ছাত্রলীগ গেছে যে পথে, আপনারা যাবেন সে পথে: ছাত্রদলের উদ্দেশে হাসনাত আবদুল্লাহ
Published: 18th, February 2025 GMT
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) সংঘর্ষের পর ‘কুয়েটের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদলের সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই কর্মসূচি থেকে ছাত্রদলকে জালিম (অত্যাচারী) না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘গত ১৬ বছরে নির্যাতনের কথা ভুলে যাবেন না। চাপাতির রাজনীতি ক্যাম্পাসে আবার রিইনস্টল (পুনরায় প্রতিষ্ঠা) করতে চাইলে ছাত্রলীগ গেছে যে পথে, আপনারা যাবেন সে পথে।’
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীরা বিক্ষোভ করে। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল নিয়ে ভিসি চত্বর ঘুরে পুনরায় রাজু ভাস্কর্যে আসে। মিছিলে ‘কুয়েটে রক্ত ঝরে, ওয়াসিম তোমায় মনে পড়ে’, ‘শিক্ষা–সন্ত্রাস একসাথে চলে না’ প্রভৃতি বলে স্লোগান দেওয়া হয়। মিছিল শেষে রাজু ভাস্কর্যে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।
সমাবেশে ছাত্রদলের উদ্দেশে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘গত ১৬ বছরে যে নির্যাতন হয়েছে, আপনারা মজলুম ছিলেন, আপনারা জালিম হবেন না। মজলুম জালিম হলে পৃথিবী বসবাসের অযোগ্য হয়ে যায়। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইকে সম্মান জানাই। একই সঙ্গে মনে করিয়ে দিতে চাই, আবার যারা ছাত্রলীগ হয়ে উঠতে চাইবে, শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান নেবে, তাদের পরিণতি ছাত্রলীগের মতোই হবে।’
গণতন্ত্রে উত্তরণের লড়াই সমন্বিত লড়াই উল্লেখ করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘শহীদদের রক্তের দায় আমাদের ওপরও রয়েছে। শহীদদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে মাদার পার্টির এজেন্ডা বাস্তবায়নের রাজনীতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রিইনস্টল করতে পারি না। শিক্ষার্থীদের জন্য রাজনীতি করতে চাইলে তাঁদের ভাষায় কথা বলতে হবে, তাঁদের মতো চলতে হবে। কিন্তু আপনারা যদি আবার ক্যাডার পলিটিকস করতে চান, হল দখল, সিট বাণিজ্য, চাঁদাবাজি করতে চান, আপনাদের পরিণতি হবে সাদ্দাম–ইনানের (নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) মতো।’
গেস্টরুম ও চাঁদাবাজির স্বপ্ন আর বাংলাদেশে বাস্তবায়িত হবে না–মন্তব্য করে হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘আমরা চাই না কোনো ছাত্রসংগঠন শিক্ষার্থীদের টুঁটি চেপে ধরুক। হলগুলো হবে শিক্ষার্থীদের অবারিত বিচরণের ক্ষেত্র।’
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমম্বয়ক আবদুল কাদের বলেন, জুলাই–পরবর্তী বাংলাদেশে কোনো দখলদারত্বের ঠাঁই হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন ছাত্ররাজনীতির দরকার আছে, তেমনি শিক্ষার্থীদের উদ্বেগগুলো নিয়েও কাজ করতে হবে। জোরজবরদস্তি করে যারা রাজনীতি খাওয়ানোর চেষ্টা করে, তাদের পরিণতি ছাত্রলীগের মতো হবে।
আবদুল কাদের আরও বলেন, ‘ছাত্রলীগ তো অনেক পরাক্রমশালী ছিল, তাদের আমরা ঝেঁটিয়ে বিদায় করেছি। আমরা ছাত্রদলকে ক্যাম্পাসে নিয়ে এসেছি, তারা যদি আবার শিক্ষার্থীদের ওপর হাত দিতে চায়, আমরা তাদেরও প্রতিরোধ করব।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের বিক্ষোভ কর্মসূচির দিকে ইঙ্গিত করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক আরেক সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ‘যারা কুয়েটে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে, তারা এখানে (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে) নাটক করতে এসেছে। আমরা এই নাটক দেখতে চাই না। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অনুরোধ করছি, যারা হামলা করেছে, তাদের যেন গ্রেপ্তার করা হয়।’
জুলাইয় আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলা এবং কুয়েটে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ভিডিও চিত্র আগামীকাল বুধবার বিকেলে টিএসসিতে প্রদর্শনী করার ঘোষণা দেন আবু বাকের মজুমদার।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক রিফাত রশীদ, হাসিব আল ইসলাম, রাফিয়া রেহনুমা, নিশিতা জামানসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ক ষ র থ দ র ওপর ছ ত রদল র ভ স কর য র জন ত আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হোস্টেল শুধু আশ্বাসেই
ঢাকার সাভারে অবস্থিত গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে (গবি) প্রতিষ্ঠার ২৬ বছর পার হলেও এখনো নির্মাণ হয়নি কোনো ছাত্রীনিবাস। নানা সময় উচ্চারিত হয়েছে উন্নয়নের বুলি, সভা-সেমিনারে এসেছে প্রতিশ্রুতির পাহাড়—কিন্তু বাস্তবে অগ্রগতি নেই।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেই কোনো প্রকল্প পরিকল্পনা, বাজেট বরাদ্দ কিংবা নির্ধারিত সময়সীমা। ফলে নারী শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার ও নিরাপত্তা প্রশ্নে তৈরি হয়েছে চরম উদ্বেগ।
বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা, জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের পুরোধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্বপ্ন ছিল প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও নারীর জন্য একটি বিকল্প ধারার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। ফলশ্রুতিতে গবি গড়ে উঠলেও নারী শিক্ষার্থীদের আবাসনের কোনো ব্যবস্থা তৈরি হয়নি।
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ২ হাজারেরও বেশি ছাত্রী অধ্যয়নরত, যাদের অধিকাংশ সবাই বাসা ভাড়া করে কিংবা দূরবর্তী এলাকা থেকে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করেন। আবাসন না থাকায় ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় থাকতে গেলে এসব শিক্ষার্থীদের গুণতে হয় প্রায় ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা। ফলে মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত পরিবারে শিক্ষার্থীদের উপর আলাদাই চাপ তৈরি হচ্ছে, যা বহন করতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে তাদের পরিবার।
পাশাপাশি রাতে চলাচলের ঝুঁকি, স্থানীয় বাড়িওয়ালা কর্তৃক হেনস্তার শিকার, ইভটিজিংসহ নানা অপ্রিতিকর ঘটনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে নিয়মিত। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে একাধিকবার আবাসন ব্যবস্থা ‘প্রক্রিয়াধীন’ বললেও তা নিয়ে প্রশাসনের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগই চোখে পড়েনি।
পর্যাপ্ত জায়গা থাকলেও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অভাবেই হল নির্মাণে নীতিনির্ধারকেরা কালক্ষেপণ করছেন বলে দাবি শিক্ষার্থীদের।
বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাহিমা আমিন বলেন, “আমার প্রতিদিনের যাত্রাটা যুদ্ধের মতো। বাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ৪০ কিমি দূরে। প্রতিদিন লোকাল বাসে চেপে আসতে হয়। কখনো বাসে উঠতে দেয় না, কখনো অতিরিক্ত ভাড়া নেয়, কখনো বাজে মন্তব্য শুনতে হয়। নতুন এলাকায় বাসা খুঁজে থাকা কষ্টকর, পরিবারও চিন্তায় থাকে সারাক্ষণ। ক্লাসে মন দিতে পারি না। এ বয়সে বাসা ভাড়া, রান্নাবান্না, নিরাপত্তা—সব মিলিয়ে জীবনটা অসম্ভব হয়ে পড়ে। একটা ছাত্রী হল থাকলে অন্তত এ লড়াইটুকু করতে হতো না।”
ফার্মেসি বিভাগের প্রভাষক তানিয়া আহমেদ তন্বী বলেন, “আমি একজন শিক্ষক, কিন্তু এর আগে আমি এই প্রতিষ্ঠানেরই ছাত্রী ছিলাম। জানি, মেয়েদের জন্য এখানে পড়তে আসা মানে প্রতিনিয়ত এক অনিশ্চয়তার সঙ্গে যুদ্ধ। একটা সময় পরে মেয়েরা ক্লাস বাদ দেয়, টিউশন নেওয়া বাদ দেয়—শুধু নিরাপত্তার জন্য।”
তিনি বলেন, “আমাদের বিশাল ক্যাম্পাসে জায়গার অভাব নেই, ইচ্ছার অভাবটাই বড়। ছাত্রীনিবাস শুধু দরকার নয়, এটি ন্যায্য অধিকার। এতে ছাত্রীরা নিরাপদ পরিবেশে পড়াশোনা করতে পারবে, দূর থেকে আরও শিক্ষার্থীরা আসবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে থাকা তাদের জন্য বেশি স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, “হলের জন্য স্থান সমীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। বিভিন্ন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চলছে। কাজগুলো চলমান রয়েছে। আমরা আশা করছি, এ বছরের শেষের দিকে নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারব।”
ঢাকা/সানজিদা/মেহেদী