হাসিনা ছিলেন মানবতাবিরোধী অপরাধের ‘সুপিরিয়র কমান্ডার’
Published: 18th, February 2025 GMT
গণ–অভ্যুত্থানের সময় গত বছরের ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। আর ওই মানবতাবিরোধী অপরাধের ‘সুপিরিয়র কমান্ডার’ (সর্বোচ্চ নির্দেশদাতা) ছিলেন শেখ হাসিনা। তাঁর বিরুদ্ধে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের এক মামলার শুনানিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে বিষয়টি তুলে ধরেছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
এ মামলায় শেখ হাসিনার বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে আরও দুই মাস সময় দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আগামী ২০ এপ্রিল প্রসিকিউশনকে (চিফ প্রসিকিউটরের নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা) তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়ে বিচারপতি মো.
এর আগে শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়ে তদন্ত শেষ পর্যায়ে। এর মধ্যেই জাতিসংঘ প্রতিবেদন (সম্প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদন) দিয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে এটি যুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ সারা দেশে সংঘটিত হয়েছে। তদন্ত সংস্থা এখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছে। সেখানে অনেক নতুন তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাচ্ছে। তৎকালীন সরকারের শীর্ষ ব৵ক্তিদের কল রেকর্ড রয়েছে। সেসবও হাজির করা হবে। সবকিছু তদন্তে না এলে অপূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন হবে। সে জন্য প্রয়োজনীয় সময় লাগবে। ট্রাইব্যুনালের কাছে তাঁরা দুই মাস সময়ের আবেদন করলেও এর চেয়ে কম সময়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি।
তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, অসম্পন্ন তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন না। সময় লাগলে আরও সময় নেন। এরপর ট্রাইব্যুনাল দুই মাস সময় মঞ্জুর করেন।
গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ১৪ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর ১৭ অক্টোবর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে ১৮ নভেম্বরের মধ্যে তাঁকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৮ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালের শুনানিতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য প্রসিকিউশনকে প্রথমে এক মাস সময় দেওয়া হয়। এরপর আরও দুই মাস সময় দেওয়া হয়। সেই হিসাবে প্রতিবেদন দাখিলের দিন নির্ধারিত ছিল গতকাল। সবশেষে আরও দুই মাস সময় বৃদ্ধি করেন ট্রাইব্যুনাল।
সাবেক মন্ত্রীসহ ১৬ আসামি ট্রাইব্যুনালেগণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের আরেকটি মামলায় ওবায়দুল কাদেরসহ বিগত সরকারের মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য ও আমলাসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গত ১৭ অক্টোবর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। এই মামলারও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে এ পর্যন্ত তিনবার সময় বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় আরও দুই মাস বাড়িয়ে আগামী ২০ এপ্রিল নির্ধারণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
এই মামলার ৪৫ আসামির মধ্যে গতকাল ১৬ জনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তাঁদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী, সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন ১৪ জন। তাঁরা হলেন আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান, তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, আমির হোসেন আমু, মো. আব্দুর রাজ্জাক, মুহাম্মদ ফারুক খান, দীপু মনি, গোলাম দস্তগীর গাজী, শাজাহান খান, কামরুল ইসলাম, জুনাইদ আহ্মেদ ও কামাল আহমেদ মজুমদার। অন্য দুজন হলেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও সাবেক সচিব মো. জাহাংগীর আলম।
শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের ‘সুপিরিয়র কমান্ডার’ শেখ হাসিনার পরের ধাপেই রয়েছেন এই ৪৫ আসামি। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়েছে, সেসব এই ৪৫ জনের বিরুদ্ধেও প্রযোজ্য।
আনিসুল হকসহ ১৬ আসামিকে ট্রাইব্যুনালে (পুরোনো হাইকোর্ট ভবনে) আনা হয় গতকাল সকাল ১০টার দিকে। এর এক ঘণ্টা পর তাঁদের ট্রাইব্যুনালের এজলাসে নেওয়া হয়। শুনানি শেষে আবার কারাগারে ফিরিয়ে নিতে বেলা দেড়টার দিকে তাঁদের প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়।
প্রিজন ভ্যানে ওঠার সময় সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘ভাই, লড়াই করে বাঁচতে হবে...।’
সোলাইমানকে হাজিরের নির্দেশঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সোলাইমান সেলিমকে আগামী ২০ এপ্রিল হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। তিনি এখন অন্য মামলায় গ্রেপ্তার আছেন। তাঁর বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর ট্রাইব্যুনালকে বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের সময় সোলাইমান পুরান ঢাকায় নৃশংসতা চালিয়েছেন।
হুমকি পাওয়ার কথা জানালেন পান্নাট্রাইব্যুনালে গতকাল আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না। উপস্থিত ১৬ আসামির কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে সবার আইনজীবী হিসেবে তিনি ওকালতনামা তুলে ধরেন।
ট্রাইব্যুনালের উদ্দেশে জেড আই খান পান্না বলেন, সকালে (গতকাল) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর মৃত্যুর খবর বেরিয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাসায় ফোন করে তাঁকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ট্রাইব্যুনালের কাছে তিনি আবেদন জানান।
ট্রাইব্যুনালের কাছে নিজেকে ‘উজান গাঙের নাইয়া’ হিসেবে উল্লেখ করে জেড আই খান পান্না বলেন, ক্ষমতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে তিনি চলতে পারেন না।
‘লর্ডশিপ বলতে হবে না’ট্রাইব্যুনালকে গতকাল ‘লর্ডশিপ’ বলে সম্বোধন করেন জেড আই খান পান্না। পরে অবশ্য নিজেই এর বিপক্ষে কথা বলেন। ট্রাইব্যুনালের উদ্দেশে তিনি বলেন, মানুষ মানুষের প্রভু হতে পারে না।
তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, তাঁরাও লর্ডশিপ বা মাই লর্ড বলার পক্ষে নন। তবে ট্রাইব্যুনালকে সম্বোধন করার জন্য ‘হাইনেস’, ‘ম্যাজিস্ট্রি’, ‘ইওর অনার’সহ অনেক প্রতিশব্দ রয়েছে। এসব বিকল্প শব্দ ব্যবহার করতে বলেছেন ট্রাইব্যুনাল।
জামিনের পক্ষে নয় প্রসিকিউশনট্রাইব্যুনালের শুনানি শেষে গতকাল দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। জামিন আবেদন প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আবেদন নির্ধারিত তারিখে শুনানির জন্য আসবে। বিচার শেষ হওয়ার আগে জামিন দেওয়ার কোনো সুযোগ আছে বলে মনে করেন না; কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ট্রাইব্যুনালের। তবে চিফ প্রসিকিউশন কার্যালয় জামিনের বিরোধিতা করবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, তাঁরা (আসামিরা) টেলিফোনে ছাত্র–জনতাকে নির্মূল করার কথা বলেছেন, সব টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলেছেন। তাঁদের অজ্ঞাতেই সেগুলো রেকর্ড হয়েছে, যা প্রসিকিউশনের হাতে এসেছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম নবত ব র ধ ত জ ল ইসল ম আরও দ ই ম স দ ই ম স সময় হ জ র কর অপর ধ র মন ত র র জন য র সময় সদস য সরক র গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন আয়োজিত উন্মুক্ত কনসার্ট স্থগিত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে হতে যাওয়া ‘রিবিল্ডিং দ্য নেশন’ কনসার্টটি হঠাৎ স্থগিত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে স্থগিতের বিষয়টি আয়োজকরা নিশ্চিত করেছেন।
তবে হঠাৎ করেই একদিন আগে কেন আলোচিত এ কনসার্টটি স্থগিত করা হলো সে বিষয়টি দায়িত্বশীল কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে আয়োজকদের একজন জানিয়েছেন নিরাপত্তা ইস্যুতে আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পুরোনো বাণিজ্য মেলা মাঠ, আগারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। আয়োজকরা জানান, নিরাপত্তার কারণে কনসার্টটি স্থগিত করা হয়েছে। তবে কখন কনসার্টটি হবে তা নিয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে এর আগে বলা হয়, ‘এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ উন্মুক্ত কনসার্ট হতে যাচ্ছে। কনসার্ট ভেন্যুতে কয়েক লাখ মানুষ একসঙ্গে নিরাপদে গান শুনতে পারবে।
‘তাদের সামনে দেশের বিভিন্ন ব্যান্ড গান পরিবেশন করবে। আমরা দেশীয় শিল্পীদের নিয়ে কনসার্টের লাইনআপ সাজিয়েছি; যারা আন্দোলনের সময় নিজেদের ক্যারিয়ারের চিন্তা না করে আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন।’
প্রসঙ্গত, এই কনসার্টে প্রধান আকর্ষণ হিসেবে গান গাওয়ার কথা ছিল নগর বাউল জেমস। আরও গান শোনানোর কথা ছিল ব্যান্ড চিরকুট, আর্টসেল, সোনার বাংলা সার্কাস, বেঙ্গল সিম্ফনি, বাংলা ফাইভ, ক্রিপটিক ফেইট, কুঁড়েঘর, কাকতাল, সংগীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ানসহ অনেকে।