেই মার খাচ্ছেন। কানাডার অন্টারিও প্রদেশের সঙ্গে ইতিমধ্যে ১০ কোটি ডলারের একটি চুক্তি বাতিল হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন আইনের বিরোধিতার জেরে সেখানেও স্টারলিংকের অনুমোদন ঝুলে আছে।
ব্রাজিল সরকারের সঙ্গেও বিবাদে জড়িয়েছেন ইলন মাস্ক। ইতালির সঙ্গে ১৫০ কোটি ডলারের চুক্তি হওয়ার কথা স্টারলিংকের। কিন্তু ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা বন্ধ ও গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় বন্ধের জেরে সেই চুক্তি নিয়েও ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
আরেকটি ক্ষেত্র হলো ইউক্রেন। দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্য ও অর্থ আর স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা দিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। মাস্ক সম্প্রতি এক্সে বলেছেন, ইউক্রেনের টার্মিনাল বন্ধ করে দিলে ইউক্রেনের যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবে। এই ঘটনায় পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাদোস্ল সিকর্স্কি বলেছেন, যদি সে রকম হয়, তাহলে তারা অন্যের কাছ থেকে ইন্টারনেট নেবে। যাদের ওপর নির্ভর করা যায় না, তাদের কাছ থেকে ইন্টারনেট নেওয়া হবে না। যদিও মাস্ক বলেছেন, বাস্তবে সেটা হবে না—ব্যবসাকে রাজনৈতিক দর-কষাকষির হাতিয়ার হতে দেবেন না তিনি।