‘আবার ফুটেছে দ্যাখো কৃষ্ণচূড়া থরেথরে শহরের পথে কেমন নিবিড় হয়ে। কখনো মিছিলে কখনো-বা একা হেঁটে যেতে যেতে মনে হয়– ফুল নয়, ওরা শহীদের ঝলকিত রক্তের বুদ্বুদ, স্মৃতিগন্ধে ভরপুর।
একুশের কৃষ্ণচূড়া আমাদের চেতনারই রঙ।’-শামসুর রাহমান
একুশ মানেই আমাদের ভাষার অধিকার, আত্মত্যাগ আর গৌরবের ইতিহাস। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতি মায়ের ভাষায় কথা বলার জন্য বুকের তাজা রক্ত রাজপথে ঢেলে দিয়ে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। রফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ আরও অনেক অকুতোভয় বীরের জীবনের বিনিময়ে আমরা বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছি। এ আত্মত্যাগের স্বীকৃতি হিসেবে ২১ ফেব্রুয়ারি এখন শুধু বাংলাদেশের নয়, সারাবিশ্বের জন্যই তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এটি আমাদের জন্য গর্বের। কারণ ভাষার জন্য এমন লড়াই পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
একুশ কেবল একটি দিন নয়, এটি আমাদের অস্তিত্ব, সংস্কৃতি, পরিচয় আর অহংকারের প্রতীক। শোক, শ্রদ্ধা ও গৌরবের এ দিনটি পালনে নানা আয়োজন চলে প্রতি বছর। এর পাশাপাশি পোশাকেও একুশের চেতনার স্পর্শ লেগেছে অনেকদিন ধরেই। একসময় সাদা শাড়ি-পোশাকের সঙ্গে কালো ব্যাজ ধারণ করে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার রীতি প্রচলন ছিল। ধীরে ধীরে কালো শাড়ি-পোশাক যুক্ত হয়েছে এ রীতিতে।
মানুষের একুশের চেতনা ধারণের মূল্যবোধকে সম্মান জানিয়ে প্রতিবছরই বিভিন্ন নকশার পোশাক নিয়ে আসে দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো। অমর একুশের এ দিনটিতে পোশাকের ক্ষেত্রে মূলত সাদা রং প্রাধান্য পায়। তাই পোশাকের রং নির্বাচন করার ক্ষেত্রেও ফ্যাশন হাউসগুলো সাদা-কালো এ দুটি রং বেছে নেয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা ভিন্নতা আনতে সাদা-কালোর পাশাপাশি একুশের পোশাকে এখন লাল, সবুজ, ছাই রঙের ব্যবহারও দেখা যায়। ডিজাইনাররা একুশের পোশাকে গান-কবিতা যেমন তুলে ধরেন, তেমনি কখনও বর্ণমালা, কখনও শহীদ মিনার, কখনও বা মনের মাধুরী মিশিয়ে আল্পনাও আঁকেন।
ফ্যাশন ডিজাইনাররা জানান, দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো সবসময় চেষ্টা করে হ্যান্ডপেইন্ট ডিজাইনের মাধ্যমে একুশের পোশাকে কিছুটা ভিন্নতা আনতে। একুশের পোশাকে নারীকে সাদা শাড়ির সঙ্গে কালো পাড় কিংবা সাদা সালোয়ার, ওড়না আর কালো রঙের কামিজ চোখে পড়ে। অন্যদিকে ছেলেদের টি-শার্ট থেকে শুরু করে শার্ট, পাঞ্জাবি আর পায়জামাতেও দেখা যায় এ সাদা আর কালো রঙের খেলা। পাঞ্জাবিতে কখনও সম্পূর্ণ কালো আবার কখনও সম্পূর্ণ সাদা রঙের কাজ দেখা যায়। টি-শার্টে থাকে বাংলা বিভিন্ন অক্ষরের ছাপ। প্রতিবছরের মতো এ বছরও দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো মহান ভাষার মাসকে উৎসবের রূপ দিতে সচেতনভাবে কাজ করছে। যেখানে পোশাকের আবরণে জড়িয়ে আছে মায়ের ভাষার আবেগ।
দেশীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড ‘সাদাকালো’ বরাবরই বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে একুশের নকশা নিয়ে কাজ করে। এবারের ডিজাইনে ক্যালিগ্রাফির মাধ্যমে একুশের গান– ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’-এর চরণগুলো ফুটে উঠেছে বাংলাদেশের মানচিত্রের অভ্যন্তরে। শাড়ি, পাঞ্জাবি, কামিজ এবং অন্যান্য ফিউশন পোশাক, যা আধুনিকতার ছোঁয়ায় ঐতিহ্যকে নতুনভাবে উপস্থাপন করছে। সাদাকালোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজহারুল হক আজাদ বলেন, ভাষা আমাদের পরিচয়ের অংশ। একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু শোকের দিন নয়, আমাদের গর্বের প্রতীক। তাই আমরা চেয়েছি আমাদের পোশাকের মাধ্যমে সেই চেতনাকে উদযাপন করতে।
ফ্যাশন হাউস ‘রঙ বাংলাদেশ’ তাদের একুশের পোশাকের ডিজাইনে নিয়ে এসেছে ভাষার মাসের চেতনার আবহকে। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী সৌমিক দাস জানান, তাদের এবারের একুশের থিম ‘বাংলা ভাষা ও বাংলা বর্ণমালা’।
তিনি বলেন, ‘হাফসিল্ক, বিভিন্ন ধরনের কটন, ভয়েল কাপড়, স্ক্রিন প্রিন্ট, ব্লক প্রিন্ট, কাটিং-সুইং ও এমব্রয়ডারির কাজে তৈরি হয়েছে পোশাকের অলংকরণ। প্রতিটি পোশাকের ডিজাইনকে নান্দনিক মাত্রা দেওয়ার চেষ্টায় পোশাকে রয়েছে একুশের চেতনার নানা অনুষঙ্গের সন্নিবেশ। উৎসবের পরিপূর্ণতার জন্য রয়েছে যুগল আর পরিবারের সবার জন্য একই থিমের পোশাক।’
‘বিশ্বরঙ’-এর ডিজাইনার এবং স্বত্বাধিকারী বিপ্লব সাহা জানান, ‘একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, যা আমাদের জাতীয় জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। এই দিনের চেতনাকে গভীরভাবে ফুটিয়ে তুলতে আমরা ৩০ বছর ধরে একুশের পোশাকে মাতৃভাষা ও বর্ণমালার মোটিফ ধরে রেখেছি; যা ভাষার প্রতি গভীর ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।’
তিনি বলেন, ‘পোশাকের রং নির্ধারণের ক্ষেত্রে আমরা সাদা-কালো তো রাখছিই, তার পাশাপাশি ২০২৪-এর আন্দোলনে শহীদ হওয়া অকুতোভয় তরুণদের সম্মানার্থে তাদের রক্তের প্রতীক লাল রংটাকেও প্রাধান্য দিয়েছি।’ v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এক শ এক শ র প শ ক ড জ ইন র র এক শ র র ড জ ইন র জন য আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদ উৎসবে ছেলেদের ফেসিয়াল
এক সময় ফেসিয়াল বলতে শুধু নারীর স্কিন কেয়ারকেই বোঝানো হতো। এখন সময় বদলেছে। ছেলেরাও সমানভাবে ত্বকের যত্ন নিচ্ছে। এর অন্যতম জনপ্রিয় উপায় হলো ফেসিয়াল।
কর্মব্যস্ত জীবনে ধুলোবালি, রোদ আর স্ট্রেসের কারণে ছেলেদের ত্বক অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাছাড়া ছেলেদের ত্বক সাধারণত মোটা ও তৈলাক্ত হওয়ায় ব্রণ, ব্ল্যাকহেডস এবং রুক্ষতার সমস্যাও বেশি হয়। সুস্থ ও সতেজ ত্বক পেতে ফেসিয়াল এখন আর বিলাসিতা নয়, বরং প্রয়োজন। ছেলেদের জনপ্রিয় ফেসিয়ালগুলো হচ্ছে ক্লিনজিং ফেসিয়াল, অয়েল কন্ট্রোল ফেসিয়াল, অ্যান্টি-এজিং ফেসিয়াল, হাইড্রেটিং ফেসিয়াল, ডি-ট্যান ফেসিয়াল।
ফেসিয়াল করার সঠিক নিয়ম: অনেকেই সঠিক নিয়ম না জেনে ফেসিয়াল করে, যা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এজন্য ফেসিয়ালের আগে এবং পরে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা দরকার প্রয়োজন। যেমন– ত্বকের ধরন অনুযায়ী ফেসিয়াল নির্বাচন, স্ক্রাবিং ও ক্লিনজিং ভালোভাবে করা। স্টিম নেওয়ার পর ব্ল্যাকহেডস পরিষ্কার করা। ফেসিয়ালের পর সরাসরি রোদে যাওয়া যাবে না। হেভি কেমিক্যাল ব্যবহার এড়িয়ে চলতে হবে।
ছেলেদের ফেসিয়াল নিয়ে শোভন’স মেকওভারের স্বত্বাধিকারী শোভন সাহা বলেন, ‘ঈদে নিজেকে একটু ফ্রেশ, উজ্জ্বল দেখানোর জন্য ছেলেদের ফেসিয়াল করাটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কারণ ত্বকে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা ময়লা ও মৃত কোষ দূর হয়, ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ হয়, ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস কমে, ব্রণের প্রবণতা কমে যায়, ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখা সহজ হয় এবং শেভিং-এর পর ত্বককে নরম ও আরামদায়ক করে। এছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে যাদের ত্বকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা যেমন– ব্রণ, মেস্তা, ড্রাইনেস, স্কুইস হয়ে যাওয়া স্কিন থাকে তাদের ঈদের ৩ থেকে ৪ দিন আগে থেকেই বিশেষজ্ঞের পরামর্শে ট্রিটমেন্ট করে ত্বক ঠিক করে বা এ ধরনের ত্বকের জন্য যে ফেসিয়াল কার্যকর হবে তা করার পরামর্শ দেন। কারণ, অথেনটিক ফেসিয়ালের গ্লোটাকে স্কিনে আনতে দুই থেকে তিন দিন সময় লাগে। তাছাড়া ঘরে বসে ত্বকের যত্ন সম্পর্কে শোভন জানান, ‘আপনার স্কিন বুঝে ফেসওয়াশ ব্যবহার করে টোনার ব্যবহার করতে হবে। যদি আপনার স্কিনের সঙ্গে মানানসই টোনার খুঁজে না পান তাহলে রোজজল ব্যবহার করতে পারেন। এটি সব ধরনের ত্বকের জন্যই সহনীয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী সপ্তাহে দুই থেকে তিন বার স্ক্রাব করতে পারেন, সপ্তাহে এক দিন ফেইস প্যাক লাগাতে পারেন। ফেইস ম্যাসাজটা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া বাড়িতে চেষ্টা না করাই ভালো।’ ঈদের দিনে ছেলেদের ত্বকের যত্ন প্রসঙ্গে ‘সুপারকাট স্পা স্যালুন’-এর কর্ণধার সাইফুল ইসলাম রচি জানান, ‘ঈদের সকালে ত্বকের যত্নে একটি ভালো মানের ফেসওয়াশ ব্যবহার করে, মুখে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সিরাম বা ময়েশ্চরাইজার ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। তারপর সানস্ক্রিন দিয়ে টপ-আপ করে দেবেন। সারাদিন আপনার ত্বক দেখাবে ঝকঝকে উজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত।’
এছাড়াও বাড়িতে বসে যেভাবে ফেসিয়াল করতে পারেন–
ক্লিনজিং: দুধ বা অ্যালোভেরা জেল দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন। স্ক্রাবিং: চালের গুঁড়া ও মধু মিশিয়ে স্ক্রাব করুন। মাস্ক: দই ও হলুদের মিশ্রণ লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। ময়েশ্চারাইজিং: অ্যালোভেরা জেল বা লাইট ক্রিম ব্যবহার করুন।