পাকিস্তানের জন্য ক্রিকেটের চেয়েও বেশি কিছু
Published: 19th, February 2025 GMT
সন্ত্রাসবাদের সর্বগ্রাসী থাবায় অন্ধকারে তলিয়ে গিয়েছিল সবকিছু। বহু বছরের তিল তিল চেষ্টায় সেই অতল আঁধার ভেদ করে ধীরে ধীরে আলোয় ফিরেছে পাকিস্তানের ক্রিকেট। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সেই প্রত্যাবর্তন পূর্ণতা পাচ্ছে। তাই করাচির ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে আজ মোহাম্মদ রিজওয়ান ও মিচেল স্যান্টনারের টসের সময়কে পাকিস্তানের ক্রিকেটের জন্য মাহেন্দ্রক্ষণই বলা যায়। ২৯ বছর পর আইসিসির কোনো ইভেন্ট হতে যাচ্ছে দেশটিতে। তাই পাকিস্তানের কাছে এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের চেয়েও বেশি কিছু বিবেচিত হচ্ছে।
লাহোর, করাচি ও রাওয়ালপিন্ডিতে আড়াই সপ্তাহের এই আয়োজন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারলে দেশটির ক্রিকেট তো বটেই; পর্যটন, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অনেক বিষয়ে নতুন এক দিশা পাবে। যে কারণে নিরাপত্তার প্রশ্নে একবিন্দু ছাড় দিতে রাজি নয় পাকিস্তান। তাই তো পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) সাবেক চেয়ারম্যান রমিজ রাজা এএফপিকে বলেছেন, ‘পাকিস্তান যে একটি নিরাপদ দেশ, সেটি পুরো বিশ্বকে বুঝিয়ে দেওয়ার এটাই মোক্ষম সুযোগ। সে সঙ্গে এমন একটি বৈশ্বিক ইভেন্ট সুচারুরূপে আয়োজনেও যে আমরা সামর্থ্য রাখি– সেটি সবাইকে দেখিয়ে দেওয়ার সময়।’ পুরো বিশ্ব যে পাকিস্তানের এই দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে পারছে, সেটাও মনে করছেন পাকিস্তানের সাবেক এ অধিনায়ক।
২০২১ সালে তিনি পিসিবির দায়িত্বে থাকার সময়ই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছিল পাকিস্তান। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর থেকেই পাকিস্তানের অবস্থা খারাপ হতে থাকে। নিরাপত্তার অজুহাতে সেখানে যাওয়া কমিয়ে দেয় বিদেশিরা। ২০০৯ সালে লাহোরে শ্রীলঙ্কা দলের ওপর ভয়াবহ হামলার পর তো বিশ্বের সব দেশ সেখানে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। সেই পরিস্থিতি থেকে অনেক চেষ্টার পর ২০১৯ সালে টেস্ট ক্রিকেট ফেরে পাকিস্তানে। জিম্বাবুয়ে, উইন্ডিজ, বাংলাদেশ যায় দেশটি সফরে। এর পর অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকাও যায় সেখানে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজনে ক্রিকেট পরিপূর্ণভাবে ফিরছে দেশটিতে।
তাদের এত প্রতীক্ষার আয়োজনে কিছুটা হলেও বাধা সৃষ্টি করেছে প্রতিবেশী ভারত। সুদীর্ঘকালের রাজনৈতিক সংঘাতের জেরে তারা পাকিস্তানে খেলতে যাচ্ছে না। শুধু ভারত যাচ্ছে না বলে হাইব্রিড মডেলে পাকিস্তানের তিন শহরের সঙ্গে আরেক ভেন্যু যোগ হয়েছে দুবাই। করাচিতে পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড উদ্বোধনী ম্যাচের পরদিন বৃহস্পতিবার দুবাইতে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। এ দুই দেশের মধ্যেও এখন চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। বিশেষ করে গত বছর ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে ভারতের সঙ্গে নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে সংঘাতময় সময় পার করছে বাংলাদেশ। চলমান এই যুদ্ধংদেহী আবহের কারণে অনেকের মতে, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের চেয়েও বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে উত্তেজনা বেশি থাকবে। ভারতের সঙ্গে বেশ কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের তীব্র লড়াই হয়। এবার সেই উত্তেজনাটা নিশ্চিতভাবেই অনেক বেশি থাকবে।
তবে ভারত না গেলেও বাকি ৭ দেশকে নিয়ে মনে রাখার মতো একটি আয়োজন করতে চায় পাকিস্তান। এ জন্য তিন আয়োজক শহরের পাশাপাশি অন্যান্য শহরগুলোর নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছে। যদিও পাকিস্তানের বড় শহরগুলোর অবস্থা এখন অনেক পাল্টে গেছে, সেখানে আগের মতো সচরাচর সন্ত্রাসী হামলা এখন আর দেখা যায় না। তার পরও কোনো রকম ফাঁকফোকর রাখছে না তারা। শুধু লাহোর ও রাওয়ালপিন্ডিতেই নিরাপত্তার জন্য ১২ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আয়োজকরা। পাঞ্জাবের মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) উসমান আনোয়ার নিশ্চিত করেছেন, দেশি-বিদেশি খেলোয়াড়, কর্মকর্তা ও ক্রিকেট-ভক্তদের জন্য পূর্ণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভেন্যুর পাশাপাশি খেলোয়াড়দের হোটেল ও চলাচলের রাস্তা সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। পুলিশের পাশাপাশি এলিট ফোর্সের দলগুলোও সার্বক্ষণিক টহল দেবে। স্টেডিয়াম ও আশপাশের উঁচু ভবনে স্নাইপারও মোতায়েন করা হবে।
২০১৭ সালের পর আবার মাঠে গড়াচ্ছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। সর্বশেষ আসরে শিরোপা জিতেছিল পাকিস্তান। তাই এবার স্বাগতিকরা শিরোপা ধরে রাখার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হচ্ছে। কাগজে-কলমে বোদ্ধারা স্বাগতিকদের সঙ্গে ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে ফেভারিট হিসেবে ভাবছে। এবারও বেশ কিছু তারকা খেলোয়াড় চোটের কারণে খেলতে পারছেন না। তবে এর মধ্যে একটি লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, জাসপ্রিত বুমরাহ, মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স, অ্যানরিখ নরখিয়া, লকি ফার্গুসনসহ বিশ্বের তারকা পেসারদের অধিকাংশই চোটের কারণে আসর থেকে ছিটকে গেছেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
অভিযানে বন্ধ চলে গেলেই চালু
ফরিদপুরের সালথায় কুমার নদে প্রশাসনের অভিযানের পর বন্ধ ছিল বালু উত্তোলন। পরে ফের ড্রেজার দিয়ে বালু তুলছেন এক বালু ব্যবসায়ী। এতে নদীর পার ভেঙে পাকা সড়কসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ধসের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
গতকাল শনিবার দুপুরে উপজেলার খারদিয়া বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সোনাপুর ও যদুনন্দী ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া কুমার নদে ড্রেজার বসানো হয়েছে। অবৈধভাবে বালু তোলায় হুমকিতে পড়েছে নদীর দুই পারে থাকা পাকা সড়ক, ব্রিজ, নদীপারের জনবসতি, গাছপালা, ঘরবাড়িসহ ফসলি জমি। সড়কের উপর দিয়ে মাটি ফেলে উঁচু করে ড্রেজারের পাইপ বসানো হয়েছে। ফলে যে কোনো সময় দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়েছে।
জানা যায়, নাসির হোসেন নামে এক বালু ব্যবসায়ী দীর্ঘদিন ধরে কুমার নদসহ বিভিন্ন জায়গায় ড্রেজার দিয়ে বালু তুলছেন। এটাই তাঁর পেশা। তাঁর একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। এ কারণে তিনি কাউকে তোয়াক্কা না করে দীর্ঘদিন ধরে এ অবৈধ কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন।
কুমার নদের দুই পারের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর ফেব্রুয়ারিতে কুমার নদটি খনন করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। কিছু দিন আগে নদের দুই পারের পাকা সড়ক সংস্কার করে কর্তৃপক্ষ। এর পরও প্রভাব খাটিয়ে নাসির দুই মাস ধরে এ নদ থেকে বালু উত্তোলন করে বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছেন। গত ৬ এপ্রিল বালু উত্তোলন করার সময় অভিযান চালিয়ে তাঁর ড্রেজার অকেজো করে ও পাইপ ভেঙে দেয় উপজেলা প্রশাসন। অভিযানের কিছুদিন পরই প্রশাসনকে উপেক্ষা করে একই স্থানে বালু উত্তোলন করেছেন নাসির। আইন অনুযায়ী খোলা স্থান ও নদীবক্ষ থেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বালু উত্তোলন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। নাসির সেই আইন তোয়াক্কা করছেন না।
অভিযুক্ত নাসির হোসেন বলেন, সবাইকে ম্যানেজ করেই কুমার নদ থেকে ফের বালু তোলা শুরু করেছেন। তাঁর দাবি, কয়েকদিন বালু তুলেই বন্ধ করে দেবেন। এই নিয়ে লেখালেখি করে লাভ হবে না বলে পরামর্শ দেন তিনি।
যদুনন্দী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, নদ থেকে বালু তোলায় রাস্তার পাড় ভেঙে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। রাস্তা ভাঙলে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোকসান হবে। এতে এই এলাকার জনগণের ভোগান্তি বাড়বে। তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানাবেন বলে জানান।
বালু তোলার বিষয়টি এ প্রতিনিধির মাধ্যমে জানলেন জানিয়ে সালথার ইউএনও আনিছুর রহমান বালী বলেন, কিছুদিন আগে ওই স্থানে অভিযান চালানো হয়। আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। তবে এত কিছুর পরও বালু তোলা বন্ধ না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে আবারও অভিযান চালানো হবে।