বাংলাদেশের কাছে ভবিষ্যতেও সমরাস্ত্র বিক্রিতে আগ্রহী চীন
Published: 19th, February 2025 GMT
চীন দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর জন্য সমরাস্ত্র সরবরাহ করে আসছে। নিজেদের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণের পাশাপাশি বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে অস্ত্র বিক্রি করা হয় বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। তিনি জানান, বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করা তাঁদের সমরাস্ত্র সেরা ও সাশ্রয়ী। চীন ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের কাছে সমরাস্ত্র বিক্রি করতে আগ্রহী।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকায় চীনা দূতাবাস আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে চীনের রাষ্ট্রদূত এ তথ্য জানান।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো.
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সমরাস্ত্র সংগ্রহের অন্যতম প্রধান উৎস চীন। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সরঞ্জাম সংগ্রহে বিশ্বের নানা প্রান্তের দেশগুলোতে নজর দিচ্ছিল। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং তুরস্ক এখন বাংলাদেশে সমরাস্ত্র সরবরাহে আগ্রহী। এই পরিস্থিতিতে চীন কোনো রকম প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে কি না, জানতে চাইলে ইয়াও ওয়েন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের কাছে চীন বিপুল সংখ্যক সমরাস্ত্র সরবরাহ করেছে। সমরাস্ত্র সরবরাহের ক্ষেত্রে চীন নিজের দেশের প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অনুসরণের পাশাপাশি বাংলাদেশের জাতীয় পরিস্থিতিকে বিবেচনায় রেখেছে; যা বাংলাদেশের উপযোগী। চীনের তৈরি সমরাস্ত্রগুলো সেরা, যা দামেও সাশ্রয়ী। এমন এক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে সমরাস্ত্র সরবরাহের ক্ষেত্রে অন্য কারও প্রতিযোগিতার মুখে পড়ছে না চীন।
তিস্তার বিষয়ে চীন প্রস্তুত আছেআলোচিত তিস্তা প্রকল্পে চীনের যুক্ততার বিষয়ে জানতে চাইলে ইয়াও ওয়েন বলেন, তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে চীন প্রস্তুত আছে। তবে প্রকল্পটা কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, সেই সিদ্ধান্ত স্বাধীনভাবে বাংলাদেশকেই নিতে হবে। এই নদীর তীরে বসবাসকারী হাজার হাজার মানুষের কল্যাণে তিস্তা প্রকল্প যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করতে হবে।
তবে বাংলাদেশে যেভাবে তিস্তা বৃহদায়তন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায়, চীন এমন ভাবনার সঙ্গে একমত নয়। রাষ্ট্রদূতের মতে, প্রকল্পটি একসঙ্গে বাস্তবায়ন না করে ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা উচিত।
ইয়াও ওয়েন বলেন, বাংলাদেশ ২০২১ সালে একটি প্রস্তাব পাঠিয়ে তিস্তা প্রকল্পে চীনের সহায়তা চেয়েছিল। চীন প্রকল্পটি মূল্যায়ন করে ২০২৩ সালে বাংলাদেশ সরকারের কাছে পাল্টা প্রস্তাবে জানায়, প্রকল্পটি সংশোধন করা উচিত। তবে এরপর বাংলাদেশের কাছ থেকে ফিরতি কোনো প্রস্তাব পায়নি চীন।
দুই দেশের ভবিষ্যৎ সহযোগিতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, ৫০ বছর ধরে অভিন্ন স্বার্থে একে অপরকে সহযোগিতা করে আসছে দুই দেশ। একে অপরের প্রতি সম্মান, সাম্য এবং অভিন্ন স্বার্থ সামনে রেখে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি যা–ই থাকুক না কেন, বাংলাদেশ ও সব বাংলাদেশির সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখাটাই চীনের নীতি। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় ঐক্য সুরক্ষায় সহযোগিতা করবে চীন।
ইয়াও ওয়েন বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর করেন চীনে। যা দুই দেশের রাজনৈতিক সহযোগিতারা স্পষ্ট বার্তা দেয়।
৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের পর টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক। এটা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে কতটা প্রভাব ফেলবে—জানতে চাইলে ইয়াও ওয়েন বলেন, এ প্রশ্ন চীন নয়, ভারতের রাষ্ট্রদূতকে করা উচিত। চীনের প্রত্যাশা, দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে।
ঢাকা-দিল্লির উত্তেজনা কমাতে প্রতিবেশী হিসেবে চীন মধ্যস্থতা করবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমি মনে করি, নিজেদের সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশিরা যথেষ্ট বিচক্ষণ।’
বাংলাদেশের পাঠ্যবই এবং সরকারি ওয়েবসাইটে মানচিত্রের বিষয়ে চীনের আপত্তি নিয়ে জানতে চাইলে ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘বাংলাদেশের পাঠ্যবইয়ে ও ওয়েবসাইটে চীন-অরুণাচল সীমান্তের ভুল মানচিত্রের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে বিষয়টি তুলে ধরেছি। আমরা এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সমর্থন চাই।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সমর স ত র স পর স থ ত সহয গ ত প রকল প সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ইলিশ: দাম স্বাভাবিক, ক্রেতা কম
বাংলা নববর্ষ উদযাপনে পান্তা ইলিশের একটি রেওয়াজ আছে। প্রতি বছর পয়লা বৈশাখ এলে বাজারে ইলিশের চাহিদা ও দাম বেড়ে যায়। কিন্তু এবার বাজারে বড় সাইজের ইলিশের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক থাকলেও ক্রেতা কম বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।
রবিবার (১৩ এপ্রিল) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাছ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক কেজি বা একটু বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা, ৭০০ থেকে ৯০০ গ্রামের ইলিশ ১ হাজার ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং ৪০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকায়।
কারওয়ান বাজারে পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে ইলিশ মাছ কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী সুইটি রানী রাইজিংবিডিকে বলেন, “পয়লা বৈশাখে পান্তা ইলিশ না খেলে নববর্ষ উদযাপন হবে কী করে? তাই স্বামীকে নিয়ে ইলিশ নিতে এসেছি। এখানে ভালো মানের ইলিশ পাওয়া যায়। আমি এক কেজি ওজনের দুটি ইলিশ নিয়েছি। আমার কাছ থেকে চার হাজার টাকা রেখেছে। গত সপ্তাহেও এই দামে নিয়েছি।”
আরো পড়ুন:
কড়া নাড়ছে ঈদ, চলছে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা
শেষ মুহূর্তে জমজমাট ঈদের কেনাকাটা
সাজ্জাদুল ইসলাম নামের আরেকজন ক্রেতা রাইজিংবিডিকে বলেন, “আমাদের অফিসের জন্য ১৫ কেজি ইলিশ নিয়েছি। অফিসের সবাই ইলিশ দিয়ে নববর্ষ উদযাপন করব। ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম রেখেছে ১ হাজার ৬০০ টাকা করে। অন্য সময় হয়তো ১ হাজার ৫০০ তে পেতাম। তবে এখানকার মাছগুলো টাটকা।”
পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে ইলিশ মাছ কিনতে আসা কাইয়ুম মজুমদার রাইজিংবিডিকে বলেন, “এবার বাজারে অন্য বছরের তুলনায় ইলিশের দাম কম দেখলাম। বড় ইলিশ ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা মধ্যে। কিন্তু যারা মধ্যবিত্ত রয়েছে তাদের পক্ষে এই দামেও ইলিশ কেনা সম্ভব না।”
কারওয়ান বাজারে সুজন মৎস্য আড়ৎ এর স্বত্বাধিকারী মো. সুজন সিকদার রাইজিংবিডিকে বলেন, “বাজারে এখন পর্যাপ্ত পরিমাণ ইলিশ সরবরাহ থাকার কারণে পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে ইলিশের দাম বাড়েনি। আগের দামে বিক্রি হচ্ছে। নদীর ইলিশের চাহিদা বেশি। এখন ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। তবে আগে যেমন পয়লা বৈশাখে বাজারে ভিড় থাকত। এ বছর ভিড় দেখছি না, বিক্রিও কম।”
বাবুল মৎস্য আড়ৎ এর ইলিশ বিক্রেতা বাবুল মোল্লা রাইজিংবিডিকে বলেন, “এবার বাজারে ইলিশের দাম স্বাভাবিক রয়েছে। এর অন্যতম কারণ বড় ইলিশ মাছের সরবরাহ ঠিক আছে।”
ঢাকা/রায়হান/সাইফ