খাদ্য অধিদপ্তরে চাউল, আটা ও ময়দাকলের মালিকদের তালিকাভুক্তি লইয়া ব্যাপক অনিয়ম চলিতেছে বলিয়া মঙ্গলবার সমকাল এক উদ্বেগজনক সংবাদ দিয়াছে। সেই সংবাদে বলা হয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা মিলিয়া উৎকোচ চক্র গড়িয়া তুলিয়াছেন, যাহাদের ‘খুশি’ করিতে না পারিলে যোগ্য কলমালিকগণ তালিকাভুক্ত হইতে পারেন না। এমনকি তালিকাভুক্ত কলমালিকের অনুমোদনপত্রও বাতিল হইয়া যায়। ফলে একদিকে সরকারি তালিকার বাহিরে থাকিয়া যাইতেছেন অনেক প্রকৃত কলমালিক, অপরদিকে অস্তিত্বহীন বা নামকাওয়াস্তে কার্যক্রম পরিচালনাকারীরা সরকারি খাতায় নাম লিখাইতে পারিতেছেন। বিষয়টা উদ্বেগজনক। কারণ ইহার ফলে দেশে খাদ্য মজুতের সঠিক চিত্র দুরূহ হইয়া যায়, যাহার নেতিবাচক প্রভাব বহুবিধ। প্রথমত, সময়মতো চাউল বা গমের ন্যায় প্রধান খাদ্যপণ্য আমদানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ কঠিন হইয়া পড়ে। দ্বিতীয়ত, এই সকল পণ্যের বাজার চক্রের নিয়ন্ত্রণে চলিয়া যায়। আন্তরিক হইলেও সরকারের পক্ষে বাজার নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব হইয়া পড়ে। মোদ্দা কথা, খাদ্য মন্ত্রণালয়ে বিরাজমান দুর্নীতির চক্র ভাঙিতে না পারিলে সমূহ সংকটের ঝুঁকি রহিয়াছে। ক্ষুধার্ত উৎকোচ চক্রকে অবিলম্বে যথাবিহিত প্রাপ্য বুঝাইয়া দেওয়া তাই কর্তব্য।

বিদ্যমান ত্রুটিপূর্ণ বাজার ব্যবস্থায় বিশেষত ধান ও চাউল সাধারণত মিল মালিকগণই সংগ্রহ করেন, যাহাদের নিকট হইতে সরকার তাহার প্রয়োজন অনুসারে উক্ত পণ্যসমূহ ক্রয় করিয়া থাকে। সরাসরি কৃষকের নিকট হইতে এই সকল পণ্য ক্রয়ের নিয়ম থাকিলেও ত্রুটিপূর্ণ সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ার কারণে নিয়মটি কদাচিৎ পালিত হয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, খাদ্য অধিদপ্তরের তালিকাভুক্তির জন্য জেলা খাদ্য কর্মকর্তার মাধ্যমে আবেদনের নিয়ম থাকিলেও তাহা মান্য হয় না বলিলেই চলে। অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সরাসরি খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বা সচিব বরাবর আবেদন করিয়া তালিকাভুক্তির ঘটনা কম নহে। শুধু উহাই নহে, এমনকি মোড়ককৃত আটা-ময়দা বিক্রয়ের জন্যও মিলগুলিকে বিভিন্ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করিয়া সরকারি অনুমোদন লইবার নিয়ম রহিয়াছে। কিন্তু খাদ্য অধিদপ্তরের কোনো প্রকার সুপারিশ ব্যতিরেকেই বেশ কয়েকটা আটা-ময়দাকলকে অনুমোদন দিয়াছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। সত্য, খাদ্য অধিদপ্তর ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মিলারদের তালিকাভুক্তি বিষয়ে আলোচ্য কারসাজি দীর্ঘদিন যাবৎ চলমান। গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার বিদায় গ্রহণের পর যেই সরকার ক্ষমতাসীন, উহারই এই কারসাজির অবসান ঘটাইবার দায়িত্ব ছিল। এমনকি, এই ক্ষেত্রে ঘুরিয়া ফিরিয়া এই চক্রের সদস্যরূপে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের একান্ত সচিব, খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক, অনুমোদন প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব, সচিবের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা গোলাম রব্বানীর নাম আসিলেও অদ্যাবধি উহাদের কেশাগ্রও স্পর্শ করা হয় নাই। অভিযোগ রহিয়াছে, বিবিধ প্রকার বদলি বাণিজ্যও এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সম্পন্ন হইয়া থাকে। যেই সরিষা দিয়া কারসাজির ভূত বিতাড়নের কথা, সেই সরিষার অভ্যন্তরেই ভূতের বসবাস কিনা, আমরা জানি না। তবে তাহা যে সমগ্র জাতির মধ্যেই হতাশা সৃষ্টি করিবে, ইহা হলফ করিয়া বলা যায়। এমতাবস্থায় কোনো উন্নতিকামী জাতির জন্যই ইহা শুভ হইতে পারে না।

ধান ও গম শুধু আমাদের প্রধান খাদ্য শস্যই নহে, সামগ্রিক উন্নয়নের প্রধান শর্ত রাজনৈতিক-সামাজিক স্থিতিশীলতাও যে কোনো অর্থে জনগণের সকল অংশের নিকট এই সকল পণ্য সুলভ হইবার উপর নির্ভরশীল। অতএব বাজারে ধান ও গমের সরবরাহে ন্যূনতম ঘাটতি সৃষ্টি করিতে পারে এমন যেই কোনো বিষয়ে সরকারের সতর্ক থাকা জরুরি। পূর্বেই বলা হইয়াছে, প্রকৃত চাউল ও আটাকল মালিকদের সুরক্ষা ব্যতীত সরকারের পক্ষে এহেন পরিস্থিতি সামলানো এক প্রকার অসম্ভব। তাই খাদ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর দুর্নীতিমুক্ত করিয়া প্রকৃত কলমালিকদের সহিত সরকারের সম্পর্ক গড়িয়া তোলা জরুরি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র র কলম ল ক

এছাড়াও পড়ুন:

আর্জেন্টিনা কোচ স্কালোনি সন্তুষ্ট হবেন না কেন

লিওনেল মেসি ছিলেন না, লাওতারো মার্তিনেজও ছিলেন না। এমনকি পাওলো দিবালাও নয়। উরুগুয়ের বিপক্ষে ম্যাচের জন্য আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগ হয়ে উঠেছিল অনেকটাই ধারহীন। কিন্তু মন্টেভিডিওতে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ১৩তম ম্যাচে মেসি–মার্তিনেজের অভাব কি আর্জেন্টিনা খুব বেশি টের পেয়েছে?

বেলা শেষে ফলই যখন বড় হয়ে দাঁড়ায়, তখন উরুগুয়ের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার নতুন চেহারার আক্রমণভাগকে দশে দশ তো দিতেই হবে। হুলিয়ান আলভারেজ, থিয়াগো আলমাদা আর গিলিয়ানো সিমিওনেদের নিয়ে গড়া আক্রমণভাগ আর্জেন্টিনাকে এনে দিয়েছে ১–০ গোলের জয়। গোল করেছেন আরমাদা, অ্যাসিস্ট করেছেন আলভারেজ। ম্যাচ শেষে আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনি তাই আনন্দের সঙ্গেই বললেন, ‘আমি কি সন্তুষ্ট না হয়ে পারি!’

স্কালোনি কেন সন্তুষ্ট হবেন না, যখন তাঁর দল বলের দখলে পিছিয়ে থাকলেও (৫৫%–এর বিপরীতে ৪৫%) ম্যাচে উরুগুয়ের চেয়ে শট নিয়েছে দ্বিগুণ (৬টির বিপরীতে ১২টি)। সবচেয়ে বড় কথা, ৬৮ মিনিটে আলভারেজের বাড়ানো বল ধরে আলমাদার মতো তরুণ যেভাবে তাক লাগানো এক গোল করেছেন।

দলের পারফরম্যান্স নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে আর্জেন্টাইন কোচ ম্যাচ শেষে বলেন, ‘আমি কি সন্তুষ্ট না হয়ে পারি! শুধু জয়ের জন্য নয়; বরং ছেলেরা যেভাবে খেলেছে, তার জন্য। আমরা পরিপূর্ণ একটা ম্যাচ খেলতে পেরেছি। চাপ সয়ে নিতে পেরেছি। যখন আক্রমণাত্মক খেলার দরকার ছিল, খেলেছি। যখন রক্ষণাত্মক দরকার ছিল, সেটাও খেলেছি।’

মেসি–মার্তিনেজের মতো বড় নামের ও অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের না থাকায় ম্যাচের আগে কিছুটা হলেও ভাবনা ছিল স্কালোনির। তবে এটি তরুণদের নিজেদের সামর্থ্য দেখানোর ভালো সুযোগ বলেও মন্তব্য করেছিলেন তখন। উরুগুয়ের মাঠে আলমাদারা সেটি সত্যিই করে দেখানোর পর স্কালোনি মনে করিয়ে দিলেন, সবচেয়ে বড় নাম তো আর্জেন্টিনাই, ‘আমাদের জাতীয় দল এমন একটি দল, কেউ একজন না থাকলে আরেকজন সেখানে ভূমিকা রাখে। এমনকি আজ যখন গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন খেলোয়াড় ছিল না, তারপরও আমরা আত্মবিশ্বাস নিয়েই মাঠে নেমেছি। হতে পারে পারফরম্যান্স (গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের তুলনা) ভিন্ন। কিন্তু দলটা মাঠে নামে অন্য সব নামকে এক পাশে সরিয়ে রেখেই।’

গত অক্টোবরে বলিভিয়ার বিপক্ষে ৬–০ ব্যবধানে জয়ের ম্যাচে গোল করেছিলেন আলমাদা। অলিম্পিক লিওঁতে খেলা এই ফরোয়ার্ড এবার তারকা ফরোয়ার্ডদের অনুপস্থিতিতে গোল করে দলকে জেতানোর পর বললেন, ‘আমি বলটা নিলাম, মারলাম, সৌভাগ্যক্রমে জালে চলে গেল।’
ম্যাচে তিনটি শট নিয়ে দুটিই লক্ষ্যে রাখতে পারা এই ফরোয়ার্ড কিছু একটা করে দেখাতে যে তেতে ছিলেন, জানালেন সেটাও, ‘আমি কিছুটা দুশ্চিন্তায় ছিলাম। চেয়েছি, কী কারণে আমি স্কোয়াডে আছি, সেটা যেন দেখাতে পারি।’
আলমাদার দলের পরের ম্যাচ বাংলাদেশ সময় বুধবার ব্রাজিলের বিপক্ষে। সে ম্যাচে ড্র করলেই ২০২৬ বিশ্বকাপে জায়গা নিশ্চিত করে ফেলবে আর্জেন্টিনা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশে শিশুদের ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা উদ্বেগজনক: ইউনিসেফ
  • শিশুদের ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা উদ্বেগজনক: ইউনিসেফ বাংলাদেশ
  • ৪ ওভারে আর্চারের ৭৬ রান, এমনকিছু আগে দেখেনি আইপিএল
  • কার্যকর পদক্ষেপ কাম্য
  • প্রথম আসরের স্মৃতি ফিরিয়ে শুরুতেই কলকাতা-বেঙ্গালুরু ম্যাচ
  • আর্জেন্টিনা কোচ স্কালোনি সন্তুষ্ট হবেন না কেন
  • ইতিকাফ অবস্থায় কী করা যায়, করা যায় না