মহিলা কলেজের অধ্যক্ষের বদলির আদেশ বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ
Published: 18th, February 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জ শহরের সরকারী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদের বদলির আদেশের বাতিলের দাবিতে এবার সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারী) বেলা সাড়ে এগারোটায় ক্লাশ বর্জন করে শহরের চাষাঢ়ায় সান্তনা মার্কেটের সামনে সড়কে অবস্থান নিয়ে ঘন্টা ব্যাপি বিক্ষোভ সমাবেশ করেন শতাধিক শিক্ষার্থী।
এসময় তারা সড়ক অবরোধ করলে নগরীর প্রধান সড়ক সহ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে সব ধরণের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। এতে ভোগান্তিতে পড়েন বিভিন্ন গণপরিবহনের যাত্রীরা।
পরে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এবং সদর থানা পুলিশের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ তুলে নিয়ে কলেজে ফিরে যান।
সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা এর আগেও আমাদের কলেজের অধ্যক্ষের বদলির আদেশ বাতিলের দাবিতে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি আন্দোলন করেছিলাম।
ওইদিন আমরা কলেজের প্রায় ৯০০ শিক্ষার্থী নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে অধ্যক্ষ স্যারের বদলির আদেশ বাতিলের দাবিতে স্মারকলিপি দিয়ে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেই। কিন্তু কতৃপক্ষ এতে কোন কর্ণপাত করেনি।
তাই আজ আমরা সড়ক অবরোধ করে অধ্যক্ষ স্যারের বদলির আদেশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছি। আমাদের দাবি যে পর্যন্ত আদায় না হবে সে পর্যন্ত আমরা আন্দোলনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাবো।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, আমাদের কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ স্যার গত জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দলনের সময় শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে অনুপ্রাণিত এবং উৎসাহ দিয়েছেন।
অধ্যক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে তিনি এই কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষার মান অনেক উন্নত করেছেন। শিক্ষার্থীদের সুযোগ সুবিধাও বেড়েছে। এই কলেজে তার নানা অবদান রয়েছে। তাই সকল শিক্ষার্থী চায় তিনি যেন অধ্যক্ষের পদে বহাল থাকেন। অবিলম্বে অধ্যক্ষের বদলির আদেশ প্রত্যাহার করতে হবে।
এর আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি একই দাবিতে নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লাশ ও পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করে কলেজ অধ্যক্ষের বদলির আদেশ বাতিল করে পূর্ণবহালের দাবিতে ৪৮ ঘন্টার আলটিমেটাম দেন।
পরে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপিও দেন তারা। ৪৮ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পর অধ্যক্ষের বদলির আদেশ বাতিল না হওয়ায় ফের শহরের চাষাঢ়ায় গোল চত্বরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ন র য়ণগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
লাশ পুতে রেখে জায়গাটি ঘুরে ঘুরে পাহারা দেয় ইয়াসিন
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলার মিজমিজিতে স্ত্রী-সন্তানসহ তিন হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন গ্রেপ্তার ইয়াছিন। বুধবার পুলিশ চার দিনের রিমান্ডের পর তাকে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মাদ শামসুর রহমানের আদালতে হাজির করে। এ সময় ১৬৪ ধারায় হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে ইয়াছিন জবানবন্দী দিয়েছেন বলে আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. কাইউম খান জানিয়েছেন।
স্ত্রী লামিয়া আক্তার, চার বছরের সন্তান আব্দুল্লাহ লাবীব ও লামিয়ার বড় বোন স্বপ্না আক্তারকে ইয়াছিন একাই হত্যা করেছেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মাদ শাহীনুর আলম এ তথ্য জানিয়ে বলেন, হত্যার পর লাশ বস্তায় ভরে বাড়ির পাশের রাস্তায় ইট-সুরকির নিচে চাপা দেন তিনি।
ইয়াসিনকে গ্রেপ্তারের পর আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলেও চার দিন জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গতকাল বুধবার তাকে জবানবন্দি দেওয়ার জন্য আদালতে পাঠায় পুলিশ। জবানবন্দি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর আগে সোমবার বাড়ির কাছের একটি পুকুর থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা বটি উদ্ধার করে পুলিশ। একই পুকুর থেকে রক্তমাখা জামা-কাপড় ভরা একটি ব্যাগও উদ্ধার করা হয়েছে।
ওসি মোহাম্মাদ শাহীনুর আলম বলেন, ইয়াসিনের স্ত্রী লামিয়া, তাদের সন্তান আব্দুল্লাহ ও স্বপ্নার লাশ গত ১১ এপ্রিল উদ্ধার করা হয়। একই দিন গ্রেপ্তার করা হয় ইয়াছিনকে। তাকে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলেও আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। জিজ্ঞাসাবাদে ইয়াছিন পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন, তিনি একাই স্ত্রী সন্তানসহ তিনজনকে হত্যা করেছেন। মাদকের টাকার জন্য উচ্ছৃঙ্খলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে সৎ মায়ের মামলায় ইয়াছিনকে গত ২৭ রমজানের দিন গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ঈদুল ফিতরের দুদিন আগে ইয়াছিন জামিনে ছাড়া পান। পুলিশ জানিয়েছে, তার স্ত্রী লামিয়া, সন্তান আব্দুল্লাহ এবং স্বপ্না মিজমিজি পুকুরপাড় এলাকার আক্তার হোসেনের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। ইয়াছিন জামিনে আসার পর গত ৮ এপ্রিল বাসায় যান। এ সময় তাদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। এ সময় লামিয়ার বোন মানসিক রোগী স্বপ্না বটি নিয়ে তেড়ে আসেন।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, স্বপ্নার কাছ থেকে ইয়াছিন বটিটি কেড়ে নিয়ে স্ত্রী লামিয়ার গলায় কোপ দিলে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ সময় স্বপ্না চিৎকার দিলে তাকেও কুপিয়ে গলা, হাত ও পা বিচ্ছিন্ন করেন। শিশু আব্দুল্লাহর গলায় থাকা তাবিজের সুতা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন তাকে। এরপর লামিয়া ও স্বপ্নার মাথা ও হাত-পা একটি বস্তায় এবং দেহ দুটি আরেকটি বস্তায় ভরে কাথা কম্বলে পেঁচিয়ে নেয়। পরে আব্দুল্লাহরসহ তিন লাশ রাস্তার পাশে ইট-সুরকির নিচে চাপা দেন।
পুলিশ জানিয়েছে, লামিয়া ও স্বপ্নার রক্তমাখা জামা-কাপড় একটি ব্যাগে ভরে সেটিসহ বটি বাড়ির পাশে পুকুরে ফেলে দেন। এরপর অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় লামিয়ার বাসায় ছিলেন। ঘুরে ঘুরে লাশ চাপা দেওয়া স্থান পর্যবেক্ষণে রাখেন। গত ৮ এপ্রিল রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
ওসি বলেন, আদালত ইয়াছিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড দিলেও হত্যার দায় স্বীকার করায় চতুর্থ দিনেই তাকে আদালতে জবানবন্দি দিতে পাঠানো হয়েছে। তিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় লামিয়া ও স্বপ্নার বোন মুনমুন আক্তার বাদী হয়ে গত ১১ এপ্রিল হত্যা মামলা করেন। সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় করা মামলায় লামিয়ার স্বামী ইয়াছিনকে প্রধান আসামি করা হয়। তার বাবা মো. দুলাল ও বোন শিমুকেও আসামি করা হয়েছে।