গাইবান্ধায় ডাল খেয়ে ২ শতাধিক মানুষ অসুস্থ
Published: 18th, February 2025 GMT
গাইবান্ধার সদর উপজেলায় একটি চল্লিশা অনুষ্ঠানে ডাল খেয়ে দুই শতাধিক মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে অনেকে বাড়ি ফিরলেও এখনো শতাধিক ব্যক্তি গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে সদর উপজেলার বাদিয়াখালী ইউনিয়নের ফুলবাড়ী রিফাইতপুর গ্রামের বেলাল হোসেনের মায়ের চল্লিশা অনুষ্ঠানে দাওয়াত খাওয়ার পর এ ঘটনার সূত্রপাত হয়।
স্বজনরা জানান, বেলালের বাড়িতে দাওয়াতে এলাকার এক হাজার মানুষ অংশ নেয়। সেখানে আটার ডাল খেয়ে রবিবার দিবাগত রাত থেকে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। অনেকে প্রাথমিকভাবে বাড়িতে চিকিৎসা নিলেও অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরদিন সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হতে থাকেন। অসুস্থ হওয়া রোগীরা গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতাল, ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
আরো পড়ুন:
পিকনিকের খাবার খেয়ে হাসপাতালে ৪৫ জন
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল চালুর দাবিতে সড়ক অবরোধ
গাইবান্ধা হাসপাতাল ও ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকাল থেকে আজ মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক বিভিন্ন বয়সী রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে গাইবান্ধা হাসপাতালে ১২৪ জন ভর্তি হন। এর মধ্যে ৫১ জন রোগীকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
ঘটনাস্থল থেকে অল্প দূরে ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে ৭১ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে দুইজনের অবস্থার অবনতি হওয়ায় রংপুর মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.
ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন কয়েকজন জানান, আটার ডাল দিয়ে ভাত খাওয়ার পর রাত থেকে অনেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন। সেইসঙ্গে অনেকের বমি শুরু হয়। স্যালাইন দিয়েও স্বস্তি পাওয়া যাচ্ছে না।
ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রফিকুজ্জামান বলেন, মজলিসের আটার ডাল খেয়ে তারা অসুস্থ হয়েছেন। তাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় দুইজনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আসিফ-উর রহমান বলেন, খাদ্যে বিষক্রিয়ায় অসুস্থ হয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সদর হাসপাতালে ১৪৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। ফুলছড়িতে ৭১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। সবাইকে চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় স্যালাইন ও ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। অনেকেই চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। এ ঘটনায় খাদ্যের নমুনা সংগ্রহ করে তদন্ত প্রতিবেদন দেবেন সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা।
সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নাজমুল হুদা রনি বলেন, একদিন আগের ঘটনা হওয়ায় খাদ্যের নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। রোগীদের ক্লিনিক্যাল রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
ঢাকা/মাসুম/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ব স থ য কমপ ল ক স ম ড ক ল কল জ সদর উপজ ল শত ধ ক হয় ছ ন হওয় য় ফ লছড়
এছাড়াও পড়ুন:
আইনশৃঙ্খলার অবনতির কারণে দেশে আজ চরম অরাজক পরিস্থিতি: সেলিমা রহমান
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেছেন, ‘আইনশৃঙ্খলার অবনতির কারণে দেশে আজ চরম অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর আমরা সবাই মিলে অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। আমরা আশা করেছিলাম, দেশে সুন্দর একটি পরিবেশ আসবে, তাঁরা সুন্দর একটি নির্বাচন দেবেন। কিন্তু পতিত সরকারের দোসররা আজ দেশের বিভিন্ন স্তরে রয়ে গেছে। সরকার তাদের কিছু করতে পারছে না। দ্রব্যমূল্যের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না। দেশের মানুষ আজ না খেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরছে।’
বৃহস্পতিবার বিকেলে বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথাগুলো বলেন।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা, নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা, পতিত ফ্যাসিবাদের নানা চক্রান্তের অপচেষ্টা মোকাবিলাসহ বিভিন্ন জনদাবিতে এই সমাবেশ আয়োজন করা হয়। নগরের ফজলুল হক অ্যাভিনিউয়ে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খান। সমাবেশ চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
সমাবেশে সেলিমা রহমান বলেন, ‘আমরা চাই এই সরকার ব্যর্থ না হোক। তাহলে আমরা ব্যর্থ হয়ে যাব। এ জন্য তারেক রহমান আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলেছেন। আপনারা ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখুন।’
ফ্যাসিস্ট সরকার আর ফিরতে পারবে না—উল্লেখ করে সেলিমা রহমান বলেন, ফ্যাসিস্টদের দোসররা এখনো দেশের বিভিন্ন স্তরে রয়ে গেছে। তাঁরা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে, ক্ষতির ষড়যন্ত্র করছে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন কলেজে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য বেড়েই চলেছে। ফ্যাসিস্টদের দোসরদের ষড়যন্ত্রের ফাঁদে আগস্ট অভ্যুত্থানের শক্তি পড়ে গেছে। এটা তাঁদের বুঝতে হবে।
হাসিনা ভারতের সঙ্গে অসম বিভিন্ন চুক্তি করে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে ধ্বংস করেছে উল্লেখ করে বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, দেশ ধ্বংস করেছে হাসিনা, দেশের টাকা লুট করে দেশের অর্থনীতি শেষ করে দিয়েছে হাসিনা। এখনো তারা ষড়যন্ত্র করছে। এই ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে হলে দরকার বিএনপি ও দেশপ্রেমিক জনতাকে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশে সেলিমা রহমান বলেন, ‘আপনি বুঝতে চেষ্টা করুন, জবাবদিহিমূলক সরকার না হলে দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি, স্থিতিশীলতা আসে না।’ তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিএনপি ১৬ বছর সংগ্রাম করেছে। দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। এর পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দেশ ফুঁসে উঠেছিল। এর মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হয়েছিল।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মজিবর রহমান সরোয়ার। তিনি বলেন, ‘হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে আমাদের অসংখ্য নেতা-কর্মী জীবন দিয়েছে, গুম হয়েছে। আজও আমরা অপেক্ষায় থাকি আমাদের গুম হওয়া ভাইদের জন্য। বিএনপি যখন ১৬ বছর সংগ্রাম করে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করেছে, তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা আমাদের সঙ্গে শামিল হয়েছিল।’
মজিবর রহমান বলেন, ‘জনগণের কাছে জনগণের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে হবে। আমরা চাই তারেক রহমানের অবিলম্বে দেশে প্রত্যাবর্তন। আমরা চাই, বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হাসিনার সরকারের হাজার হাজার গায়েবি মামলা প্রত্যাহার। আমরা চাই, দেশের সবাই মিলে দেশের জন্য কাজ করবে, রাজনীতি করবে।’
সমাবেশ শুরুর আগে বরিশাল জেলার সব উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকে দলে দলে মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগদান করেন নেতা-কর্মীরা। সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মাসুদ আহমেদ তালুকদার, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, মাহাবুবুল হক, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক রওনাকুল ইসলাম, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শরফুদ্দিন আহমেদ, এবায়দুল হক, মোহাম্মদ দুলাল হোসেন, আবু নাসের রহমাতুল্লাহ, শহীদ হাসান প্রমুখ। সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আবুল কালাম শাহিন।