সাদা তুষারে ঢেকে আছে পুরো গ্রাম। তুষারে ঢাকা মনোমুগ্ধকর এমন ভূপ্রকৃতির জন্য চীনের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ সিচুয়ানের একটি গ্রাম বিখ্যাত। প্রতিবছর দেশি-বিদেশি বহু পর্যটক এই দৃশ্য উপভোগ করতে ওই গ্রামে আসেন। বিশেষ করে জানুয়ারির শেষ দিকে চীনা নববর্ষের সময়।

চান্দ্র নববর্ষ উদ্‌যাপন করতে চীনে লম্বা ছুটি থাকে। ওই সময় স্থানীয় পর্যটকেরা যেমন ভ্রমণে বের হন, তেমনি বিদেশি পর্যটকেরাও চীন ভ্রমণে আসেন।

এ বছরও ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে চান্দ্র নববর্ষ এসেছে, সরকার থেকে লম্বা ছুটিও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সিচুয়ান প্রদেশের ওই গ্রামের ভাগ্য আগের মতো সুপ্রসন্ন ছিল না।

এ বছর চীনের আবহাওয়া অপেক্ষাকৃত উষ্ণ ছিল, এ কারণে পর্যাপ্ত তুষারপাত হয়নি। তাই নিরুপায় গ্রামবাসী পর্যটক টানতে অভিনব এক উপায় খুঁজে বের করেন। তাঁরা তুলা ও সাবান পানি দিয়ে নকল তুষার তৈরি করেন এবং পুরো গ্রাম নকল তুষারে ঢেকে দেন।

কিন্তু চেংদু স্নো ভিলেজ ঘুরতে আসা পর্যটকদের কাছে গ্রামবাসীর নকল তুষার তৈরির পরিকল্পনা মোটেও ভালো লাগেনি। সেখানে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকেরা অনলাইন এর তীব্র সমালোচনা শুরু করেন এবং অল্প সময়ের মধ্যে তা ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইচ্যাটে চেংদু স্নো ভিলেজের বেশ কিছু ছবি দেখা যায়। সেগুলোয় মাঠজুড়ে সাদা তুষারের চাদর বিছানো আছে, কিন্তু পাশের গাছগাছালি তেমন একটা তুষারে ঢাকা পড়েনি। বাড়ি-ঘরের চালে তুষারের মোটা স্তর পড়ে আছে। কিন্তু খুব কাছ থেকে দেখলে, সেগুলো যে তুলা তা বোঝা যায়।

ওই সব ছবির নিচে মন্তব্যের ঘরে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। একজন লিখেছেন, ‘তুষার ছাড়াই তুষার গ্রাম’।

অনলাইনে বেশির ভাগ মানুষ সমালোচনা করা শুরু করলে চেংদু স্নো ভিলেজ কর্তৃপক্ষ পুরো এলাকা থেকে নকল তুষার সরিয়ে ফেলে। শুধু তা–ই নয়, গ্রামবাসী এমন কাজের জন্য তাদের উইচ্যাট অ্যাকাউন্টে ক্ষমা চেয়ে একটি পোস্টও দিয়েছেন। ৮ ফেব্রুয়ারি দেওয়া ওই পোস্টে তাঁরা লিখেছেন, তুলা ও সাবান পানি দিয়ে নকল তুষার তৈরি করার জন্য তাঁরা দুঃখিত।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: নকল ত ষ র

এছাড়াও পড়ুন:

‘মেয়েকে প্রথম বুকে নিয়ে কথা বলতে পারিনি কিছুক্ষণ’

বাংলা নববর্ষ ১৪৩২। চারপাশে উৎসবের রঙে রাঙানো, বৈশাখী আমেজে মাতোয়ারা জনজীবন। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে একদিকে নওগাঁয় বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি, ঘোড়া, পালকি, মাটির তৈরি বাসনসহ বিভিন্ন বর্ণের বেলুন ফেষ্টুন উড়িয়ে, মাথাল মাথায় দিয়ে যখন হাজারো মানুষ উল্লাস করছে। অন্যদিকে সামান্য অদূরেই ২৫০ শয্যার আধুনিক সদর হাসপাতালে সকাল ৮.৫০মিনিটে রকিবুল হাসান (২৪) ও খাদিজা আক্তার(১৯) দম্পতির কোল আলোকিত করে জন্ম নেয় রিজুয়ানা হাসান। জীবনে প্রথমবার বাবা-মা হওয়ার আনন্দে উচ্ছ্বসিত রকিবুল-খাদিজা দম্পতি।

রকিবুলের বাড়ি নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার চন্দনগর ইউনিয়নের বেনীপুর গ্রামে। পেশায় সফটওয়ার ডেভলপার। কোরআনের হাফেজা খাদিজা আক্তারের বাড়ি জেলার মহাদেবপুর উপজেলার সুরান্দপুর গ্রামে। ২০২৩ সালের ২১ আগস্ট পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের দেড় বছর পরে রিজুয়ানা হাসানের জন্ম। এটি তাদের প্রথম সন্তান।

সদ্যজাত কন্যাকে নার্সের কাছ থেকে কোলে তুলে নেন বাবা রকিবুল হাসান। এসময় আপ্লুত হয়ে পড়েন রকিবুল। কোলে নিয়েই শিশুর কানে আজান দিতে থাকেন। পাশেই শিশুটির নানি শেফালী বেগম ও দাদি রহিমা বিবি আনন্দে অশ্রুপাত করেন।

বৈশাখের প্রথম দিনে সন্তান জন্মগ্রহণ করায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন রকিবুল হাসান এবং খাদিজা আক্তার। রকিবুল বলেন, বৈশাখের প্রথম দিনে আমি প্রথম কন্যার সন্তানের জনক হয়েছি এতে আমি ভীষণ খুশি। সন্তান জন্মের পর পরই আমি কোলে নিয়েছি এ এক অন্যরকম অনুভূতি যা বলে বোঝাতে পারবো না। আমি নিজেই আমার মেয়ের কানে আজান দিয়েছি। বাসায় গিয়ে সবার আগে মেয়ের নামে আকিকা দিয়ে আমার সন্তানের নাম রাখা হবে রিজুয়ানা হাসান। আমার নামের শেষ অংশ হাসান যুক্ত করে আমরা স্বামী-স্ত্রী মিলে এই নাম রেখেছি। মেয়েটিকে মাদরাসায় পড়াশোনা করাবো। আলেম বা হাফেজা বানাবো। আমার এ সন্তানের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।

তিনি বলেন, স্ত্রীকে ৭মাসের সাতোসা খাওয়ানোর মতো কুসংস্কার এবং বাসায় রেখে ডেলিভারীতে বাধ্য করানোর মতো কুসংস্কারে আমি বিশ্বাসী নই। আমরা এযুগের আধুনিক চিন্তার মানুষ। তাই কোন কুসংস্কারে বিশ্বাস করিনা। আমার স্ত্রী গর্ভবতী হওয়ার পর থেকে মহাদেবপুর সদরের কাজীর মাস্টার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডা. কামরুন্নাহারের কাছে নিয়মিত চেকআপ করিয়েছি। তার পরামর্শেই স্ত্রীকে আমার কাছে নওগাঁ শহরের বাসায় রেখেছিলাম।

নওগাঁ ২৫০শয্যা জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. ফারহানা ফারুক তন্দ্রা বলেন, এটি নরমাল ডেলিভারি। জন্মের সময় সন্তানের ওজন তিন কেজি হয়। 

তিনি বলেন, সন্তান জন্মের ২দিন আগে থেকে সন্তানের মা ব্যাথা অনুভব করায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। শেষের দিকে পানিশূন্যতা দেখা দিয়েছিল। পরিস্থিতি ক্রমশ ঝুঁকির দিকে গিয়েছিল। সিজারের সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। পরে অবশ্য নরমালেই হয়েছে।

এখন সন্তান এবং মা দু’জনেই সুস্থ আছেন ভালো আছেন বলে জানান তিনি। 
 
সন্তানের মা খাদিজা আক্তার বলেন, পহেলা বৈশাখে যে তার সন্তান ভূমিষ্ট হবে-এমনটা আগেই জানা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই পেইন এবং পানিশূন্যতার জন্য মনে হয়েছে হয়তো দু’একদিন আগেই হবে। এক পর্যায়ে ব্যথা সহ্য সীমার বাইরে চলে যায়। বাধ্য হয়ে দু’দিন আগেই হাসপাতালে ভর্তি হই। বাকিটা আলহামদুলিল্লাহ। প্রথম ওকে যখন আমার বুকের ওপর রাখা হয় তখন আমি অনুভূতিহীন হয়ে পড়ি। কথা বলতে পারিনি কিছুক্ষণ।

তিনি বলেন, রকিবুলের নীল রঙ খুব পছন্দের। তাই আমার অধিকাংশ কাপড় নীল রঙের। আমাদের মেয়ে জন্মের কয়েক ঘণ্টা পরেই রকিবুল মেয়ের জন্য এক জোড়া নীল রংয়ের জামা কিনে এনেছে। তিনি হাসতে হাসতে বলেন জামা দুটিই মেয়ের বড় হয়েছে।

রকিবুলের বাবা আব্দুল মোত্তালেব জানান, গর্ভবর্তী হওয়ার পর থেকেই স্ত্রীর প্রতি ছিল রকিবুলের বিশেষ যত্ম। ভারী কাজ করতে দিতো না। ডাক্তারি চেকআপ করাতো নিয়মিত। গ্রামের বাড়ি নিয়ামতপুর থেকে তার বৌমাকে ছেলে নওগাঁ শহরে নিজের কাছেই রেখেছে। 

শিশুর নানী শেফালী বেগম বলেন, চিকিৎসক আর নার্সের আন্তরিকতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। বাচ্চাটি ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর শরীরের রক্ত পরিষ্কার করে টাওয়াল দিয়ে জড়িয়ে দেন নার্স। পরে ওর বাবার কোলে দেওয়া হয়। এরপর আমি কোলে নেই। এ সময় ডাক্তার ও নার্সরা শিশুটিকে পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা জানায়।

শিশুর দাদী রহিমা বিবি বলেন বলেন, আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া। আমার ছেলের ঘরে সিজার ছাড়াই আল্লাহ একটি কন্যা দিয়েছে। সেটাও আবার পয়লা বৈশাখের দিন। তারিখটা মনে রাখার মতো।

নওগাঁ ২৫০শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. আবু জার গাফ্ফার বলেন, পহেলা বৈশাখে প্রথম সন্তান রকিবুল-খাদিজা দম্পতির। হাসপাতালের পক্ষ থেকে বাব-মা ও মেয়েকে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। এ দিন আরো কয়েকজন শিশুর জন্ম হয়েছে। প্রত্যেককেই আমরা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গোপালগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী চড়ক ঘুল্লী অনুষ্ঠিত
  • ‘মেয়েকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলবো’
  • মানুষের মত মানুষ হিসেবে বড় করে তুলবো
  • ‘নববর্ষে আসা মেয়েটি ঘুরিয়ে দিতে পারে ভাগ্যের চাকা’ 
  • ‘এই নিন আপনার পহেলা বৈশাখ’
  • হা-ডু-ডু খেলে দর্শক মাতালেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা
  • মেয়েকে হাফেজ বানাতে চান বাবা
  • বৈশাখের প্রথম প্রহরে সন্তানের মুখ দর্শন যেন সারা বছরের সুখ
  • নববর্ষের সঙ্গে মিল রেখে সন্তানের নাম রাখা হবে
  • ‘মেয়েকে প্রথম বুকে নিয়ে কথা বলতে পারিনি কিছুক্ষণ’