টাকা হাতে আসলেই খরচ হয়ে যায়? ‘কাকিবো’ পদ্ধতিতে টাকা জমান
Published: 19th, February 2025 GMT
আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ খরচ করতে সবাই পারেন না। কেউ কেউ হাতে যতক্ষণ টাকা থাকে ততক্ষণ খরচ করতে থাকেন। আবার কেউ কেউ সঞ্চয়ের মূল্যই বুঝতে চান না। অহেতুক টাকা খরচের অভ্যাস পাল্টাতে জাপানি সঞ্চয় পদ্ধতি ‘কাকিবো’ মেনে চলতে পারেন।
এই পদ্ধতি জাপানে প্রায় একশো বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আবেগে ভেসে খরচ করার মানসিকতা নিয়ন্ত্রণ করে কাকিবো। যেমন হঠাৎ কিছু দেখে পছন্দ হয়ে গেলেই আমরা তা কিনে ফেলতে চাই, কাকিবো পদ্ধতিতে যেহেতু খরচের প্রতিটি খাত আগে থেকেই আলাদা করা থাকে, সেজন্য অকারণ খরচের আগে ভাবতে হয়। তাতে হঠাৎ এটা সেটা কিনে ফেলার মানসিকতাও নিয়ন্ত্রণে থাকে। কাকিবোর মূলমন্ত্র হলো খরচে অতিরিক্ত কড়াকড়ি না করেও সঞ্চয়ে উৎসাহিত করা।
কাকিবো পদ্ধতি কি: এর আক্ষরিক অর্থ হলো ‘সংসারে খরচের খাতা’। কোন খাতে কত টাকা খরচ হচ্ছে সেই হিসাব রাখতে খাতা-কলম ব্যবহার করতে হয়। এই পদ্ধতি নিয়ে ১৯০৪ সালে জাপানের প্রথম নারী সাংবাদিক হানি মোতোকো বলেছিলেন, খাতা-কলমে অর্থব্যয়ের হিসাব রাখলে খরচ সম্পর্কে সচেতনতা অনেক বেশি বাড়ে। এই পদ্ধতি শুধু খরচের কথাই লিখতে বলে না। জমানোর জন্য প্রতি মাসে নিজেকে চারটি প্রশ্নও করতে বলা হয়।
আরো পড়ুন:
অনলাইন ডেটিংয়ে নারী নাকি পুরুষ এগিয়ে
আজ ‘লাভ রিসেট ডে’
কাকিবোর চার প্রশ্ন:
আমার কাছে কত টাকা আছে: অর্থাৎ আপনার প্রতি মাসের বা বার্ষিক উপার্জন কত সেই হিসাব লিখে রাখতে হবে।
আমি কতটা জমাতে চাই: আপনি প্রতি মাসে বা বছরে কত জমাবেন বলে স্থির করেছেন।
আমি কত টাকা খরচ করছি?: সাধারণত মাসে কোন কোন খাতে কতটা খরচ হয় আপনার, তার একটা তালিকা তৈরি করা।
আরও ভাল ভাবে সঞ্চয় করবেন কীভাবে?: কীভাবে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে খরচ কমিয়ে আরও বেশি সঞ্চয় সম্ভব, তা খুঁজে বের করা।
কীভাবে কাকিবো সঞ্চয়ে সাহায্য করে
মনে থাকে: আধুনিক যুগে মাসের খরচপাতির হিসাব রাখার জন্য নানারকম অ্যাপ তৈরি হয়েছে। কিন্তু কাকিবো যে হেতু হাতে লিখে হিসাব করতে বলে, তাই কীভাবে কতটা খরচ হচ্ছে, তা অনেক গভীর ভাবে মনে থেকে যায়।
চার রকমের খরচ: কাকিবোয় মাসের খরচকে চার ভাগে ভাগ করতে বলা হয়।
বাঁচার জন্য জরুরি: খাবার, ওষুধ, ত্বকের পরিচর্যা, পারিপার্শ্বিক পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জিনিসপত্র, বাড়ি ভাড়া, গাড়ি ভাড়া, ফোনের বিল ইত্যাদি।
বিকল্প খরচ: যেগুলো না হলে খুব সমস্যা হবে না, যেমন— মনোরঞ্জন, বাইরে রেস্তরাঁয় খেতে যাওয়া, কেনাকাটা ইত্যাদি।
সাংস্কৃতিক বা বৌদ্ধিক: বাঁচার জন্য আত্মোন্নতির প্রয়োজন। প্রয়োজন নিজের ভাবনায় শান দেওয়া। বই, শিল্প, গানবাজনা ইত্যাদির খরচ।
হঠাৎ প্রয়োজন: হঠাৎ অসুখ হলে তার খরচও থাকে। সেজন্য আলাদা অর্থ সঞ্চয় করতে হবে।
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য র খরচ খরচ ক খরচ র
এছাড়াও পড়ুন:
পূরণ হলো না স্বপ্ন, আহত রিয়ালে দুঃখী এমবাপ্পে
টিম বাসের সামনে পেছনে প্যারেড ঘোড়ার কুচকাওয়াজ। রাস্তার দুধারে সমর্থকের হাতে রাখা রংমশাল থেকে মায়াবী ধোঁয়া, যেন রাজার আগমন ঘটছে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর দুর্গে! ম্যাচের আগে এমবাপ্পেদের প্রবেশপথের এই দৃশ্য ফেসবুক ‘রিল’-এ ভাইরাল হয়েছিল! সেই সঙ্গে বেলিংহামের ‘প্রত্যাবর্তনের’ হুঙ্কার কিংবা সমর্থকদের ‘আর্সেনালকে দেখিয়ে দেওয়ার’ বিভিন্ন পোস্ট– সোশ্যাল মিডিয়ায় যতটা গর্জে ছিল রিয়াল মাদ্রিদ, বাস্তবের ম্যাচে বর্ষেনি ততটা!
বরং ঘরের উঠোনে ৮০ হাজার দর্শকের সামনে আর্সেনালের কাছে ১-২ গোলে কঠিনভাবে আহত হয়েছে লা ব্ল্যাঙ্কোসরা। পনেরোবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগজয়ী স্প্যানিশ ক্লাবটি এবার আটকে গেল কোয়ার্টারেই। সেখানে দুই লেগ মিলিয়ে ৫-১ গোলের অগ্রগামিতায় ইংলিশ ক্লাব আর্সেনাল ১৬ বছর পর সেমিতে। যেখানে তাদের মোকাবিলা এখন প্যারিসের দল পিএসজির সঙ্গে।
অথচ এই পিএসজি ছেড়েই ইউরোপের কিং হতে মাদ্রিদে এসেছিলেন ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে। রিয়াল মাদ্রিদে গেলেই শুধুই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের ইচ্ছাপূরণ হবে– এমন অন্ধ আকাঙ্ক্ষা তাড়া করেছিল তাঁকে। এই মুহূর্তে আহত রিয়ালে তাই সবচেয়ে দুঃখী এই মানুষটিই। বুধবার রাতে আর্সেনালের বিপক্ষে অফসাইডের একটি গোলের মিথ্যা হুল্লোড় ছাড়া কিছুই করতে পারেননি তিনি।
ব্রাজিলিয়ান যে তারকাকে নিয়ে ব্যালন ডি’অরের পুরস্কার বয়কট করেছিল রিয়াল, সেই ভিনিসিয়ুস জুনিয়রই বা কতটা প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছেন। ৬৭ মিনিটে যে গোলটি তিনি করেছেন, সেটাতেও আর্সেনালের ডিফেন্ডারের স্পষ্ট ভুল ছিল। এমবাপ্পেকে ফাউল করার কারণে যে পেনাল্টি ভিএআর করে দিয়েছে বলে মাদ্রিদ সমর্থকরা অভিমান করেছেন, এর বাইরে আর ক’টা সুযোগই বা তারা তৈরি করতে পেরেছে।
পুরো ম্যাচে ৬০ শতাংশ বল পজিশনে রেখেও গোলমুখে ‘শটস অন টার্গেট’ মাত্র চারটি। যেখানে তিন গোলের বোঝা কাঁধে নিয়ে ম্যাচে নামা ফরোয়ার্ডদের ডিবক্সের কাছাকাছি এসেই আক্রমণ শানানোর কথা, সেখানে কিনা বেলিংহাম, ভিনিরা ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের চেষ্টা করে গেছেন। মিডফিল্ডে ভালভার্দে আর চুয়েমেনিকে এমন স্নায়ুক্ষয়ী ম্যাচের জন্য অনেকটাই অপ্রস্তুত মনে হয়েছে।
তবে গোলরক্ষক কতুর্য়া বার্নাব্যুর দুর্গ সামলানোর চেষ্টা করে গেছেন সবটুকু নিংড়ে দিয়ে। ম্যাচের ১৩ মিনিটে আর্সেনালের ইংলিশ ফরোয়ার্ড বুকাও সাকার দুর্বল পেনাল্টি রুখে দেন কর্তুয়া। কিন্তু সেই সাকারেরই চিপ শটে গোল রিয়ালের এদিন প্রথম গোল হজম করতে হয়। সাকা বক্সে ঢোকার সময় একই লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন রিয়ালের চার ডিফেন্ডার! ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে হাল ছেড়ে দেওয়া রিয়ালের জালে দ্বিতীয় গোলটি করেন আর্সেনালের ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড মার্তিনেল্লি।
এদিন ম্যাচের পর সবার শেষে মাঠ ছাড়েন কর্তুয়া। বেলজিয়ামের এই গোলরক্ষক সাত বছর ধরে আছেন দলটির সঙ্গে। তাই এদিনের হারের কারণ হিসেবে তাঁর চোখে ধরা পড়েছে রিয়াল মাদ্রিদের গভীর এক শূন্যতা। ‘আমাদের আত্মসমালোচনা করা উচিত। এবং সবকিছু বিস্তারিতভাবে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। আমরা কেন একটি দল হয়ে খেলতে পারছি না, সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা উচিত। আপনি যদি শুধু ভিনি আর এমবাপ্পের ওপরই নির্ভর করে থাকেন, তাহলে তা মাঝে মাঝে কাজে দেবে, কিন্তু সবসময় দেবে না।’
কর্তুয়ার ইঙ্গিতটা পরিষ্কার, যে রিয়াল সব অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে বলে ম্যাচের আগে তাদের ভিডিও দেখানো হয়েছিল লকার রুমে, সেই মাদ্রিদ অন্তত এটা না। প্রত্যাবর্তন করার প্রত্যাশার প্রচণ্ড চাপ, মিডফিল্ডের দুর্বলতা এবং আক্রমণ ভাগে তারকাদের স্বার্থপরতা– রিয়ালের মুকুট হরণে আপাতত এই তিনটি কারণ খুঁজে পেয়েছে স্প্যানিশ দৈনিকগুলো। যেখানে মার্কা শিরোনাম করেছে– ‘নো মিরাকল’।
প্রথম লেগের ম্যাচেই আর্সেনালের ডেকলান রাইস গতবারের চ্যাম্পিয়নদের বাস্তবতা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, দ্বিতীয় লেগে এসেও তিনি ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে বার্নাব্যুতে সেলফি তুললেন। ম্যাচের ২৮ মিনিটে ডিবক্সের মধ্যে রাইসের বাধায় পড়ে যান এমবাপ্পে। রেফারি রাইসকে হলুদ কার্ড পেনাল্টি দিলেও রাইস জোরালো যুক্তি দেন এই বলে যে তিনি পেছন থেকে এমবাপ্পেকে হাত বাড়িয়ে ধরে রাখলেও তা মাটিতে পড়ে যাওয়ার মতো জোরালো ছিল না। ভিএআর রাইসের এই যুক্তি মেনে নিয়ে তা বাতিল করে দেয়। ঠিক এখানেই মাদ্রিদের যত অসহায় আফসোস জমাট বাঁধে।