তিস্তার পানির ব্যাপারে প্রতিবেশী দেশ নদীর উজানে বাঁধ নির্মাণ করে অপ্রতিবেশীসুলভ আচরণ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, ফারাক্কার অভিশাপ থেকে গত ৫০ বছরেও বাংলাদেশ মুক্ত হয়নি। এর মধ্যে তিস্তা নদী অভিশপ্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে বিএনপি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে। এ ছাড়া তিস্তার পাশাপাশি নদীগুলোকে খননসহ পানি সংরক্ষণাগার ও জলাধার নির্মাণ করা হবে। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের খাল কাটা প্রকল্প শুরু করা হবে। তিস্তাপারের মানুষের আন্দোলন বৃথা যাবে না। বিএনপি ক্ষমতায় এলে আগে তিস্তা সমস্যার সমাধান করা হবে। এ জন্য বিএনপির প্রতি আপনাদের সমর্থন দরকার।

মঙ্গলবার বিকেলে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের দাবিতে বৃহত্তর রংপুরের পাঁচ জেলায় আয়োজিত দু’দিনব্যাপী অবস্থান কর্মসূচির সমাপনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তারেক রহমান। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, প্রতিবেশী দেশ যদি পানির ন্যায্য হিস্যা না দেয়, কিংবা তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সায় না দেয়, তাহলে আমাদেরই বাঁচার পথ খুঁজে নিতে হবে। আন্তর্জাতিক আইনে জাতিসংঘসহ সব ফোরামে এই তিস্তার সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। তাই এখনকার শপথ ও স্লোগান হলো– ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাও, জাগো বাহে দেশ বাঁচাও’। 

তিনি আরও বলেন, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’– আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল স্লোগান বা ভিত্তি। কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে এই স্লোগান বা নীতিটি পুনর্বিবেচনা করা দরকার। বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ আর কাঁটাতারে ফেলানীর ঝুলন্ত লাশ দেখতে চায় না, সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশিদের রক্তাক্ত মরদেহ আর দেখতে চায় না।

লন্ডন থেকে তারেক রহমানের এই বক্তব্য নদীপারের ১১টি পয়েন্টে একযোগে সম্প্রচার করা হয়। তিস্তাপারে ৪৮ ঘণ্টা লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির সমাপনী অনুষ্ঠানে তিস্তা রেলসেতু এলাকায় তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলুর সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.

) হাফিজ উদ্দিন আহমদসহ স্থানীয় বিএনপির নেতারা। 

বিকেলে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার থেতরাই এলাকায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের কর্মসূচিতে যোগ দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, পানির অভাবে বাংলাদেশে ১৫ লাখ টন চাল কম উৎপাদন হচ্ছে। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার দাবি আন্তর্জাতিকভাবে ন্যায্য। বিএনপি এটার সমাধানে এ আন্দোলন শুরু করেছে। পানি যতদিন না আসবে, এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। 

এ সময় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান, সদস্য সচিব সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ, যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম বেবু, হাসিবুর রহমান হাসিবসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। 

তিস্তা ব্যারাজের নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে যোগ দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, তিস্তার পানি ন্যায্য একটা দাবি। তার পরও যুগ যুগ ধরে অপেক্ষা করেও মিলছে না। এখন আর স্বৈরাচার সরকার নেই, আর একটু ধৈর্য ধরুন। তিস্তা সমস্যার সমাধান হবে। এ সময় নীলফামারী জেলা বিএনপির সভাপতি আলমগীর সরকার, সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আলমসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। 

রংপুরের গঙ্গাচড়ার মহিপুর সেতু পয়েন্টে যোগ দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন বীরবিক্রম বলেছেন, তিস্তা নদীর পানি একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে ভারত। এই পানি আমাদের ন্যায্য অধিকার। এই কথাটি অতীতের ফ্যাসিস্ট সরকার বলিষ্ঠভাবে তুলে ধরতে পারেনি। 
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক ও রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামুর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মামুন। 

নদীপারে অভিনব প্রতিবাদ
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের দাবিতে ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে কর্মসূচির শেষ দিনে মঙ্গলবার নদীপারে পদযাত্রাসহ অভিনব প্রতিবাদ জানিয়েছেন তিস্তাপারের মানুষ। দিনভর আলোচনা, গ্রামীণ খেলাধুলা, গান-বাজনাসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে মেতে থাকেন তারা। বেলা ১১টায় পদযাত্রা করেছে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন। নদীপারের রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও লালমনিরহাটের ১১টি পয়েন্টে এই পদযাত্রা কর্মসূচি চলে। কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে অংশ নেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। তিস্তা রেলসেতুর লালমনিরহাট অংশে এই পদযাত্রায় নেতৃত্ব দেন তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলু। এ সময় তিস্তা নদীতে নেমে ভারতের পানি আগ্রাসনের প্রতিবাদ জানান আন্দোলনকারীরা। 
আসাদুল হাবীব দুলু বলেন, আমরা বহমান তিস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়েছি, কিন্তু পানি নেই। মরুভূমির দ্বারপ্রান্তে এখন তিস্তা অববাহিকা। দু’দিন ধরে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা দাবি করে যাচ্ছি। 
(প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা)

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ ব এনপ র স থ য় পদয ত র ন ব এনপ সমস য রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপি ক্ষমতায় এলে আগে তিস্তা সমস্যার সমাধান

তিস্তার পানির ব্যাপারে প্রতিবেশী দেশ নদীর উজানে বাঁধ নির্মাণ করে অপ্রতিবেশীসুলভ আচরণ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, ফারাক্কার অভিশাপ থেকে গত ৫০ বছরেও বাংলাদেশ মুক্ত হয়নি। এর মধ্যে তিস্তা নদী অভিশপ্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে বিএনপি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে। এ ছাড়া তিস্তার পাশাপাশি নদীগুলোকে খননসহ পানি সংরক্ষণাগার ও জলাধার নির্মাণ করা হবে। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের খাল কাটা প্রকল্প শুরু করা হবে। তিস্তাপারের মানুষের আন্দোলন বৃথা যাবে না। বিএনপি ক্ষমতায় এলে আগে তিস্তা সমস্যার সমাধান করা হবে। এ জন্য বিএনপির প্রতি আপনাদের সমর্থন দরকার।

মঙ্গলবার বিকেলে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের দাবিতে বৃহত্তর রংপুরের পাঁচ জেলায় আয়োজিত দু’দিনব্যাপী অবস্থান কর্মসূচির সমাপনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তারেক রহমান। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, প্রতিবেশী দেশ যদি পানির ন্যায্য হিস্যা না দেয়, কিংবা তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সায় না দেয়, তাহলে আমাদেরই বাঁচার পথ খুঁজে নিতে হবে। আন্তর্জাতিক আইনে জাতিসংঘসহ সব ফোরামে এই তিস্তার সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। তাই এখনকার শপথ ও স্লোগান হলো– ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাও, জাগো বাহে দেশ বাঁচাও’। 

তিনি আরও বলেন, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’– আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল স্লোগান বা ভিত্তি। কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে এই স্লোগান বা নীতিটি পুনর্বিবেচনা করা দরকার। বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ আর কাঁটাতারে ফেলানীর ঝুলন্ত লাশ দেখতে চায় না, সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশিদের রক্তাক্ত মরদেহ আর দেখতে চায় না।

লন্ডন থেকে তারেক রহমানের এই বক্তব্য নদীপারের ১১টি পয়েন্টে একযোগে সম্প্রচার করা হয়। তিস্তাপারে ৪৮ ঘণ্টা লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির সমাপনী অনুষ্ঠানে তিস্তা রেলসেতু এলাকায় তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলুর সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদসহ স্থানীয় বিএনপির নেতারা। 

বিকেলে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার থেতরাই এলাকায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের কর্মসূচিতে যোগ দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, পানির অভাবে বাংলাদেশে ১৫ লাখ টন চাল কম উৎপাদন হচ্ছে। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার দাবি আন্তর্জাতিকভাবে ন্যায্য। বিএনপি এটার সমাধানে এ আন্দোলন শুরু করেছে। পানি যতদিন না আসবে, এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। 

এ সময় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান, সদস্য সচিব সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ, যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম বেবু, হাসিবুর রহমান হাসিবসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। 

তিস্তা ব্যারাজের নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে যোগ দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, তিস্তার পানি ন্যায্য একটা দাবি। তার পরও যুগ যুগ ধরে অপেক্ষা করেও মিলছে না। এখন আর স্বৈরাচার সরকার নেই, আর একটু ধৈর্য ধরুন। তিস্তা সমস্যার সমাধান হবে। এ সময় নীলফামারী জেলা বিএনপির সভাপতি আলমগীর সরকার, সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আলমসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। 

রংপুরের গঙ্গাচড়ার মহিপুর সেতু পয়েন্টে যোগ দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন বীরবিক্রম বলেছেন, তিস্তা নদীর পানি একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে ভারত। এই পানি আমাদের ন্যায্য অধিকার। এই কথাটি অতীতের ফ্যাসিস্ট সরকার বলিষ্ঠভাবে তুলে ধরতে পারেনি। 
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক ও রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামুর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মামুন। 

নদীপারে অভিনব প্রতিবাদ
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের দাবিতে ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে কর্মসূচির শেষ দিনে মঙ্গলবার নদীপারে পদযাত্রাসহ অভিনব প্রতিবাদ জানিয়েছেন তিস্তাপারের মানুষ। দিনভর আলোচনা, গ্রামীণ খেলাধুলা, গান-বাজনাসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে মেতে থাকেন তারা। বেলা ১১টায় পদযাত্রা করেছে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন। নদীপারের রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও লালমনিরহাটের ১১টি পয়েন্টে এই পদযাত্রা কর্মসূচি চলে। কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে অংশ নেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। তিস্তা রেলসেতুর লালমনিরহাট অংশে এই পদযাত্রায় নেতৃত্ব দেন তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলু। এ সময় তিস্তা নদীতে নেমে ভারতের পানি আগ্রাসনের প্রতিবাদ জানান আন্দোলনকারীরা। 
আসাদুল হাবীব দুলু বলেন, আমরা বহমান তিস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়েছি, কিন্তু পানি নেই। মরুভূমির দ্বারপ্রান্তে এখন তিস্তা অববাহিকা। দু’দিন ধরে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা দাবি করে যাচ্ছি। 
(প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা)

সম্পর্কিত নিবন্ধ