দুদককে অকার্যকর করার চেষ্টা করা হচ্ছে কি না, প্রশ্ন টিআইবির
Published: 18th, February 2025 GMT
সরকারের ভেতর থেকেই দুর্নীতির সুরক্ষা ও দুদককে অকার্যকর করার চেষ্টা করা হচ্ছে কি না, সে প্রশ্ন তুলেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি আজ এক বিবৃতিতে কক্সবাজারে ভূমি অধিগ্রহণ কেন্দ্র করে আলোচিত দুর্নীতির মামলার আসামি সরকারি কর্মচারী আমিন আল পারভেজকে দুদকের পরিচালক হিসেবে পদায়নের উদ্যোগে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আজ গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ এ উদ্বেগ জানানো হয়।
অভিযুক্ত আমিন আল পারভেজ জানিয়েছেন, দুদকে পরিচালক হিসেবে তাঁর নিয়োগ বাতিল হয়েছে। টিআইবির বিবৃতিতেও সে কথা জানানো হয়েছে।
গণমাধ্যম সূত্র উল্লেখ করে টিআইবির বিবৃতিতে বলা হয়, ২০২০ সালে কক্সবাজারে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ভবন নির্মাণ ও ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্পে ২২ কোটি ২১ লাখ ২৮ হাজার ৮৩৬ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আমিন আল পারভেজের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। তিনি তখন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। দুদকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমিন আল পারভেজ প্রতারণা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে নিজে এবং অন্যদের অবৈধভাবে লাভবান করেছেন।
বিবৃতি টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এমন একজন কর্মকর্তাকে দুদকে পরিচালক পদে নিয়োগ দিতে সরকারের চেষ্টা পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, কোন মানদণ্ডে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে প্রেষণে দুদকেই নিয়োগ দেওয়া হলো? সেটিও এমন একটি সময়ে, যখন দুদক সংস্কার কমিশন সুস্পষ্ট সুপারিশ করেছে যে দুদকের অভ্যন্তরে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চিহ্নিত করে বিভাগীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে চাকরি থেকে বহিষ্কার করে ফৌজদারি বিচারে সোপর্দ করতে হবে। এই সুপারিশের পুরোপুরি বিপরীতে গিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত একজন কর্মকর্তাকে নিয়োগের ঘটনা আসলে কী বার্তা দেয়? উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এমন মনে হওয়া অমূলক নয় যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দুদককে শক্তিশালী করার বদলে সরকারের ভেতর থেকেই দুদককে অকার্যকর করার চেষ্টা করা হচ্ছে!
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাস্তবে দুর্নীতির সুরক্ষা দেওয়ার জন্য প্রশাসনে ষড়যন্ত্র বিদ্যমান রয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত একজন কর্মকর্তাকে দুদকে পদায়নে সরকারের উদ্যোগ একেবারেই অগ্রহণযোগ্য ও একই সঙ্গে গভীর উদ্বেগজনক।
অভিযুক্ত আমিন আল পারভেজ তাঁর বিরুদ্ধে করা অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ছিলাম অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা)। অধিগ্রহণের বিষয়টি জেলা প্রশাসনের রাজস্ব বিভাগের কাজ। তাই এর সঙ্গে কোনোভাবেই আমার সম্পৃক্ততা ছিল না। যদি ধরেও নিই এ কাজে আমি ছিলাম, তবে আমার বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কোনো নোটিশ তো পেলাম না। শুধু পত্রিকার খবরে দেখেছি যে আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। দুদকের কাছে থেকে কোনো নোটিশ পাইনি।’
দুদকের পরিচালক হিসেবে আমিন আল পারভেজের নিয়োগ বাতিল প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘অভিযুক্ত কর্মকর্তার নিয়োগ বাতিলে দুদকের এ সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাতে চাই। তবে আমরা আশা করব, দুদক এই ঘটনাকে একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে গ্রহণ করবে এবং ভবিষ্যতে নিয়োগ ও পদায়ন, বিশেষ করে প্রেষণে নিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্ক থেকে যেকোনো প্রকার প্রভাব থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে নিরবচ্ছিন্ন সাফল্য দেখাতে পারবে। একই সঙ্গে সরকার, বিশেষ করে আমলাতন্ত্র এ ধরনের অপপ্রয়াসের মাধ্যমে দুদক সংস্কারকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করা থেকে বিরত থাকবে।’
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব ভবিষ্যতের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করা, দুর্নীতির সুরক্ষা দিয়ে বা দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্তদের পুরস্কৃত করে নিজেকে বিব্রত করা নয়। তাহলে কর্তৃত্ববাদী মেয়াদের স্বৈরতন্ত্রের সঙ্গে পার্থক্য থাকল কোথায়?’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ট আইব র সরক র র গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে বিয়ের দাবিতে এক নারীর অবস্থান নিয়ে সংঘর্ষ, আহত একজনের মৃত্যু
রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় বিয়ের দাবিতে এক নারীর অবস্থানকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে আহত এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার বিকেলে তাঁর মৃত্যু হয়।
মারা যাওয়া মকবুল হোসেন (৩৮) দুর্গাপুর উপজেলার দেলুয়াবাড়ি ইউনিয়নের আমগ্রাম গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। এর আগে সোমবার বিকেলে ওই এলাকায় বিয়ের দাবিতে এক নারীর অবস্থানকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। নিহত ব্যক্তির স্বজনেরা জানান, হামলার সময় মকবুলের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত লাগে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন।
মকবুল এলাকায় বিএনপির কর্মী হিসেবে পরিচিত। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুজ্জামান আয়নাল ও সদস্যসচিব জোবায়েদ হোসেন একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, আনুলিয়া গ্রামের এক নারী প্রেমের টানে আমগ্রামের ইসমাইল হোসেনের বাড়িতে আসেন। গ্রামবাসী তাঁদের বিয়ের আয়োজন প্রায় সম্পন্ন করেন। এ সময় আমগ্রামের কিছুসংখ্যক লোক এবং পার্শ্ববর্তী তরিপতপুর গ্রামের লোকজন ইসমাইল হোসেনের পক্ষ নিয়ে ওই বিয়ে বন্ধের চেষ্টা করেন। এ নিয়ে আমগ্রামের লোকজনের সঙ্গে তাঁদের দ্বন্দ্ব হয় এবং এক পর্যায়ে পালিয়ে যান। ওই ঘটনার জের ধরে পরের দিন রাত আটটা থেকে সাড়ে আটটার মধ্যে প্রেমিক ইসমাইল হোসেনের পক্ষের লোকজন সশস্ত্র হামলা করে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেন এবং বেশ কয়েকজনকে আহত করেন। আহতদের কেউ কেউ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁদের মধ্যে একজন মঙ্গলবার বিকেলে মারা যান।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে উপজেলা বিএনপি কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নয়। এই হত্যাকাণ্ডে বিরোধী কোনো রাজনৈতিক দলের ইন্ধন বা সম্পৃক্ততা আছে কি না এবং বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কোনো ব্যক্তিবিশেষ জড়িত আছে কি না, তা খতিয়ে দেখার জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে জড়িতদের চিহ্নিত করা হবে।
দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুরুল হুদা মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, একটি পরকীয়ার ঘটনা মীমাংসার জের ধরে এই সংঘর্ষ হয়েছিল। এটা একটা ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা। যে পক্ষের লোক মারা গেল, তারা বিষয়টি মীমাংসা করে দিতে চেয়েছিল। অন্য পক্ষ একই প্রস্তাব দিয়েছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। মামলা করার জন্য তাদের বলা হয়েছে তারা এখনো আসেনি।