আইএমএফের ঋণের দুই কিস্তি একসঙ্গে ছাড়ে যৌথ সম্মতি
Published: 18th, February 2025 GMT
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের দুই কিস্তি একসঙ্গে ছাড়ের সিদ্ধান্ত যৌথ সম্মতিতে হয়েছে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। চলমান ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড়ে বিলম্ব নিয়ে সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ব্যাখ্যায় মঙ্গলবার মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৩ সালে আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি (৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন) ডলারের সমতুল্য ঋণ মঞ্জুর করে। এর মধ্যে তিন কিস্তি বাবদ ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের সমতুল্য অর্থ ইতোমধ্যে পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত মজবুত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করা সাপেক্ষে আইএমএফ ঋণের কিস্তির টাকা ছাড় করে থাকে।
অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, বাজেট সাপোর্ট প্রোগ্রামের আওতায় যে সব সংস্কার কার্যক্রম নেওয়া হয় তার মধ্যে কিছু কার্যক্রম বাস্তবায়নে নির্ধারিত সময়ের চাইতে বেশি সময় প্রয়োজন হতে পারে। সে কারণে বাংলাদেশ সরকার এবং আইএমএফ যৌথভাবে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত দুইটি কিস্তি একসাথে ছাড়ের বিষয়ে সম্মত হয়।
এ প্রেক্ষিতে আইএমএফ চতুর্থ এবং পঞ্চম কিস্তির অর্থ একসাথে ছাড় করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। আগামী এপ্রিল মাসে নির্ধারিত রিভিউ মিশন এবং জুন মাসে আইএমএফ এর বোর্ড সভায় অনুমোদনের পর এ কিস্তি দু’টির অর্থ একসাথে আগামী জুনে ছাড় করা হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঋণ
এছাড়াও পড়ুন:
সেকালের হাট এবং ঈদের ব্যস্ততা নিয়ে কিছু কথা
বাজার সংস্কৃতিতে গত পাঁচ দশকে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এই পরির্তনের হাওয়া লেগেছে গ্রাম, মফস্বলের হাট-বাজারেও। বর্তমানে ঈদ সামনে রেখে গ্রামের হাটকেন্দ্রিক মার্কেটগুলোতে ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো। আশির দশকের কথা বলতে পারি, গ্রামীণ জীবনধারার অর্থনৈতিক চাকা ঘুরতো হাটকে কেন্দ্র করে। গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙা রাখতে হাটের অনেক ভূমিকা ছিল। বলতে গেলে কৃষিভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থায় গতিশীলতা বজায় রাখার জন্য হাটের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। তখনও টেলিফোন, মোবাইলের ব্যবহার গ্রাম পর্যায়ে বিকাশ লাভ করেনি। ফলত, হাট ছিল সামাজিক যোগাযোগেরও একটা বড় মাধ্যম। দেখা যেত যে ১০ থেকে ১৫ বর্গ মাইলজুড়ে বসবাসরত মানুষেরা একটি হাটে কেনাবেচা করতো। িতখনকার দিনে নিকটবর্তী গ্রামের মানুষের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে উঠতো। যেহেতু ওই সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ ছিল না, হাটবারে এক আত্মীয় অন্য আত্মীয়ের ভালো-মন্দ খবর পেতো। সপ্তাহে সাধারণত দুই বা একদিন হাট বসতো। তখন গ্রামে তেমন কোনো দোকান দেখা যেত না। হঠাৎ কোথাও কোনো দোকান থাকলেও কেরোসিন, লবণ, দড়ি, তামুক, চকলেট; এই সব পাওয়া যেত।
হাটের নিয়মিত চিত্র: হাটে ক্রয় করার সংস্কৃতিটা অনেকটা বিনিময় প্রথার মতো ছিল। স্থানীয় কৃষক ধান, পাট, সবজি, মসলা, হাঁস, মুরগী, নারকেল, সুপারি নিয়ে আসতেন। হাটে নিয়মিত বাঁশও বিক্রি হতো। দেখা যেত হাটবারে দুইজন মানুষ একটি বাঁশের দুইপাশ ধরে দেহো দুলিয়ে দুলিয়ে হেঁটে গ্রামের পথ ধরে হাটে পৌঁছাতেন। আবার কেউ একাই বাঁশ বহন করতেন। হাটে অনেক ভ্রাম্যমাণ দোকান বসতো। যেমন নাপিতের দোকান, দর্জির দোকান, কর্মকারের দোকান। সপ্তাহের ওই একটি দিন বাড়ির ছেলেরা, পুরুষেরা হাটে গিয়ে নাপিতের সামনে টুলে বসে চুল, দাঁড়ি কাটাতেন। দর্জি একটা মেশিন মাথায় করে নিয়ে আসতো। বাজার থেকে লুঙ্গি কিনে দর্জির কাছ থেকে সেলাই করতো মানুষ। কেউ কেউ হাটে যাওয়ার সময় একটা ব্যাগে পুরনো, ছেঁড়া কাপড় নিয়ে যেতেন সেলাই করানোর জন্য। হাটে বিশেষ ব্যস্ততা থাকতো কামারের ঘরে। কাঁচি, ছুরি, দা, বটি, কোদাল, নিড়ানী ধার কাটানোর কাজে ব্যস্ত সময় পাড় করতেন কামার।
মাছ খুব বেশি বেচা-কেনা হতো না: স্থানীয়ভাবে উৎপাদিন সবজি, মাছ, মুরগী বিক্রি হতো হাটে। বেচাকেনার ক্ষেত্রে মাছ খুব একটা ভূমিকা রাখতো না। কারণ তখন বিলে, পুকুরে, ডোবায় মাছ পাওয়া যেতো, বাড়ির পুরুষেরা মাছ ধরতেন।
ছোটরা হাটে যাওয়া বায়না ধরতো: বাড়ির ছোট ছেলেমেয়েরা বাবা, দাদা, নানাদের হাত ধরে হাটে যাওয়ার জন্য খুব উৎসাহ প্রকাশ করতো। হাটে গেলে মুড়ি, মুড়কি, আকরি, মদন কটকটি খাওয়ার সুযোগ মিলতো তাদের। বাড়ি ফেরার সময় কাগজের ঠোঙায় এসব খাবার কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরতো তারা। আবার আখ কিনেও বাড়ি ফিরতে দেখা যেত।
হৃদ্যতা তৈরি করতো হাট: তখনকার দিনে হাট থেকে বেশিরভাগ মানুষ হেঁটে বাড়ি ফিরতো। তাদের মাথায় থাকতো ঝুরি আর ঝুরিভর্তি সদাই। হাটটা একটা আড্ডারও জায়গা ছিল। দেখা যেতো যে কেউ হাটে যেয়েই বাড়ি ফিরে যেত না। তারা হাটে পরিচিতজনদের সঙ্গে আড্ডা, গল্পে মেতে উঠতো। তারপর সন্ধ্যার দিকে একসঙ্গে অনেকে গল্প করতে করতে বাড়ি ফিরতো। কখনও কখনও সামাজিক কোনো সমস্যার সমাধানে গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা একসঙ্গে বসে সমাধান করতেন। কেউ কেউ সাইকেলে যাতায়াত করতেন। আর বর্ষায় সবার যাতায়াতের বাহন ছিল নৌকা। দেখা যেত, এক সঙ্গে অনেকে গান গাইতে গাইতে হাটে যেতেন।
ঈদের হাট যেমন ছিল: ঈদ আসলে মানুষ সেটুকু কেনাকাটা করতো, যেটুকু না করলেই নয়। ঈদের দিন বাড়িতে বাড়িতে পায়েস, হাতে কাটা সেমাই রান্না হতো। তবে এখনকার মতো চিনি দিয়ে নয়, গুড় দিয়ে রান্না হতো সেসব। ঈদের আগে হাট থেকে গুড় কেনার হিড়িক পরতো। ঈদের দুই একদিন আগে হাটে গরু জবাই হতো। এখনকার দিনের মতো মানুষ কেজি-কেজি মাংস কিনতো না। মাংসের ভাগ কিনতো। হয়তো তিরিশ টাকায় মিলে যেতো এক ভাগ মাংস। ঈদের আগে হাটে নতুন কাপড় বেচা কেনা বাড়তো। কাপড় কিনে খলিফার (দর্জি) কাছে সেলাই করতে দিতো। তখন দুই চার গ্রামে একজন খলিফা থাকতেন। ঈদের দিন সকালেও তার বাড়িতে লোকজন দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতো পোশাক নেওয়ার জন্য।
ঢাকা/লিপি