বাঁধ নির্মাণ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন নেত্রকোনা সদর উপজেলার কালিয়ারা গাবরাগাতি ইউনিয়নের কৃষকরা। ফসলি জমির উর্বর মাটি কাটা বন্ধের দাবিও জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
অভিযোগ রয়েছে, বাঁধ নির্মাণের নামে ঠিকাদারের লোকজন কৃষকদের প্রলুব্ধ করে ফসলি জমির উর্বর মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এতে জমির টপ সয়েল বিনষ্টের পাশাপাশি পরিবেশেরও 
বিপর্যয় ঘটছে। মাটির ন্যায্য মূল্যও পাচ্ছেন না সহজ-সরল কৃষক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নেত্রকোনার সোমেশ্বরী নদী থেকে ধনারখাল-কুমারপুর-নওয়াপাড়া বালস খালের উৎপত্তি। খালটি সিধলী বাজার থেকে সদর উপজেলার কালিয়ারা গাবরাগাতি ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে ৬ কিলোমিটার গিয়ে কংস নদে মিলিত হয়েছে। আশির দশক পর্যন্ত কৃষিতে অসামান্য অবদান ছিল কুমারপুর-নোয়াপাড়া খালের। কিন্তু নব্বই দশকের শুরু থেকে অপরিণামদর্শী লোকজনের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে খালের ওপর। তাদের দখল-দূষণের শিকার হয়ে আড়াআড়ি বাঁধ নির্মাণ ও মাটি ভরাটের 
কারণে বিপন্ন হতে থাকে খালটি। গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে খালটির সংস্কারে কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। কিন্তু অপরিকল্পিত কাজ ও বরাদ্দের টাকা লুটপাটের কারণে বেহাল অবস্থায়ই থেকে যায় খালটি। গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে খালের বিদ্যমান আড়াআড়ি বাঁধগুলো অপসারণ 
না করেই পানি উন্নয়ন বোর্ড এলাকার প্রভাবশালী কিছু লোকের সহায়তায় জীবন রক্ষার নামে বাঁধ নির্মাণের কাজে হাত দেয়। ৪ দশমিক ৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বাঁধ নির্মাণে ব্যয়-বরাদ্দের পরিমাণ ৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা। 
সারোয়ার-বেলার (জেবি) ও প্রীতম এন্টারপ্রাইজ-হেলাল উদ্দীন (জেবি) নামে দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে বাঁধের নির্মাণ কাজ 
শুরু করেছে।
কথা হয় কালিয়ারা গাবরাগাতি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা কৃষক দলের সভাপতি সালাউদ্দীন খান মিলকী, কুমারপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য হাসেন আলী ফকির, আবু তাহের, পাটলী গ্রামের শহিদুল বারেকের সঙ্গে। তাদের ভাষ্য, বাঁধটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে কালিয়ারা গাবরাগাতি ইউনিয়নের কুমারপুর, পাটলি ও নাড়িয়াপাড়াসহ প্রায় ২৫টি গ্রামে বর্ষার শুরুতেই জলাবদ্ধতা দেখা দেবে। এ ছাড়া বোরো ও আমন উৎপাদন ব্যাহতসহ মানুষের ঘর-বাড়ি ও গবাদি পশুর ক্ষতি হবে। এলাকাবাসীর জন্য জীবন রক্ষাকারী বাঁধ হয়ে উঠবে জীবনঘাতি। সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় কোনো সুফল বয়ে আনবে না। এসব কারণে বাঁধ নির্মাণের কাজ বন্ধ করে খাল খনন ও খালের বাঁধগুলো অপসারণ করে খালের উভয় পাশে বাঁধ নির্মাণের দাবিতে সম্প্রতি মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী। পরে তাদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। 
এদিকে কৃষকের জমির চারা ধান নষ্ট করে কাটা হচ্ছে ফসলি জমির টপ সয়েল। জমির টপ সয়েলে থাকে সবচেয়ে ঘনত্বের জৈববস্তু। একবার কৃষি জমির টপ সয়েল কেটে নিলে তা আবার পূর্ণতা লাভ করতে সময় লাগে ১৫ থেকে ২০ বছর। কৃষকদের প্রলুব্ধ করে উর্বর জমির মাটি কেটে নিয়ে টপ সয়েল বিনষ্ট করছে ঠিকাদারের লোকজন।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান জানান, যাচাই বাছাই ও এলাকার কৃষকদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা করে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। বাঁধটি নির্মিত হলে কৃষকের উপকারে আসবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ বর গ ত

এছাড়াও পড়ুন:

এমন কিছু করা ঠিক হবে না, যা বিভক্তি তৈরি করে: নুরুল হক

বর্তমান প্রেক্ষাপটে কয়েক দিন ধরে যে পরিস্থিতি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলের প্রতিক্রিয়া, তাতে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। আমরা শঙ্কা প্রকাশ করছি, দেশে আরেকটি এক–এগারো ঘটানোর কোনো চক্রান্ত বা ষড়যন্ত্র চলছে কি না।

কারণ, দীর্ঘ ১৬ বছর যে ফ্যাসিবাদ আমাদের ঘাড়ে চেপে বসেছিল, আমাদের সবার মনে রাখতে হবে, তারা কোনো দুর্বল ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে ছিল না। তাদের শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তি ছিল। বৈদেশিক সমর্থন ছিল। দেশের মধ্যে ব্যবসায়ী সমাজ থেকে শুরু করে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীদের মধ্যেও তাদের একটা শক্ত অবস্থান ছিল।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও প্রশাসন থেকে শুরু করে ব্যবসা–বাণিজ্য সর্বক্ষেত্রে তাঁর সুবিধাভোগীরা এখনো দেশে অবস্থান করছেন। আমরা দেখতে পাচ্ছি, একটি মহল, বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি তৈরি করার জন্য বর্তমান ছাত্র নেতাদের বিভ্রান্ত করছে। ছাত্রদের সঙ্গে রাজনৈতিক দল, সামরিক বাহিনী বা সরকারের সঙ্গে একটা দূরত্ব তৈরি করছে।

এখানে আমাদের পরিচিত ছাত্রনেতা হাসনাত আবদুল্লাহ ফেসবুকে যে পোস্ট দিয়েছিলেন, সেই ঘটনাটি যদি সত্য হয়ে থাকে, তাদের সঙ্গে সেনানিবাসে সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এমন আলাপ–‍আলোচনা করেছিল, বিষয়টি নিয়ে আরও আগে একটি শক্ত প্রতিবাদ দেখানোর দরকার ছিল। সেটি না করে তার বেশ কয়েক দিন পর গত বৃহস্পতিবার রাতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া এবং সেটিকে কেন্দ্র করে যে পরিস্থিতি, সেটি আসলে অনাকাঙ্ক্ষিত। এরপর ফেসবুকে দেওয়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার ভিডিও বক্তব্য দেখলাম। সেখানে তিনি মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করা নিয়ে সেনাপ্রধানের সঙ্গে তাঁদের যে আলোচনা হয়েছিল, তা নিয়ে কথা বলেছেন। রাষ্ট্রীয় স্পর্শকাতর বিষয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে তাঁদের আরও সচেতন, দায়িত্বশীল ও যত্নবান হওয়া প্রয়োজন।

ছাত্রনেতারা, যাঁরা এ আন্দোলনের পরিচিত মুখ, তাঁদের মনে রাখতে হবে, এখন আর তাঁরা ছাত্র নন। তাঁরা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের জায়গায় আছেন। সুতরাং তাঁদের কোন কথায় প্রতিক্রিয়া তৈরি করে, সেটা ভাবা দরকার। এই মুহূর্তে কোনো দল বা রাজনৈতিক নেতাদের এমন কোনো ভূমিকা নেওয়া বা এমন কথা বলা উচিত হবে না, যেটা জাতির মধ্যে বিভক্তি তৈরি করবে। যেটা জাতিকে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলবে। এমনটা হলে দেশে নতুন সংকট সৃষ্টি হতে পারে।

আমরা চাই অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করে জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রাষ্ট্র সংস্কার এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে গণতান্ত্রিক যাত্রা। যেই যাত্রা বিঘ্নিত করার জন্য পতিত স্বৈরাচার, তার দোসর এবং বিদেশি প্রভুরা নানাভাবে ষড়যন্ত্র করবে। নানাভাবে তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চেষ্টা করবে। সেই বিষয়ে যেন আমরা সচেতন থাকি।

নুরুল হক: সভাপতি, গণ অধিকার পরিষদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ