চব্বিশে তরুণ প্রজন্ম ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। এ আত্মত্যাগকে কাঠামোর মধ্যে আনাটা বড় চ্যালেঞ্জ। গত জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে যে অভূতপূর্ব ঘটনাটা ঘটেছে, জাতিসংঘের প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে তার একটা এক্সিলেন্ট ডকুমেন্টেশন (চমৎকারভাবে নথিবদ্ধ) হয়েছে। অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বা স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশের যে সাহস ও শক্তি, সেটাও এ দেশের পররাষ্ট্রনীতির একটা বড় উপাদান হতে পারে।

রাজধানীর ইস্কাটনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে আজ মঙ্গলবার জাতীয় নাগরিক কমিটি আয়োজিত এক সংলাপে এ কথা উঠে আসে। দিনব্যাপী ‘গণ-অভ্যুত্থান উত্তর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি: নতুন দিগন্তের সন্ধানে’ শীর্ষক সংলাপের চতুর্থ পর্বের আলোচনার বিষয় ছিল ‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকার: আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা’।

এ পর্বে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতন নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম ও দেশটির প্রতিষ্ঠিত পণ্ডিতদের অনেকে ভ্রান্ত ধারণার কথা তুলে ধরছেন। তিনি বলেন, চব্বিশে তরুণ প্রজন্ম ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। এ আত্মত্যাগকে কাঠামোর মধ্যে আনাটা বড় চ্যালেঞ্জ। গণতন্ত্র একটা মূল্যবোধ। অন্যকে গ্রহণ করা বা সম্মান দিতে না পারলে গণতন্ত্র টেকে না। গণতন্ত্রে স্বচ্ছতা ও জবাববিহি থাকতে হবে। সবাইকে সমানভাবে দেখতে হবে।

সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে যে অভূতপূর্ব ঘটনাটা ঘটেছে, জাতিসংঘের প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে তার একটা এক্সিলেন্ট ডকুমেন্টেশন হয়েছে। বাংলাদেশের যে অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বা স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সাহস ও শক্তি, সেটা যে অন্য দেশের জন্য একটা টেমপ্লেট হতে পারে, সেটাও এ দেশের পররাষ্ট্রনীতির একটা বড় উপাদান হতে পারে।

বিশিষ্ট আলোকচিত্রী ও দৃক গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল আলম বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে দেয়াললিখনে যে বৈষম্যবিরোধী কথাগুলো বলা আছে, আমাদের রাজনীতিবিদেরা কখনো এ কথা বলার সাহস পায়নি, এটা থেকে অনেক দূরে থেকেছে। তাঁরা নিজেদের স্বার্থ দেখেছেন। সাধারণ মানুষের চাহিদা নিয়ে তাঁরা খুব একটা চিন্তা করেননি।’

মানবাধিকার প্রসঙ্গে শহিদুল আলম বলেন, পাশ্চাত্যে মানবাধিকারের অনেক বুলি আওড়ানো হয়, কিন্তু তাদের কাছে একটি ফিলিস্তিনি শিশু আর একটি ইসরায়েলি শিশু কিন্তু সমান নয়।.

..এরপরও তারা মানবাধিকার নিয়ে সচেতন, সেটা বলে। তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের প্রশ্ন করার জায়গায় যেতে পারিনি, সেটা আমাদের ব্যর্থতা।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এমন একটা সরকার পেয়েছিলাম, যারা আমাদের স্বার্থ না দেখে তার (সরকার) টিকে থাকার জন্য দেশ বিক্রি করতেও রাজি ছিল। মানুষ নীরব ছিল বলেই এত অন্যায় ও নিপীড়ন করে পার পেয়ে গেছে, রুখে দাঁড়ানোর মানুষ যথেষ্ট ছিল না।’

শহিদুল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গুগলে সার্চ করলে বিরাট একটা অংশ আসবে ভারতীয় প্রোপাগান্ডা। আমাদের গল্পটা বলার কেউ নেই। আমাদেরই সেটা বলতে হবে। সেই জায়গায় যাওয়ার জন্য আমাদের সেই দক্ষতা অর্জন করতে হবে, শক্তভাবে নিজেদের উপস্থাপন করতে হবে। সেটা না হলে ভারতীয় প্রোপাগান্ডা দিয়েই লোকে আমাদের চিনবে।’

আলোচনায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কামরুল আহসান বলেন, ‘শেখ হাসিনার দুঃশাসন টিকিয়ে রাখার পেছনে দুই ধরনের অ্যাক্টর ছিল। অভ্যন্তরীণ ও বহিঃস্থ। অভ্যন্তরীণ অ্যাক্টরের মধ্যে ছিল নিরাপত্তা বাহিনী, বিজনেস এলিট ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান। শেখ হাসিনা পালালেও এরা এখনো দেশে আছে। এদের চিহ্নিত করতে হবে।’ যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে বিভিন্ন নীতি প্রণয়ন এবং সঠিক লোককে সঠিক জায়গায় নিয়োগ দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

আলোচনার এই পর্বে জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক তাসনিম জারা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য তিনটি বিষয় তুলে ধরেন। এগুলো হলো গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে যেসব আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করেছে, শুধু কাগজে-কলমে না রেখে মানুষের বাস্তব জীবনে সেগুলোর প্রতিফলন; মিথ্যার ভিত্তিতে নয়, বরং সত্যের ভিত্তিতে পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ এবং দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি এ অঞ্চলে গণতন্ত্রের বাতিঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করা।

জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া পর্বটি সঞ্চালনা করেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণতন ত র ত র একট আম দ র র জন য আগস ট

এছাড়াও পড়ুন:

সংস্কার এবং নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে: তারেক রহমান

সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, বিএনপি দুই থেকে আড়াই বছর আগেই সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে। তখনই এ ব্যবস্থার পরিবর্তনের কথা বলেছে।

রাজধানীর মালিবাগে একটি রেস্তোরাঁয় আজ শনিবার ১২–দলীয় জোটের ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এ কথা বলেন।

তারেক রহমান বলেন, ‘আমাদের রাজনীতির মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশ ও দেশের জনগণ। দেশ ও জনগণের যে ক্ষতিগুলো হয়েছে, সে ক্ষতিগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর সুযোগ এলে পরিবর্তন করতে হবে। আর এই পরিবর্তনটাকে আমরা রাষ্ট্রকাঠামোর মেরামত বলেছিলাম।’ তিনি বলেন, ‘আমরা স্বৈরাচারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে দুই থেকে আড়াই বছর আগে সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, এ ব্যবস্থার পরিবর্তন হওয়া উচিত।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘কেউ কেউ বলছেন যে সংস্কার শেষ হবে, তারপরে নির্বাচন হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি যে সমস্ত কাজ, যেটা শেষ হয়েছে, সেটাতে সংস্কার হতে পারে না। এটি আসলে একটি চলমান প্রক্রিয়া।’

সংস্কার প্রসঙ্গে বিএনপির ৩১ দফার কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, ২০০৮ সাল থেকে ফ্যাসিবাদ ও মাফিয়া সরকার জনগণের কাঁধে চেপে বসেছিল। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে সেটি অর্থনৈতিক বলি, শিক্ষাব্যবস্থা বলি, সমাজব্যবস্থা বলি, প্রশাসন, সিভিল প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন হোক; চিকিৎসাব্যবস্থাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রকে একদম ধ্বংস করে দিয়েছিল। মানুষের প্রত্যাশার সম্পূর্ণ বিপরীতে নিয়ে গিয়েছিল পুরো পরিস্থিতি।’

তারেক রহমান বলেন, গণতন্ত্র বলতে একজন সাধারণ মানুষের কাছে এককথায় নির্বাচন। নিরপেক্ষ, নির্ভয়ে ভোট দেওদার যে ব্যবস্থা, সেটাই গণতন্ত্র। এটি বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র হিসেবে প্রচলিত বা স্বীকৃত। তিনি বলেন, ‘যে ঐক্য নিয়ে আমরা স্বৈরাচারকে বিদায় করেছিলাম, সেই ঐক্য ধরে রাখতে হবে। ...আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে আগামী দিনে ঐক্য বজায় রেখে দেশের মানুষের প্রত্যাশিত গণতন্ত্রকে আমরা প্রতিষ্ঠা করব। এই দেশের মানুষের প্রত্যাশিত সংস্কার প্রক্রিয়াকে আমরা সবাই মিলে আলোচনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করব।’

তারেক রহমান বলেন, ‘আমাদের মতের ভিন্নতা থাকবে, আমরা বসব, আলোচনা করব। এমন কিছু আমরা বলব না বা এমন কিছু করা থেকে আমরা বিরত থাকার চেষ্টা করব, যাতে করে কোনোভাবেই স্বৈরাচার বা তার পেতাত্মারা আবার এ দেশের মানুষের কাঁধে চেপে বসতে পারে।’

১২–দলীয় জোটের সমন্বয়ক জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে এবং মুখপাত্র জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদার সঞ্চালনায় ইফতারপূর্ব আলোচনায় বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, বিএলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন, গণ অধিকার পরিষদের ফারুক হাসান ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) কাজী নাহিদ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মিয়ানমারকে নিয়ে ট্রাম্প এখন কী করবেন
  • ছাত্রনেতাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য জাতিকে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দিয়েছে: নুরুল হক
  • খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনা করে ইফতার ও দোয়া মাহফিল
  • ভূরাজনীতি আওয়ামী লীগকে প্রত্যাবাসন করতে চায়: মাহমুদুর রহমান
  • সংস্কার এবং নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে: তারেক রহমান
  • নির্বাচনের আকাশে কালো মেঘ দেখা দিয়েছে: মান্না
  • যে কোনো মূল্যে ঐক্য ধরে রাখতে হবে: তারেক রহমান
  • কোনোভাবেই যেন স্বৈরাচার আবার মানুষের কাঁধে চেপে বসতে না পারে: তারেক রহমান
  • দানব আওয়ামী লীগের প্রত্যাবর্তন ঠেকাতে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে: রিজভী
  • হাসিনা পালায় গেছে, গণতন্ত্র আমরা এখনো পাই নাই, ভোটাধিকার পাই নাই: শামা ওবায়েদ