সড়কে প্রতিবাদী দম্পতিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে জখম
Published: 19th, February 2025 GMT
সড়কের পাশের একটি বাড়ির দেয়ালঘেঁষা ফুটপাতে দুই নারী-পুরুষকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাচ্ছে এক যুবক। আঘাত থেকে বাঁচতে পুরুষ বাঁ দিকে এবং নারী ডান দিকে সরে যান। হামলাকারী এবার বাঁ দিকে ছুটে গেলে পুরুষটি আবার পেছনে ফিরে আসেন। তখন নারী গিয়ে তাঁর সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে কোপ থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। আতঙ্কে চিৎকার করতে থাকেন দু’জনই।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ১৩ সেকেন্ডের এক ভিডিওতে দৃশ্যটি দেখা গেছে। প্রকাশ্যে এমন ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে গত সোমবার রাতে রাজধানীর উত্তরায়। গুরুতর আহত মেহেবুল হাসান ও তাঁর স্ত্রী নাসরিন আক্তার ইপ্তি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তারা বাড্ডার আফতাবনগর এলাকায় থাকেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নাসরিন উত্তরা পশ্চিম থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করেছেন। গ্রেপ্তার করা হয়েছে জড়িত তিনজনকে।
মামলার এজাহারের বর্ণনা থেকে জানা যায়, সোমবার রাত আনুমানিক ৯টার দিকে উত্তরার আমির কমপ্লেক্স থেকে কেনাকাটা সেরে বাসায় ফিরছিলেন মেহেবুল ও নাসরিন। পথে উত্তরা-৭ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর সড়কের ১০ নম্বর বাসার সামনে পৌঁছলে ঘটনার সূত্রপাত। তখন তিনজন দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে বিকট শব্দ করে দ্রুতগতিতে এলোমেলোভাবে চালিয়ে যাচ্ছিল। এর মধ্যে মোবারক হোসেনের মোটরসাইকেল সামনে থাকা রিকশাকে ধাক্কা দিলে যাত্রীর সঙ্গে তার বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়। রিকশার পেছনে থাকা ভুক্তভোগী দম্পতি তাদের ঝামেলা করতে নিষেধ করে।
এতে ক্ষিপ্ত সন্ত্রাসীরা তাদের মারধর শুরু করে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত সজিব মোবাইল ফোনে কল করে তার সহযোগীদের আসতে বলে। আনুমানিক ১০ মিনিট পর চার-পাঁচ সন্ত্রাসী রামদাসহ সেখানে হাজির হয়। তারা লোকজনের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মেহেবুলকে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। এ সময় ইপ্তি তাঁর স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে সন্ত্রাসীরা তাঁকেও রামদা দিয়ে আঘাত করে। খবর পেয়ে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশের একটি টহল দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয়দের সহায়তায় দু’জনকে গ্রেপ্তার করে।
ঘটনাস্থলের পাশে থাকা ফ্লেক্সিলোড ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জানান, সন্ত্রাসীদের মোটরসাইকেল একটি রিকশায় ধাক্কা দিলে আরোহী দুই নারী-পুরুষ নেমে প্রতিবাদ করেন। তখন পাশে মোটরসাইকেলে থাকা অপর দম্পতিও এর প্রতিবাদ করলে দু’পক্ষের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়। পরে সন্ত্রাসীরা ফোন করে তাদের সহযোগীদের ডেকে এনে ওই দম্পতিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে জখম করে। আহতদের চিৎকারে পথচারীসহ স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে দুই সন্ত্রাসীকে আটক করে পিটুনি দেয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। তবে তারা পুলিশের হাতে সন্ত্রাসীদের তুলে দিতে রাজি হননি। পরে তাদের সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়।
ঘটনার ভিডিও দেখে লোকজন উত্তরাসহ দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সেই সঙ্গে প্রশংসায় ভাসছেন সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের মুখে স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা চালানো ইপ্তি। সবাই তাঁর সাহসকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
কয়েকজনের অভিযোগ, জনতা সন্ত্রাসীদের আটক করে সোপর্দ করতে চাইলেও প্রথমে পুলিশ তাদের নিতে গড়িমসি করে। ঘটনাস্থলের অদূরে ভ্যানে সবজি বিক্রি করেন রাসেল। তিনি বলেন, শুরুতেই সন্ত্রাসীদের আটক করলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। আশপাশের বাড়ির দারোয়ানরা এ দৃশ্য দেখেও প্রথমে এগিয়ে আসেননি।
প্রকাশ্যে সন্ত্রাসীদের এমন বেপরোয়া কর্মকাণ্ড দেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তারা বলছেন, উত্তরার মতো অভিজাত এলাকার সড়কে যদি নিরাপত্তার এই হাল হয়, তাহলে মানুষ চলাফেরা করবে কীভাবে? এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, নগরে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কতটা ফাঁকফোকর রয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.
উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি হাফিজুর রহমান সমকালকে বলেন, দম্পতির ওপর হামলার ঘটনায় অন্তত সাতজন জড়িত ছিল। তাদের মধ্যে দু’জনকে উপস্থিত লোকজনের সহায়তায় ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলো মোবারক ও রবি রায়। পরে গতকাল আলফাজ নামে আরেকজনকে আবদুল্লাহপুর থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই আলফাজই দম্পতিকে কুপিয়েছিল। জড়িত বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। এ ঘটনায় মামলা করেছেন আহত নাসরিন আক্তার। সোমবার গ্রেপ্তার দু’জনকে গতকাল এই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জখম গ র প ত র কর ল কজন
এছাড়াও পড়ুন:
বৈদ্যুতিক ফাঁদে প্রাণ গেল দম্পতির
শরীয়তপুরের জাজিরায় বণ্যপ্রাণী থেকে ফসল বাঁচানোর জন্য তৈরি বৈদ্যুতিক ফাঁদে স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকালে উপজেলার বালিয়াকান্দি এলাকায় ঘটনাটি ঘটে।
পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ওসি নকিব আকরাম হোসেন বিদ্যুৎস্পৃষ্টে দুইজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মারা যাওয়ার হলেন- বালিয়াকান্দি এলাকার ইদ্রিস খাঁ (৬৫) ও তার স্ত্রী শেফালী বেগম (৬০)।
আরো পড়ুন:
মসজিদে হামলার ঘটনায় আহত ইব্রাহীমের মৃত্যু
কিশোরগঞ্জে ২ স্কুলছাত্রের মৃত্যু, সড়ক অবরোধ
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইদ্রিস খাঁ সম্প্রতি তার বাড়ির অদূরে একটি জমিতে ভুট্টা চাষ করেছিলেন। বণ্যপ্রাণী সজারু থেকে ভুট্টা বাঁচানোর জন্য তারের সাহায্যে জমিতে বৈদ্যুতিক সংযোগ দিয়েছিলেন তিনি। আজ সকালে জমিতে দেওয়া বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করে ইদ্রিস খাঁ ও তার স্ত্রী শেফালী বেগম একসঙ্গে ভুট্টা ক্ষেতে যান। এসময় অসাবধানবশত ইদ্রিস খাঁ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মাটিতে পড়ে গেলে স্ত্রী সেফালী বেগম তাকে বাঁচাতে এগিয়ে যান। স্বামীকে স্পর্শ করলে তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। পরিবারের লোকজন তাদের মৃত অবস্থায় দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার করে।
পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ওসি নকিব আকরাম হোসেন বলেন, “বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়েছে পুলিশ। মরদেহের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হবে। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা/সাইফুল/মাসুদ