নাজিমুল-বর্ষার রেকর্ডের দিনে জহিরের দশে দশ
Published: 18th, February 2025 GMT
নাজিমুল হোসেনের গলায় বাড়তি কোনো উচ্ছ্বাস নেই। বোঝাই যাচ্ছিল না ৩২ বছরের পুরোনো রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন!
জাতীয় স্টেডিয়ামে ৪৮তম জাতীয় অ্যাথলেটিকসের দ্বিতীয় দিনে আজ ৪০০ মিটার হার্ডলসে নতুন রেকর্ড গড়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৬ বছর বয়সী অ্যাথলেট নাজিমুল। কিছুক্ষণ পরই মেয়েদের ৪০০ মিটার হার্ডলসেও নতুন রেকর্ড হয়েছে। তিন বছরের পুরোনো রেকর্ড ভেঙেছেন সেনাবাহিনীর বর্ষা খাতুন।
৪০০ মিটার হার্ডলসে ছেলেদের বিভাগে সর্বশেষ রেকর্ড হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। ৫১.
জাতীয় প্রতিযোগিতায় তৃতীয়বার অংশ নিয়েই এ রেকর্ড গড়লেন বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার নাজিমুল। ৪০০ মিটার হার্ডলসে প্রথমবার জেতেন রুপা, দ্বিতীয়বার সোনা। এবার রেকর্ড।
তবে এমন রেকর্ড গড়েও নাজিমুলের কণ্ঠ ধীরস্থির, ‘রেকর্ড করে খুশি লাগারই কথা। আমিও খুশি। আসলে আমার কোচ এবং সহপাঠীরা বলতেন, এই রেকর্ডটা আমার পক্ষে ভাঙা সম্ভব। অবশেষে সেটি করতে পেরে আলহামদুলিল্লাহ।’
অথচ নাজিমুল ভাবেনইনি অ্যাথলেট হবেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন এবং তা পূরণ হয় ২০১৭ সালে। সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পরই অ্যাথলেটিকসে আসা। নিজেই বলেন, ‘স্কুলে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় খেলেছি; কিন্তু অ্যাথলেটিকস কাকে বলে, সেভাবে জানতাম না। আর্মিতে আসার পরই আমি অ্যাথলেটিকসে আসি।’
২০২১ সালে প্রথমবার সেনাবাহিনীর মূল দলে সুযোগ পান নাজিমুল। সে বছর সেনাবাহিনীর আন্তইউনিটে দৌড়ান ৪০০ মিটারে। তাতে সোনা জেতেন। পরে পছন্দের ইভেন্ট হার্ডলসে মনোযোগ দেন। সামনে এসএ গেমসে ভালো করার স্বপ্ন দেখছেন। ভালো প্রশিক্ষণ পেলে সোনা জেতাও সম্ভব মনে করছেন, ‘যে টাইমিং করেছি...আরেকটু চেষ্টা করলে হয়তো হয়ে যাবে। তবে ফেডারেশনের পক্ষ থেকে যদি আরেকটু সহযোগিতা করা হয়, তাহলে ভালো হবে।’
মাগুরার ২৪ বছর বয়সী বর্ষা খাতুন ৪০০ মিটার হার্ডলসে নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়েছেন ১ মিনিট ০৪.৬১ সেকেন্ড সময় নিয়ে। ২০২২ সালে একই দলের লিবিয়া খাতুন রেকর্ড গড়েন ১ মিনিট ০৪.৭০ সেকেন্ডে।
জেলা পর্যায়ে খেলে উঠে এসেছেন বর্ষা। কোচ আমির আলী তাঁকে চট্টগ্রাম বিজেএমসিতে নিয়ে যান। ২০১৫ সালে ঠিকানা হয় সেনাবাহিনী। ৪০০ মিটারে ২০২২ সালে সিনিয়র পর্যায়ে সোনা জেতেন। তবে এবার পায়ে ব্যথা থাকলেও নিক্যাপ পরে দৌড়েছেন।
ব্যাথনাশক ওষুধ খেয়ে নেমেছেন জানিয়ে বর্ষা বলেন, ‘এবার আগে থেকেই আমি এবং আমার কোচ চেয়েছিলাম রেকর্ড করব। ইনশাআল্লাহ সেটা করতে পেরেছি, সে জন্য খুবই খুশি।’ স্বপ্ন দেখছেন এসএ গেমস নিয়েও, ‘এখন যে ছন্দে আছি, আশা করি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মেডেল জিততে পারব।’
দিনটা আনন্দে কেটেছে জহির রায়হানেরও। জাতীয় প্রতিযোগিতায় দশমবার জিতেছেন ৪০০ মিটারের সোনা। ২০১৮ থেকে ১০ বার খেলেছেন এবং জিতেছেন ১০ বারই। ২০২২ সালে খেলা হয়নি ধর্ষণ মামলায় জেলে থাকায়। আজ ১০০ মিটার রিলেতেও সোনা জিতেছেন নৌবাহিনীর হয়ে।
সোনা জিতে উচ্ছ্বসিত জহির বলেন, ‘সামনে আন্তর্জাতিক কোনো প্রতিযোগিতায় খেলার সুযোগ দেওয়া হলে ভালো করার চেষ্টা করব। সব সময় বলে এসেছি, আশা করি সামনে আমাদের নিয়ে ভালো পরিকল্পনা করা হবে।’
২০১৯ সালে মিলজার হোসেনের রেকর্ড ভাঙেন জহির। কিন্তু এরপর আর ৪০০ মিটারে রেকর্ড গড়তে পারছেন না।
কেন? জহিরের কথায়, ‘২০১৭ সালে আমি বিশ্ব জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে খেলে আলোচিত হয়েছিলাম। এর পর থেকে আমাকে নিয়ে কোনো পরিকল্পনা করা হয়নি। দেশের বাইরে অনুশীলনের সুযোগ পাইনি। বারবার আশ্বাস দিয়েও কিছুই হয়নি। এখন আশা করছি বর্তমান কমিটি কিছু করবে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন ৪০০ ম ট র ন র কর ড
এছাড়াও পড়ুন:
বড় স্বপ্ন, হামজা জয়গানে বাংলাদেশের শিলং যাত্রা
বিশ্বের অন্যতম সেরা প্রতিযোগিতা ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে নিয়মিত খেলা একজন ফুটবলার প্রথমবার গায়ে জড়াতে যাচ্ছেন লাল-সবুজের বাংলাদেশের জার্সি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ২৫ মার্চ বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে নতুন জাগরণ শুরু হতে যাচ্ছে। যে পথে একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ, হামজা চৌধুরী।
ইংলিশ চ্যাম্পিয়নশীপে (ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় বিভাগ) শেফিল্ডের হয়ে খেলছেন হামজা। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলার প্রথমবার বাংলাদেশের জার্সিতে খেলতে এসেছেন। আগামী ২৫ মার্চ শিলংয়ে এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ ও ভারত। দুই দলের ফুটবল দ্বৈরথ নিয়ে গত কয়েক বছর এমনিতেই আলাদা রোমাঞ্চ, উত্তেজনা ছড়ায়। সেই পালে আরো হাওয়া লাগিয়েছেন হামজা।
তাকে ঘিরে সীমান্তের এপার-ওপারে চলছে তীব্র আলোচনা। বাংলাদেশের ফুটবল নতুন করে তার ব্র্যান্ডিংয়ে এগিয়ে যাবে এমনটাই বিশ্বাস সংশ্লিষ্টদের। সেই বিশ্বাস, ভারতকে তাদের মাটিতে হারানোর বড় স্বপ্ন এবং হামজা জয়গানে শিলং যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবল দল। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় উড়াল দিয়েছেন হামজা, জামাল, সাদরা। কলকাতা হয়ে গৌহাটিতে পৌঁছবেন তারা। সেখান থেকে শিলং।
ক্রীড়াঙ্গনের সব আলো হামজা কেড়ে নিয়েছেন। এখন কেবল লাইমলাইটে তিনি। প্রত্যাশার চাপটাও বেশি। তবে সেই প্রত্যাশার চাপ বাড়তি বোঝা হবে না এমনটাই বিশ্বাস সংশ্লিষ্টদের। হামজা নিজেও আছেন খোলামনে, ‘‘আমি তেমনি মনে করি না (বাড়তি চাপ) । দেখুন দিন শেষে আমরা ফুটবল খেলি। ফুটবলে যে কোনও কিছুই হতে পারে। এখানে কোচ দলকে প্রস্তুত করছে। আমি এখানে এসে সবার ভালোবাসা পাচ্ছি। আমি দলকে সহযোগিতা করতে চাই। এবং সেটা যতটা সম্ভব ততটা।”
গতকাল বসুন্ধরা কিংস অ্যারোনায় অনুশীলন করেছেন হামজা। বাংলাদেশের সতীর্থদের সঙ্গে সেটাই ছিল তার প্রথম সেশন। মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ের জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়াম। যেখানে গতকাল মালদ্বীপের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে স্বাগতিকরা। ৩-০ গোলে জয় পেয়েছে তারা। নয় মাস পর অবসর ভেঙে ফেরা সুনীল ছেত্রি গোল পেয়েছেন।
সেখানে বাংলাদেশ সৌদি আরবে প্রস্তুতি সেরেছে। অনুশীলন বাদে পৃথক তিন ক্লাবের সঙ্গে ম্যাচও খেলেছে। প্রস্তুতির ঘাটতি আছে কিনা সেই প্রশ্ন করা হয়েছিল কোচ হাভিয়ের কাবরেরাকে। উত্তরে নিজেদেরকে প্রস্তুত বলে দাবি করলেও, ভারত সফরের দল এখনো ঘোষণা করতে পারেননি তিনি।
শিলংয়ের বিমানে উঠলেও বাফুফে এখনও ২৩ সদস্যের স্কোয়াড ঘোষণা করতে পারেনি। ফলে গতকাল ফটোসেশনে অংশ নেওয়া ২৭ ফুটবলারকে নিয়েই ভারতের বিমান ধরেছে বাংলাদেশ। সঙ্গে আছে ১০ কোচিং স্টাফ।
ফুটবল নতুন করে জাগরণের স্বপ্নে বিভোর। হামজা পরশ পাথর হয়ে এসেছেন। তার ছোঁয়ায় পাল্টে যাবে এমনটাই বিশ্বাস সংশ্লিষ্টদের।
ঢাকা/ইয়াসিন/নাভিদ