অবরুদ্ধ প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করল পুলিশ
Published: 18th, February 2025 GMT
বিয়ানীবাজারে অশালীন আচরণসহ নানা অভিযোগে অবরুদ্ধ এক প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, উপজেলার শালেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহিদুর রহমানকে শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ৮ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। সোমবার দুপুর ১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। পরে বিয়ানীবাজার থানা পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে। শিক্ষার্থীরা জানায়, অশোভন আচরণের কারণে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাঁকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল।
এদিকে মঙ্গলবার প্রধান শিক্ষক জাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। শিক্ষক জাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে অসদাচরণ, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশালীন ব্যবহার, বিদ্যালয়ের ব্যাপারে এখতিয়ারবহির্ভূত সিদ্ধান্ত নেওয়া ও এককভাবে প্রতিষ্ঠানে নিজের কর্তৃত্ব স্থাপনের কথা তুলে ধরেন স্থানীয়রা। এ সময় তারা বিদ্যালয় থেকে প্রধান শিক্ষক জাহিদুর রহমানের অপসারণ দাবি করেন।
এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসেও তাঁর বিরুদ্ধে ইউএনও বরাবর অভিযোগ করেছিলেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। সে সময় ইউএনও অভিযোগ তদন্ত করে দেখার পাশাপাশি ও প্রধান শিক্ষক জাহিদকে আচরণগত ত্রুটি পরিবর্তনের নির্দেশনা দেন।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, একাধিক শিক্ষক ও অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘটনার দিন দুপুরে শালেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষক জাহিদুর রহমানকে নিজ কার্যালয়ে অবরুব্ধ করে। এ সময় এলাকার মুরব্বি, অভিভাবক ও জনপ্রতিনিধিগণ শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করলেও তারা নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল থাকে।
খবর পেয়ে বিয়ানীবাজার থানা পুলিশ বিদ্যালয়ে গিয়ে অভিভাবক ও স্থানীয় মুরব্বিসহ বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসে। পরে রাত ৯টার দিকে প্রধান শিক্ষক জাহিদুর রহমানকে উদ্ধার করে ইউএনও কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গোলাম মুস্তফা মুন্না জানান, বিষয়টি আচরণগত। স্থানীয় কিছু বিষয়ের সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের ইস্যুটি জড়িয়ে গেছে। আপাতত প্রধান শিক্ষককে ছুটি দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার স্থানীয়রা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অবর দ ধ
এছাড়াও পড়ুন:
কয়রায় সাবেক এমপি, ইউএনও, ওসিসহ ৮০ জনের নামে মামলা
খুলনার কয়রায় বিএনপির নেতাদের ত্রাণ বিতরণে বাধা দিয়ে মারপিটের অভিযোগে সাবেক সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু ও সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সাবেক তিন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৮০ জনের নামে মামলা হয়েছে। তিন বছর আগের ওই ঘটনায় গতকাল সোমবার বিকেলে কয়রা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেছেন ছাত্রদলের সাবেক এক নেতা।
মামলার বাদী জি এম রাজিবুল আলম বাপ্পী (৩১) খুলনা নগরের লবণচরা এলাকার বাসিন্দা ও খুলনা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক। মামলায় (সিআর ৯৯/২৫) ৮০ জনের নাম উল্লেখসহ ১৫–২০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ তাঁদের অনুসারী আইনজীবী ও শিক্ষকের নাম রয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে কয়রা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পেশকার মাইনুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম, সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমিনুর রহমান, থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম, কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নীশিথ রঞ্জন মিস্ত্রী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিজয় কুমার সরদার, থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) সাচ্চু শেখ ও মিহির মজুমদার, কয়রা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাহারুল ইসলাম, বাগালী ইউপির চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুস সামাদ গাজী, আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক ও আরাফাত হোসেন।
মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১২ জুন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলামের (মঞ্জু) নেতৃত্বে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা কয়রায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ ও ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ পরিদর্শনে আসেন। ত্রাণ বিতরণ শেষে রওনা দিলে পথে আসামিরাসহ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা তাঁদের বহনকারী গাড়ির পথরোধ করে। ওই সময় আসামিরা বন্দুক, শটগান, দেশীয় অস্ত্রসহ লাঠিসোঁটা দিয়ে তাঁদের মারপিট করে রক্তাক্ত জখম করেন। তখন পুলিশ প্রশাসনের কাছে সহায়তা চাইলে তারা উল্টো বাদীসহ বিএনপি নেতা–কর্মীদের আঘাত করে ও হুমকি দেয়। তাঁদের পাঁচটি প্রাইভেট কার ও ১৭টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে প্রায় ৪০ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করে। এ ছাড়া তাঁদের কাছে থাকা ৯ লাখ টাকার খাদ্যসামগ্রীসহ ত্রাণের ১৭ লাখ টাকা লুট করে নেয়।
গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে সাবেক সংসদ সদস্য আকতারুজ্জামান বাবুসহ আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে আছেন।
মামলার ৮০ নম্বর আসামি কয়রার সাবেক ইউএনও মমিনুর রহমান বর্তমানে বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মামলায় উল্লিখিত ঘটনার সময় আমি যশোর জেলা পরিষদে কর্মরত ছিলেন। ঘটনার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমি কয়রা উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে ওই ঘটনার প্রায় দেড় বছর পর যোগদান করেছিলাম। মামলায় আমার নাম থাকাটা বিব্রতকর।’
এ বিষয়ে মামলার বাদী রাজিবুল আলম বলেন, ঘটনার দিন তিনি বিএনপির নেতা–কর্মীদের সঙ্গে গাড়িবহরে ছিলেন। দলীয় সিদ্ধান্তে মামলা হয়েছে। মমিনুর রহমানকে ইউএনও হিসেবে আসামি করা হয়েছে। তবে তিনি ওই সময় কয়রায় ছিলেন কি না, এটা নিশ্চিত নয়। দল থেকে যে নাম দেওয়া হয়েছে, তাঁদের আসামি করা হয়েছে। সবাইকে তিনি চেনেন না।
মামলার সাক্ষী সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘আমরা জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে ওই দিন ত্রাণ বিতরণ করতে যাই। তবে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা আমাদের কাজে বাধা দেয় ও মারপিট করে। আমরা খুলনা শহরে ফিরে এসে পরদিন সংবাদ সম্মেলন করি এবং পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দিই। তবে তখন কোনো বিচার পাইনি। পরিস্থিতি বিবেচনায় এখন ন্যায়বিচারের আশায় মামলা করা হয়েছে।’