শ্রীমঙ্গল ট্যুর নির্ধারিত হওয়ার পর থেকেই আলোচনায় ছিল হামহাম ঝরনা। এটি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় হলেও অধিকাংশ পর্যটক সাধারণত শ্রীমঙ্গল থেকে ঝরনাটি দেখতে যান। অবশ্য মৌলভীবাজার থেকেও যেতে পারেন। যাহোক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট-বড় ভাইদের সঙ্গে ছিল এ ট্যুর। দুর্গম ও দূরত্বের জন্য বড় ভাইদের কারও কারও হামহাম ঝরনা বিষয়ে অনীহা দেখা গেল। তাদের অবশ্য যুক্তি আছে, দু’দিনের মধ্যে যেদিন হামহাম ঝরনা দেখতে যাবে, সেদিন এর বাইরে আর কোনো পর্যটনকেন্দ্র দেখার সুযোগ থাকবে না। ছোট ভাইরা দেখলাম ঝরনা দেখার জন্য এক পায়ে খাড়া। এমনকি ট্যুরের গ্রুপে একজন হয়তো মজা করেই লিখেছে: ‘হামহাম অথবা মৃত্যু’। যাহোক, হামহাম ঝরনা দেখতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলো। তারপরও কিছুটা সংশয় যেন থেকেই গেল। কারণ একজন বলছে, ১০ কিলোমিটার হেঁটে যেতে হবে। আসা-যাওয়া মিলে ২০ কিলোমিটার। পাহাড়ি পথে সহজ কথা নয়। ট্যুর গাইড জানালেন, ১০ কিলোমিটার নয়, ৪ কিলোমিটার করে হাঁটতে হবে।
চাঁদের গাড়ি কটেজে আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। শ্রীমঙ্গল থেকে রওনা দিতে ১০টা পার হয়ে গেল। চাঁদের গাড়ি চলছে পাহাড়ের উঁচু-নিচু রাস্তায়। দু’পাশে চাবাগান আর পাহাড়। রৌদ্রকরোজ্জ্বল অসাধারণ আবহাওয়ায় ছাদখোলা চাঁদের গাড়িতে আমরা চলছি। মাথার ওপর বিশাল আকাশ আর চারদিকে মনোরম দৃশ্য ছিল সত্যিই উপভোগ্য। কিছুক্ষণ পরপরই মনে হতো এটাই বুঝি ছবি তোলার উৎকৃষ্ট জায়গা। অবশ্য ছবি তোলার জন্য আর নামা হয়নি। কমলগঞ্জ উপজেলা ভারতের সীমান্ত লাগোয়া। বিজিবির তৎপরতাও দেখলাম। যাহোক, দেড় ঘণ্টা পথ পাড়ি দিয়ে এবার হাঁটার পালা। গাড়ি থামতেই স্থানীয় শিশুরা এলো– ঠিক বাঁশ নয়, কঞ্চি নিয়ে। বাঁশের সেই কঞ্চি ছাড়া যে হামহাম ঝরনায় পৌঁছা অসম্ভব, একটু পরই টের তা পেলাম। পাহাড়ের উঁচু-নিচু পথ। ঢালু, ঝুঁকিপূর্ণ, এবড়োখেবড়ো সরু পথে চলতে গিয়ে বেশ বেগই পেতে হলো। চারদিকে গাছগাছালিতে ভরা। আধা ঘণ্টা হেঁটে এতটা হাঁপিয়ে উঠেছিলাম যে, বিশ্রাম একটু নিতেই হলো। সেখানে পাহাড়ের ওপর টংয়ের দোকান আরও কিছুটা স্বস্তি দিয়েছিল।
পাহাড়ি পথে আবার হাঁটা। বেশ কিছুক্ষণ পর পেলাম আরেকটি দোকান। কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে গন্তব্যের লক্ষ্যে আবার হাঁটা দিলাম। একটু পর লক্ষ্য করলাম, এবার কেবলই নামছি। অর্থাৎ এতক্ষণ ছিল উঁচু-নিচু, এবার পাহাড়ের পথ বেয়ে কেবলই নামা। পাহাড় ট্র্যাক করে নামতে নামতে বেশ হাঁপিয়ে উঠলাম। অবশেষে ঝরনা পানির দেখা মিলল। এবার ঝরনার ঝিরি দিয়ে এগিয়ে চলা কিংবা পার দিয়ে উঁচু-নিচু পাথর বেয়ে হাঁটা। বেশ খানিক পর শুনলাম পানি পড়ার শব্দ। চার কিলোমিটার পথ ২ ঘণ্টায় পাড়ি দিয়ে অবশেষে দেখা মিলল ঝরনার। সেখান থেকে অবিরল ধারায় পানির পতন দেখে পথের ক্লান্তি ভুলে গেলাম। শুরু হয়ে গেল ছবি তোলা, ভিডিও করা।
শীতের সময় অনেকেই আশঙ্কা করছিলেন, হয়তো পানি তেমন নামবে না। গাইড অবশ্য আশ্বস্ত করেছিলেন। বলে রাখা ভালো, হামহাম ঝরনায় যেতে হলে অবশ্যই গাইড রাখা এবং অন্তত তিন-চারজনের দলে যাওয়া ভালো। গাইড ছাড়া হামহামে পৌঁছানো মুশকিল। যাহোক, শঙ্কার মধ্যে বাস্তবে সেদিন হামহাম ঝরনা বেয়ে পানি নামতে দেখলাম। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনে মধ্যাহ্নে আমাদের গ্রুপ যখন হামহামে পৌঁছল তখন পানির দুটি ধারা বহমান ছিল। ঝরনার চারদিকে পাথর হয়ে আছে। চারদিকে বাঁশঝাড়ের দেখা মিলল বেশি। ঝরনার পানি দেখেই আমাদের টিমের অনেকে নেমে পড়লেন পানিতে। চারদিকে পানি অতটা গভীর না হলেও পানি পতনের স্থানে বেশ গভীর। যাহোক, ২ ঘণ্টা অবস্থান করার পর এবার ফেরার পালা। আবার দুর্গম পথ বেয়ে যেতে হবে। এতক্ষণ ছিল ঝরনা দেখার ইচ্ছে। এখন চিন্তা বাড়ি ফেরার।
ফেরার পথও অতটা সহজ ছিল না। বিশেষ করে ঝরনা ঝিরে থেকে পাহাড়ে উঠতে প্রথম ধাক্কাটা ছিল স্মরণীয়। উঠেই পাহাড়ের ওপর বিশ্রাম নিতে হলো অনেকক্ষণ। এরপর হাঁটা। ফেরার পথ কিছু পরিচিতই মনে হলো। তারপরও পরিশ্রম কম হলো না। সময়ও লাগল প্রায় ২ ঘণ্টা। তারপরও হামহাম ঝরনা দেখে পরিশ্রম উসুলই বলতে হবে। এটি সত্যিই এক অ্যাডভেঞ্চারাস জার্নি। ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে প্রথমে আসতে হবে শ্রীমঙ্গল। বাস কিংবা ট্রেনে আসা যায়। সেখান থেকে যেতে হবে কমলগঞ্জ। শ্রীমঙ্গল থেকে সিএনজি অটোরিকশা কিংবা চাঁদের গাড়িতে যেতে পারেন। হামহাম ঝরনার আশপাশে থাকার ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। সে জন্য সকালে রওনা দিয়ে দিনে দিনে শ্রীমঙ্গল বা মৌলভীবাজার চলে আসা ভালো। v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অবশ য
এছাড়াও পড়ুন:
কমলগঞ্জে ধলাই নদ থেকে অবৈধ বালু তোলা বন্ধের দাবিতে চার গ্রামের মানুষের সমাবেশ
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ধলাই নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আজ মঙ্গলবার সকালে উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের পশ্চিম জসমতপুর এলাকায় এ কর্মসূচিতে অংশ নেন জসমতপুর, দক্ষিণ ধর্মপুর, পাথরটিলা ও কালাছড়া গ্রামের পাঁচ শতাধিক মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দা আয়ুব আলীর সভাপতিত্বে ও নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন স্থানীয় কামাল মিয়া, আব্দুর রউফ, আজাদ মিয়া, নাসির মিয়া, আমির আলী, তাহির মিয়া, জুয়েল মিয়া, হৃদয় মিয়া প্রমুখ।
প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন, দীর্ঘদিন থেকে উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের জসমতপুরসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকায় ধলাই নদ থেকে অবৈধভাবে ইজারা ছাড়াই বালু উত্তোলন করছে কিছু প্রভাবশালী মহল। প্রভাবশালী ইজারাদারের লোকজন নিয়মবহির্ভূতভাবে জসমতপুর মৌজায় ড্রেজার মেশিন বসিয়ে নদীর তলদেশ থেকে দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলন করছেন। এতে নদীতীরবর্তী হাটবাজার, একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ফসলি জমি ও বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। শিগগিরই বালু তোলা বন্ধ করা না হলে আগামী বর্ষায় নদী রক্ষা বাঁধ ভেঙে বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক অভিযোগ করার পরও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
বালু উত্তোলনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকার লোকজন প্রতিবাদ করতে পারেন না উল্লেখ করে বক্তারা আরও বলেন, ধলাই নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে তীর রক্ষা বাঁধ, ফসলি জমি, ঘরবাড়ি ধলাই নদে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এসব অবৈধ বালু উত্তোলনকারীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারলে আবাদি জমি, নদীতীর রক্ষা বাঁধ, ঘরবাড়ি নদে বিলীন হয়ে যাবে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাখন চন্দ্র সূত্রধর প্রথম আলোকে বলেন, ‘অবৈধভাবে বালু তোলা বন্ধ করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। আমরা গত কয়েক দিনে তিনটি ড্রেজার মেশিন তুলে নিয়ে এসেছি। এখন বালু উত্তোলন বন্ধ রয়েছে।’