সাংবাদিক মাসুমা ইসলামের (২৭) শ্বশুরবাড়ি কুমিল্লায়। সেখানে তাঁর শাশুড়ি অসুস্থ। তাঁকে দেখতে স্বামীকে নিয়ে রাজশাহী থেকে রওনা হন মাসুমা। গত শুক্রবার ভোরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একটি হোটেলের উল্টোদিকে বাস থেকে নামেন তারা। সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া ঠিক করার সময় দ্রুতগামী একটি গাড়ি ধাক্কা দেয়। এতে মাসুমা, তাঁর স্বামী সৈকত ইসলাম এবং অটোরিকশার চালক গুরুতর আহত হন।

প্রথমে মাসুমাকে কুমিল্লা সদরে একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসকরা তাঁকে জরুরি ভিত্তিতে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখার নির্দেশনা দেন। তবে ঢামেকে আইসিইউ বেড ফাঁকা ছিল না। এ ছাড়া শুক্র ও শনিবার ঢামেক হাসপাতালে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় তাঁর শরীরে যেসব গুরুতর আঘাত ছিল, তা নিরূপণ করা যায়নি।

পরে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার ভোরে না-ফেরার দেশে চলে যান এ সংবাদকর্মী। 

মাসুমা ইসলাম ‘এখন টেলিভিশন’-এর রাজশাহী ব্যুরো অফিসের নিজস্ব প্রতিবেদক ছিলেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নারায়ণপুরে। স্বামীর সঙ্গে রাজশাহীতে বাস করছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন পরিবারের সদস্য ও সহকর্মীরা। তাঁর স্বামী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর মাসুমার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত লাগে। ঢাকা মেডিকেলে আসার পর দ্রুত আইসিইউতে সেবা পেলে হয়তো তার অবস্থা এতটা খারাপ হতো না। তা ছাড়া বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে যে গুরুতর আঘাত পেয়েছিল, তা জানা যায়নি। পরে নারায়ণঞ্জে আমার মামার বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু ততক্ষণে তার কিডনি প্রায় বিকল হয়ে যায়। ঘাড়ের রগ ও হাড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব চিকিৎসা দিতে অনেক সময় চলে যায়। এসব কারণে তাকে বাঁচানো গেল না।’ 

মাসুমা পড়াশোনা করেছেন রাজশাহীর নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে। ২০১৮ সাল দৈনিক সমকালের পাঠক সংগঠন সুহৃদ সমাবেশের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। এ সময় সমকাল সুহৃদ সমাবেশ নর্থ বেঙ্গল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এরপরই তিনি সাংবাদিকতায় যুক্ত হন।

এখন টিভির রাজশাহী ব্যুরো প্রধান রাকিবুল হাসান রাজিব বলেন, মাসুমার মরদেহ নাটোরের গুরুদাসপুরে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। মঙ্গলবার আসর নামাজের পর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। 

স্বজন ও সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করেই ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন মাসুমা ইসলাম। ২০১২ সালে নাটোরের সাইফুজ্জামান সুজনকে বিয়ে করেন। বিয়ের দুই বছরের মাথায় মাসুমা যখন সন্তানসম্ভবা, ঠিক সেই সময় দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন সুজন। এরপর সন্তানকে নিয়ে দুঃখ-হতাশায় কেটে যায় আরও চার বছর। শিশুপুত্রকে দাদা-দাদির কাছে রেখে জীবনের নতুন স্বপ্নে, নতুন লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য রাজশাহী নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে সাংবাদিকতা বিভাগে অনার্সে ভর্তি হন ২০১৬ সালে। ২০২২ সালে সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে যুক্ত হন রাজশাহীর স্থানীয় পত্রিকা বাংলার জনপদে যোগ দেন প্রতিবেদক হিসেবে। নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার শ্রীরামপুর এলাকার বাসিন্দা সৈকত ইসলামের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে যখন স্বামীকে নিয়ে সুখের সংসার করছিলেন মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় না-ফেরার দেশে চলে গেলেন তিনি। 

মাসুমার মা রেহেনা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ের জীবনটাই দুর্ঘটনাময়। ভালোবেসে বিয়ে করেও প্রথমে মেয়েটা স্বামীকে হারায়। যখন নতুন করে ছোট সন্তান ও নতুন সংসার সাজাতে ব্যস্ত, তখনি ঘাতক বাস কেড়ে নিল তার স্বপ্ন। মেয়ের স্মৃতি বলতে এখন শুধু তার সপ্তম শ্রেণিপড়ুয়া ছাত্র মেঘ।’ 

এখন টেলিভিশনে মাসুমা ইসলামের সহকর্মী মাহবুব হোসাইন বলেন, দীর্ঘ সময় বাংলার জনপদে কাজ করেছেন মাসুমা। টেলিভিশনে যুক্ত হয়ে ভালো কাজের মাধ্যমে সবার মন জয় করেছিলেন।

হাইওয়ে কুমিল্লা রিজিয়নের অ্যাডিশনাল ডিআইজি মো.

খাইরুল আলম সমকালকে বলেন, ঘটনাটি ভোরবেলায় ঘটেছে। কোনো প্রত্যক্ষদর্শী গাড়ির বিষয়ে তথ্য দিতে পারেনি। এ ছাড়া যে স্থানে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেখানে কোনো সিসিটিভি নেই। গাড়িটি শনাক্ত করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

এখন টিভির সিনিয়র রিপোর্টার মুজাহিদ শুভ বলেন, ঢাকার বেশ কয়েকটি হাসপাতালে আইসিইউ খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া যায়নি। তাই নারায়ণগঞ্জে আত্মীয় বাড়ি থাকায় সেখানে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল মাসুমাকে।


 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দ র ঘটন ব দ কত অবস থ ইসল ম এখন ট

এছাড়াও পড়ুন:

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য করে চাকরি হারানোর ঝুঁকি কতটা?

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কর্মস্থল নিয়ে মন্তব্য করার আগে চিন্তাভাবনা করা জরুরি। যদিও কর্মীদের কিছু নির্দিষ্ট আইনি সুরক্ষা রয়েছে, তবে বাস্তবতা বেশ জটিল। সম্প্রতি টেসলার এক ব্যবস্থাপক লিংকডইনে ইলন মাস্ক সম্পর্কে সমালোচনামূলক মন্তব্য করার পর চাকরি হারিয়েছেন।

দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কর্মস্থল নিয়ে মন্তব্য করা কর্মীদের জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। নিয়োগকর্তারা সাধারণত কর্মস্থল সম্পর্কে প্রকাশ্যে সমালোচনা পছন্দ করেন না। অনেক প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নীতিমালা রয়েছে, যা লঙ্ঘন করলে কর্মী চাকরিচ্যুত হতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমনকি সহকর্মীর কোনো সমালোচনামূলক পোস্টে ‘লাইক’ দিলেও চাকরির ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

তবে আইন অনুযায়ী কিছু সুরক্ষা কর্মীদের জন্য প্রযোজ্য। তাই চাকরির চুক্তিপত্র ও প্রতিষ্ঠানের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নীতিমালা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখা জরুরি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কর্মস্থল নিয়ে মন্তব্য করার কারণে চাকরি হারানোর আশঙ্কা নির্ভর করে কয়েকটি বিষয়ের ওপর। বিশেষ করে, যদি কেউ অ্যাট-উইল (ইচ্ছানুযায়ী চাকরিচ্যুত করা যেতে পারে) চুক্তির আওতায় কাজ করেন, তাহলে নিয়োগকর্তা যেকোনো সময়, যেকোনো কারণে তাকে বরখাস্ত করতে পারেন। তবে কিছু ব্যতিক্রমও রয়েছে। যেমন, বৈষম্যবিরোধী আইন বা নির্দিষ্ট শর্তযুক্ত চুক্তি। যেখানে চাকরিচ্যুতির নির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব অঙ্গরাজ্যে অ্যাট-উইল কর্মসংস্থানের নিয়ম কার্যকর। তবে মন্টানা একমাত্র ব্যতিক্রম। এ অঙ্গরাজ্যে কর্মী ছাঁটাইয়ের জন্য যৌক্তিক কারণ দেখাতে হয় বলে জানিয়েছে ন্যাশনাল কনফারেন্স অব স্টেট লেজিসলেচারস। এ ছাড়া দেশটির ন্যাশনাল লেবার রিলেশনস অ্যাক্ট অনুযায়ী, কর্মীদের একত্র হয়ে কর্মপরিবেশ ও চাকরির শর্তাবলি নিয়ে আলোচনা করার অধিকার রয়েছে এবং এটি আইনি সুরক্ষার মধ্যে পড়ে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসংস্থান আইন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ক্যাথরিন ফিস্ক বলেন, যদি কোনো কর্মী যুক্তি দিতে পারেন যে তিনি সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন, তাঁদের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন বা তাঁদের স্বার্থে কথা বলছিলেন, তাহলে তাঁর বক্তব্য আইনের আওতায় সুরক্ষিত হতে পারে। অধ্যাপক জেফ্রি হির্শের মতে, এমনকি সহকর্মীর কোনো পোস্টে ‘লাইক’ দেওয়া পর্যন্ত আইনি সুরক্ষার মধ্যে পড়তে পারে। তবে পোস্টটি অবশ্যই কর্মপরিবেশ বা প্রতিষ্ঠানের নীতিমালার মতো বিষয়ে হতে হবে এবং পোস্টটি একাধিক কর্মীর ওপর প্রভাব ফেলে এমন হতে হবে।

তবে সাধারণত, যদি কেউ শুধু ‘আমার বস খারাপ’ বা ‘আমার অফিসে কাজের পরিবেশ বাজে’–এর মতো ব্যক্তিগত মন্তব্য করেন, তাহলে তা আইনি সুরক্ষা পাবে না বলে জানিয়েছেন শ্রম আইন বিশেষজ্ঞ মার্ক ক্লুগার।

সরকারি কর্মচারীরা (যেমন ফেডারেল, স্টেট ও স্থানীয় সরকারি কর্মী) যদি ব্যক্তিগত সময়ে কর্মস্থলের বাইরে থেকে কোনো সামাজিক ইস্যু নিয়ে মতপ্রকাশ করেন এবং সেটি গুরুতরভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে তবে তারা প্রথম সংশোধনী আইনের আওতায় সুরক্ষিত থাকেন। ফিস্ক বলেন, ‘শিক্ষক বা পুলিশ কর্মকর্তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেওয়ার কারণে শাস্তির মুখোমুখি হয়েছেন এমন বহু ঘটনা রয়েছে। যেখানে তারা প্রথম সংশোধনীর অধীনে সুরক্ষা পেয়েছেন।’

প্রতিষ্ঠান কর্মীদের মিথ্যা তথ্য প্রচার করা থেকে বিরত রাখতে পারে। তবে সরাসরি সমালোচনামূলক পোস্ট নিষিদ্ধ করতে পারে না বলে জানিয়েছেন ক্লুগার।

‘ন্যাশনাল লেবার রিলেশনস বোর্ড (এনএলআরবি) অতীতে এমন নীতিমালা পর্যালোচনা করে বলেছে, এগুলো খুব কঠোর। কারণ, এতে কর্মীরা কর্মপরিবেশ নিয়ে মতপ্রকাশের অধিকার হারাতে পারেন।’ তবে কর্মীদের ছাঁটাই না করেও প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য বা সেবার বিরুদ্ধে নেতিবাচক মন্তব্য করতে নিরুৎসাহিত করতে পারে। ক্লুগার বলেন, ‘আমি যখন কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নীতিমালা তৈরি করি, তখন তাদের পরামর্শ দিই—কর্মীদের বোঝানো জরুরি যে তাদের ব্যক্তিগত পোস্ট কীভাবে প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি প্রভাবিত করতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, নীতিমালায় সাধারণত প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অপমানজনক মন্তব্য থেকে বিরত থাকা, প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক গোপনীয়তা ফাঁস না করা এবং কর্মীরা যেন স্পষ্ট করেন যে তাঁদের মতামত প্রতিষ্ঠানের অফিশিয়াল মতামত নয়—এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে।

যদি কোনো কর্মী মনে করেন, তাঁকে অন্যায়ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে, তবে তিনি ন্যাশনাল লেবার রিলেশনস বোর্ডে (এনএলআরবি) অভিযোগ দায়ের করতে পারেন।

অধ্যাপক হির্শ বলেন, ‘সমস্যা হলো, বেশির ভাগ মানুষ এ বিষয়ে জানেন না, এমনকি অনেক আইনজীবীও বুঝতে পারেন না যে কোনো কর্মী এই সুরক্ষা পেতে পারেন।’ অভিযোগ দায়েরের পরে এনএলআরবির একটি আঞ্চলিক অফিস এ বিষয়ে তদন্ত চালাবে এবং নিয়োগকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করবে। যদি নিয়োগকর্তা বিরোধ নিষ্পত্তি না করে, তবে এনএলআরবি বিনা মূল্যে মামলাটি পরিচালনা করবে। যদিও প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ, তবে বিচারক যদি কর্মীর পক্ষে রায় দেন, তাহলে তিনি তার চাকরিতে ফিরে যেতে পারবেন এবং বকেয়া বেতন পাবেন।

সূত্র: সিএনএন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য করে চাকরি হারানোর ঝুঁকি কতটা?
  • ‘ঈদের চাঁদ আকাশে সালামি দিন বিকাশে’