যুক্তরাজ্যের ব্যয়সাশ্রয়ী নীতি থেকে শিক্ষা নিন
Published: 18th, February 2025 GMT
বিশ্বব্যাপী সরকারগুলো ব্যবসা খরচ কমিয়ে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে গুরুত্ব দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে ইলন মাস্ক বর্তমানে ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিশিয়েন্সিতে নেতৃত্ব দিয়ে বিভিন্ন ব্যয়সাশ্রয়ী নীতি বাস্তবায়নে সরকারকে সহায়তা করছেন। একইভাবে বাংলাদেশেও রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় কিছু কাঠামোগত সংস্কার আনলে রাজস্ব ব্যয় কমিয়ে আরও কার্যকরী ও সহজতর করা সম্ভব।
বর্তমান বাস্তবতায় সরকার দ্রুত করজাল বৃদ্ধি করে রাজস্ব আয় বাড়াতে পারবে না। কারণ বিস্তৃত ও সমন্বিত ডিজিটালাইজেশন একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। অন্যদিকে রাজস্ব ব্যয়ের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা এবং উন্নয়ন ব্যয়ের বাধ্যবাধকতা সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘাটতি অর্থায়নের ফলে ঋণের পরিমাণ এবং সুদের খরচও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে সরকারকে রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি রাজস্ব ব্যয় কমানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। একটি কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে বিসিএস (কর) ও বিসিএস (শুল্ক ও আবগারি) একীভূতকরণ এবং একই কমিশনারের অধীনে আয়কর, মূসক ও শুল্ক-সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা।
বর্তমানে কাঠামোর সীমাবদ্ধতা আছে। একটি প্রতিষ্ঠানকে আয়কর, মূসক এবং শুল্ক-সংক্রান্ত কার্যক্রমের জন্য ভিন্ন ভিন্ন কমিশনারের অধীনে, পৃথক অফিসে যেতে হয়। এতে ব্যবসায়ীকে একাধিক অফিসের নিয়মনীতি মেনে চলতে হয় এবং প্রতিটি দপ্তরের বিভিন্ন কর্মকর্তাকে একই ব্যবসার প্রকৃতি, কার্যপ্রণালি ও হিসাব পদ্ধতি বারবার ব্যাখ্যা করতে হয়। ফলে ব্যবসার মূল কার্যক্রম ব্যাহত হয় এবং প্রশাসনিক ব্যয় বৃদ্ধি পায়।
ব্যবসায়ীদের প্রতি মাসে উৎসে কর্তিত আয়কর রিটার্ন ও মূসক রিটার্ন পৃথকভাবে জমা দিতে হয়, যা অনেক সময়সাপেক্ষ ও জটিল। পাশাপাশি প্রতিটি বিভাগ পৃথকভাবে নিরীক্ষা (কমিশনারেট, বিভাগীয় গোয়েন্দা, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা) পরিচালনা করায় অনর্থক আমলাতান্ত্রিক জটিলতা সৃষ্টি হয় এবং ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় আরও বেড়ে যায়।
একীভূত কাঠামোয় অনেক সুবিধা। করদাতারা একই কমিশনারের অধীনে কর সংক্রান্ত সব সেবা পেলে বারবার পৃথক অফিসে যাতায়াত করতে হবে না। ফলে কমপ্লায়েন্স ব্যয় কমবে, সময় সাশ্রয় হবে এবং প্রক্রিয়াটি সহজ হবে। সে জন্য একীভূত তথ্যভান্ডার ও কার্যক্রম দরকার।
একজন কমিশনার ব্যবসায়ীদের আমদানি-রপ্তানি, বিক্রয় ও মুনাফার তথ্য একই সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। এতে কর ফাঁকি রোধ করা সহজ হবে এবং একই ব্যবসার জন্য পৃথক কমিশনারের কাছে তথ্য ব্যাখ্যার প্রয়োজন হবে না। ফলে প্রশাসনিক কাজের পরিধি হ্রাস পাবে এবং নিরীক্ষার জন্য অতিরিক্ত সময় বরাদ্দ করা সম্ভব হবে।
একীভূত কাঠামোর অধীনে একই শিল্প খাতে আয়কর, মূসক ও শুল্ক নীতির মধ্যে সমন্বয় আনতে সহজ হবে। ফলে করদাতারা সরকারের নীতিগত সুবিধাগুলো সহজে বুঝতে ও কাজে লাগাতে পারবেন, যা ব্যবসার প্রসার ত্বরান্বিত করবে। আয়কর, মূসক ও শুল্ক ব্যবস্থাপনার জন্য আলাদা অফিস ও জনবল রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হ্রাস পাবে। ফলে সরকারের মূলধনি ও রাজস্ব ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে।
আমাদের জন্য যুক্তরাজ্যের উদাহরণ গুরুত্বপূর্ণ। দেশটির ট্রেজারি কমিটি ২০০১ সালে রাজস্ব বিভাগের কার্যকারিতা মূল্যায়নের জন্য একটি সাব-কমিটি গঠন করেছিল। এর অংশ হিসেবে এইচএম কাস্টমস অ্যান্ড এক্সাইজ এইচএমসিই এবং অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বিভাগ একীভূত করার সুপারিশ করা হয়। ২০০৩ সালের ২ জুলাই পে মাস্টার জেনারেল ঘোষণা করেন, ‘সরকার কর-সংক্রান্ত কার্যক্রমের সর্বোত্তম সাংগঠনিক কাঠামো নিশ্চিত করতে রাজস্ব দপ্তরগুলো পুনর্গঠনের পরিকল্পনা করছে।’ ২০০৫ সালের ১৮ এপ্রিল দুই সংস্থাকে একীভূত করে এইচএম রাজস্ব ও কাস্টমস (এইচএমআরসি) গঠন করা হয়, যা কর ব্যবস্থাপনায় নতুন মাত্রা যোগ করে।
বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যের এইচএমআরসি মডেল অনুসরণ করলে কর ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং করদাতারা আরও সহজ ও গতিশীল সেবা পাবে। বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় একীভূত কাঠামো গড়ে তোলা হলে একদিকে ব্যবসায়ীর জন্য কর ব্যবস্থা সহজ হবে এবং প্রশাসনিক ব্যয় কমবে; করদাতাদের সেবা এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত হওয়ায় জটিলতা হ্রাস পাবে; সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়বে এবং কর ফাঁকি কমবে। অন্যদিকে কর ব্যবস্থা সহজ হবে; ব্যবসায়িক ব্যয় হ্রাস পাবে এবং সরকারের ব্যয় সাশ্রয় হবে।
একীভূত কাঠামো বাস্তবায়ন করতে হলে পরিকল্পিতভাবে ধাপে ধাপে উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে ব্যবসায়ীরা সহজেই নতুন কাঠামোর সঙ্গে অভ্যস্ত হতে পারেন এবং প্রশাসনিক জটিলতা এড়ানো যায়। বাংলাদেশের কর ব্যবস্থা ডিজিটালাইজেশনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। পাশাপাশি প্রশাসনিক কাঠামো সহজীকরণও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিচ্ছে।
স্নেহাশীষ বড়ুয়া: এফসিএ; ডিরেক্টর, এসএমএসি
অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেস লিমিটেড
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আয়কর এক ভ ত ক ঠ ম কর ব যবস থ ব যবস র সরক র র ব যবস য় র জন য করদ ত
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাজ্যের ব্যয়সাশ্রয়ী নীতি থেকে শিক্ষা নিন
বিশ্বব্যাপী সরকারগুলো ব্যবসা খরচ কমিয়ে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে গুরুত্ব দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে ইলন মাস্ক বর্তমানে ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিশিয়েন্সিতে নেতৃত্ব দিয়ে বিভিন্ন ব্যয়সাশ্রয়ী নীতি বাস্তবায়নে সরকারকে সহায়তা করছেন। একইভাবে বাংলাদেশেও রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় কিছু কাঠামোগত সংস্কার আনলে রাজস্ব ব্যয় কমিয়ে আরও কার্যকরী ও সহজতর করা সম্ভব।
বর্তমান বাস্তবতায় সরকার দ্রুত করজাল বৃদ্ধি করে রাজস্ব আয় বাড়াতে পারবে না। কারণ বিস্তৃত ও সমন্বিত ডিজিটালাইজেশন একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। অন্যদিকে রাজস্ব ব্যয়ের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা এবং উন্নয়ন ব্যয়ের বাধ্যবাধকতা সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘাটতি অর্থায়নের ফলে ঋণের পরিমাণ এবং সুদের খরচও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে সরকারকে রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি রাজস্ব ব্যয় কমানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। একটি কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে বিসিএস (কর) ও বিসিএস (শুল্ক ও আবগারি) একীভূতকরণ এবং একই কমিশনারের অধীনে আয়কর, মূসক ও শুল্ক-সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা।
বর্তমানে কাঠামোর সীমাবদ্ধতা আছে। একটি প্রতিষ্ঠানকে আয়কর, মূসক এবং শুল্ক-সংক্রান্ত কার্যক্রমের জন্য ভিন্ন ভিন্ন কমিশনারের অধীনে, পৃথক অফিসে যেতে হয়। এতে ব্যবসায়ীকে একাধিক অফিসের নিয়মনীতি মেনে চলতে হয় এবং প্রতিটি দপ্তরের বিভিন্ন কর্মকর্তাকে একই ব্যবসার প্রকৃতি, কার্যপ্রণালি ও হিসাব পদ্ধতি বারবার ব্যাখ্যা করতে হয়। ফলে ব্যবসার মূল কার্যক্রম ব্যাহত হয় এবং প্রশাসনিক ব্যয় বৃদ্ধি পায়।
ব্যবসায়ীদের প্রতি মাসে উৎসে কর্তিত আয়কর রিটার্ন ও মূসক রিটার্ন পৃথকভাবে জমা দিতে হয়, যা অনেক সময়সাপেক্ষ ও জটিল। পাশাপাশি প্রতিটি বিভাগ পৃথকভাবে নিরীক্ষা (কমিশনারেট, বিভাগীয় গোয়েন্দা, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা) পরিচালনা করায় অনর্থক আমলাতান্ত্রিক জটিলতা সৃষ্টি হয় এবং ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় আরও বেড়ে যায়।
একীভূত কাঠামোয় অনেক সুবিধা। করদাতারা একই কমিশনারের অধীনে কর সংক্রান্ত সব সেবা পেলে বারবার পৃথক অফিসে যাতায়াত করতে হবে না। ফলে কমপ্লায়েন্স ব্যয় কমবে, সময় সাশ্রয় হবে এবং প্রক্রিয়াটি সহজ হবে। সে জন্য একীভূত তথ্যভান্ডার ও কার্যক্রম দরকার।
একজন কমিশনার ব্যবসায়ীদের আমদানি-রপ্তানি, বিক্রয় ও মুনাফার তথ্য একই সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। এতে কর ফাঁকি রোধ করা সহজ হবে এবং একই ব্যবসার জন্য পৃথক কমিশনারের কাছে তথ্য ব্যাখ্যার প্রয়োজন হবে না। ফলে প্রশাসনিক কাজের পরিধি হ্রাস পাবে এবং নিরীক্ষার জন্য অতিরিক্ত সময় বরাদ্দ করা সম্ভব হবে।
একীভূত কাঠামোর অধীনে একই শিল্প খাতে আয়কর, মূসক ও শুল্ক নীতির মধ্যে সমন্বয় আনতে সহজ হবে। ফলে করদাতারা সরকারের নীতিগত সুবিধাগুলো সহজে বুঝতে ও কাজে লাগাতে পারবেন, যা ব্যবসার প্রসার ত্বরান্বিত করবে। আয়কর, মূসক ও শুল্ক ব্যবস্থাপনার জন্য আলাদা অফিস ও জনবল রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হ্রাস পাবে। ফলে সরকারের মূলধনি ও রাজস্ব ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে।
আমাদের জন্য যুক্তরাজ্যের উদাহরণ গুরুত্বপূর্ণ। দেশটির ট্রেজারি কমিটি ২০০১ সালে রাজস্ব বিভাগের কার্যকারিতা মূল্যায়নের জন্য একটি সাব-কমিটি গঠন করেছিল। এর অংশ হিসেবে এইচএম কাস্টমস অ্যান্ড এক্সাইজ এইচএমসিই এবং অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বিভাগ একীভূত করার সুপারিশ করা হয়। ২০০৩ সালের ২ জুলাই পে মাস্টার জেনারেল ঘোষণা করেন, ‘সরকার কর-সংক্রান্ত কার্যক্রমের সর্বোত্তম সাংগঠনিক কাঠামো নিশ্চিত করতে রাজস্ব দপ্তরগুলো পুনর্গঠনের পরিকল্পনা করছে।’ ২০০৫ সালের ১৮ এপ্রিল দুই সংস্থাকে একীভূত করে এইচএম রাজস্ব ও কাস্টমস (এইচএমআরসি) গঠন করা হয়, যা কর ব্যবস্থাপনায় নতুন মাত্রা যোগ করে।
বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যের এইচএমআরসি মডেল অনুসরণ করলে কর ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং করদাতারা আরও সহজ ও গতিশীল সেবা পাবে। বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় একীভূত কাঠামো গড়ে তোলা হলে একদিকে ব্যবসায়ীর জন্য কর ব্যবস্থা সহজ হবে এবং প্রশাসনিক ব্যয় কমবে; করদাতাদের সেবা এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত হওয়ায় জটিলতা হ্রাস পাবে; সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়বে এবং কর ফাঁকি কমবে। অন্যদিকে কর ব্যবস্থা সহজ হবে; ব্যবসায়িক ব্যয় হ্রাস পাবে এবং সরকারের ব্যয় সাশ্রয় হবে।
একীভূত কাঠামো বাস্তবায়ন করতে হলে পরিকল্পিতভাবে ধাপে ধাপে উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে ব্যবসায়ীরা সহজেই নতুন কাঠামোর সঙ্গে অভ্যস্ত হতে পারেন এবং প্রশাসনিক জটিলতা এড়ানো যায়। বাংলাদেশের কর ব্যবস্থা ডিজিটালাইজেশনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। পাশাপাশি প্রশাসনিক কাঠামো সহজীকরণও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিচ্ছে।
স্নেহাশীষ বড়ুয়া: এফসিএ; ডিরেক্টর, এসএমএসি
অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেস লিমিটেড