দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা পদের রান্না প্রচলিত। একটু সময় ও সুযোগ করে বাড়িতে তৈরি করতে পারেন নিজ অঞ্চলের কোনো খাবার। এতে শিকড়ে ফিরে যাওয়ার পাশাপাশি ঐতিহ্যের স্বাদও ফিরে পাবেন। নোয়াখালী অঞ্চলের তিনটি খাবারের রেসিপি দিয়েছেন কানিজ ফাতেমা রুমা
কলাপাতায় মলা মাছের মরিচখোলা
উপকরণ: মলা মাছ ৩০০ গ্রাম, পেঁয়াজ কুচি ১/৩ কাপ, কাঁচামরিচ ফালি ৫-৬টি, টমেটো কুচি ১/৩ কাপ, ধনেপাতা কুচি ২ টেবিল চামচ, রসুন কুচি ২ চা চামচ, রসুন বাটা ১ চা চামচ, মরিচের গুঁড়া ১ চা চামচ, হলুদের গুঁড়া ১ চা চামচ, লবণ স্বাদমতো, সরিষার তেল ১/৪ কাপ ও কলাপাতা।
প্রস্তুত প্রণালি: মলা মাছ পরিষ্কার করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। কলাপাতা বাদে সব উপকরণ মাখিয়ে নিতে হবে। এবার প্যানে পরিষ্কার করা কলাপাতা বিছিয়ে তার ওপর মাখানো মলা মাছ বিছিয়ে দিন। ওপরেও কলাপাতা দিয়ে মুড়িয়ে ঢেকে দিতে হবে। এবার ঢাকনা দিয়ে ঢেকে অল্প আঁচে ১০-১৫ মিনিট রান্না করতে হবে। খুব সাবধানে উল্টিয়ে আরও ১০ মিনিট রান্না করতে হবে। হয়ে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।
আমসত্ত্বের খাট্টা
উপকরণ: টক মিষ্টি আমসত্ত্ব ২৫০ গ্রাম, কোরানো নারকেল আধা কাপ, গুড় ১/৪ কাপ (আমসত্ত্ব টক হলে বাড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে), লবণ ১ চিমটি, লেবু পাতা ২টি।
প্রস্তুত প্রণালি: আমসত্ত্ব ছোট টুকরো করে ১ কাপ পানিতে ২-৩ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। কোরানো নারকেল ১ কাপ গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর ছেঁকে নারকেলের দুধ বের করে নিন। ব্লেন্ডারে নারকেলের দুধ, গুড়, লবণ, ভেজানো আমসত্ত্ব এবং সঙ্গে আরও আধা কাপ পানি মিশিয়ে নিন। ভালোভাবে ব্লেন্ড করে দুটি লেবু পাতা কচলিয়ে দিন। এতে লেবুর ঘ্রাণ আসবে। এবার ছেঁকে পরিবেশন করুন। গরমের সময় কিংবা দুপুরে খাবারের পর এই খাট্টা খেতে পারেন।
শিম-নারকেলের ভর্তা
উপকরণ: শিম ২৫০ গ্রাম, ভাজা যে কোনো মাছ ১ টুকরা, কোরানো নারকেল ৩ টেবিল চামচ, কাঁচামরিচ ৫-৬টি, রসুন ৩ কোয়া, পেঁয়াজ কুচি ১/৩ কাপ, ধনেপাতা কুচি ২ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো, তেল ১ টেবিল চামচ।
প্রস্তুত প্রণালি: শিম সেদ্ধ করে পানি ফেলে দিতে হবে। মাছের কাঁটা বেছে নিতে হবে। এবার কড়াইয়ে তেল দিয়ে পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, রসুন হালকা ভেজে নিন। ভাজা হলে কোরানো নারকেল ও ধনেপাতা দিয়ে সব উপকরণ ভালোভাবে ভেজে নামিয়ে নিন। এবার সব উপকরণ পাটায় বেটে ভর্তা বানান। গরম ভাতের সঙ্গে এই ভর্তা খেতে দারুণ লাগবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কল প ত
এছাড়াও পড়ুন:
টেসলা কতটা ‘মেড ইন আমেরিকা’
যুক্তরাষ্ট্রে এখন ব্যবসা নিয়ে অনেক আলাপ শোনা যাচ্ছে। কোন প্রতিষ্ঠান কতটা আমেরিকান, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অন্য দেশের আমদানির ওপরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সহযোগী ইলন মাস্কের টেসলা গাড়ি এই সময় সবচেয়ে বেশি চাপের ওপরে রয়েছে। টেসলার বিভিন্ন কারখানায় যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি উৎপাদন করা হলেও অন্য সব দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টেসলা বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করে বলে জানা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রে টেসলার বিস্তৃত কারখানা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে গাড়ি উৎপাদন করা হচ্ছে। ক্যালিফোর্নিয়ার ফ্রেমন্ট টেসলার প্রধান কারখানা। এখানে মডেল এস, মডেল ৩, মডেল এক্স এবং মডেল ওয়াইয়ের মতো গাড়ি সংযোজন করা হয়। নেভাদার গিগাফ্যাক্টরিতে প্যানাসনিকের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে একটি প্ল্যান্ট রয়েছে টেসলার। এখানে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি সেল, পাওয়ারওয়াল ও মেগাপ্যাকের মতো শক্তি সঞ্চয়কারী পণ্য তৈরি করে টেসলা। টেক্সাসের গিগাফ্যাক্টরিতে সাইবারট্রাক এবং মডেল ওয়াই তৈরি করা হচ্ছে। নিউইয়র্কের গিগাফ্যাক্টরিতে প্রাথমিকভাবে সৌর প্যানেল উৎপাদনের জন্য প্রতিষ্ঠিত করা হলেও এখন জ্বালানির বিভিন্ন পণ্য ও উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে টেসলার কারখানা রয়েছে। চীনের গিগাফ্যাক্টরি সাংহাই ২০১৯ সালে চালু হয়। এখানে মডেল ৩ ও মডেল ওয়াই নির্মাণ করা হচ্ছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে টেসলার প্রথম কারখানা। এখানকার গাড়ি চীনের বাজারসহ ইউরোপ ও এশিয়ায় রপ্তানি করা হচ্ছে। জার্মানিতে আছে গিগাফ্যাক্টরি বার্লিন-ব্রান্ডেনবার্গ। ২০২২ সালে হওয়া এই ফ্যাক্টরিতে মডেল ওয়াই নির্মাণ করা হচ্ছে। জার্মান প্রকৌশল ও স্থায়িত্বের ওপর গুরুত্ব দিয়ে এই কারখানা চালু করা হয়। এখানে স্থানীয়ভাবে ব্যাটারি তৈরি করা হচ্ছে।
এ ছাড়া মেক্সিকো ও ভারতে টেসলার কারখানা চালুর কথা রয়েছে। কানাডায় টেসলার ব্যাটারি তৈরির ব্যবস্থা আছে। এখানে ৪৬৮০ ব্যাটারি সেল তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য টেসলার ফ্যাক্টরি ভবিষ্যতে তৈরির কথা শোনা যায়। ব্যাটারি উপকরণের জন্য টেসলা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। লিথিয়াম, কোবাল্ট, গ্রাফাইট এবং নিকেলের জন্য চীনের গানফেং লিথিয়াম ও হুয়ায়ু কোবাল্টের মতো কোম্পানি টেসলার প্রধান সরবরাহকারী।
টেসলার লিথিয়াম সংগ্রহ করছে অস্ট্রেলিয়া থেকে। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের বৃহত্তম লিথিয়াম উৎপাদক। টেসলার পিলবারা মিনারেলস এবং মিনারেল রিসোর্সের মতো কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারত্ব রয়েছে। নিকেল ও কোবাল্টের জন্য টেসলা পরিবেশবান্ধব উপায়ে কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য কানাডার খনি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সই করেছে। টেসলাকে ভ্যালে কানাডা কম কার্বনযুক্ত নিকেল সরবরাহ করে। কঙ্গো প্রজাতন্ত্র থেকে টেসলার জন্য কোবাল্ট সংগ্রহ করা হচ্ছে। টেসলা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে এসব খনিজ উপাদান সংগ্রহ করছে।
টেসলার অটো যন্ত্রাংশ ও উপাদান বিশ্বের নানা দেশ থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে। ওয়্যারিং, প্লাস্টিকের যন্ত্রাংশ ও ধাতব উপাদান মেক্সিকো থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে। জার্মানির গিগাফ্যাক্টরি বার্লিন টেসলা মোটর এবং ড্রাইভ ইউনিটের জন্য উপাদান তৈরি করছে। টেসলা ও জাপানের প্যানাসনিক যৌথভাবে গিগাফ্যাক্টরি নেভাদায় ব্যাটারি সেল তৈরি করছে। এ ছাড়া জাপানের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ইলেকট্রনিকস ও সেন্সর ব্যবহার করে টেসলা। দক্ষিণ কোরিয়ার এলজি এনার্জি সলিউশন ও স্যামসাং এসডিআইয়ের কাছ থেকে টেসলা ব্যাটারি উপাদান ও ডিসপ্লে প্রযুক্তি গ্রহণ করছে। ভারতের টাটা অটোকম্প, সোনা কমস্টার ও ভারত ফোর্জের মতো কোম্পানি টেসলার ডিফারেনশিয়াল সিস্টেম এবং ছোট প্লাস্টিকের যন্ত্রাংশের মতো উপাদান সরবরাহ করে।
টেসলার গাড়িতে ব্যবহৃত বিরল মৃত্তিকা উপাদান ও বিশেষায়িত উপকরণ সংগ্রহ করা হচ্ছে ব্রাজিল থেকে। ইন্দোনেশিয়া থেকে নিকেল সংগ্রহ করা হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় নিকেল উৎপাদকদের মধ্যে অন্যতম। টেসলা সুইডেন থেকে গ্রিন ইস্পাত ও বিরল মৃত্তিকা সংগ্রহ করছে।
সূত্র: সিএনবিসি, রয়টার্স, ন্যাসড্যাক