Samakal:
2025-02-20@19:45:54 GMT

৫০ কোটির কাজ শেষ না হতেই ধস

Published: 18th, February 2025 GMT

৫০ কোটির কাজ শেষ না হতেই ধস

খুলনার কয়রায় একটি সড়ক পুনর্নির্মাণ প্রকল্প তিনবার হাত বদল হওয়ায় প্রাক্কলিত মূল্য ক্রমান্বয়ে কমে গেছে। এতে নিম্নমানের কাজ হওয়ায় সড়কের দু’পাশ ধসে যাচ্ছে। কয়েকটি স্থানে কার্পেটিংও দেবে গেছে। 
জানা যায়, কয়রা উপজেলা সদর থেকে কাশিরহাট অভিমুখী সড়ক পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের কাজটি মূল ঠিকাদারের কাছ থেকে তিন হাত বদল হয়েছে। প্রতিবার হাত বদলে প্রকল্পের প্রাক্কলিত মূল্য কমে যাওয়ায় নিম্নমানের কাজ হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। নির্মাণ সম্পন্ন হওয়া সড়কটির দুই পাশে ধসে পড়তে শুরু করেছে। এ ছাড়া কয়েক স্থানে কার্পেটিংও দেবে যেতে দেখা গেছে। 
এলাকাবাসীর অভিযোগ, তিন দফায় কাজ বিক্রি হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও মধ্যস্বত্বভোগীদের লাভ হলেও প্রকল্পের কাজ হচ্ছে দায়সারা। জেলা শহর থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় প্রকল্প তদারকিতেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা দেখা গেছে। ফলে পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও মানসম্মত কাজ হচ্ছে না।   
খুলনা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ‘জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের আওতায় কয়রা-কাশিরহাটখোলা সড়কের সাত কিলোমিটার অংশ পুনর্নির্মাণের জন্য ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রে অংশ নিয়ে মেসার্স মাহাবুব ব্রাদার্স নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি করার অনুমতি পায়। ওই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তসলিম আহমেদ আশা কাজটি কিনে নেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তিনি পালিয়ে যান। পরে তিনি আব্দুস সালাম নামে তাঁর এক ঘনিষ্ঠজনের কাছে কাজটি বিক্রি করে দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি এ প্রকল্পের কাজের দায়িত্বে রয়েছেন। ৪৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা নির্মাণ ব্যয়ের এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছর ৩১ ডিসেম্বর।
প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলা সদরের তিন রাস্তার মোড় থেকে বেদকাশি কলেজিয়েট স্কুল পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার সড়কের কার্পেটিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। নির্মাণ সম্পন্ন হওয়া সড়কের দুই পাশে পুরোনো প্যালাসাইডিং রেখে কাজ শেষ করায় স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার মানুষ। কয়েক স্থানে সড়কের মাঝে বিদ্যুতের খুঁটি ও দোকানপাট রেখে কাজ শেষ করা হয়েছে। প্রকল্পের কাশিরহাটখোলা এলাকায় নির্মাণাধীন দুটি কালভার্ট রেখে ৩০০ মিটার সামনের সড়কের দুই পাশ এরই মধ্যে ধসে পড়েছে। এ ছাড়া কাশিরখাল সেতু পার হয়ে উত্তর পাশে প্রায় এক কিলোমিটার অংশে পুরোনো সড়কের ওপর কার্পেটিং করায় তা দেবে যেতে শুরু করেছে।   
বেদকাশি গ্রামের বাসিন্দা উমর আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘শুনতিছি আসল কন্ট্রাকটারের কাছ থেকে দুইবার কাজ বিক্রি হইছে। এক কাজে তিনজন লাভ খাতি গেলি কাজের মান তো খারাপ হবেই। বরাদ্দের টাকাগুলো কয়েন কইরে ছড়ায়ে দিলিও এর চাইতে ভালো কাজ হইতো।’
বেদকাশি কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মাজেদ বলেন, সড়কটি পুনর্নির্মাণের কথা থাকলেও সে নির্দেশনা মানা হয়নি। এ ছাড়া বিটুমিন, পাথরের মান ও মিশ্রণ ভালো না হওয়ায় সড়কটি বেশিদিন টিকবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। 
২ নম্বর কয়রা গ্রামের বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি সদস্য শেখ সালাউদ্দীন লিটন বলেন, এলাকাটি দুর্যোগপ্রবণ হওয়ায় এখানকার নির্মাণাধীন সড়কগুলোর উচ্চতা বৃদ্ধির দরকার হয়। কিন্তু এ প্রকল্পের কাজের নকশায় উচ্চতা কী পরিমাণ থাকার কথা আর কী পরিমাণ করা হয়েছে, তা তারা চাইলেও জানতে পারেন না। কারণ কাজের সাইটে কোনো সাইনবোর্ড নেই। এ ছাড়া মূল ঠিকাদার অথবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাউকে কাজের স্থানে পাওয়া যায় না। শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বললেও তারা এ বিষয়ে কথা বলতে চান না।  
কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি বিদেশ রঞ্জন বলেন, একটি কাজ যখন মূল ঠিকাদারের কাছ থেকে দুই হাত বদল হয়, তখন কাজের মান কেমন হতে পারে, তা ধারণা করা যায়। কারণ সব পক্ষই চাইবে লাভ করতে। তাদের লাভের পাল্লা ভারি করতে গিয়ে কাজের মান খারাপ হয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। 
তিনি জানান, ২০২০ সালে সড়কের এই অংশে আরেকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেছিল। তারা যৎসামান্য কাজ করার পর প্রাকৃতিক দুর্যোগে তা ভেসে যায়। দীর্ঘ ভোগান্তির পর গত বছর নতুন করে কাজ শুরু হলেও কাজের মান ভালো হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, আগের ঠিকাদারের করা গাইড ওয়াল ও প্যালাসাইডিংয়ের স্থায়িত্ব কমে গেলেও সেগুলো রেখেই নতুন ঠিকাদার কাজ শেষ করতে চাইছেন।  
জানতে চাইলে প্রকল্পের বর্তমান ঠিকাদার আব্দুস সালাম বলেন, গত ৫ আগস্ট কাজের সাব-কন্ট্রাক্টর পালিয়ে যাওয়ায় মূল প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজটি তিনি দেখভাল করছেন। প্রকল্পের নকশা ও প্রাক্কলন অনুসরণ করে কাজ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষকে কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার আগে কোথাও কোনো ত্রুটি থাকলে তা ঠিক করে দেওয়া হবে।  
সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী তামিমুল হক বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ছে কিনা এ মুহূর্তে বলতে পারছেন না। হাত বদলের বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখবেন। কাজের মান খারাপ হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে বলে জানান তিনি। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সড়ক প রকল প র ক জ হ ত বদল সড়ক র হওয় য়

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ কোটির কাজ শেষ না হতেই ধস

খুলনার কয়রায় একটি সড়ক পুনর্নির্মাণ প্রকল্প তিনবার হাত বদল হওয়ায় প্রাক্কলিত মূল্য ক্রমান্বয়ে কমে গেছে। এতে নিম্নমানের কাজ হওয়ায় সড়কের দু’পাশ ধসে যাচ্ছে। কয়েকটি স্থানে কার্পেটিংও দেবে গেছে। 
জানা যায়, কয়রা উপজেলা সদর থেকে কাশিরহাট অভিমুখী সড়ক পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের কাজটি মূল ঠিকাদারের কাছ থেকে তিন হাত বদল হয়েছে। প্রতিবার হাত বদলে প্রকল্পের প্রাক্কলিত মূল্য কমে যাওয়ায় নিম্নমানের কাজ হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। নির্মাণ সম্পন্ন হওয়া সড়কটির দুই পাশে ধসে পড়তে শুরু করেছে। এ ছাড়া কয়েক স্থানে কার্পেটিংও দেবে যেতে দেখা গেছে। 
এলাকাবাসীর অভিযোগ, তিন দফায় কাজ বিক্রি হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও মধ্যস্বত্বভোগীদের লাভ হলেও প্রকল্পের কাজ হচ্ছে দায়সারা। জেলা শহর থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় প্রকল্প তদারকিতেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা দেখা গেছে। ফলে পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও মানসম্মত কাজ হচ্ছে না।   
খুলনা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ‘জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের আওতায় কয়রা-কাশিরহাটখোলা সড়কের সাত কিলোমিটার অংশ পুনর্নির্মাণের জন্য ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রে অংশ নিয়ে মেসার্স মাহাবুব ব্রাদার্স নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি করার অনুমতি পায়। ওই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তসলিম আহমেদ আশা কাজটি কিনে নেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তিনি পালিয়ে যান। পরে তিনি আব্দুস সালাম নামে তাঁর এক ঘনিষ্ঠজনের কাছে কাজটি বিক্রি করে দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি এ প্রকল্পের কাজের দায়িত্বে রয়েছেন। ৪৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা নির্মাণ ব্যয়ের এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছর ৩১ ডিসেম্বর।
প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলা সদরের তিন রাস্তার মোড় থেকে বেদকাশি কলেজিয়েট স্কুল পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার সড়কের কার্পেটিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। নির্মাণ সম্পন্ন হওয়া সড়কের দুই পাশে পুরোনো প্যালাসাইডিং রেখে কাজ শেষ করায় স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার মানুষ। কয়েক স্থানে সড়কের মাঝে বিদ্যুতের খুঁটি ও দোকানপাট রেখে কাজ শেষ করা হয়েছে। প্রকল্পের কাশিরহাটখোলা এলাকায় নির্মাণাধীন দুটি কালভার্ট রেখে ৩০০ মিটার সামনের সড়কের দুই পাশ এরই মধ্যে ধসে পড়েছে। এ ছাড়া কাশিরখাল সেতু পার হয়ে উত্তর পাশে প্রায় এক কিলোমিটার অংশে পুরোনো সড়কের ওপর কার্পেটিং করায় তা দেবে যেতে শুরু করেছে।   
বেদকাশি গ্রামের বাসিন্দা উমর আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘শুনতিছি আসল কন্ট্রাকটারের কাছ থেকে দুইবার কাজ বিক্রি হইছে। এক কাজে তিনজন লাভ খাতি গেলি কাজের মান তো খারাপ হবেই। বরাদ্দের টাকাগুলো কয়েন কইরে ছড়ায়ে দিলিও এর চাইতে ভালো কাজ হইতো।’
বেদকাশি কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মাজেদ বলেন, সড়কটি পুনর্নির্মাণের কথা থাকলেও সে নির্দেশনা মানা হয়নি। এ ছাড়া বিটুমিন, পাথরের মান ও মিশ্রণ ভালো না হওয়ায় সড়কটি বেশিদিন টিকবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। 
২ নম্বর কয়রা গ্রামের বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি সদস্য শেখ সালাউদ্দীন লিটন বলেন, এলাকাটি দুর্যোগপ্রবণ হওয়ায় এখানকার নির্মাণাধীন সড়কগুলোর উচ্চতা বৃদ্ধির দরকার হয়। কিন্তু এ প্রকল্পের কাজের নকশায় উচ্চতা কী পরিমাণ থাকার কথা আর কী পরিমাণ করা হয়েছে, তা তারা চাইলেও জানতে পারেন না। কারণ কাজের সাইটে কোনো সাইনবোর্ড নেই। এ ছাড়া মূল ঠিকাদার অথবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাউকে কাজের স্থানে পাওয়া যায় না। শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বললেও তারা এ বিষয়ে কথা বলতে চান না।  
কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি বিদেশ রঞ্জন বলেন, একটি কাজ যখন মূল ঠিকাদারের কাছ থেকে দুই হাত বদল হয়, তখন কাজের মান কেমন হতে পারে, তা ধারণা করা যায়। কারণ সব পক্ষই চাইবে লাভ করতে। তাদের লাভের পাল্লা ভারি করতে গিয়ে কাজের মান খারাপ হয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। 
তিনি জানান, ২০২০ সালে সড়কের এই অংশে আরেকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেছিল। তারা যৎসামান্য কাজ করার পর প্রাকৃতিক দুর্যোগে তা ভেসে যায়। দীর্ঘ ভোগান্তির পর গত বছর নতুন করে কাজ শুরু হলেও কাজের মান ভালো হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, আগের ঠিকাদারের করা গাইড ওয়াল ও প্যালাসাইডিংয়ের স্থায়িত্ব কমে গেলেও সেগুলো রেখেই নতুন ঠিকাদার কাজ শেষ করতে চাইছেন।  
জানতে চাইলে প্রকল্পের বর্তমান ঠিকাদার আব্দুস সালাম বলেন, গত ৫ আগস্ট কাজের সাব-কন্ট্রাক্টর পালিয়ে যাওয়ায় মূল প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজটি তিনি দেখভাল করছেন। প্রকল্পের নকশা ও প্রাক্কলন অনুসরণ করে কাজ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষকে কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার আগে কোথাও কোনো ত্রুটি থাকলে তা ঠিক করে দেওয়া হবে।  
সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী তামিমুল হক বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ছে কিনা এ মুহূর্তে বলতে পারছেন না। হাত বদলের বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখবেন। কাজের মান খারাপ হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে বলে জানান তিনি। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ