ঢাবির অনুষ্ঠানে রফিকুন নবীর অংশগ্রহণ নিয়ে যা জানা গেল
Published: 18th, February 2025 GMT
অঙ্কন ও চিত্রায়ন বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও চিত্রশিল্পী রফিকুন নবীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের বার্ষিক চিত্রকর্ম প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে যোগদান করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে তাকে চারুকলা থেকেই ফিরে যেতে হয় বলে জানা গেছে।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগের বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী ২০২৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে এ ঘটনা ঘটেছে।
অনুষদের পেইন্টিং বিভাগের বার্ষিক প্রদর্শনীর পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন একুশে পদকজয়ী চিত্রশিল্পী এবং ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুন নবী। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অসম্মতি থাকায় অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে চিত্রশিল্পী কামাল পাশা চৌধুরী ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। ওই পোস্টে তিনি বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন, “অনুষদের পেইন্টিং বিভাগের বার্ষিকীর প্রদর্শনীর ওই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন দেশের প্রবীনতম প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী, যিনি কার্টুন শিল্পে রনবী নামে বিখ্যাত টোকাই চরিত্রের স্রষ্টা, এমিরেটাস অধ্যাপক রফিকুন্নবী। কিন্তু অনুষ্ঠান শুরুর পূর্বেই চারুকলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁকে বলা হয় মঞ্চে না যাওয়ার জন্য। যদিও এখনও তিনি চারুকলা অনুষদের অধ্যাপক পদে আসীন।”
তিনি লেখেন, “অনুষ্ঠানে নিয়মিত পুরস্কার তালিকার বাইরেও শিল্পী রফিকুন্নবী এবার ব্যক্তিগতভাবে ২০ হাজার টাকা মূল্যমানের একটি পুরস্কার একজন সেরা ছাত্রকে প্রদান করবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছিলেন। এই অনুষ্ঠানে আরও অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড.
তিনি আরো লেখেন, “এ সময় অনুষ্ঠানস্থলে চারুকলার বাইরের কিছু ছাত্রকেও এই বরেণ্য শিল্পীর বিরুদ্ধে নানা কটু বাক্য বলতে দেখা যায়। যে চারুকলায় সেই প্রথম বর্ষের ছাত্র হিসাবে ঢুকে পরে শিক্ষক হয়ে গোটা জীবন অতিবাহিত করেছে, যেখানে থেকে তিনি হয়ে উঠেছেন জাতীয় পর্যায়ের এক যুগান্তরকারি চিত্রশিল্পী, সেখান থেকেই প্রচণ্ড এক অভিমান বুকে নিয়ে তিনি চলে গেলেন। আজীবন গণ-মানুষের অধিকার আর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ছবি আঁকাই হয়তো তার বড় অপরাধ। রফিকুন্নবীকে মঞ্চে না উঠতে দেয়ার প্রতিবাদে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের পুত্র ময়নুল আবেদিনও মঞ্চে না উঠেই অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করে চলে যান।”
অতীতে চিত্রশিল্পী রফিকুন নবীর সংশ্লিষ্টতার কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। বিষয়টি নিয়ে বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া চলছে বলে নিশ্চিত করেছেন অনুষ্ঠানে পুরস্কার পাওয়া বিভাগটির ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী রাকিব নাওয়ার।
তিনি বলেন, “পুরস্কারটা মূলত ছিল রফিকুন নবী স্যারের নামেই। যারা পুরস্কার পেয়েছিলেন, তারা চেয়েছিলেন, যেহেতু পুরস্কারটা স্যারের নামে, সেহেতু স্যারের হাত থেকেই নেবেন। আর যারা রাজনৈতিকভাবে চিন্তা করবে তাদের বিষয়টা তো ভিন্ন।”
এ বিষয়ে এমিরেটাস অধ্যাপক রফিকুন নবী বলেন, “ব্যাপারটা একটু অতিরঞ্জিত করে প্রচার করা হচ্ছে। আমাকে মঞ্চে তোলা যাবে না, এটা শোনার পর আমি সেখান থেকে চলে আসি। তারা কেন এটা করলেন, তা তো জানি না।”
তিনি বলেন, “কেউ কেউ বলছেন, আমাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে; তেমটা নয়। আমি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। আয়োজকরা জানালেন, আমি মঞ্চে উঠলে এখানে একটু গোলমাল হতে পারে। এজন্য আমিই চলে এসেছি।”
চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আজাহারুল ইসলাম বলেন, “এমন কোন ঘটনা ঘটেনি। ফেসবুকে কেউ কেউ বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য ঘটনাটা অতিরঞ্জিত করে প্রচার করছে।”
তিনি বলেন, “অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগে থেকে আয়োজিত চিত্রকর্ম প্রদর্শনীতে কারা অতিথি থাকবেন, তারাই এটা ঠিক করেছেন। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোন হস্তক্ষেপ নেই। বিভাগের শিক্ষক হিসেবে অধ্যাপক রফিকুন নবী নিজেও আয়োজক কমিটির সদস্য। শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাকে নিয়ে অসন্তোষের কথা চিন্তা করে তিনি নিজেই স্বাভাবিকভাবে চলে গেছেন। তিনি চাননি কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটুক।”
এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে অঙ্কন ও চিত্রায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. ইকবাল আলীকে কল দেওয়া হয়। তিনি ফোনে চার্জ না থাকার অজুহাত দিয়ে কল কেটে দেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদের নাম্বারে কল দেওয়া হয়। রিসিভ করে উপ-উপাচার্য ব্যস্ত আছেন বলে ফোন কেটে দেওয়া হয়।
অধ্যাপক রফিকুন নবী চলে যাওয়ার পর দুপুরে ঢাবি ওসমান জামাল মিলনায়তনে শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়। উপ-উপাচার্য মামুন আহমেদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।
আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে এ প্রদর্শনী চলবে। ঢাবি শিক্ষার্থীদের আঁকা শিল্পকর্ম এ প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অন ষ ঠ ন চ র কল
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদে দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তৎপর আনসার
আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নিরাপদ ঈদযাত্রা নিশ্চিত করা এবং যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রতিরোধে প্রস্তুত রয়েছে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী। পার্বত্য অঞ্চলে ১৬টি আনসার ব্যাটালিয়নসহ সারাদেশে ৪২টি ব্যাটালিয়নের প্রতিটিতে ১ প্লাটুন করে ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। আনসার-ভিডিপি সদর দপ্তরের নির্দেশনায় যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে।
মঙ্গলবার আনসার বাহিনীর উপপরিচালক ও গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. আশিকউজ্জামান সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। সম্প্রতি দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও সুদৃঢ় করতে বাহিনীর পক্ষ থেকে কার্যক্রম বৃদ্ধি করেছে। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে দেশের প্রায় ৫ হাজার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অন্তত্য ৫৫ হাজার অঙ্গীভূত আনসার সদস্যকে অধিকতর সতর্ক অবস্থায় দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নদীপথে যাত্রীদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২৬ মার্চ থেকে ঈদ পরবর্তী সময়ে দুই দিন পর্যন্ত প্রতিটি লঞ্চে চারজন সাধারণ আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি ২৫ মার্চ থেকে ৮এপ্রিল পর্যন্ত রেলপথে যাত্রীদের নিরাপত্তায় ৬৫০জন সাধারণ আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর বিশেষায়িত ইউনিট আনসার গার্ড ব্যাটালিয়ন (এজিবি) সদস্যদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া তৃণমূল পর্যায়ে সামাজিক নিরাপত্তা বজায় রাখতে ভিডিপি সদস্যদের সক্রিয় রাখা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে এমন কোনো কর্মকাণ্ড সংঘটিত হলে তারা দ্রুততম সময়ে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।