সুন্দরবনে ঘুরতে গিয়ে আবারও বাঘের দেখা পেয়েছেন একদল পর্যটক। মঙ্গলবার সকালে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের বড় কটকা খালে বাঘটিকে সাতরাতে দেখা যায়।

পর্যটকবাহী জলযান দ্য সেইল বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন সুন্দরবনের বড়কটকা খাল দিয়ে যাওয়ার সময় পাশ দিয়ে বাঘটি ওই খাল পার হচ্ছিল। খালে পার হয়ে বাঘটি বনের গহীনে চলে যায়। 

সুন্দরবনের অভ্যন্তরে বাঘ দেখার ওই মুহূর্ত উচ্ছ্বাস আর উত্তেজনায় কেটেছে জাহাজের সব পর্যটক ও কর্মীদের। এসময় যে যার মতো করে ছবি তোলেন এবং ভিডিও ধারণ করেন।

ওই জলযানে সুন্দরবন ভ্রমণে যাওয়া পশুর রিভার ওয়াটার কিপার মো.

নূর আলম শেখ বলেন, আমাদের ট্যুরিস্ট জাহাজ কটকা থেকে তখন কচিখালির দিকে যাচ্ছিল। খালের মুখে যখন আমরা, তখন বেশ বড়সড় ওই বাঘটিকে আমরা খাল পার হতে দেখতে পাই।

তিনি আরও বলেন, গত ২৫ বছর ধরে আমি সুন্দরবনে আসি। প্রতি বছরই একাধিক বার আসা হয়। তবে এবারই প্রথম বনের মাঝে সামনাসামনি এমন বাঘ দেখার সৌভাগ্য হলো। এই মুহূর্তের অনুভূতি বলে বোঝানো যাবে না।

ওই জাহাজে থাকা ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল নিজের মুঠোফোনে ধারণ করা একটি ভিডিও নিজের সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করে লিখেন, ‘বিশাল আকারের রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখার বিরল অভিজ্ঞতা। ... সুন্দরবন বাঁচাও, বাংলার বাঘ বাঁচাও।’

এক মাস আগে গত ১৯ জানুয়ারি সুন্দরবনের কটকা অভয়ারণ্যের বেতমোড় এলাকার নদীর পাশে একই জায়গায় তিনটি বাঘের দেখা পান পর্যটকবাহী জলযান এমভি আলাস্কা’র একদল পর্যটক। সে সময় একটি বাঘকে অপর দুটি বাঘ আক্রমণ করে প্রথমে নদীতে ফেলে দেয়। সে সময়কার বাঘের বেশ কিছু ছবি, ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ন দরবন স ন দরবন

এছাড়াও পড়ুন:

বন বিভাগের সক্ষমতা বাড়াতে হবে

এবার শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ড সতর্ক হওয়ার জরুরি বার্তাই দিচ্ছে। কেননা গত ২৩ বছরে ২৬ বার আগুন লেগেছে বাংলাদেশের মহাপ্রাণ সুন্দরবনে। এসব অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতি হয়েছে কয়েক শ একর বনভূমির। গত বছর মে মাসের অগ্নিকাণ্ডে প্রায় পাঁচ একর বনভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজী টহল ফাঁড়ি এলাকায় শনিবার সকালে আগুনের ধোঁয়া দেখে বন বিভাগকে খবর দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দুপুর থেকে বন বিভাগ, সিপিজি, ভিটিআরটি, টাইগার টিমের শত শত লোকজন কাজ শুরু করেন। বিকেলের মধ্যে ফায়ারলাইন কাটা শেষ করে বন বিভাগ। সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের একাধিক টিম গেলেও পানির উৎস দূরে থাকায় আগুন নেভানোর কাজ শুরু হতে রাত ৯টা বেজে যায়। বনকর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে রোববার সকালে পার্শ্ববর্তী আরেকটি এলাকায় আগুন দেখা যায়। 

অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটি প্রতিবেদন দিলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণটাও হয়তো জানা যাবে। কিন্তু এত আলোচনা, এত সতর্কবার্তার পরও সুন্দরবনে কেন বারবার এমন অগ্নিকাণ্ড? কেন প্রতিবারই আগুন লাগে লোকালয়-সংলগ্ন বনের পূর্বাংশে। অংশটি ভোলা নদীর তীরে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জে পড়েছে।

গত ২৩ বছরে সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ডগুলোর অন্তত ১৫টির ক্ষেত্রে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘অসাবধানতাবশত বনজীবীদের ফেলে যাওয়া আগুনের’ বিষয়টি। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দা ও বিশেষজ্ঞরা বন বিভাগের এই ভাষ্যের সঙ্গে একমত নন। তাঁরা মনে করেন, বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরার সুবিধার জন্য একটি চক্র ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন দিয়ে বনের সর্বনাশ করে চলেছে।

আমরা মনে করি, সুন্দরবনের একই অঞ্চলে বারবার আগুন লাগার পেছনে অতি মুনাফালোভী একটি চক্রের হাত রয়েছে। কেননা বনে কিছু জায়গায় আগুন দিয়ে শ্বাসমূল পরিষ্কার করতে পারলে বর্ষায় মাছ ধরা সুবিধা। ফলে এ ক্ষেত্রে বন বিভাগের যেমন সক্ষমতার ঘাটতি আছে, আবার উদাসীনতাও আছে।

ভূপ্রাকৃতিক কারণেই সুন্দরবনে প্রাকৃতিকভাবে কোনো অগ্নিকাণ্ড ঘটার সুযোগ খুবই কম। মানবসৃষ্ট কারণ, বিশেষ করে অতি মুনাফালোভী চক্রের কারণে বনটি ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। সুন্দরবনের সুরক্ষায় সরকারকে অবশ্যই বন বিভাগের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের হাতেও বনের আগুন নিয়ন্ত্রণে উন্নত প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনা দেওয়া প্রয়োজন। সুন্দরবনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে অবশ্যই বন বিভাগের সদস্যদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করা প্রয়োজন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আগুনে পুড়েছে সুন্দরবনের ২৫ নম্বর কম্পার্টমেন্টের প্রায় আট একর বনভূমি
  • হাতিয়ায় হান্নান মাসউদের ওপর হামলা, মাথায় জখম
  • সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ড: তদন্তে পৃথক কমিটি গঠন
  • থেমে থেমে জ্বলছে সুন্দরবনের আগুন
  • সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে, পুরোপুরি নেভাতে জোয়ারের পানির জন্য অপেক্ষা
  • সুন্দরবনের আগুন নেভাতে জোয়ারের অপেক্ষা
  • সুন্দরবনে তীব্রতা কমছে আগুনের, পানি সংকট
  • সুন্দরবনে জোভান-তটিনীর অ্যাডভেঞ্চার!
  • সুন্দরবনে আগুনের প্রকোপ কমছে, ভোগাচ্ছে পানির সংকট
  • বন বিভাগের সক্ষমতা বাড়াতে হবে