সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে মাঠে নামার নির্দেশ
Published: 19th, February 2025 GMT
তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন শেষ হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার। মাঠ পর্যায়ে সাহস নিয়ে দেশের জন্য প্রয়োজনীয় কাজ করার জন্য এ সম্মেলনে ডিসিদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা, অন্যান্য উপদেষ্টা এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আইন ও সংবিধান অনুযায়ী ডিসিদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে বলা হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে তাদের। গতকাল সম্মেলনের শেষ দিন রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগের ১১টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এর পর দ্বিতীয় পর্বে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নবনির্মিত ভবনে তিনটি অধিবেশন হয়েছে। নৈশভোজের মাধ্যমে রাত ১০টায় সম্মেলন শেষ হয়।
ডিসি সম্মেলনে এই প্রথমবারের মতো তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল অধিবেশন শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আইনের মধ্যে থেকে জেলা প্রশাসকদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এখন থেকেই নির্বাচনী প্রচার চালাতে এবং জনগণকে সচেতন করে তুলতে নির্দেশ দিয়েছি। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকদের কোনো চাপ দেওয়া হবে না। কোনো চাপ এলে সেটা নিজেদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিয়ে প্রতিহত করতে হবে।’
ডিসিদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, ‘ব্লেম গেম বাদ দেন। অতীতে কী হয়েছে, সেটা না বলে ভবিষ্যতে কী করবেন, সেটা নিয়ে ভাবেন; কাজ করেন। নির্বাচনের সময় ওপর থেকে কোনো চাপ আসবে না। ওপরের কোনো চাপ এলে সেটা ইসি সামলাবে। কারণ, সুষ্ঠু নির্বাচন করাই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান লক্ষ্য। প্রধান উপদেষ্টা যে সময়সীমা দিয়েছেন, সে সময় অনুযায়ী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এর অংশ হতে চায় না।’
সিইসি আরও বলেন, ‘রিঅ্যাক্টিভলি নয়, প্রোঅ্যাক্টিভলি কাজ করতে হবে ডিসিদের। রাজনৈতিক সরকার না থাকলে আমলাতন্ত্র সেটা পরিচালনা করে। সেটা তারা করেছে। যেন স্বচ্ছভাবে করে, সেটাও বলা হয়েছে।’
এর আগে সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ডিসিদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা ড.
নির্বাচনে নির্ভয়ে কাজ করতে পারবেন ডিসিরা
সম্মেলন শেষে এক ব্রিফিংয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ডিসিরা নির্ভয়ে কাজ করতে পারবেন। কারণ নির্বাচনের ফলাফল কোনো দলের পক্ষ থেকে প্রভাবিত করার সুযোগ নেই। তাদের ওপর কোনো ধরনের চাপ বা প্রভাব থাকবে না। এবারের নির্বাচন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে হবে। তাই এবার ডিসিদের দলীয় তকমা থাকার সুযোগ নেই। এর পরও কোনো ডিসির ব্যাপারে কারও আপত্তি থাকলে আমাদের জানালে বিবেচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আইন ও সংবিধান মেনে কাজ করার পরামর্শ
সম্মেলনে আইন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত অধিবেশনে ডিসিদের আইন ও সংবিধান অনুযায়ী কাজ করার নির্দেশ দেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘আইন, নীতিমালা ও সংবিধানে যা আছে, সেটি মেনে চললে জনগণের সেবা দেওয়া আর কল্যাণ করা ছাড়া জেলা প্রশাসকদের কোনো কাজই নেই। মেধাবী মানুষেরা জেলা প্রশাসক হিসেবে কাজ করেন বা প্রশাসনে আসেন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে। রাষ্ট্রের এত বড় রিসোর্সকে গত ফ্যাসিস্ট সরকার জনগণকে অত্যাচার-নিপীড়ন করার জন্য এবং তাদের অপকর্ম জায়েজ করার জন্য ব্যবহার করেছিল।’
আসিফ নজরুল বলেন, আমরা আশা করব, ভবিষ্যতে বাংলাদেশে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, প্রশাসন ক্যাডারের যে অসীম সম্ভাবনাময় শক্তি রয়েছে, একে যেন জনগণকে নিপীড়নের কাজে না লাগিয়ে সংবিধান অনুযায়ী জনগণের সেবা করার কাজে লাগানো হয়।
যতদিন ডেভিলরা থাকবে, ততদিন অভিযান
গতকাল সকালে এক অধিবেশন শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, দেশে যতদিন ডেভিল থাকবে, ততদিন যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযান ‘ডেভিল হান্ট’ চলবে। তিনি বলেন, ডিসিদের কিছু প্রশ্ন ছিল। আমরা সেগুলোর জবাব দিয়েছি। আমাদের বড় আশা, দেশ থেকে দুর্নীতি কমাতে হবে। দুর্নীতি কমাতে না পারলে উন্নতি হবে না।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন ব্যাংক করতে চান উপদেষ্টা
দাদন থেকে মৎস্যজীবী ও খামারিদের বাঁচাতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন ব্যাংক করার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, এ বিষয়ে কথা হয়েছে ডিসি সম্মেলনে। গবাদি পশু পালনকারীদের কৃষিঋণ সুবিধার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করতে চাই আমরা। জাল যার জলা তার– নীতি অনুসরণ করে প্রকৃত মৎস্যজীবীদের সরকারি জলমহাল ইজারা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ডিসিদের।
নিয়োগ বাতিল হওয়া প্রার্থীদের প্রতি সরকার সহানুভূতিশীল
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার জানিয়েছেন, সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই সহকারী শিক্ষক নিয়োগের ফল ঘোষণা করা হয়েছিল। এ কারণে নিয়োগ বাতিল হওয়া প্রার্থীদের প্রতি সরকারের সহানুভূতি রয়েছে। তিনি বলেন, আদালত থেকে একটি রায় হয়েছে, যেটিতে তারা (নিয়োগ বাতিল হওয়া শিক্ষকরা) ক্ষুব্ধ। আমরা আপিল করেছি। যেহেতু এটি আদালতে বিচারাধীন বিষয়, তাই প্রশাসনিকভাবে আলাদা কোনো উদ্যোগ নেওয়ার সুযোগ নেই।
তরুণদের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে আলোচনা
ডিসি সম্মেলনে দেশের যুবসমাজের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যায় কিনা– তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সম্মেলনে এক ডিসির এ-সংক্রান্ত প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে এমন আলোচনা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আবদুল হাফিজ। তিনি বলেন, ‘আমাদের যুবসমাজে যারা আছেন, তারা মিলিটারি ট্রেনিং পেতে পারেন। তারা দেশের প্রতিরক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেন। তবে এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার। এতে আর্থিক সংশ্লিষ্টতা আছে।’
দেশব্যাপী যৌথ বাহিনীর অভিযান চলমান থাকবে জানিয়ে আবদুল হাফিজ বলেন, ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে লুট হওয়া ১ হাজার ৪০০ অস্ত্র এখনও উদ্ধার হয়নি। পাশাপাশি আড়াই লাখ বিভিন্ন ধরনের গুলি উদ্ধার সম্ভব হয়নি।
সম্প্রীতি রক্ষায় ডিসিদের সতর্ক থাকতে বলেছেন ধর্ম উপদেষ্টা
সারাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার জন্য ডিসিদের সতর্ক থাকতে বলেছেন ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘কেউ যেন মসজিদ, মাজার, মন্দির, প্যাগোডা অথবা চার্চে কোনো ধরনের অপবিত্রতা করতে না পারে, সে জন্য তাদের অনুরোধ করেছি। ডিসিরা অতীতেও সাড়া দিয়েছেন। আগামী দিনও যাতে ধর্মীয় সম্প্রীতি অব্যাহত থাকে, সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে বলেছি।’
যথাযথভাবে পহেলা বৈশাখ উদযাপন হবে
অতীতের মতো এবারও যথাযথভাবে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি বলেন, ‘শিল্প-সাহিত্যচর্চা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে– এমন প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এখন প্রচুর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক জ কর র সরক র র ক জ করত অন ষ ঠ র জন য মৎস য ধরন র ক ষমত গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
ভূমিকম্পে ভয়াবহ বিপর্যয় মিয়ানমারে, সাতদিনের শোক ঘোষণা
শক্তিশালী ভূমিকম্পে ভয়াবহ বিপর্যয় চলছে মিয়ানমারে। এই বিপর্যয়ের পর দেশটিতে এক সপ্তাহের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। ৬ এপ্রিল পর্যন্ত জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।
এদিকে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ২০০০ পেরিয়ে গেছে। সোমবার দেশটির সামরিক সরকার জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২০৫৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া ভূমিকম্পে আহত হয়েছে আরও ৩ হাজার ৯০০। এখনও নিখোঁজ ২৭০ জন। দেশটিতে ভূমিকম্পের প্রায় ৬০ ঘণ্টার পর ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে চারজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার সাগাইং অঞ্চলে ধসে পড়া একটি স্কুল ভবন থেকে তাঁদের উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে দেশটির ফায়ার সার্ভিস। খবর- বিবিসি
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র মেজর জেনারেল জাও মিন তুনজানান, মান্দালয় অঞ্চলে ২৭০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। সেখানে ভূমিকম্পে মসজিদ, সেতু এবং বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে নিহত ও আহতের প্রকৃত সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে। টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা বিকল হওয়ায় অনেক অঞ্চলের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা যাচ্ছে না।
শুক্রবার মিয়ানমারে শক্তিশালী ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। উদ্ধার তৎপরতা চালাতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে দেশটির সরকারকে। এসব সীমাবদ্ধতার মধ্যে উদ্ধারকারীরা যখন জীবিতদের সন্ধান করছেন তখন জাতিসংঘ জানিয়েছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে, যা ত্রাণ প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করছে।
সাহায্যকারী সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পের ঘটনায় মিয়ানমারের রাস্তাঘাটে লাশের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। হাসপাতালগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ৮০ লাখ মার্কিন ডলারের তহবিল সহায়তা চেয়ে আবেদন জানিয়েছে জাতিসংঘ।
ভূমিকম্পে রাস্তাঘাট এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর সঙ্গে সামরিক সরকার, বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং সশস্ত্র যোদ্ধাদের মধ্যে চলা গৃহযুদ্ধের ফলে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধারে কাজ করা সাহায্য সংস্থাগুলোর পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দুর্যোগ মোকাবিলা করার জন্য মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে। তবে বিরোধী ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট জোর দিয়ে বলছে, যেকোনো সহায়তা যেন স্বাধীনভাবে ও স্থানীয় নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়। মিয়ানমারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর মান্দালয়ের ঐতিহাসিক অনেক ভবন এই ভূমিকম্পে মাটিতে মিশে গেছে। উদ্ধারকর্মীরা খালি হাতে ধ্বংসস্তুূপ ঘেঁটে দেখছেন।
২০২১ সাল থেকে মিয়ানমার শাসন করা সামরিক জান্তা দেশটির সাগাইং, মান্দালয়, মাগওয়ে, বাগো, ইস্টার শান রাজ্য এবং নেপিডো অঞ্চলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। দেশটির দুই বড় শহর, মান্দালয় ও ইয়াংগুনের বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনও বিচ্ছিন্ন রয়েছে।