বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য আসাদুল্লাহ আল গালিবকে সিলেটে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন সিলেটের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি সম্প্রতি সংগঠনের সিলেট মহানগরের গঠিত কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছেন তাঁরা।

মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে সিলেট প্রেসক্লাবের সম্মেলনকক্ষে সিলেটের পাঁচটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সিলেটের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় লিডিং ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মাহিদ হাসান।

সংবাদ সম্মেলনে সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটি, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও আরটিএম আল কবির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসাদুল্লাহ গালিব বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। তিনি দুই দিন পরপর তাঁর মনমতো কমিটি দিচ্ছেন। বিভিন্ন জায়গায় সিলেটের বিভাগীয় সমন্বয়ক পরিচয় দিচ্ছেন। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভাগীয় সমন্বয়কের কোনো পদ নেই।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্যে মাহিদ হাসান বলেন, আসাদুল্লাহ গালিব ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন। সম্প্রতি ঘোষণা দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিলেট মহানগরের কমিটির আহ্বায়ক পদ ছাত্রলীগ নেতাকে দেওয়া হয়েছে। এর আগেও জেলা কমিটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল। কমিটিতে ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। আসাদুল্লাহ গালিব নিজের রাজত্ব কায়েম করতে এমনটি করছেন। বিগত জুলাই আন্দোলনে বুলেটকে ভয় না পেয়ে যারা সামনের কাতারে ছিল, যারা নেতৃত্ব দিয়েছে, যারা ভূমিকা রেখেছে সেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করা হয়েছে। সিলেট জেলা, মহানগরসহ বিভিন্ন কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থীকে রাখা হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে ১৭ বছরের ফ্যাসিবাদী খুনি হাসিনাকে দেশ থেকে বিদায় দিয়েছেন ছাত্র–জনতা। এতে দুই হাজারের অধিক ভাই–বোন শহীদ হয়েছেন, ৩০ হাজারের অধিক ভাই–বোন পঙ্গু হয়েছেন। যে বৈষম্য দূর করতে আন্দোলন করা হয়েছিল, সে বৈষম্য এখনো দূর হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষার্থীরা বলেন, সিলেট মহানগরের গঠিত কমিটিতে শতাধিক পদ থাকলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাত্র তিনজনকে কমিটিতে রাখা হয়েছে। তাঁরা এ কমিটি প্রত্যাখ্যান করে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিগত দিনের কমিটিগুলোর বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে এলেও সেগুলো আমলে নেওয়া হয়নি। সম্প্রতি মহানগরের কমিটিতে অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে পদধারীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামগুলোও অসামঞ্জস্যপূর্ণ দেখা গেছে। এসব বৈষম্যকে কবর দিতেই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে শিক্ষার্থীরা কুয়েটে শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানান এবং এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলন শেষে কুয়েটে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেন সিলেটের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহবুবুর রহমানসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে আসাদুল্লাহ আল গালিবের ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে মঙ্গলবার রাতে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ধরেননি। তবে সন্ধ্যায় তিনি তাঁর ফেসবুকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিলেট মহানগরের কমিটি নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘কমিটিতে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে অনেক ভুল আসায় পেজ থেকে কমিটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কমিটি প্রকাশের পরে অনেকেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কারও কোনো স্পেসিফিক অভিযোগ থাকলে বিভাগীয় সফরে যারা কমিটি গঠনের দায়িত্বে ছিল তাদের দিতে বলা হচ্ছে। কমিটি স্থগিত থাকবে। সবকিছু সংশোধন করে পুনরায় কমিটি প্রকাশ করা হবে। এ ছাড়া সম্মিলিত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট এবং সম্মিলিত মেডিকেল কলেজ, সিলেটের কমিটি গঠনের কাজ চলমান আছে। যারা এই দুইটা ইউনিটে কাজ করতে আগ্রহী তাদের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউন ভ র স ট ব সরক র কম ট ত র কম ট

এছাড়াও পড়ুন:

পানি ব্যবস্থাপনার জন্য বেইজিংয়ের কাছ থেকে ৫০ বছরের মহাপরিকল্পনা চেয়েছে ঢাকা

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল শুক্রবার নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদী ও পানি ব্যবস্থাপনার জন্য চীনের কাছ থেকে ৫০ বছরের মহাপরিকল্পনা চেয়েছেন।

চীন সফরের তৃতীয় দিনে চীনের পানিসম্পদমন্ত্রী লি গোওয়িংয়ের সঙ্গে এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এই অনুরোধ জানান মুহাম্মদ ইউনূস। বেইজিংয়ের একটি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ খবর জানানো হয়।

অধ্যাপক ইউনূস চীনের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করে বলেন, ‘কিছু জটিল পানি সমস্যা মোকাবিলায় চীন আশ্চর্যজনক সাফল্য পেয়েছে। আমাদের সমস্যা আপনাদের মতোই। তাই আপনার অভিজ্ঞতা জানালে আমরা খুশি হব।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি বদ্বীপ, আমাদের দেশে শত শত নদী রয়েছে। পানি আমাদের জীবন-জীবিকার মূল, কিন্তু কখনো কখনো এটি শত্রুতে পরিণত হয়। এখন যেহেতু জনসংখ্যা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, তাই এটি বাস্তুতন্ত্রের জন্য কী ধরনের ক্ষতি করতে পারে, সে বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’

চীনকে পানি ব্যবস্থাপনায় দক্ষ কারিগর হিসেবে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘চীনের কাছ থেকে বাংলাদেশের অনেক কিছু শেখার আছে।’ তিনি পানি ব্যবস্থাপনায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ভিশন বাংলাদেশের সঙ্গে শেয়ার করার আহ্বান জানান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এখানে আপনার কাছ থেকে শিখতে এসেছি, কীভাবে আমরা পানিসম্পদকে মানুষের জন্য উপযোগী করে তুলতে পারি।’ তিনি আরও বলেন, ‘জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং উন্নয়নের চাহিদার কারণে নদীর ধারে জমি দখল বাড়ছে। উজানের দেশ ভারতও একই ধরনের উন্নয়ন সমস্যায় পড়ছে। পলি জমে নদীর মাঝখানে চর জেগে উঠছে, যা কখনো কখনো নদীগুলোকে সংকুচিত করছে।’

চীনের পানিসম্পদমন্ত্রী প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে একমত হয়ে বলেন, ‘চীন ও বাংলাদেশের পানি ব্যবস্থাপনা একই রকমের চ্যালেঞ্জ।’ বাংলাদেশের ৮৫ শতাংশ নদী সমতল ভূমিতে, যা দেশের জন্য পানি ব্যবস্থাপনাকে জটিল করে তুলেছে জানিয়ে তিনি বাংলাদেশকে কারিগরি সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট সি চীনের জন্য একটি মহাপরিকল্পনা দিয়েছেন, যার মাধ্যমে চীন পানি ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে পারছে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা তৈরিতে আপনার সাহায্যের প্রয়োজন।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সমস্যা কেবল একটি নদী নিয়ে নয়, বরং সামগ্রিক নদী ব্যবস্থাপনায়।’

তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা এবং ঢাকার আশপাশের নদীগুলোর দূষিত পানি পরিষ্কারকরণের বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করে সহায়তা চান প্রধান উপদেষ্টা।

আরও পড়ুনপিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ইউনূসকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান ৫০ মিনিট আগে

চার দিনের সফরে বর্তমানে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সফরে তিনি চীনের নেতা এবং বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। গতকাল শুক্রবার সকালে বেইজিংয়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে পরের ধাপে নিতে কাজ করার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন। বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে দুই নেতার মধ্যে ঘণ্টাখানেক দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

অধ্যাপক ইউনূস আজ শনিবার দেশে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুনঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আগ্রহী বেইজিং৫ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ