আড়াই মাস আগে বিয়ে করেন উসমান আলী। বসবাস করতেন নাকুগাঁও এলাকায় একটি সরকারি আশ্রয়ণের ঘরে। গত বছরের ২৯ মার্চ রাতে এক দল বন্যহাতি নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাঁও পাহাড় থেকে নেমে এসে বোরো ক্ষেতে হানা দেয়। এ সময় কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে উসমান আলীও হাতি তাড়াতে যান। এক পর্যায়ে হাতির তাড়া খেয়ে পা পিছলে ক্ষেতের আইলে পেতে রাখা বৈদ্যুতিক জিআই তারের ওপর পড়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যান।

উসমান আলী (২৩) একা নন, তাঁর মতো অনেক কৃষকই হাতি তাড়াতে গিয়ে নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ গত এপ্রিলে নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বাতকুচি এলাকায় হাতির আক্রমণ থেকে ফসল বাঁচাতে গিয়ে মারা যান বাতকুচি টিলাপাড়া এলাকার উমর আলী মিস্ত্রী (৬৫)। তাঁর বড় ছেলে বলেন, ‘মা অনেক আগেই মারা গেছেন। বাবা একাই সংসার সামলাতেন। বাবা জীবিত থাকাকালে আমাদের সংসার নিয়ে কোনো টেনশন হতো না। ক্ষেতের ফসল বাঁচাতে গিয়ে হাতির আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন বাবা। এখন বাবা না থাকায় সংসারের সব বোঝা কাঁধে নিয়ে চলেছি। শুনেছি হাতির আক্রমণে কেউ মারা গেলে সরকার থেকে ক্ষতিপূরণ দেয়। বন বিভাগে আবেদন করেছি। এখনও কোনো সহযোগিতা পাইনি।’
শেরপুরের শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতি ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় বছরজুড়ে পাহাড় থেকে লোকালয়ে চলে আসা অর্ধশতাধিক হাতির তাণ্ডব নিয়ে উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিলেন এলাকাবাসী। তবে গত ৩১ অক্টোবর নালিতাবাড়ীর বাতকুচি এলাকায় বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে একটি হাতির মৃত্যুর দুই সপ্তাহ পর হাতির পাল জঙ্গলে ফিরে গেছে। অর্থাৎ চার মাস ধরে কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছেন সীমান্তবাসী। হাতির পাল জঙ্গলে ফিরে গেলেও চলতি ফসলের যে কোনো সময় পাহাড় থেকে খাদ্যের সন্ধানে ফের লোকালয়ে ফিরে আসার আতঙ্ক কাটছে না তাদের।
স্থানীয় বাসিন্দা যোসেফ মারাক, লোকান হোসেন ও হাসমত আলীর ভাষ্য, তাদের এলাকা পাহাড়ের পাশে হওয়ায় বিভিন্ন সময় বন্যহাতি এসে তাণ্ডব চালায়। বাড়ির দেয়াল, গাছপালা ভাঙে। তারা জানান, প্রায় চার মাস ধরে হাতি বনে চলে যাওয়ায় কোনো অঘটন ঘটছে না। এখন একটু শান্তি মতো ঘুমাতে পারছেন। কিন্তু ভয় কাটছে না, কারণ ফসলের মৌসুমে ঠিকই হাতির পাল পাহাড় থেকে নেমে আসবে।
নালিতাবাড়ী সীমান্তের বুরুঙ্গা কালাপানি এলাকার কৃষক এন্ডারসন সাংমা ও লুইস নেংমিজা জানান, শেরপুরের তিন উপজেলার ৪০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের জীবন কাটে হাতি আতঙ্কে। আগে মশাল জ্বালিয়ে, হৈ-হুল্লোড় করে হাতি তাড়ানো যেত। এখন হাতি কোনো কিছু পরোয়া করে না। উল্টো মানুষকেই ধাওয়া করে।
বন বিভাগ ও স্থানীয়দের তথ্যমতে, ১৯৯৫ সালে ২০-২৫টি বন্যহাতির দল ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পিক পাহাড় থেকে দলছুট হয়ে গারো পাহাড়ে চলে আসে। পরে এসব হাতির পাল ভারতের কাঁটাতারের বেড়া ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বাধার কারণে আবাসস্থলে ফিরে যেতে পারেনি। ধান ও কাঁঠালের মৌসুম ছাড়াও খাদ্যের সন্ধানে প্রতি রাতেই হাতির পাল জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে চলে আসে। সারাবছর শেরপুরের শ্রীবরদী থেকে শুরু করে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলা পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার সীমান্ত চষে বেড়ায় এসব হাতি। গত এক দশকে শুধু গারো পাহাড়ে বন্যহাতির আক্রমণে মৃত্যু হয়েছে ৩৫ জনের। মানুষের হামলাসহ নানা কারণে ৩১টি হাতি মারা গেছে। বেশির ভাগ হাতির মৃত্যু হয়েছে বৈদ্যুতিক ফাঁদে, নয়তো ধারালো অস্ত্রের আঘাতে। এ ছাড়া হাজারের অধিক হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিনিয়ত দখল হচ্ছে বনের জমি। শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার বিশাল এলাকাজুড়ে গারো পাহাড়। একসময় এই বনাঞ্চলে অবাধে ঘুরে বেড়াত বন্য হাতি। কিন্তু পাহাড়ে মানুষের বসতি দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় হাতির চলাচল। তাদের চলাচলের পথ দখল করে বাগান করা হয়েছে। টিলা কেটে বানানো হয়েছে সড়ক। এ ছাড়া খাদ্যের চরম সংকটে পড়েছে হাতির পাল। তাই বাধ্য হয়ে লোকালয়ে আসছে।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আ ন ম আব্দুল ওয়াদুদ সম্প্রতি সমকালকে বলেন, গারো পাহাড়ের ঝিনাগাতি, শ্রীবর্দী ও হালুয়াঘাট উপজেলায় ২০১৬ সালে ১৩ কিলোমিটার সৌরবিদ্যুতের বেষ্টনী নির্মাণ করা হয়েছে। গোপালপুর ও হালুয়াঘাটে দুই কিলোমিটার সৌরবিদ্যুতের বেড়া নির্মাণ করা হয়েছে। আরও আট কিলোমিটার সৌরবেষ্টনী নির্মাণ করা হচ্ছে। নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ ও শেরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকায় আরও ৫০ কিলোমিটার সৌরবেষ্টনী ও বায়োফেন্স নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। হাতি প্রতিরোধে স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে ৫০টি এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্ষতিপূরণের জন্য অর্থ প্রদানের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপজ ল র এল ক য়

এছাড়াও পড়ুন:

ময়মনসিংহে মাইক্রোবাস ও অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে দুজন নিহত

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় মাইক্রোবাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে নারীসহ দুজন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার সকালে উপজেলার গোয়ারী বালিকা মাদ্রাসা সামনের ভালুকা-গফরগাঁও সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত তিনজন হলেন উপজেলার পূর্ব ভালুকা মণ্ডলপাড়া এলাকার মো. আজগর আলীর ছেলে পূর্ব ভালুকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মো. লাল মিয়া (৩২) ও ভালুকা পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সূর্যত আলীর স্ত্রী রোকেয়া আক্তার (৪৮)।

দুর্ঘটনায় আরও তিনজন আহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন নিহত লাল মিয়ার স্ত্রী তাসলিমা বেগম (২৫), লাল মিয়ার মামি জ্যোৎস্না আরা (৬৫) ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক রোমান মিয়া (৪২)। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল ৯টার দিকে গোয়ারী বালিকা মাদ্রাসা সামনের ভালুকা-গফরগাঁও সড়কে ভালুকাগামী একটি হায়েস মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের ডান পাশে গিয়ে বিপরীত দিক থেকে আসা সিএনজিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে অটোরিকশাচালকসহ যাত্রীরা গুরুতর আহত হন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আহতদের উদ্ধার করে ভালুকা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠালে চিকিৎসক লাল মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে আহত অন্য চারজনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে রোকেয়া আক্তারের মৃত্যু হয়।

নিহতের স্বজনেরা জানান, লাল মিয়া তাঁর এক অসুস্থ খালাকে দেখতে অটোরিকশায় করে পাশের উপজেলার শ্রীপুরে যাচ্ছিলেন। পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে তিনি মারা যান।

ভালুকা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামছুল হুদা খান প্রথম আলোকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভাগনিকে এগিয়ে দিচ্ছিলেন মারফত, হঠাৎ মোটরসাইকেলে এসে কোপাতে থাকে যুবকেরা
  • কোন ক্ষমতাবলে ১৩টি পত্রিকাকে শোকজ করল ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসন
  • কভার্ডভ্যান চুরির পর টুকরো টুকরো করেন তারা
  • একই শিরোনামে একই সংবাদ ১৩ পত্রিকায়, সম্পাদকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ
  • ঢাকাসহ দেশের কোথায় কোথায় বৃষ্টি হতে পারে আজ
  • ময়মনসিংহে মাইক্রোবাস ও অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে দুজন নিহত
  • শহীদকে নিয়ে ব্যঙ্গ করার অভিযোগ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে
  • বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান
  • ঢাকায় ঝুম বৃষ্টি