‘তিস্তা নদী মোর বাড়িঘর, জমি, সাগাই (আত্মীয়), শোদর (সহোদর) সউগ (সব) কারি নিচ্ছে। মেলা আবাদি জমি আছিল আজার (রাজার) হালে খাচনো। বড় গুষ্টি আছিল। সগাইকে হারে ফ্যালাইছি। মানষের কাছোত হাত পাতি খাই। শুনছি, নদী বান্দে দেবে। এলা কি জমিগুলা ফিরে পামো বাহে।’
কথাগুলো বলছিলেন দড়িকিশোরপুর গ্রামের ষাটোর্ধ্ব আবদুল হামিদ শেখ। ক্রাচে ভর দিয়ে তিস্তা বাঁচাও আন্দোলনের কর্মসূচিতে এসেছেন তিনি। চারবার ভাঙনের শিকার হামিদ শেখ চার ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে কোনো রকমে সরকারি খাসজমিতে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁর আশা, আন্দোলনে আসা লোকজন বুঝি নদী বেঁধে দেবে। ভাঙনে হারানো ঘর ফিরে পাবেন তিনি।
একই গ্রামের পঁচাত্তর বছর বয়সী মো.

আখের আলীর চোখের নজর কমে গেছে। অভাব আর রোগশোকে আধমরা। তিনিও এসেছেন নদী বাঁচাও আন্দোলনের কর্মসূচিতে। 
আখের আলী বলেন, ‘আগে তো হামার জোদ্দারি আছিল। বাড়িত কত মানুষ থাকছিল। নদী ভাঙতে ভাঙতে সবকিছু শ্যাষ হয়া গেইছে। হামারা মানষের বাড়িত থাকি। নদী বাদার মিটিংর কথা শুনি কষ্ট করি আসনো বাবা। এবার সরকার নদী বান্দি দিবে। তাহলে মোর কবরটা নিজের জমিত হইল হয়।’
আবদুল হামিদ আর আখের আলীর মতো ঘরবাড়িহারা নারির খামারের আবদুল হামিদ (৭০), জোবেদা বেওয়া (৬৪), শুকারু শেখ (৫৫)সহ হাজারো মানুষ এসেছেন এ সমাবেশে।
শিক্ষার্থী বিউটি বেগম জানায়, তার বাপদাদার ভিটেমাটি সব নদী ছিনিয়ে নিয়েছে। তিস্তা নদী তাদের পরিচয় ও অস্তিত্ব সংকটে ফেলেছে। সরকার তিস্তা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে সব ফিরে পাওয়ার আশা তার।
বিউটির পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন গোড়াই পিয়ার চরের কৃষক আবদুল মতিন। তিনি বলেন, চরগুলোতে খুব কষ্ট করে ফসল আবাদ করি। কখনও নদীভাঙন আবার কখনও বানের পানিতে সব শেষ হয়ে যায়। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে আমরা নদীকূলের মানুষ সুখে জীবনযাপন করতে পারব।
থেতরাই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান সরকার বলেন, পরিকল্পিতভাবে নদীশাসন করতে পারলে নদীর দুই পারের হাজার হাজার হেক্টর জমি আবাদের আওতায় আসবে। কয়েক হাজার পরিবার ফিরে পাবে হারানো ভিটেবাড়ি। সেই সঙ্গে শিল্পকারখানাসহ কৃষিভিত্তিক এগ্রোভেট নগরী গড়ে উঠবে।
থেতরাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুর আমিন সরকার বলেন, নদীটি বাঁধলে তিস্তাপারের মানুষের জীবনমান সমৃদ্ধ হবে।
ব্যবসায়ী আক্তারুজ্জামান দিলীপ বলেন, নদীশাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এখানে ব্যবসায়িক প্রসার ঘটবে। ব্রিটিশ আমলের পানিয়ালের ঘাটটি আবার ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রে পরিণত হবে। চরের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ভালো দাম পাবেন কৃষক।
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের উপজেলা সমন্বয়ক মো. হায়দার আলী মিয়া বলেন, তিস্তাপারের মানুষ যেভাবে জেগে উঠেছে, আশা করি প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নয়ন কুমার সাহা বলেন, তিস্তা মহাপ্রকল্প বাস্তবায়িত হলে অবহেলিত জনপদের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। বিশেষ করে কৃষিপণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাবে, ভালো দাম পাবেন কৃষক।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আবদ ল সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

অসমাপ্ত আধা কিলোমিটারে দুর্ভোগ

১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের সাড়ে ১৫ কিলোমিটারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ৫০০ মিটারের কাজ না করেই ঠিকাদার হাওয়া। এই ৫০০ মিটারই দুর্ভোগে ফেলেছে এলাকাবাসীকে। তারা ধুলায় একাকার হচ্ছেন। ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার টুঙ্গিপাড়া-ঘোনাপাড়া সড়কের চিত্র এটি। স্থানীয়রা দ্রুত এ সড়কের নির্মাণকাজ শেষ করে তাদের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে সড়ক বিভাগের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে,  পিরোজপুর-নাজিরপুর-মাটিভাঙ্গা-পাটগাতী-ঘোনাপাড়া সড়কটি পিরোজপুর, নাজিরপুর, টুঙ্গিপাড়া, জিয়ানগর ভাণ্ডারিয়া উপজেলা থেকে ঢাকা-গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুর জেলায় যাতায়াতের সহজ পথ। এ সড়কের মধ্যে  সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে গোপালগঞ্জ চক্ষু হাসপাতাল ও ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ডেন্টাল কলেজ, আঞ্চলিক ধান গবেষণা কেন্দ্র, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বিআরটিসি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ও বাস ডিপো, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, টুঙ্গিপাড়া সরকারি কলেজ উল্লেখযোগ্য। তাই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির টুঙ্গিপাড়া থেকে ঘোনাপাড়া পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার সার্ভিস লেনসহ ৪ লেনে চওড়া করার কাজ শুরু করা হয় ২০২২ সালের জুলাই মাসে। এতে ব্যয় ধরা হয় ৩৪৭ কোটি টাকা। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওই সড়কের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গিমাডাঙ্গা থেকে পাটগাতী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ৫০০ মিটার সড়কের কাজ অসমাপ্ত রেখে চলে যায়। তার পরই এ সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল, পণ্য পরিবহন ও মানুষের যাতায়াতে ভীষণ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। মাঝেমধ্যে হচ্ছে যানজট। ঘটছে দুর্ঘটনাও।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গিমাডাঙ্গা গ্রামের ফোরকান আলী বলেন, সড়কটির প্রায় সব কাজ শেষ হয়েছে। মাত্র আধা কিলোমিটার কাজ না করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চলে গেছে। এ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গেলে ভোগান্তির শেষ নেই। কখনও কখনও যানজট, ধুলাবালির মধ্যে পড়ে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। এ ছাড়া মাঝেমধ্যে এখানে ঘটে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। তাই তিনি দ্রুত এই আধা কিলোমিটার সড়কের কাজ সম্পন্ন করার দাবি জানান।
পাটগাতী গ্রামের ভ্যানচালক রইচ বিশ্বাস বলেন, সড়কের সব জায়গা ভালো। কিন্তু গিমাডাঙ্গা থেকে পাটগাতী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত কাজ শেষ হয়নি। এখানে ভ্যান চালাতে গেলে প্রচুর ঝাঁকুনি হয়। এতে বয়স্ক যাত্রীর অসুবিধা হয়। মাঝেমধ্যে ভ্যানের বিভিন্ন অংশ ভেঙে যায়। ঘটে দুর্ঘটনা। এ সড়কের ৫০০ মিটার অংশটুকুর কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে।
বাসচালক ইব্রাহিম মিয়া বলেন, সড়কটি খুবই সুন্দর হয়েছে। কিন্তু মাত্র আধা কিলোমিটারের কাজ বাকি রয়েছে। এই আধা কিলোমিটার অতিক্রম করার সময় ধুলাবালি ওড়ে। এতে পথচারী ও ছোট যানবাহনের যাত্রীদের কষ্ট হয়। এ ছাড়া বাসের জানালা বন্ধ করতে হয়। কখনও কখনও যানজটে আটকা পড়তে হয়। আধা কিলোমিটার সড়কের কাজ সম্পন্ন করা হলে এলাকাবাসী দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে।
টুঙ্গিপাড়ার শ্রীরামকান্দি গ্রামের সাইফুল শেখ বলেন, যাতায়াত ও উৎপাদিত কৃষিপণ্য পাটগাতী হাটে পরিবহনে তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। তাই ওই সড়কের গুরুত্বপূর্ণ ৫০০ মিটার এলাকার কাজ দ্রুত শুরু করে শেষ করার দাবি জানান তিনি। 
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী আজহারুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এর পরও ওই সড়কের ৫০০ মিটারের নির্মাণকাজের সব বাধা অপসারিত হয়েছে। ২-১ দিনের মধ্যে ফান্ড ছাড় করছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। দ্রুত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করবে। কাজ শুরু হলে শেষ করতে বেশি সময় লাগবে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সালমানকে হুমকি, একজনকে খুঁজে পাওয়ার পর যে তথ্য দিল পুলিশ
  • বেলীর অভাবের ঘরে আলো হয়ে এলো ফুটফুটে ছেলে
  • ধোঁয়ার ঝুঁকিতে শিশুস্বাস্থ্য
  • ‘র‍্যাব পরিচয়ে’ নারীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতেন সাগর, অবশেষে ধরা
  • ভয় শব্দ দিয়ে গাজার পরিস্থিতি তুলে ধরা যায় না
  • অসমাপ্ত আধা কিলোমিটারে দুর্ভোগ