কুষ্টিয়ায় অবৈধ যান বন্ধের দাবিতে শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের মানববন্ধন
Published: 18th, February 2025 GMT
কুষ্টিয়ায় অবৈধ তিন চাকার যান ট্রলি ও ডাম্প ট্রাক বন্ধের দাবিতে যৌথভাবে মানববন্ধন করেছে ‘নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’ ও ‘বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতি’ নামে দুটি সামাজিক সংগঠন। সংগঠন দুটির এই দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ শতাধিক মানুষ এ কর্মসূচিতে অংশ নেন।
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস মোড়ে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। দুপুর ১২টায় মানববন্ধন শেষ হয়। এতে চৌড়হাস মুকুল সংঘ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। এ সময় মানববন্ধনকারীরা ‘অবৈধ গাড়ি আর নয়, সুস্থ–সবল জীবন চাই’, ‘অবৈধ যান বন্ধ করো, করতে হবে’, ‘পড়তে এসেছি, মরতে না’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) কুষ্টিয়া জেলা শাখার সভাপতি কে এম জাহিদের সভাপতিত্বে মানববন্ধন কর্মসূচিটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতি কুষ্টিয়া জেলা শাখার সভাপতি শাহারিয়া ইমন রুবেল।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সড়কে বেপরোয়াভাবে চলাচলকারী অবৈধ যানের ধাক্কায় ও চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা প্রতি মাসেই বেড়ে চলেছে। এ ছাড়া এসব যানের দুর্ঘটনায় অনেকে গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করছেন, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। প্রশাসনকে বারবার অনুরোধ করেও কোনো সুরাহা হচ্ছে না। এই যানগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিত গতিতে নিবন্ধনহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকের দ্বারা চালিত হয়। ফলে জনবহুল স্থান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে পথচারী ও শিক্ষার্থীরা এসব যানের দ্বারা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।
গত রোববার ফুলতলা এলাকায় প্রতীতি বিদ্যালয়ের সামনে ওই বিদ্যালয়ের এক ছাত্র ট্রলির ধাক্কায় নিহত হয়। এ ঘটনায় তার দাদি গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। দৌলতপুর উপজেলায় একই ধরনের যান আরেক স্কুলশিক্ষার্থীকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলে তারও মৃত্যু ঘটে।
বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতি কুষ্টিয়া জেলা শাখার সভাপতি শাহারিয়া ইমন রুবেল বলেন, ‘আমাদের দাবি, সবার নিরাপদ চলাফেরার জন্য সূর্যোদয়ের পর থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত ডাম্প ট্রাক, অবৈধ ট্রলি, নছিমন, করিমন শহরে ও মহাসড়কে চলাচল বন্ধ করে দিতে হবে।’
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া মুকুল সংঘ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী শায়লা আক্তার বলে, ‘দুই দিন আগে ছোট্ট এক শিশুর প্রাণ গেছে। আমরা শিক্ষার্থীরা নিরাপদ থাকতে চাই। আমরা পড়তে আসি, মরতে না।’
দশম শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া নুসরাত বলে, ‘সব সময় আতঙ্কে থাকতে হয়, নিরাপদে স্কুলে যেতে বা বাড়ি ফিরতে পারব কি না! এই সড়কে খুবই দ্রুতগতিতে অবৈধ যানগুলো চলে। তাদের না আছে লাইসেন্স, না আছে চালকের লাইসেন্স। তারা বেপরোয়াভাবে চলে।’
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন নিসচার কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নুরুন্নবী বাবু, বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতি কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অঞ্জন কৃষ্ণ শীল শুভ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) সভাপতি ইমরান খান, কুষ্টিয়া স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সাইদুল ইসলাম টিপু, কুষ্টিয়া জেলা কৃষক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আমজাদ হোসেন বিদ্যুৎ প্রমুখ।
কুষ্টিয়া শহরের পাশে গড়াই নদ। এই নদের বিভিন্ন জায়গায় পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বালু বিক্রির জন্য ইজারা দেওয়া হয়। সেসব বালু ট্রলি ও ডাম্প ট্রাকে দিনের বেলা শহর ও মহাসড়ক দিয়ে বেপরোয়াভাবে চলে। এতেই ঘটে দুর্ঘটনা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অব ধ য ন ন র পদ র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
‘গাজা যুদ্ধ টিকিয়ে রেখে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলো সুবিধা নিচ্ছে’
ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধ টিকিয়ে রেখে সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলো সুবিধা নিচ্ছে। রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে ‘গাজায় নারী শিশুসহ নৃশংস হত্যাযজ্ঞ’ বন্ধের দাবিতে মানববন্ধনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম এ কথা বলেন।
সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, গাজার যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হচ্ছে নারী ও শিশু। জাতিসংঘ কেন এই যুদ্ধ বন্ধ করতে সফল হচ্ছে না? জাতিসংঘে যারা অর্থ সহায়তা দেয়, তারাই যুদ্ধ বাঁধিয়ে রেখেছে। গাজার যুদ্ধ শত বছরের সমস্যা। এই সমস্যাটা টিকিয়ে রেখে সাম্রাজ্যবাদ পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলো সুবিধা নিচ্ছে। পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধ টিকিয়ে রাখছে। যারা মানবতার পক্ষে তাদের প্রতি আহ্বান জানাব, আপনারা যুদ্ধকে না বলার জন্য শক্ত জনমত গড়ে তুলুন।
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, অ্যাকশন এইডের মৌসুমী বিশ্বাস, অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড নেটওয়ার্কিংয়ের পরিচালক জনা গোস্বামী, গণশক্তির নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, গাজা ও রাফায় ফিলিস্তিনের নিরস্ত্র জনগণের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর সামরিক অভিযান, অবরোধ ও গণহত্যা ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নিয়েছে। শিশু, গর্ভবতী নারী, বৃদ্ধ ও সাধারণ মানুষদের নির্বিচারে হত্যার মাধ্যমে ইসরায়েলি বাহিনী মানবতাবিরোধী অপরাধের সকল সীমা অতিক্রম করেছে। ইসরায়েলের সঙ্গে সকল ধরনের আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিতে হবে। বাংলাদেশি পাসপোর্টে একসেপ্ট ইসরায়েল (ইসরায়েল ব্যতীত) পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধে আন্তর্জাতিক জনমত গঠনের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ, ওআইসি ও অন্যান্য ফোরামে সক্রিয় কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে। গাজা ও রাফায় মানবিক সহায়তা পাঠানো এবং প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক সহায়তায় অংশগ্রহণের বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া আরব বিশ্বের স্থায়ী শান্তি সম্ভব নয়- এই অবস্থান বাংলাদেশকে আরও জোরালোভাবে তুলে ধরতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মাধ্যমে বিশ্ব জনমত গঠনে নেতৃত্ব দেওয়ার কূটনৈতিক প্রয়াস নিতে হবে। ইসরায়েলি বাহিনীর মানবতাবিরোধী অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের ব্যবস্থা করতে বাংলাদেশ সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, এ মুহূর্তে ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়ানো শুধু একটি রাষ্ট্রের প্রতি সহানুভূতি নয়, বরং বৈশ্বিক মানবতা রক্ষার সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ।