বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়—আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল স্লোগান বা ভিত্তি। কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে এই স্লোগান বা নীতিটি পুনর্বিবেচনা করা দরকার। বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ আর কাঁটাতারে ফেলানীর ঝুলন্ত লাশ দেখতে চায় না। সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশিদের রক্তাক্ত মরদেহ আর দেখতে চায় না। প্রতিবেশী দেশ ভারত যদি পানির ন্যায্য হিস্যা না দেয় বা দিতে যদি দেরি করে, তিস্তা চুক্তি করতে অনীহা প্রকাশ করে, তাহলে দেশ ও জনগণের স্বার্থে কৃষি, কৃষক ও নদী বাঁচাতে তিস্তা সমস্যার সমাধানের জন্য আমাদেরই বাঁচার পথ খুঁজে নিতে হবে।’

আজ মঙ্গলবার বিকেলে তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে রংপুর বিভাগের পাঁচটি জেলার ১১টি স্থানে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচিতে আয়োজিত জনসভায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান এ কথাগুলো বলেন।

‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে এ কর্মসূচির আয়োজন করে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব (দুলু)।

আরও পড়ুনতিস্তা বাঁচাতে উত্তরের পাঁচ জেলায় অবস্থান ১৫ ঘণ্টা আগে

তারেক রহমান বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে ৫৪টি অভিন্ন নদী, এই নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা প্রাপ্তি কারও করুণার বিষয় নয়। এটা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রাপ্য। অথচ আমরা কী দেখছি, তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য পাওনা আদায়ের জন্য বাংলাদেশ তথা উত্তরাঞ্চলের মানুষকে আন্দোলন করতে হচ্ছে। এই পানিবণ্টন নিয়ে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে অপ্রতিবেশীসুলভ আচরণ করেই চলেছে।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলের পানির ন্যায্য হিসাববঞ্চিত মানুষেরা দুই দিনব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি করে সারা বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছেন। আমাদের সবার জানা আছে, আজকে প্রায় ৫০ বছর হলো ফারাক্কার অভিশাপ থেকে বাংলাদেশ মুক্তি পায় নাই। তিস্তা বাংলাদেশের আরেকটা অভিশাপ হিসেবে দেখা দিয়েছে। সব আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে আমাদের প্রতিবেশী উজানে গজলডোবায় একটা বাঁধ নির্মাণ করেছে। তিস্তার স্বাভাবিক পানিপ্রবাহকে তারা নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে।’

আরও পড়ুনতিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন: তিস্তায় নেমে ভারতের পানি আগ্রাসনের প্রতিবাদ৫ ঘণ্টা আগে

তারেক রহমান বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশের অপ্রতিবেশীসুলভ আচরণের কারণে আজকে উত্তরাঞ্চলের মানুষ বন্যা, খরাসহ দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। তিস্তার বুকে আজকে ধু ধু বালুচর। একদিকে পানির অভাবে হাজার হাজার কোটি টাকার ফসল নষ্ট হচ্ছে; আবার হঠাৎ করে উজান থেকে পানি ছেড়ে দিচ্ছে। পানির কারণে বন্যায় ভাসিয়ে দিচ্ছে সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি ও কৃষকের আবাদি ফসল। প্রতিবছরে বন্যার কারণে এ রকম ক্ষতি হয়, এমনকি কোনো বছরে তিনবার বন্যা হয়। প্রতিবছর লক্ষ কোটি টাকার ফসলের আর্থিক ক্ষতি হয়।’‌

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ‘৫ আগস্ট আমরা দেখেছি, একটা স্বৈরাচার এই দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছে। এই স্বৈরাচার একবার বলেছিল, ভারতকে যা দিয়েছি তারা সারা জীবন মনে রাখবে। ভারত শুধু পলাতক স্বৈরাচারকেই মনে রাখেনি। এ জন্য তিস্তার পানির ন্যায্য হিসাববঞ্চিত বিক্ষুব্ধ তিস্তাপারের মানুষের প্রশ্ন, পলাতক স্বৈরাচার ভারতকে যা দিয়েছে বা পলাতক স্বৈরাচারকে ভারত যা দিয়েছে, সেই পলাতক স্বৈরাচারকে আশ্রয় দেওয়ার পর ভারত বাংলাদেশকে কিছু দিয়েছে? কিছু দেয় নাই।’

আরও পড়ুনতিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন: ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে গণপথযাত্রা শুরু৭ ঘণ্টা আগে

তারেক রহমান বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সমস্যা সমাধান কিংবা পারস্পরিক স্বার্থ থাকে। নিজ নিজ দেশের স্বার্থ রক্ষা করে প্রতিটি দেশ সমস্যার সমাধান করে। আমরা সবাই জানি, এটি হচ্ছে কূটনীতিক রীতি। কিন্তু খুনি স্বৈরাচার পালিয়ে গিয়েছে ৫ আগস্ট, আমরা দেখেছি জোর করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে রাখতে গিয়ে নিজেদের তাদের সেবাদাসীতে পরিণত করেছিল। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশন ও জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন সম্পূর্ণ অকার্যকর করে রেখেছিল। বাংলাদেশের মানুষ জানে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিরাজমান ফারাক্কার সমস্যার সমাধান হয়নি। উত্তরাঞ্চলের বহুল প্রত্যাশিত তিস্তা চুক্তিও হয়নি। অথচ সব আন্তর্জাতিক রীতিনীতি ভঙ্গ করে এই পলাতক খুনি স্বৈরাচার ট্রানজিট দিয়ে বন্দর ব্যবহারের একতরফা সুবিধা দিয়ে দিয়েছে। এসব চুক্তিতে কোনোরকম ন্যায্যতা রক্ষা করা হয়নি।’

তারেক রহমান আরও বলেন, ‘দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সব বিকল্পকে কাজে লাগাতে হবে। আমরা মনে করি, পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে জাতিসংঘসহ সংশ্লিষ্ট সব আন্তর্জাতিক ফোরামে জোরালোভাবে বাংলাদেশের দাবি তুলে ধরতে হবে। একই সঙ্গে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক আলোচনা শুরু করতে হবে। আন্তর্জাতিক উদ্যোগের পাশাপাশি বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলকে মরুকরণের হাত থেকে বাঁচাতে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। বিএনপি জনগণের সমর্থনে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে অবশ্যই আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের সব রকম উদ্যোগ নেব। পাশাপাশি বর্ষাসহ অন্যান্য উৎস থেকে পানি সংরক্ষণ করার জন্য বাংলাদেশের ভেতরে থাকা তিস্তার ডান পাশের সাতটি নদী ও বাঁ পাশের পাঁচটি শাখা বা উপনদী খনন করা অত্যন্ত জরুরি। এগুলোকে আমাদের খনন করতে হবে।’

আরও পড়ুনতিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন: সর্বস্বান্ত সিরাজুলদের দাবি ভাঙন বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বিএনপির শীর্ষ নেতা বলেন, ‘জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট মাফিয়া সরকার পালিয়ে যাওয়ার পর দেশে জনগণের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ ও সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তৈরি হয়েছে ভোটের অধিকার প্রয়োগ করে জনগণের দায়বদ্ধ একটি সরকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ। কিন্তু গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি কিংবা সরকারের কোনো হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে যাতে খুনি পলাতক স্বৈরাচার ও তার দোসররা পুনর্বাসনের সুযোগ না পায়, সে ব্যাপারে আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের সবাইকে অতীতের মতো ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

তারেক রহমান আরও বলেন, গণতান্ত্রিক দলগুলোর পক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচনের কথা শুনলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিচলিত হয়ে ওঠে। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে একেক রকম বক্তব্য খুনি মাফিয়া চক্রের সামনে বিশৃঙ্খলা তৈরির সুযোগ করে দেয়। এ জন্য বিএনপি বারবার অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তাদের কর্মপরিকল্পনার রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছে।

আরও পড়ুনতিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন আমাদের অস্তিত্বের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে: আমীর খসরু৫১ মিনিট আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র জনগণ র আম দ র সমস য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ব্যবস্থা না নিলে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর আস্থা থাকবে না: ফখরুল

সরকারে বসে সরকারের সব সুযোগ–সুবিধা নিয়ে দল গঠন করলে তা কখনোই মেনে নেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ার করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, তা না হলে জনগণের যে আস্থা আপনাদের ওপর আছে, সেই আস্থা আপনাদের ওপর আর থাকবে না।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে আলোচনার মধ্যে আজ বুধবার এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেছেন বিএনপির মহাসচিব। বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলের উদ্যোগে দুপুরে রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এই আলোচনা সভা হয়।

গত মাসে বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুল বলেছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে না পারলে নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে না। তখন আরেকটি নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন হবে। কেন ওই বক্তব্য দিয়েছিলেন, তা নিয়ে আজকে কথা বলেছেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘কেন বলেছিলাম, তা এখন প্রমাণিত হচ্ছে।’

সরকারের এক উপদেষ্টাকে ইঙ্গিত করে এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘তখন তিনি বলেছিলেন আমি নাকি এক–এগারোর দিকে নজর দিচ্ছি। আমরা এক–এগারোর ভুক্তভোগী। এক–এগারো যারা তৈরি করেছে তারা টিকতে পারেনি মানুষের কাছে। আবারও হুঁশিয়ার করে বলে দিতে চাই যদি আবার কেউ সেই এক–এগারোর কথা চিন্তা করেন, গণতন্ত্রকে বিসর্জন দিয়ে সেই একদলীয় শাসন ফ্যাসিস্ট সরকারের দিকে যেতে চান, তাহলে কখনোই জনগণ তা মেনে নেবে না।’

নতুন যেকোনো রাজনৈতিক দলকে বিএনপি স্বাগত জানাবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ছাত্রসংগঠন ইতিমধ্যে করেছেন, আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। যখনই দল তৈরি করবেন, স্বাগত জানাব। তার অর্থ এই নয় যে আপনারা সরকারে বসে সরকারের সব সুযোগ–সুবিধা নিয়ে আপনারা আপনাদের দল গঠন করবেন। সেটা কখনোই মেনে নেওয়া হবে না।’

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আয়োজিত ‘গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে নতুন ধারার ছাত্ররাজনীতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় উপস্থিত নেতা–কর্মীরা। কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (কেবিআই), খামারবাড়ি, ঢাকা, ১৯ ফেব্রুয়ারি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রকাশিত প্রতিবদেন নিয়ে ঢাকা জেলা পুলিশের ব্যাখা
  • আধিপত্যের বিরুদ্ধে বাংলা ভাষা
  • নির্বাচনের আগে কোনো সংস্কারের প্রয়োজন নেই: জি এম কাদের
  • সংস্কারের নামে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করবেন না: আমীর খসরু
  • নির্বাচনের আগে সংস্কারের প্রয়োজন নেই: জিএম কা‌দের
  • নির্বাচনের আগে সংস্কারের প্রয়োজন নেই: জি এম কাদের 
  • সংস্কারের গল্প বলে কালক্ষেপণের সুযোগ নেই: আমীর খসরু
  • সরকার আদৌ নির্বাচন দেবে কিনা সন্দেহ হচ্ছে: মির্জা ফখরুল
  • ‘সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে মানুষের মনে সন্দেহ ঢুকেছে’
  • ব্যবস্থা না নিলে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর আস্থা থাকবে না: ফখরুল