আমরা মাঝেমধ্যেই নখে আঘাত পাই। হাঁটতে–চলতে বা ঘরের কোনো আসবাবের সঙ্গে আঙুল লেগে নখে আঘাত লাগতে পারে। ভিড়ে কেউ পা মাড়িয়ে দিলেও নখে আঘাত লাগে। এভাবে অনেক সময় নখ উপড়েও যায়। অনেকে আবার শখ করে নখ বড় রাখেন, তখন সামান্য আঘাতেও নখ উপড়ে বা ভেঙে যেতে পারে। যাঁরা গভীর ও কোনা করে নখ কাটেন, তাঁদের নখের কোনা দেবে ভেতরে ময়লা জমে ইনফেকশন হতে পারে। এসব নখও অনেক সময় সামান্য আঘাতে উপড়ে যায়। আর খুব কম মানুষই পায়ের যত্ন নেন। ঠিকমতো নখ কাটার নিয়মও অনেকে জানেন না। ফলে অনেকের নখের গোড়া দুর্বল হয়ে পড়ে।
নখের গোড়ায় রক্ত চলাচল আর স্নায়ুর সরবরাহ দুটোই বেশি। তাই নখ উপড়ে গেলে অনেক রক্তপাত ও তীব্র ব্যথা হয়।নখ উল্টে গেলে করণীয়
নখের গোড়ায় রক্ত চলাচল আর স্নায়ুর সরবরাহ দুটোই বেশি। তাই নখ উপড়ে গেলে অনেক রক্তপাত ও তীব্র ব্যথা হয়। এতে ঘাবড়ে না গিয়ে প্রথমে শুকনো কাপড় দিয়ে ক্ষতস্থান চেপে ধরে রাখতে হবে। আইস প্যাক থাকলে সেটি দিয়ে চেপে ধরে রাখলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। ঠান্ডা জিনিসের স্পর্শে রক্তনালি সংকুচিত হয়। তাই রক্তপাত ও ব্যথা দুটিই কমে।
নখ যদি পুরোটা উঠে যায়, তবে কিছুদিন নিয়মিত ড্রেসিং করলে ক্ষতস্থান শুকিয়ে যাবে। যদি আধভাঙা নখ রয়ে যায়, চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
ক্ষতস্থানের যত্ন কীভাবে
হাতের নখ নতুন করে গজাতে সময় লাগে ৬ মাস আর পায়ের ১২ থেকে ১৮ মাস। নখের নিচের চামড়াকে বলা হয় নেইল বেড। এটি খুব সংবেদনশীল। তাই আঘাত পেলে বা অস্ত্রোপচারের পর প্রথম সপ্তাহে নেইল বেড ঢেকে রাখতে হবে।
নিয়মিত ড্রেসিং করাতে হবে। ফার্মেসিতে মেডিটুলি বা সুপ্রাটুলি নামে একধরনের ড্রেসিং কিনতে পাওয়া যায়। সেটি মাপমতো কেটে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে রাখলে ভালো ফল পাওয়া যায়। না পেলে পরিষ্কার গজ পিসে ভ্যাসলিন মেখে নখ ঢেকে রাখতে হবে।
যেকোনো ক্ষত শুকাতে জিংক বি, ভিটামিন সি ভালো কাজ করে। সঙ্গে ক্ষতস্থান শুকাতে প্রয়োজনীয় প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে দিনে দু–তিনটি ডিম খেতে পারলে ভালো।
প্রতিরোধের উপায়
নিয়মিত পায়ের যত্ন নিতে হবে। একটা গামলায় হালকা গরম পানিতে এক টেবিল চামচ লবণ, এক চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে তাতে দুই পা ১৫ থেকে ২০ মিনিট চুবিয়ে রাখুন। এরপর সাধারণ পানিতে পা ধুয়ে পুরোনো পরিষ্কার টুথব্রাশ দিয়ে নখ ও আঙুলের ফাঁকে ব্রাশ করুন। নিয়মিত করতে পারলে ভালো। তবে কমপক্ষে সপ্তাহে একবার করলে পা ভালো থাকবে।
নখ কাটার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন কোনাকুনি না কেটে নখের গোড়ার সমান্তরাল করে কাটা হয়। এতে নখের কোনা ভেতরের দিকে দেবে যায় না। খুব গভীর করে কাটবেন না।
নখ বেশি বড় রাখা ঠিক নয়। হাতের নখ সপ্তাহে একবার আর পায়ের নখ দুই সপ্তাহে একবার করে কাটতে হবে।
নখ উল্টে গিয়ে ব্যথা, পুঁজ বা চুলকানোর কারণ ঘটলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।
ডা.
জাহেদ পারভেজ: চর্ম–যৌনরোগ বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, ঢাকা
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রোহিঙ্গা শিবিরে পানির সংকট তীব্র: এমএসএফ
কক্সবাজারে টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন রোহিঙ্গারা জনপ্রতি ১০ লিটার করে পানি পাচ্ছেন। এই পরিমাণ পানি জীবনধারণের প্রয়োজনের অর্ধেক। সীমান্তবিহীন চিকিৎসক দল বলেছে, পানি সংকটের কারণে রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা হুমকির মুখে পড়েছে।
আজ সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সীমান্তবিহীন চিকিৎসক দল বা মেডিসিন্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ) টেকনাফে চলমান এই সংকটের কথা বলেছে। পাশাপাশি এমএসএফ জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এসএমএফ বলেছে, উদ্বেগজনক হারে সংরক্ষণব্যবস্থা কমে আসায় পানির সংকট আরও কঠিন হয়েছে। টেকনাফ মূলত মজুদকৃত পানির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এই বছর আশঙ্কাজনক হারে মজুদকৃত পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশে এমএসএফ-এর মিশন প্রধান আন্তোনিও কারাডোনা বলেন, ‘পরিস্থিতি সত্যিই উদ্বেগজনক। টেকনাফে প্রতিদিন জনপ্রতি ১০ লিটার পানি পাওয়া যায়, যা একজন মানুষের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়িয়ে জীবনযাপনের জন্য পর্যাপ্ত নয়। ক্যাম্পজুড়ে ছড়িয়ে পড়া নানা রোগের ক্রমবর্ধমান প্রাদুর্ভাব থেকেই এই সংকটের তীব্রতা স্পষ্ট।’
নূর আলম নামের একজন রোহিঙ্গা তাঁর কষ্টের কথা এমএসএফকে শুনিয়েছেন। নূর আলম বলেন, ‘আমরা বছরের পর বছর ধরে পানিসংকট তীব্র হতে দেখছি, এখানে সাহায্য–সহযোগিতাও অনেক সীমিত। অনেককেই বাধ্য হয়ে অনেক দূরে গিয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে পানি আনতে হয়, যা অনেক বেশি সময়সাপেক্ষও।’
এমএসএফ বলেছে, জরুরি সহায়তা প্রদান কার্যক্রম চলমান থাকা, প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহব্যবস্থা আরও উন্নত ও দ্রুত করার সুযোগ আছে। কলেরার মতো পানিবাহিত রোগসহ নানাধরনের চর্ম রোগের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি হ্রাস এবং ক্রমবর্ধমান অপুষ্টিজনিত সমস্যা সমাধানে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রতিরোধের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
এমএসএফ একটি বোরহোল, একটি পানি সংরক্ষণ ও সরবরাহ সেবা শুরু করেছে এবং ক্যাম্পে ট্রাকের মাধ্যমে পানি সরবরাহ সেবা বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। এই জরুরি পদক্ষেপগুলো যদিও এ সংকটের সাময়িক সমাধান দেয়, তবে তা দীর্ঘস্থায়ী ও পর্যাপ্ত নয়।
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ ও দাতাসংস্থাগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে টেকসই পানি সরবরাহে বিনিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে এমএসএফ। পাশাপাশি দায়িত্বশীল অংশীদারদের কাছে জবাবদিহি ও সক্রিয় অংশগ্রহণের কথা বলেছে তারা।