অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, এবারের তরুণ প্রজন্মের বড় অংশ যখন বুড়ো হয়ে যাবে, তখন তারা আসলে এই রাষ্ট্রকে গড়ে তোলার আর সুযোগ পাবে না। ফলে রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে সুবর্ণ সুযোগ পাওয়া গেছে, সেটিকে কাজে লাগাতে হবে। তিনি বলেন, ‘১৯৪৭ সালে রক্ত দিয়ে পাকিস্তান আনার পর তারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ১৯৭১ সালে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে দেশ পেয়েছি। গ্রামেগঞ্জে সর্বত্রই যুদ্ধ হয়েছে। সেই যুদ্ধের পরও আমরা স্বাধীন হতে পারিনি। এরপর ১৯৯০ ঘটেছে। সবশেষ ২০২৪। ফলে বারবার ভুল করছি, বারবার হোঁচট খাচ্ছি। এবার হোঁচট খেলে আর উঠে দাঁড়াতে পারব না।’ 

মঙ্গলবার দুপুরে তারুণ্যের উৎসব ২০২৫–এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। দেশজুড়ে আয়োজিত উৎসবের ধারাবাহিকতায় ঢাকায় প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) উদ্যোগে প্রতিষ্ঠানটির মিলনায়তনে উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। উৎসবের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার ও বুধবার পিআইবি চত্বরে আলোকচিত্র, গ্রাফিতি ও ভিডিও প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।

মাহফুজ আলম বলেন, ‘এবারের তরুণ প্রজন্মের বড় অংশ যখন বুড়ো হয়ে যাবে, তখন তারা আসলে এই রাষ্ট্রকে গড়ে তোলার আর সুযোগ পাবে না। ফলে রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে সুবর্ণ সুযোগ পাওয়া গেছে, সেটিকে কাজে লাগাতে হবে। ব্যক্তি রাষ্ট্র এবং সমাজকে পুনর্গঠিত করতে হবে। বাংলাদেশের তরুণ সমাজকে বৈশ্বিকভাবে নেতৃত্ব দিতে হবে।’

উপদেষ্টা বলেন, ‘যতটুকু সময় পাব, সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে সেই সময়ের মধ্যে তরুণদের আশা–আকাঙ্খার বাংলাদেশ গড়ার চেষ্টা চলছে।’

দেশে ফ্যাসিবাদের গোড়াপত্তন শেখ মুজিব করেছিলেন বলে মন্তব্য করে মাহফুজ আলম বলেন, শেখ মুজিব রক্ষীবাহিনী দিয়ে নির্যাতন চালিয়েছেন। আর হাসিনা পুলিশকে রক্ষীবাহিনী বানিয়েছেন, বিজিবিকে সীমান্ত থেকে এনে রক্ষীবাহিনীতে পরিণত করেছিলেন। সেনাবাহিনীকেও হাসিনা দূষিত করে গেছেন। হাসিনার ফ্যাসিবাদে দলীয় গুন্ডাদের পাশাপাশি পুলিশও ছিল। মৌলবাদ ও জঙ্গি বলে সাধারণ মানুষকে হত্যা করে সেটির ন্যায্যতা দিয়েছেন হাসিনা। এখন ফ্যাসিস্টদের অবশিষ্ট অংশ উৎখাত করা জরুরি।

অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে সারা দেশে মেয়েরা ২ হাজার ৯০০ ম্যাচ খেলেছে। এটা নিয়ে প্রতিবেদন হয়নি। একটি খেলা বন্ধ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ শাকিলের মা’ও এসেছিলেন তারুণ্যের এই উৎসবে। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্যায়ে বক্তব্য শুরুর পর কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। একপর্যায়ে তিনি দাঁড়ানো অবস্থা থেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হলে সুস্থ হন তিনি।

এর আগে বিবি আয়েশা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ছেলেকে খুব কষ্ট করে পড়ালেখা করাইছি। দেশের মা–বোনের নিরাপত্তার জন্য আমার ছেলে আন্দোলন করতে নেমেছিল। ছেলে হত্যার বিচার সরকারের কাছে চাই। যারা ছাত্রদের গুলি করার হুকুম দিছে, তাদের বিচার চাই।’

পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

নাম বদলাতে পারে মঙ্গল শোভাযাত্রার

বাংলা নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম বদলাতে পারে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। নতুন নামের বিষয়ে আজ সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে। সব জাতিসত্তার অংশগ্রহণে এবারের শোভাযাত্রায় নতুন রং, গন্ধ ও সুর পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।

গতকাল রোববার সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ে জাতীয়ভাবে বাংলা নববর্ষ এবং চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর নববর্ষ উদযাপন নিয়ে সভা শেষে উপদেষ্টা সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। তিনি বলেন, এবার চারুকলা থেকে যে শোভাযাত্রা বের হবে, এতে সত্যিকার অর্থেই নতুন জিনিস দেখা যাবে। এই শোভাযাত্রা হবে বাঙালি, চাকমা, মারমা, গারো– প্রত্যেকের। এ জন্য মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম বদলাতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি প্রথমে আনন্দ শোভাযাত্রা নামে শুরু হয়েছিল। পরে হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈঠকে সবাই যদি একমত হয়, তবে আবার নাম পরিবর্তন হতে পারে। এবারের শোভাযাত্রাটি আর বাঙালিদের শোভাযাত্রা না। কেন্দ্রীয়ভাবে এটিকে ডাকা হবে, যে নামে সবাইকে একটা ছাতার মধ্যে আনা যায়। 

মঙ্গল শোভাযাত্রা নামে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি দেওয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন,  ‘ইউনেস্কো আগামীবার জানবে এ শোভাযাত্রা আরও বড় হয়েছে, আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়েছে। ইউনেস্কোর এটাতে খুশি হওয়ার কারণ হবে, আপত্তি করার কোনো কারণ নেই। আমরা বরং এতদিন অনেকগুলো জাতি-গোষ্ঠীকে মাইনাস করে এসেছিলাম। এটাকে সংশোধন করছি।’ অনুষ্ঠানটি পুনর্বিবেচিত হয়েছে, তাই এর নামটিও পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বিভিন্ন আয়োজন প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ‘চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমিতে রক কনসার্ট হচ্ছে। যেখানে চাকমা, গারো, মারমা ও বাংলা ব্যান্ড– সবাই পারফর্ম করবে। এ ছাড়া চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে বাউল ও ফকিররা গান গাইবেন। ওদের একটা উৎসব হবে সেখানে। ১৪ এপ্রিল সংসদ ভবনের সামনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ড্রোন শোর আয়োজন করা হবে। চীনের দূতাবাসের সহযোগিতায় ড্রোন শো হবে।‌ বিকেলে গান শুনবেন, সন্ধ্যার পর দেখবেন সংসদ ভবনের ওপর বাংলার আকাশের ড্রোন দিয়ে কিছু ইমেজ তৈরি করা হচ্ছে।’ 

উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘এবার ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় সুরের ধারার গানের অনুষ্ঠান হবে। মেলার মতো আয়োজনও সেখানে করা হবে। ঢাকার নানান জায়গায় উৎসব ছড়িয়ে যাবে। সূর্যাস্তের মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে– এবার আমাদের নির্দেশনা এটা না। কোন অনুষ্ঠান কখন শেষ হবে, সেটা স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা ঠিক করে নেবে।’ তিনি জানান, এবার প্রতিটি জেলা ও উপজেলার জন্য বরাদ্দ দ্বিগুণ হয়েছে। পাশাপাশি যে জেলাগুলোতে ভিন্ন ভাষাভাষী লোকজন আছেন, সেগুলোতে বরাদ্দ আরও বেশি হবে।

এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, নববর্ষের আয়োজন নিয়ে কাল (আজ) বৈঠক হবে। নানা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কিছুটা সময় লাগবে। ঈদের ছুটি শেষে সংবাদ সম্মেলনে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঈদ আনন্দ উৎসব আয়োজন করছে ডিএনসিসি
  • ‘কন্যা’র পর নুসরাত ফারিয়া-সজলের ‘ব্যবধান’
  • বৈশাখের উৎসবে রঙ বাংলাদেশ
  • নাম বদলাতে পারে মঙ্গল শোভাযাত্রার
  • অচেনা ফোনকলে ঝুঁকি!
  • উৎসবে ডিজিটাল ক্যানভাস
  • মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম বদলাতে পারে, জানালেন উপদেষ্টা ফারুকী
  • এ বছর জাতীয়ভাবে নববর্ষ পালন হবে অন্তর্ভুক্তিমূলকভাবে
  • এক উৎসবে অনেক দেশ