গ্যাস-সংকটে সুতার ব্যবসা ভারতের দিকে চলে যাচ্ছে
Published: 18th, February 2025 GMT
দেশে গ্যাস-সংকটের কারণে সুতার ব্যবসা ভারতে চলে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল। তিনি বলেন, ‘গত বছর ভারত থেকে ২৭০ কোটি ডলারের সুতা এসেছে। এতে তাদের প্রায় দেড় লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। আমাদের সেদিকে কোনো মনোযোগ নেই।’
বাংলাদেশ বস্ত্রকল সমিতির (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, সুতা উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। তবে গ্যাস–সংকটের কারণে বস্ত্রকলগুলো অর্ধেক চলে, অর্ধেক চলে না। কিছু বন্ধও হয়েছে। এদিকে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে আগামী ৩-৪ মাস ভালো ক্রয়াদেশ আছে। তবে গ্যাস–সংকটের কারণে তাদের প্রয়োজনীয় সুতা সরবরাহ করতে পারছে না দেশীয় বস্ত্রকলগুলো। সে জন্য ব্যবসা অন্য দেশে (ভারতে) চলে যাচ্ছে।
বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। বস্ত্র খাতের যন্ত্রপাতির সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী ডিটিজি নিয়ে বিস্তারিত জানাতে আজ মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন।
গ্যাসের দাম দ্বিগুণ করলে একটার পর একটা কারখানা বন্ধ হবে বলে মন্তব্য করেন বিটিএমএর সভাপতি। তিনি বলেন, গ্যাসের দাম দ্বিগুণ করলে বাংলাদেশে বস্ত্র খাত কোনো দিন টেকসই হবে না। একটার পর একটা কারখানা বন্ধ হবে। অনিশ্চয়তা থাকলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ হবে না। গত ছয় মাসে কোনো নতুন বিনিয়োগ হয়নি। ব্যাংকগুলো নতুন কোনো প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে পারেনি। উল্টো পুরোনো শিল্পকারখানা মেরে ফেলার চক্রান্ত চলছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের কথা বলে দুই বছর আগে শিল্পে ১৫০ থেকে ১৭৮ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়ানো হয়েছিল গ্যাসের। গত বছরও দাম কিছুটা বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু দুই বছর পরও শিল্পে গ্যাস-সংকট কাটেনি। জ্বালানি বিভাগের অনুমোদন নিয়ে দাম বাড়াতে গত মাসে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৩০ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে পুরো গ্যাস বিল হবে নতুন দামে। তবে পুরোনোদের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় থাকছে প্রস্তাবে।
শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন কবে হবে আমরা জানি না। তবে নির্বাচনের তারিখ জানা থাকলে আমাদের জন্য সুবিধা হয়; তা যখনই হোক। তাহলে আমাদের একটি প্রস্তুতি থাকে—বিনিয়োগ করব কি করব না।’ তিনি আরও বলেন, এখন যদি সরকার থেকে একটা ঘোষণা না আসে তাহলে বিনিয়োগ করব না। কারণ ঘুম থেকে উঠে যদি দেখি গ্যাসের ইউনিট ৭৫ টাকা তাহলে তো ব্যবসা টেকানো যাবে না।
বস্ত্র খাতে চলতি মূলধনের ঘাটতি নিয়েও অভিযোগ করেন বিটিএমএ সভাপতি। তিনি বলেন, ‘টাকার অবমূল্যায়নের কারণে আমাদের বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ীদের পুঁজি অর্ধেক হয়ে গেছে। ব্যাংকে আবেদন করলেও তারা সেটি দিতে পারছে না। অথচ কিছু কিছু ব্যাংককে টাকা দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই টাকাটা কেন দিচ্ছে? কারণ সেসব ব্যাংকের টাকা চুরি হয়েছে। সেই চুরির টাকাটা ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। লুট হওয়া ব্যাংক টিকিয়ে রাখতে অর্থ দিলেও ব্যবসায়ীদের যে তারল্যসংকট, সেটি আমলে নিচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বিদেশি বিনিয়োগ আনার বিষয়ে শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ‘চীনে কারখানা বন্ধ হচ্ছে। সেই বিনিয়োগ আসার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার তালিকায় ছিল বাংলাদেশ। তবে আমরা ডলার–সংকট, ব্যাংকের অর্থায়নের অপর্যাপ্ততাসহ বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে আছি। এর মধ্যে যদি রাতারাতি গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ে তাহলে বিদেশিরা আসবে না। সে জন্য সরকারকে পরিষ্কার করে বলতে হবে আগামী এত বছর গ্যাসের দাম এই থাকবে।’
বিটিএমএ ও হংকংয়ের ইয়র্কার্স ট্রেড অ্যান্ড মার্কেটিং সার্ভিস কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে চার দিনব্যাপী ডিটিজি ঢাকার পূর্বাচলের ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) আগামী বৃহস্পতিবার শুরু হবে। এবারের প্রদর্শনীতে চীন, জার্মানি, ভারত, ইতালি ও জাপানসহ ৩৩ দেশের ১ হাজার ১০০ ব্র্যান্ডের ১ হাজার ৬০০টি স্টল থাকবে।
প্রদর্শনীতে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের যন্ত্রপাতি, কাপড়, ফিলামেন্ট, রাসায়নিক, ডাইং প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম প্রদর্শন করা হবে। প্রদর্শনীতে ফ্যাশন শো থাকবে। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
টিআইএন থাকলেও রিটার্ন দেন না, তাদের নোটিশ দেওয়া শুরু
আগামী বাজেটে নতুন করে কোনো কর অব্যাহতি দেওয়া হবে না। বিদ্যমান কর অব্যাহতিও কমানো হবে। কিছু ক্ষেত্রে উঠিয়ে দেওয়া হবে। যারা কম হারে দেয়, তাদের বাড়ানো হবে। গতকাল শনিবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) মিলনায়তনে আয়োজিত ‘অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এ কথা বলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
তিনি বলেন, কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) থাকা সত্ত্বেও যারা আয়কর রিটার্ন দেন না, তাদের নোটিশ দেওয়া শুরু হয়েছে। নোটিশ দেওয়া শুরু হওয়াতে লোকজন হয়তো বলা শুরু করবে, তারা খুব ঝামেলায় পড়েছেন।
ইআরএফ ও রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড) যৌথভাবে এ কর্মশালা আয়োজন করে। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন র্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক আবু ইউসুফ। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, প্রকৃত অর্থে আগামী বাজেট হবে ব্যবসাবান্ধব ও জনকল্যাণমুখী। কিছুদিন ধরে এনবিআর যে কাজগুলো করেছে, এর মাধ্যমে বিষয়টি টেরও পেয়েছেন সবাই। তিনি জানান, এ বছর দুই দফায় সয়াবিন তেলের শুল্ক কমানো হয়েছে। একইভাবে দুই দফায় চিনির শুল্ক কমানো হয়েছে। এ ছাড়া খেজুর, ডাল, ডিম, চাল, পেঁয়াজ প্রভৃতি পণ্য আমদানিতে শুল্ক কমানো হয়েছে। তার সুফলও পাচ্ছেন মানুষ। তবে এ শুল্ক ছাড়ের ফলে কয়েক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে সরকার। তবুও জনস্বার্থ চিন্তা করে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
মূল প্রবন্ধে আবু ইউসুফ বলেন, দেশের আর্থিক উন্নতি, পরনির্ভরশীলতা কমানো ও আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে কর আহরণ বাড়াতে হবে। কিন্তু কর আহরণ ও কমপ্লায়েন্সের ক্ষেত্রে অবকাঠামো সমস্যার কারণে কর-জিডিপি হার এখনও অনেক কম। প্রত্যক্ষ কর আহরণ
কম হওয়ায় রাজস্ব আহরণের জন্য সরকার ভ্যাট ও বাণিজ্যকেন্দ্রিক রাজস্ব আদায়ে বেশি নির্ভর হয়ে পড়ছে, যা নিম্ন আয়ের মানুষদের প্রভাবিত করছে।
শওকত হোসেন বলেন, বিগত সময়ে কর ব্যবস্থাপনা নিয়ে যেসব চিন্তাভাবনা হয়েছিল, তা ছিল অনেক বেশি গতানুগতিক। সেগুলোর কিছুটা দাতাদের ইচ্ছায় এবং কিছুটা সরকারের ইচ্ছায় হয়েছে। তবে এখন সুযোগ এসেছে পরিকল্পিতভাবে কিছু করার। যারা আয়কর দেন না, তাদের কর দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করলে কর-জিডিপি হার বাড়বে।