ভাওয়াইয়া গানে তিস্তা পাড়ের দুঃখগাথা
Published: 18th, February 2025 GMT
‘ভাওয়াইয়া গানের ধাম, নদ-নদীময় কুড়িগ্রাম’ জেলার এই ব্র্যান্ডিং ফুটে উঠেছে ‘তিস্তা বাঁচাই’ আন্দোলনের ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচিতে। মঙ্গলবার রাতে আন্দোলনকারীদের বাড়তি উৎসাহ জুঁগিয়েছে এ জেলার চিরাচরিত লোকসংগীত ভাওয়াইয়া গান।
কুড়িগ্রামের দুটি পয়েন্টে দেখা যায়, বিকেলে আলোচনা পর্ব শেষ হওয়ার পর জেলার জাসস আহ্বায়ক আহসান হাবিব সজিব ও দুই বাংলার জনপ্রিয় লোক শিল্পী ভূপতি ভূষণ বর্মা এবং তাদের নিজস্ব দলের পরিবেশনা। যে গানের কথাগুলোর মধ্যে উঠে এসেছে অবহেলিত তিস্তা পাড়ের বাসিন্দার নানা দুঃখগাথা।
এসব গানের কথাগুলোতে কোথাও কোন দুর্বোধ্যতা থাকে না। যার কারণে গানের কথাগুলো বুঝতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয় না নদী পাড়ের মানুষজনের। তিস্তা বাঁচাও আন্দোলনকে ঘিরে এ গানগুলো নতুন করে চরের মানুষদের উৎসাহ জোগাচ্ছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার মুখে মুখে এখন এসব আন্দোলনের গান।
উলিপুর থেতরাই সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ শ্রেণির শিক্ষার্থী এস জে সাম্য বলেন,‘২দিনের এই আন্দোলনে স্কুল থেকে দল বেঁধে আমরা বান্ধবীরা এসেছি। তিস্তার আন্দোলন আমার ন্যায্য আন্দোলন। এখানে একটা জিনিস ভালো লাগলো গত ২দিনে কোন হিন্দি গান বা অন্য কোন গান গাওয়া হয়নি। আমাদের জেলার ঐতিহ্যবাহী এই গান নতুন করে শুনে ভালো লাগছে।’
জমসের আলী বলেন,‘হামার মাটির গান ভাওয়াইয়া। নতুন করে হামরা এই গানের সাথো তিস্তা আন্দোলন করমো। গানত ছিলো জাগো বাহে কুন্ঠে সবাই। হামরা কমো জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই।’
তিস্তা বাঁচাও আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক হাসিবুর রহমান হাসিব বলেন, ‘কুড়িগ্রাম শুধু নয় গোটা রংপুর অঞ্চলের ঐতিহ্য আমাদের ভাওয়াইয়া। আমরা আমাদের এই আন্দোলনকে বেগবান করতে মানুষদের একজোট করতে জেলার এই চিরাচরিত ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দিয়েছি।’
উল্লেখ্য, তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা ও মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবিতে রংপুর বিভাগের ১১টি পয়েন্টে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসুচি আজ মঙ্গলবার শেষ হয়। গত দুইদিনে আন্দোলনকারীরা তিস্তাপাড়ের চরে রাত্রীযাপন করেন। সেখানে স্থানীয়ভাবে সম্মিলিতভাবে থাকা ও খাওয়ার আয়োজন করা হয়।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বোয়ালমারীর বালুমহালের ইজারা বাণিজ্যের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে সংঘর্ষে আহত ৩
ফরিদপুরের বোয়ালমারীর ঘোষপুর ইউনিয়নের গড়াই নদীর লংকারচর বালুমহালের ইজারা বাণিজ্যের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে সংঘর্ষে তিনজন আহত হয়েছে। বুধবার রাতে দফায় দফায় এ সংঘর্ষ হয়।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রাত ১০টার দিকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আঁধারকোঠা গ্রামের একদল যুবক আক্রমণ চালায়। এ সময় মা ফার্মেসিতে আশ্রয় নেওয়া রাসেল আহমেদের ছোট ভাই ছাত্রদলের সাবেক নেতা রবিন মোল্যার মাথা লক্ষ্য করে আঘাত করে আক্রমণকারীরা। তাদের প্রতিহত করতে গিয়ে আহত হন রিয়াজ মৃধা। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। রিয়াজ মৃধাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দিলেও রবিন মোল্যা বোয়ালমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বোয়ালমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মাহমুদুল হাসান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বিএনপি নেতা মিরাজ মৃধা বলেন, রাসেলের সঙ্গে জুয়েল বিশ্বাসের দেনাপাওনা নিয়ে ফোনে কথা-কাটাকাটি হয়, পরে সমঝোতার জন্য আমার ফার্মেসিতে আসেন জুয়েল। কথা বলার সময় তার কোমরে একটি ধারাল অস্ত্র দেখে লোকজন তা কেড়ে নেয়। এ সময় তিনি পালিয়ে গিয়ে কিছু সময় পর ২৫ থেকে ৩০ জনকে নিয়ে আমার ফার্মেসিতে এসে হামলা চালায়।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯টি সিডিউল বিক্রি হলেও সাবেক সংসদ সদস্য ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি খন্দকার নাসিরুলের সহায়তায় মাত্র একটি সিডিউল জমার মাধ্যমে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বালুমহাল ইজারা পান বোয়ালমারী যুবলীগের সদস্য মেসার্স রবিউল ট্রেডার্সের মালিক রবিউল ইসলাম। এই বালুমহাল ইজারার ১৯ জন সিডিউল ক্রেতার সঙ্গে কৃষকদল সহ-সভাপতি খন্দকার নাসিরুলের নেতৃত্বে ইজারা দরপত্র (নিকো) বোর্ড করে একটি সিডিউল জমার মাধ্যমে রবিউলকে কাজ পাইয়ে দেওয়া হয়। বাকি ১৮ জন ঠিকাদারকে ৪৫ হাজার টাকা করে নিকোর টাকা নির্ধারণ করা হয়। দৈনিক সমকাল পত্রিকায় এ বিষয়ে ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বালুমহালের ইজারা পেলেন যুবলীগ নেতা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়।
৬ ফেব্রুয়ারি তিনটি বালুমহালের দরপত্রের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন জেলা প্রশাসক। এগুলো বোয়ালমারী, মধুখালী ও আলফাডাঙ্গায়। লংকারচর মহালের সরকারি মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১ কোটি ২০ লাখ ৭৩ হাজার ৪১৮ টাকা। ঘোষপুর ইউনিয়নে গড়াই নদীর এ মহালের আয়তন ৭৪ হাজার ১৪৭ একর। ৩৬ লাখ টাকা বেশি দিয়ে ইজারা নেন রবিউল।
স্থানীয় এক সিডিউল ক্রেতা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ও ডিসির কাছে দেওয়া অভিযোগকারী) জানান, ১৯টি দরপত্র বিক্রি হলেও ১৫ দরপত্র দাতাদের মাঝে এবং কৃষক দলের সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুলের সমঝোতার ভিত্তিতে গোপন নিলাম ডাকের মাধ্যমে কেনাবেচা হয়। সমঝোতার ভিত্তিতে দরপত্র দাতাদের মাঝে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ভাগাভাগির টাকা বণ্টনের দায়িত্ব দেন পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল আহমেদের ওপর। তবে জুয়েল বিশ্বাস নামে একজন দরপত্র ক্রেতা অভিযোগ করেন তার পাওনা টাকা না দিয়ে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে। এ নিয়ে বুধবার রাতে বোয়ালমারী উপজেলা পরিষদের সামনে মা ফার্মেসি মার্কেট চত্বরে সালিশ বৈঠকে বসেন পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল আহমেদ, বিএনপি নেতা মহসিন আলম চান, মিরাজ মৃধাসহ স্থানীয়রা।
বৈঠক শুনানির সময় দরপত্র দাতা আঁধারকোঠা গ্রামের মঈনুদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে জামায়াতে কর্মী জুয়েল বিশ্বাসের কোমরে থাকা একটি দেশীয় অস্ত্র দেখে ফেলে লোকজন। এ সময় অস্ত্র উদ্ধার করতে গিয়ে জুয়েল বিশ্বাসের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় স্থানীয়দের। পরে জুয়েলের নেতৃত্বে ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি দল অস্ত্র নিয়ে মা ফার্মেসিতে আক্রমণ চালায়। এতে রবিন মোল্যা ও রিয়াজ মৃধা আহত হন।
জুয়েল বিশ্বাস জানান, বালুমহালের নিকোর ৪৫ হাজার টাকা জমা ছিল রাসেল আহমেদ ও মিরাজ মৃধার কাছে। সেই টাকা চাওয়ায় আমাকে মা ফার্মেসিতে ডেকে নেয় রাসেল আহমেদ। সেখানে গেলে তারা টাকা না দিয়ে টালবাহানা করে এবং আমার উপর আক্রমণ চালায়। খবর পেয়ে আমার গ্রামের লোকজন আমাকে উদ্ধার করতে ছুটে আসে। সেখানে রাসেল আহমেদের ভাই রবিন আঘাত পান।
এ বিষয়ে পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল আহমেদ বলেন, জামায়াতে ইসলামীর কর্মী জুয়েল বিশ্বাস আমার কাছে চাঁদা দাবি করে। এ বিষয়ে জানতে মহসিন আলম চান ও মিরাজ মৃধা তাকে ডাকলে তিনি পরিকল্পনা করে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে কোমরে অস্ত্র নিয়ে আসেন। লোকজন তা দেখে কেড়ে নিলে আগে থেকে ওঁতপেতে থাকা তার পক্ষের লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালায়।