আগামী নির্বাচনের জন্য জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) এখন থেকেই কাজ শুরু করার নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনের সময় জেলা প্রশাসকদের নিজ উদ্যোগে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করারও নির্দেশনা দিয়েছে ইসি।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে ইসি এই নির্দেশনা দিয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

আজ ছিল জেলা প্রশাসক সম্মেলনের শেষ দিন। এ দিন সন্ধ্যায় সম্মেলনের একটি অধিবেশন ছিল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য চার নির্বাচন কমিশনার এবং ইসি সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ওই অধিবেশনে যোগ দেন। সেখানে নির্বাচন কমিশনাররা ডিসিদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনা মূলক বক্তব্য দেন। সাধারণত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন জেলা প্রশাসকেরা।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশে ডিসিদের পরিবর্তে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা করার সুপারিশ করেছে। তবে আগামী নির্বাচনে কারা এই দায়িত্ব পালন করবেন, সে সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। নির্বাচন কবে হবে, সে সিদ্ধান্তও হয়নি।

জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দিকনির্দেশনা দেওয়ার পর সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় নির্বাচনে ডিসিরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ইসি তাঁদের এই বার্তাটা দিতে চেয়েছে যে সামনের নির্বাচনে তাঁরা যেন নিজ উদ্যোগে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করেন। ইসি তার নিজের আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করবে।

সিইসি বলেন, ‘আমরা অনুরোধ করেছি, আজকে থেকেই আপনারা.

..আমরা যেমন ইলেকশন কমিশন কাজ করছি ইলেকশন নিয়ে, আপনারাও সহযোদ্ধা। আমরা একটা যুদ্ধে নেমেছি। এই যুদ্ধ হচ্ছে একটা সুন্দর নির্বাচন উপহার দেওয়ার যুদ্ধ। আমি বলেছি, আপনারা আমাদের সহযোদ্ধা হিসেবে থাকবেন। এখন থেকেই কাজ শুরু করেন। ওনারা কথা দিয়েছেন ওনারা সেভাবেই কাজ করবেন।’

ইসি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে চায় উল্লেখ করে সিইসি জানান, অনুষ্ঠানে একজন নির্বাচন কমিশনার ডিসিদের উদ্দেশে নির্বাচনী আইন পড়ে শুনিয়েছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার কী কী ক্ষমতা আছে, তা পড়ে শুনিয়েছেন। ইসি চায় কোনো অভিযোগের ভিত্তিতে নয়, রিটার্নিং কর্মকর্তারা স্বপ্রণোদিত হয়ে নির্বাচনী অপরাধের বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন। ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনাররা যাঁর যাঁর ভূমিকা ষোলোআনা যাতে পালন করেন, সে অনুরোধ করা হয়েছে।

বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গেলে নির্বাচন ও ভোটাধিকার সম্পর্কে ডিসিদের বক্তব্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘আমরা বলেছি যে আপনারা নির্বাচনের দিন বা তার দু-চার দিন আগে-পরে নয়, এখন থেকে...আপনারা ইলেকশনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হয়ে যান।’

সিইসি নাসির উদ্দীন বলেন, তাঁরা ডিসিদের বলেছেন, আগে ডিসিদের ওপর নানা চাপ এসেছে। ইসি তাদের নিশ্চয়তা দিয়েছে, ইসি তাদের কোনো অবৈধ চাপ দেবে না। ওপর থেকে কোনো চাপ এলে সেটা ইসি ‘অ্যাবজর্ব’ করবে। ডিসিরা শুধু আইনি ক্ষমতা যেন প্রয়োগ করেন, সেটাই তাঁরা চান। অতীতে এটা হয়নি।

এখন থেকেই সব দলের জন্য সমান সুযোগ তৈরির (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) বিষয়ে ইসি কোনো নির্দেশনা দিয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, তাঁরা ডিসিদের ভোটের দিনের জন্য বসে না থেকে এখন থেকেই কাজ শুরু করার বার্তা দিয়েছেন। ইসি বলেছে, ডিসিদের পুরোপুরি নিরপেক্ষ হতে হবে। তাঁদের যে ক্ষমতা ও দায়িত্ব আছে, সেটা সঠিকভাবে পালন করতে হবে। তাঁরাও অঙ্গীকার করেছেন, সেটা তাঁরা করবেন।

স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তিনি বলেন, এটি নিয়ে একটি রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে, ইসি ওই বিতর্কের অংশীদার হতে চায় না। এ বিষয়ে একটা ফয়সালা হলে তখন দেখা যাবে। তাঁরা প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী কাজ করছেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এখন থ ক ই র জন য আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

পূরণ হলো না স্বপ্ন, আহত রিয়ালে দুঃখী এমবাপ্পে

টিম বাসের সামনে পেছনে প্যারেড ঘোড়ার কুচকাওয়াজ। রাস্তার দুধারে সমর্থকের হাতে রাখা রংমশাল থেকে মায়াবী ধোঁয়া, যেন রাজার আগমন ঘটছে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর দুর্গে! ম্যাচের আগে এমবাপ্পেদের প্রবেশপথের এই দৃশ্য ফেসবুক ‘রিল’-এ ভাইরাল হয়েছিল! সেই সঙ্গে বেলিংহামের ‘প্রত্যাবর্তনের’ হুঙ্কার কিংবা সমর্থকদের ‘আর্সেনালকে দেখিয়ে দেওয়ার’ বিভিন্ন পোস্ট– সোশ্যাল মিডিয়ায় যতটা গর্জে ছিল রিয়াল মাদ্রিদ, বাস্তবের ম্যাচে বর্ষেনি ততটা! 

বরং ঘরের উঠোনে ৮০ হাজার দর্শকের সামনে আর্সেনালের কাছে ১-২ গোলে কঠিনভাবে আহত হয়েছে লা ব্ল্যাঙ্কোসরা। পনেরোবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগজয়ী স্প্যানিশ ক্লাবটি এবার আটকে গেল কোয়ার্টারেই। সেখানে দুই লেগ মিলিয়ে ৫-১ গোলের অগ্রগামিতায় ইংলিশ ক্লাব আর্সেনাল ১৬ বছর পর সেমিতে। যেখানে তাদের মোকাবিলা এখন প্যারিসের দল পিএসজির সঙ্গে।

অথচ এই পিএসজি ছেড়েই ইউরোপের কিং হতে মাদ্রিদে এসেছিলেন ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে। রিয়াল মাদ্রিদে গেলেই শুধুই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের ইচ্ছাপূরণ হবে– এমন অন্ধ আকাঙ্ক্ষা তাড়া করেছিল তাঁকে। এই মুহূর্তে আহত রিয়ালে তাই সবচেয়ে দুঃখী এই মানুষটিই। বুধবার রাতে আর্সেনালের বিপক্ষে অফসাইডের একটি গোলের মিথ্যা হুল্লোড় ছাড়া কিছুই করতে পারেননি তিনি। 

ব্রাজিলিয়ান যে তারকাকে নিয়ে ব্যালন ডি’অরের পুরস্কার বয়কট করেছিল রিয়াল, সেই ভিনিসিয়ুস জুনিয়রই বা কতটা প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছেন। ৬৭ মিনিটে যে গোলটি তিনি করেছেন, সেটাতেও আর্সেনালের ডিফেন্ডারের স্পষ্ট ভুল ছিল। এমবাপ্পেকে ফাউল করার কারণে যে পেনাল্টি ভিএআর করে দিয়েছে বলে মাদ্রিদ সমর্থকরা অভিমান করেছেন, এর বাইরে আর ক’টা সুযোগই বা তারা তৈরি করতে পেরেছে। 

পুরো ম্যাচে ৬০ শতাংশ বল পজিশনে রেখেও গোলমুখে ‘শটস অন টার্গেট’ মাত্র চারটি। যেখানে তিন গোলের বোঝা কাঁধে নিয়ে ম্যাচে নামা ফরোয়ার্ডদের ডিবক্সের কাছাকাছি এসেই আক্রমণ শানানোর কথা, সেখানে কিনা বেলিংহাম, ভিনিরা ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের চেষ্টা করে গেছেন। মিডফিল্ডে ভালভার্দে আর চুয়েমেনিকে এমন স্নায়ুক্ষয়ী ম্যাচের জন্য অনেকটাই অপ্রস্তুত মনে হয়েছে। 

তবে গোলরক্ষক কতুর্য়া বার্নাব্যুর দুর্গ সামলানোর চেষ্টা করে গেছেন সবটুকু নিংড়ে দিয়ে। ম্যাচের ১৩ মিনিটে আর্সেনালের ইংলিশ ফরোয়ার্ড বুকাও সাকার দুর্বল পেনাল্টি রুখে দেন কর্তুয়া। কিন্তু সেই সাকারেরই চিপ শটে গোল রিয়ালের এদিন প্রথম গোল হজম করতে হয়। সাকা বক্সে ঢোকার সময় একই লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন রিয়ালের চার ডিফেন্ডার! ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে হাল ছেড়ে দেওয়া রিয়ালের জালে দ্বিতীয় গোলটি করেন আর্সেনালের ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড মার্তিনেল্লি।

এদিন ম্যাচের পর সবার শেষে মাঠ ছাড়েন কর্তুয়া। বেলজিয়ামের এই গোলরক্ষক সাত বছর ধরে আছেন দলটির সঙ্গে। তাই এদিনের হারের কারণ হিসেবে তাঁর চোখে ধরা পড়েছে রিয়াল মাদ্রিদের গভীর এক শূন্যতা। ‘আমাদের আত্মসমালোচনা করা উচিত। এবং সবকিছু বিস্তারিতভাবে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। আমরা কেন একটি দল হয়ে খেলতে পারছি না, সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা উচিত। আপনি যদি শুধু ভিনি আর এমবাপ্পের ওপরই নির্ভর করে থাকেন, তাহলে তা মাঝে মাঝে কাজে দেবে, কিন্তু সবসময় দেবে না।’ 

কর্তুয়ার ইঙ্গিতটা পরিষ্কার, যে রিয়াল সব অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে বলে ম্যাচের আগে তাদের ভিডিও দেখানো হয়েছিল লকার রুমে, সেই মাদ্রিদ অন্তত এটা না। প্রত্যাবর্তন করার প্রত্যাশার প্রচণ্ড চাপ, মিডফিল্ডের দুর্বলতা এবং আক্রমণ ভাগে তারকাদের স্বার্থপরতা– রিয়ালের মুকুট হরণে আপাতত এই তিনটি কারণ খুঁজে পেয়েছে স্প্যানিশ দৈনিকগুলো। যেখানে মার্কা শিরোনাম করেছে– ‘নো মিরাকল’।

প্রথম লেগের ম্যাচেই আর্সেনালের ডেকলান রাইস গতবারের চ্যাম্পিয়নদের বাস্তবতা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, দ্বিতীয় লেগে এসেও তিনি ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে বার্নাব্যুতে সেলফি তুললেন। ম্যাচের ২৮ মিনিটে ডিবক্সের মধ্যে রাইসের বাধায় পড়ে যান এমবাপ্পে। রেফারি রাইসকে হলুদ কার্ড পেনাল্টি দিলেও রাইস জোরালো যুক্তি দেন এই বলে যে তিনি পেছন থেকে এমবাপ্পেকে হাত বাড়িয়ে ধরে রাখলেও তা মাটিতে পড়ে যাওয়ার মতো জোরালো ছিল না। ভিএআর রাইসের এই যুক্তি মেনে নিয়ে তা বাতিল করে দেয়। ঠিক এখানেই মাদ্রিদের যত অসহায় আফসোস জমাট বাঁধে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ