খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে ছাত্রদল ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে অর্ধশতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে আহতদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি।

বর্তমানে কুয়েটের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে এবং ছাত্রদল ও বিএনপি নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাস সংলগ্ন সড়কে অবস্থান নিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা। এ ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে আটককৃতদের নাম জানা যায়নি।

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টার পর থেকে দিনব্যাপী দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গত কয়েকদিন ধরে কুয়েট শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন মেসেঞ্জার গ্রুপে ছাত্রদলের কমিটি গঠন নিয়ে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া চলছিল। গতকাল সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) তারা ক্যাম্পাসে লিফলেট বিতরণ করেন। আজ মঙ্গলবার সকালে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবিতে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে মিছিল বের করেন। পরে উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও করলে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়।

বেলা ১২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে মিছিল বের করেন। এ সময় তারা ‘ছাত্র রাজনীতির ঠিকানা, এই কুয়েটে হবে না’, ‘দাবি মোদের একটায়, রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস চাই’, ‘এই ক্যাম্পাসে হবে না, ছাত্র রাজনীতির ঠিকানা’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দিতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র হলগুলো প্রদক্ষিণ করেন।

পরে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে গেলে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দেন। এ সময় দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয় এবং তা কুয়েটের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে।

দুপুর ২টার দিকে কুয়েট পকেটগেটের বাইরে বিএনপি সমর্থিত বহিরাগতরা একজন ছাত্রকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে ক্যাম্পাসের ভিতর ফেলে দেয়। এরপর থেকে সাধারণ ছাত্রদের ভেতর চরম উত্তেজনা দেখা দেয় এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা এক হয়ে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেয়।

পরে রেলিগেট, তেলিগাতিসহ আশপাশ এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীরা ছাত্রদলের সঙ্গে যোগ দিলে দফায় দফায় বিকেল ৫টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। এতে ৫০ জনের বেশি আহত হয়। সংঘর্ষে আহতদের কুয়েটের অ্যাম্বুলেন্সে করে একের পর এক হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। এ পর্যন্ত চারটি অ্যাম্বুলেন্সে করে আহতদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কুয়েটে মেডিকেল সেন্টারসহ আশপাশের বেসরকারি ক্লিনিকে নেওয়া হয়েছে বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে।

বর্তমানে কুয়েটের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়েছে। ছাত্রদল ও বিএনপি নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাস সংলগ্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে আছে। পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে সেনা  ও নৌবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা।

কুয়েট শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম বলেন, “ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি নিয়ে উপাচার্য দপ্তরের কাছে গেলে ছাত্রদলের ছেলেরা আমাদের হুমকি দেয়। তারা সিনিয়রদের লাঞ্চিত করে। আমরা উপাচার্যের কাছে এর বিচার চেয়ে বের হয়ে আসার পর বিনা উস্কানিতে আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমরা তাদের ধাওয়া দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিয়েছি। পরে আশপাশের এলাকার বিএনপির লোকজন সঙ্গে নিয়ে তারা আবার হামলা চালায়। এতে অর্ধশতাধিক ছাত্র আহত হয়েছে।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা জেলা কমিটির মুখপাত্র মিরাজুল ইসলাম ইমন বলেন, “বিনা উস্কানিতে ছাত্রদলের কর্মীরা ছাত্রদের রক্ত ঝড়িয়েছে। তারা কুয়েটের সদস্য সচিব জাহিদকে রামদা দিয়ে ১০টা কোপ দিয়েছে। জেলার আহ্বায়ক তাসনিম ও সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব রাতুলের পা ইট দিয়ে থেতলে দিয়েছে।  এতে ৫৫ জন ছাত্র  গুরুতর আহত হয়েছে।”
 
খুলনা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ইশতিয়াক আহমেদ ইশতি দাবি করেন, “ছাত্রশিবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালাতে গেলে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা তাদের বাঁধা দেয়। পরে তাদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে।”

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি আরাফাত হোসাইন মিলন বলেন, “কুয়েটের ঘটনার সঙ্গে ছাত্রশিবিরের কোন সম্পর্ক নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদল ও বিএনপি নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে অনেককে আহত করেছে বলে শুনেছি। আমরা হামলার নিন্দা ও জড়িতদের বিচার চাই।”

বিষয়টি নিশ্চিত করে করে খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

কবির হোসেন বলেন, “ঘটনাস্থল থেকে ৫ জনকে আটক করা হয়েছে। বর্তমানে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, পুলিশ ও র‌্যাব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।”

এদিকে, ছাত্রদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা মহানগর ও জেলা শাখার পক্ষ থেকে আজ মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায় নগরীর শিববাড়ি মোড়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা জেলা কমিটির মুখপাত্র মিরাজুল ইসলাম ইমন। 

ঢাকা/নুরুজ্জামান/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত র র জন ত ন ত কর ম র ছ ত রদল র ছ ত রদল ও দ র ওপর স ঘর ষ সদস য ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আজ

মাতৃভাষা আন্দোলনের ৭৩ বছর পূর্ণ হলো আজ। আজ মহান একুশে ফেব্রুয়ারি, মহান ভাষা শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

সারাদেশে যথাযোগ্য মর্যদায় এ দিবসটি পালিত হবে। রাজধাানী ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং বিভিন্ন স্থানে ভাষা শহীদদের নিয়ে আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতি একুশ’র মহান ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে।

রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে একুশ’র কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এছাড়াও কালো ব্যাজ ধারণ, প্রভাতফেরি সহকারে আজিমপুর কবরস্থানে শহীদদের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা জানানো হবে।

আরো পড়ুন:

চির নিদ্রায় শায়িত ভাষা সৈনিক বড়দা

হিলির শূন্যরেখায় দুই বাংলার ভাষাপ্রেমিদের মিলনমেলা

মহান ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাণী প্রদান করেছেন।

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও গত কয়েক বছর ধরে এ দিবসটি পালিত হচ্ছে।

বাংলাদেশী বাঙালিদের জন্য এই দিবসটি হচ্ছে শোক ও বেদনার। অন্যদিকে, মায়ের ভাষা বাংলা ভাষার অধিকার আদায়ের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত।

১৯৫২ সালের এদিনে ‘বাংলাকে’ রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে পূর্ব বাংলার (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ছাত্র ও যুবসমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ সে সময়ের শাসকগোষ্ঠির চোখ-রাঙ্গানি ও প্রশাসনের ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে আসে। মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে দুর্বার গতি পাকিস্তানি শাসকদের শংকিত করে তোলায় সেদিন ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিক গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন।

একুশে ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটি। এদিন দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সঠিক নিয়মে, সঠিক রং ও মাপে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে।

দিবসটি পালন উপলক্ষে জাতীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

আজিমপুর কবরস্থানে ফাতেহা পাঠ ও কোরানখানির আয়োজনসহ দেশের সকল মসজিদে ভাষা শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ দোয়া এবং উপাসনালয়ে প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।

দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন উপলক্ষে ঢাকা শহরের বিভিন্ন সড়কদ্বীপে ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা জনক স্থানগুলোতে বাংলা ভাষার বর্ণমালা সম্বলিত ফেস্টুন দ্বারা সজ্জিত করা, বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেরিভিশন এবং অন্যান্য স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোতে একুশের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার এবং ভাষা শহীদদের সঠিক নাম উচ্চারণ, শহীদ দিবসের ভাবগাম্ভীর্য রক্ষা, শহীদ মিনারের মর্যাদা সমুন্নত রাখা, সুশৃঙ্খলভাবে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ, ইত্যাদি জনসচেতনতা মূলক বিষয়ে সরকারি ও বেসরকারি গণমাধ্যমগুলোতে প্রয়োজনীয় প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

এছাড়া, বিভিন্ন জাতীয় সংবাদপত্র বিশষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে।
 

ঢাকা/হাসান/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ