সংঘর্ষের পর থমথমে কুয়েট, ভিসির পদত্যাগসহ ৫ দফা দাবি শিক্ষার্থীদের
Published: 19th, February 2025 GMT
ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক চারপাশে অবস্থান নিয়ে আছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। অন্যদিকে ভেতরে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ছাত্র বিষয়ক পরিচালকের পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবিতে আল্টিমেটাম দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আজ দুপুর ১টার মধ্যে দাবি পূরণ না হলে কুয়েটের সকল প্রকার ক্লাস, পরীক্ষাসহ সকল একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
শিক্ষার্থী সূত্র জানায়, কুয়েটে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদল ও বহিরাগতদের হামলার প্রতিবাদে উপাচার্য প্রফেসর ড.
এর আগে, মঙ্গলবার কুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে ছাত্রদল ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ঘণ্টাব্যাপী চলা এ সংঘর্ষে অন্তত অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহতদের কুয়েটের মেডিকেল সেন্টারসহ আশপাশের বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় আটক করা হয়েছে পাঁচজনকে।
অপরদিকে, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে সময় ধারালো অস্ত্র হাতে অবস্থান নেওয়া খুলনার দৌলতপুর থানা যুবদলের সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমানকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত রাতে কেন্দ্রীয় যুবদলের দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম সোহেল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে দৌলতপুর থানা যুবদলের সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃত নেতৃবৃন্দের কোনো অপকর্মের দায়-দায়িত্ব দল নিবে না। যুবদলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের তার সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
এ বিষয়ে খুলনা মহানগর যুবদলের সদস্যসচিব রবিউল ইসলাম রুবেল বলেন, ‘‘কুয়েট এলাকায় অবস্থান মাহবুবের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। সেখানে সংগঠনের কোনো বিষয় ছিল না।’’
এদিকে, কুয়েট পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার বেলা ১২টায় খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেছে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটি।
ঢাকা/নূরজ্জামান/রাজীব
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল য বদল র স ঘর ষ অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি থমথমে, টহল দিচ্ছে কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী
ওয়াক্ফ (সংশোধনী) আইন বাতিলের দাবিকে কেন্দ্র করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মুর্শিদাবাদের দুটি প্রশাসনিক ব্লকের (সুতি ও সামসেরগঞ্জ) কয়েকটি এলাকায় কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী টহল দিচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে গতকাল শনিবার রাত থেকে এই টহল শুরু হয়।
সামসেরগঞ্জের ধুলিয়ানের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, পরিস্থিতি বেশ থমথমে। অনেক মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রধানত গ্রামাঞ্চলে এই গ্রেপ্তারের ঘটনাগুলো ঘটেছে, যেখানে মুসলমানরা বসবাস করেন। বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে। ভয়ে বাড়ির পুরুষেরা অন্যত্র চলে গেছেন।
গতকাল রাত থেকে আজ রোববার সকাল পর্যন্ত মুর্শিদাবাদে অন্তত ১৩৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে জঙ্গিপুরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩০ জনকে।
ওয়াক্ফ (সংশোধনী) আইন বাতিলের দাবিকে কেন্দ্র করে মুসলমানপ্রধান মুর্শিদাবাদ জেলায় গত শুক্রবার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় শুক্রবার দুপুরের দিকে।
এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে গতকাল সকালে সামসেরগঞ্জের ধুলিয়ান পৌর অঞ্চলের অন্তর্গত জাফরাবাদ থেকে দুই ব্যক্তির লাশ উদ্ধার হলে উত্তেজনা বেড়ে যায়। বিভিন্ন জায়গা থেকে সংঘাতের খবর আসে।
যে দুই ব্যক্তি লাশ উদ্ধার হয়েছে, তাঁরা হলেন হরগোবিন্দ দাস ও চন্দন দাস। তাঁরা বাবা–ছেলে। তাঁরা ছাগলের ব্যবসা করতেন।
আগের দিন শুক্রবার সুতি এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয় ১৭ বছরের কিশোর ইজাজ আহমেদ। সে গতকাল বিকেলে মারা যায়। এ খবরেও উত্তেজনা বাড়ে।
পরিস্থিতি রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির নেতা শুভেন্দু অধিকারী কলকাতা হাইকোর্টে যান। তিনি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের আরজি জানান। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্ট সুতি ও সামসেরগঞ্জের কয়েকটি এলাকায় কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেন।
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, মুর্শিদাবাদের জনসংখ্যার প্রায় সাড়ে ৬৬ শতাংশ সংখ্যালঘু। এই জেলায় প্রায় একচেটিয়াভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের এমপি-এমএলএ রয়েছেন। এ ছাড়া জেলার আটটির মধ্যে সাতটি পৌরসভাই তৃণমূলের দখলে। এরপরও এই ঘটনা কীভাবে ঘটল, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আপনজন নামে একটি পত্রিকার সম্পাদক জায়দুল হক প্রথম আলোকে বলেন, সাম্প্রতিক অতীতে পশ্চিমবঙ্গে এ ধরনের, এত বড় সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। প্রশাসনের তরফে আবেদন করা হয়েছিল, যাতে কেউ কোনো প্ররোচনায় পা না দেন, অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা না করেন। তারপরও কী করে এ ঘটনা ঘটল, তা তদন্তের দাবি রাখে।
সামসেরগঞ্জের ধুলিয়ানের সমাজকর্মী জিম নওয়াজ কিছুদিন আগে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শুক্রবার জুমার নামাজের পরে ওয়াক্ফ নিয়ে যে বিক্ষোভ হয়েছিল, তা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল। ধুলিয়ান বাজারে দোকানপাট খুলেছিল। কিন্তু এরপর মুসলমানদের কিছু দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়। তিনি যত দূর জানেন, পুলিশকে পরিস্থিতি সম্পর্কে জানানো হয়েছিল। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এরপর নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হয়। এখানে এ প্রশ্ন করা প্রাসঙ্গিক যে কীভাবে এই সহিংসতা ছড়াতে দেওয়া হলো।
ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ১৬ এপ্রিল তিনি রাজ্যের ইমাম, মুয়াজ্জিন, বুদ্ধিজীবী, আলেম-উলামাদের সঙ্গে কলকাতার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে একটি সভা করবেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কলকাতার মেয়র এবং রাজ্যের পৌর ও নগর উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
অন্যদিকে মুর্শিদাবাদে বড় ধরনের আন্দোলনের কথা ভাবছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। রাজ্য বিজেপির নেতা শুভেন্দু অধিকারী আজ সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিযোগ করেছে, ধুলিয়ান থেকে ৪০০ জনের বেশি হিন্দুকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। তাঁরা অন্যত্র গিয়ে রয়েছেন।