জমির উর্বর মাটি কেটে অপরিকল্পিত বাঁধ
Published: 18th, February 2025 GMT
বাঁধ নির্মাণ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন নেত্রকোনা সদর উপজেলার কালিয়ারা গাবরাগাতি ইউনিয়নের কৃষকরা। ফসলি জমির উর্বর মাটি কাটা বন্ধের দাবিও জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
অভিযোগ রয়েছে, বাঁধ নির্মাণের নামে ঠিকাদারের লোকজন কৃষকদের প্রলুব্ধ করে ফসলি জমির উর্বর মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এতে জমির টপ সয়েল বিনষ্টের পাশাপাশি পরিবেশেরও
বিপর্যয় ঘটছে। মাটির ন্যায্য মূল্যও পাচ্ছেন না সহজ-সরল কৃষক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নেত্রকোনার সোমেশ্বরী নদী থেকে ধনারখাল-কুমারপুর-নওয়াপাড়া বালস খালের উৎপত্তি। খালটি সিধলী বাজার থেকে সদর উপজেলার কালিয়ারা গাবরাগাতি ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে ৬ কিলোমিটার গিয়ে কংস নদে মিলিত হয়েছে। আশির দশক পর্যন্ত কৃষিতে অসামান্য অবদান ছিল কুমারপুর-নোয়াপাড়া খালের। কিন্তু নব্বই দশকের শুরু থেকে অপরিণামদর্শী লোকজনের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে খালের ওপর। তাদের দখল-দূষণের শিকার হয়ে আড়াআড়ি বাঁধ নির্মাণ ও মাটি ভরাটের
কারণে বিপন্ন হতে থাকে খালটি। গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে খালটির সংস্কারে কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। কিন্তু অপরিকল্পিত কাজ ও বরাদ্দের টাকা লুটপাটের কারণে বেহাল অবস্থায়ই থেকে যায় খালটি। গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে খালের বিদ্যমান আড়াআড়ি বাঁধগুলো অপসারণ
না করেই পানি উন্নয়ন বোর্ড এলাকার প্রভাবশালী কিছু লোকের সহায়তায় জীবন রক্ষার নামে বাঁধ নির্মাণের কাজে হাত দেয়। ৪ দশমিক ৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বাঁধ নির্মাণে ব্যয়-বরাদ্দের পরিমাণ ৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
সারোয়ার-বেলার (জেবি) ও প্রীতম এন্টারপ্রাইজ-হেলাল উদ্দীন (জেবি) নামে দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে বাঁধের নির্মাণ কাজ
শুরু করেছে।
কথা হয় কালিয়ারা গাবরাগাতি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা কৃষক দলের সভাপতি সালাউদ্দীন খান মিলকী, কুমারপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য হাসেন আলী ফকির, আবু তাহের, পাটলী গ্রামের শহিদুল বারেকের সঙ্গে। তাদের ভাষ্য, বাঁধটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে কালিয়ারা গাবরাগাতি ইউনিয়নের কুমারপুর, পাটলি ও নাড়িয়াপাড়াসহ প্রায় ২৫টি গ্রামে বর্ষার শুরুতেই জলাবদ্ধতা দেখা দেবে। এ ছাড়া বোরো ও আমন উৎপাদন ব্যাহতসহ মানুষের ঘর-বাড়ি ও গবাদি পশুর ক্ষতি হবে। এলাকাবাসীর জন্য জীবন রক্ষাকারী বাঁধ হয়ে উঠবে জীবনঘাতি। সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় কোনো সুফল বয়ে আনবে না। এসব কারণে বাঁধ নির্মাণের কাজ বন্ধ করে খাল খনন ও খালের বাঁধগুলো অপসারণ করে খালের উভয় পাশে বাঁধ নির্মাণের দাবিতে সম্প্রতি মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী। পরে তাদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে কৃষকের জমির চারা ধান নষ্ট করে কাটা হচ্ছে ফসলি জমির টপ সয়েল। জমির টপ সয়েলে থাকে সবচেয়ে ঘনত্বের জৈববস্তু। একবার কৃষি জমির টপ সয়েল কেটে নিলে তা আবার পূর্ণতা লাভ করতে সময় লাগে ১৫ থেকে ২০ বছর। কৃষকদের প্রলুব্ধ করে উর্বর জমির মাটি কেটে নিয়ে টপ সয়েল বিনষ্ট করছে ঠিকাদারের লোকজন।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান জানান, যাচাই বাছাই ও এলাকার কৃষকদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা করে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। বাঁধটি নির্মিত হলে কৃষকের উপকারে আসবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ বর গ ত
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ মিনারে রাষ্ট্রপতি-প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণ
একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রীতি অনুযায়ী রাত ১২টা ১ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি এবং পরে প্রধান উপদেষ্টার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে একুশের কর্মসূচি শুরু হয়।
রাষ্ট্রপতি ১১টা ৫৯ মিনিটে শহীদ মিনারে আসেন। এ সময় তাকে অভ্যর্থনা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান, একুশে উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান খান এবং সদস্যসচিব সাইফুদ্দীন আহমেদ।
আরো পড়ুন:
নতুন বাংলাদেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে সাংবাদিকদের প্রতি রাষ্ট্রপতির আহ্বান
কয়েকজন বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্তের অনুমতি দিলেন রাষ্ট্রপতি
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস রাত ১২টা ১০ মিনিটে শহীদ মিনারে আসেন। তাকেও উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খান, একুশে উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান খান এবং সদস্যসচিব সাইফুদ্দীন আহমেদ অভ্যর্থনা জানান।
প্রধান উপদেষ্টা রাত ১২টা ১৩ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা রাত ১২টা ১৬ মিনিটে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিক ও হাইকমিশনাররা এরপর পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনাররা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর তিন বাহিনীর প্রধান শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শুরুতে সেনাবাহিনীর পক্ষে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ১২টা ২২ মিনিটে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান। বিমানবাহিনীর পক্ষে চিপ এয়ার মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এরপর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) নতুন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।
এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খানের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যরা শ্রদ্ধা জানান।
পরে ভাষাসৈনিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা জানান।
একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার রাজপথ ও দেয়াল বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। চারুকলার শিক্ষার্থীরা রাত-দিন খেটে রং-তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলেছেন প্রতিবাদের নানা ভাষা। শহীদ মিনারের বেদি, কালো রাজপথ, দেওয়াল হেসে উঠছে বর্ণিল আল্পনায়।
ঢাকা/হাসান/ইয়াসিন