নির্বাচিত সরকার ছাড়া স্বস্তি ফিরবে না বিনিয়োগে
Published: 18th, February 2025 GMT
একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত দেশে বিনিয়োগে স্বস্তি ফিরবে না। অন্তত নির্বাচনের তারিখ জানা থাকলেও উদ্যোক্তাদের জন্য কিছুটা সুবিধা হয়। নির্বাচনের তারিখ জানা না থাকলে বিনিয়োগ করবেন না অনেক উদ্যোক্তা। বরং অনিশ্চয়তায় রাতারাতি শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। নির্বাচন নিয়ে সরকারের প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন।
মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল। তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারকাজ করছে। তবে চাইলেও নানা ক্ষেত্রে তারা সংস্কার করতে পারবেন না।
বস্ত্র ও পোশাক খাতের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্টস মেশিনারি এক্সিবিশন (ডিটিজি) উপলক্ষে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বিটিএমএর সাবেক ও বর্তমান কমিটির নেতারা এতে উপস্থিত ছিলেন।
শিল্প কারখানায় চাঁদাবাজি এবং আওয়ামী লীগের ডাকা হরতাল সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে বিটিএমএ সভাপতি বলেন, কর্মসংস্থান না থাকলে চাঁদাবাজি হয়। চাঁদা আদায়কে ব্যবসা হিসেবে নেয় কিছু লোক। হরতালও এ কারণেই ডাকা হয়। কর্মসংস্থান থাকলে হরতাল করার লোক থাকে না।
বিনিয়োগে স্থবিরতার অন্যান্য কারণের মধ্যে ডলার সংকটের কথাও তুলে ধরেন বিটিএমএ সভাপতি। শওকত আজিজ রাসেল আরও বলেন, ব্যাংক থেকে প্রয়োজনীয় ঋণ সহায়তা পান না তারা। এবারের প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া বিদেশিরা যাতে এ দেশে কারখানা স্থাপনে বিনিয়োগ করেন, সে ব্যাপারে উৎসাহিত করতে হবে। এতে ডলারের জোগান যেমন বাড়বে, একই সঙ্গে প্রযুক্তি আয়ত্ত করতে পারবেন স্থানীয়রা। দেশের বস্ত্র ও পোশাক খাত এ প্রক্রিয়ায় এগিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বস্ত্র খাতে বর্তমানে কী ধরনের সমস্যা রয়েছে– এ প্রশ্নে বিটিএমএ সভাপতি বলেন, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, গ্যাসের অভাবে কারখানা বন্ধ কিংবা আংশিক উৎপাদন বন্ধ থাকা, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ব্যাংকিং সমস্যা ও চোরাচালান ইত্যাদি নানা সমস্যা রয়েছে। শওকত আজিজ রাসেল বলেন, চোরাচালানের মাধ্যমে আসা সুতা-কাপড়ে বাজার সয়লাব। স্থলবন্দরগুলো দিয়ে ২ টন পণ্য আনার জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়, অথচ আসে ১০ টন। এগুলো খোলাবাজারে চলে যায়। এ কারণে দেশীয় বস্ত্র খাত সংকটে রয়েছে। চোরাচালান বন্ধে স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি বন্ধ করে একক পথ হিসেবে শুধু সমুদ্রপথে আমদানির সুযোগ রাখার জন্য বিটিএমএর পক্ষ থেকে সরকারকে অনুরোধ করা হয়েছে। গত ছয় মাসেও এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
চোরাচালানে রপ্তানিমুখী শিল্প খাতও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, গত বছর শুধু বৈধ পথেই ২ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের সুতা ও বস্ত্র ভারত থেকে আমদানি হয়েছে। চোরাচালানের মাধ্যমে এসেছে হিসাব ছাড়া।
শিল্পে গ্যাসের সংকট প্রসঙ্গে বিটিএমএ সভাপতি আরও বলেন, সরকার যখন যে দর চেয়েছে, সে দরেই গ্যাস কিনেছেন শিল্প উদ্যোক্তারা। তার পরও গ্যাস পাওয়া যায়নি। এখন আবার গ্যাসের দাম দ্বিগুণ করা হলে একটার পর একটা কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম এত বেশি পরিবর্তন করা হলে বিনিয়োগ আশা করা যায় না। শিল্পে বিনিয়োগ চাইলে অন্তত ১০ বছরের জন্য গ্যাসের দর নির্ধারিত হারে বহাল রাখার দাবি করেন তিনি।
প্রদর্শনী কাল শুরু
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আগামীকাল বৃহস্পতিবার চার দিনব্যাপী ডিটিজি শুরু হবে। ঢাকার আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। এবারের প্রদর্শনীতে ৩৩টি দেশের ১ হাজার ৬০০ প্রতিষ্ঠান বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি প্রদর্শন করছে। এতে টেক্সটাইল যন্ত্রপাতি, ফেব্রিক, ফিলামেন্ট, কেমিক্যালস, ডাইং প্রযুক্তি ও অ্যাক্সেসরিজ প্রদর্শিত হবে। এ ছাড়া টেকসই উৎপাদন ও আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। আলাদা করে ডিটিজি ফ্যাশন শোর আয়োজন থাকবে। প্রদর্শনী শেষ হবে আগামী রোববার।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব ট এমএ প রদর শ র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
টিআইএন থাকলেও রিটার্ন দেন না, তাদের নোটিশ দেওয়া শুরু
আগামী বাজেটে নতুন করে কোনো কর অব্যাহতি দেওয়া হবে না। বিদ্যমান কর অব্যাহতিও কমানো হবে। কিছু ক্ষেত্রে উঠিয়ে দেওয়া হবে। যারা কম হারে দেয়, তাদের বাড়ানো হবে। গতকাল শনিবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) মিলনায়তনে আয়োজিত ‘অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এ কথা বলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
তিনি বলেন, কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) থাকা সত্ত্বেও যারা আয়কর রিটার্ন দেন না, তাদের নোটিশ দেওয়া শুরু হয়েছে। নোটিশ দেওয়া শুরু হওয়াতে লোকজন হয়তো বলা শুরু করবে, তারা খুব ঝামেলায় পড়েছেন।
ইআরএফ ও রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড) যৌথভাবে এ কর্মশালা আয়োজন করে। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন র্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক আবু ইউসুফ। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, প্রকৃত অর্থে আগামী বাজেট হবে ব্যবসাবান্ধব ও জনকল্যাণমুখী। কিছুদিন ধরে এনবিআর যে কাজগুলো করেছে, এর মাধ্যমে বিষয়টি টেরও পেয়েছেন সবাই। তিনি জানান, এ বছর দুই দফায় সয়াবিন তেলের শুল্ক কমানো হয়েছে। একইভাবে দুই দফায় চিনির শুল্ক কমানো হয়েছে। এ ছাড়া খেজুর, ডাল, ডিম, চাল, পেঁয়াজ প্রভৃতি পণ্য আমদানিতে শুল্ক কমানো হয়েছে। তার সুফলও পাচ্ছেন মানুষ। তবে এ শুল্ক ছাড়ের ফলে কয়েক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে সরকার। তবুও জনস্বার্থ চিন্তা করে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
মূল প্রবন্ধে আবু ইউসুফ বলেন, দেশের আর্থিক উন্নতি, পরনির্ভরশীলতা কমানো ও আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে কর আহরণ বাড়াতে হবে। কিন্তু কর আহরণ ও কমপ্লায়েন্সের ক্ষেত্রে অবকাঠামো সমস্যার কারণে কর-জিডিপি হার এখনও অনেক কম। প্রত্যক্ষ কর আহরণ
কম হওয়ায় রাজস্ব আহরণের জন্য সরকার ভ্যাট ও বাণিজ্যকেন্দ্রিক রাজস্ব আদায়ে বেশি নির্ভর হয়ে পড়ছে, যা নিম্ন আয়ের মানুষদের প্রভাবিত করছে।
শওকত হোসেন বলেন, বিগত সময়ে কর ব্যবস্থাপনা নিয়ে যেসব চিন্তাভাবনা হয়েছিল, তা ছিল অনেক বেশি গতানুগতিক। সেগুলোর কিছুটা দাতাদের ইচ্ছায় এবং কিছুটা সরকারের ইচ্ছায় হয়েছে। তবে এখন সুযোগ এসেছে পরিকল্পিতভাবে কিছু করার। যারা আয়কর দেন না, তাদের কর দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করলে কর-জিডিপি হার বাড়বে।