এবার বেসামরিক বিমান চলাচল পরিবহনের কর্মীদের ছাঁটাই শুরু করছেন ট্রাম্প
Published: 18th, February 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় বেসামরিক বিমান চলাচল প্রশাসনের (এফএএ) কর্মী ছাঁটাই কার্যক্রম শুরু করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। এ জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের সরকারের দক্ষতা বৃদ্ধিসংক্রান্ত বিভাগের (ডিওজিই) সদস্যরা এফএএর সদর দপ্তরে যাচ্ছেন।
গত রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে মার্কিন পরিবহনমন্ত্রী সোন ডাফি বলেছিলেন, ‘ডিওজিই কর্মীরা এফএএ সদর দপ্তরে যাবেন। তাঁরা সেখান থেকে বর্তমান ব্যবস্থার প্রাথমিক তথ্য নেবেন, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রকেরা বর্তমান নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার কোনটি পছন্দ আর কোনটি অপছন্দ করেন, সে সম্পর্কে জানবেন এবং কীভাবে আমরা একে নতুন, আরও ভালো ও উন্নত এবং নিরাপদ ব্যবস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে পারি, তা ভেবে দেখবেন।’
এবারের নির্বাচনী প্রচারের সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারি ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ভোটে জয়ের পর প্রতিশ্রুতি পূরণে কাজে নেমে পড়েন তিনি। সরকারি ব্যয় হ্রাস কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গঠন করেন ডিওজিই। দপ্তরটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ককে।
অভিযোগ উঠেছে, ডিওজিইর কর্মকর্তারা সরকারি তথ্যভান্ডারে প্রবেশ করছেন এবং বিতর্কিত উপায়ে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মীসংখ্যা কমানোর উদ্যোগ নিচ্ছেন।
এফএএ থেকে যাঁদের ছাঁটাই করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাঁদের মধ্যে শতাধিক সদ্য নিয়োগ পাওয়া কর্মী রয়েছেন বলে জানা গেছে। অথচ কর্মীদের ওপর কাজের অতিরিক্ত ভার কমিয়ে আনতে সম্প্রতি এফএএ কর্তৃপক্ষ নতুন কর্মী নিয়োগ দিয়েছিল।
বেশ কয়েক বছর ধরেই এফএএ কর্মীদের ওপর কাজের অতিরিক্ত চাপ এবং বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা (এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেম) দীর্ঘস্থায়ী কর্মী–সংকটে পড়তে চলেছে বলে প্রতিষ্ঠানটির ভেতর থেকে সতর্ক করা হচ্ছিল।
আরও পড়ুনআরও প্রায় ১০ হাজার কর্মীকে ছাঁটাই করলেন ট্রাম্প ও মাস্ক১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫কর্মী ছাঁটাইপ্রক্রিয়া নিয়ে শনিবার একটি বিবৃতি দিয়েছে প্রফেশনাল এভিয়েশন সেফটি স্পেশালিস্ট (পিএএসএস) ইউনিয়ন। এতে বলা হয়েছে, ‘কর্মদক্ষতা বা আচরণের ওপর ভিত্তি করে বা কোনো কারণ দেখিয়ে এভাবে প্রশাসন এফএএর প্রবেশনারি কর্মীদের ছাঁটাইয়ের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে আমরা উদ্বিগ্ন ও হতাশ।’
কর্মী ছাঁটাইয়ের নোটিশ এফএএর নিজস্ব সরকারি যোগাযোগব্যবস্থায় নয় বরং তার বাইরের কোথাও থেকে আসতে পারে বলেও ওই বিবৃতিতে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়।
ই–মেইলে থাকা তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডের তথ্য জমা রাখতে ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এফএএর নিজস্ব যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন এমন একটি সময়ে এফএএ থেকে কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক বিমান পরিবহনব্যবস্থার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আরও পড়ুনট্রাম্পের স্বেচ্ছা পদত্যাগ কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন ৭৫ হাজার সরকারি কর্মী১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫মাত্র সপ্তাহ তিনেক আগে গত ২৯ জানুয়ারি রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির রোনাল্ড রিগ্যান ওয়াশিংটন ন্যাশনাল বিমানবন্দরের কাছে মাঝ আকাশে একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজের সঙ্গে একটি সামরিক হেলিকপ্টারের সংঘর্ষ হয়। দুটি আকাশযানই বিধ্বস্ত হয়ে সব আরোহী প্রাণ হারান। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৬৪ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ৩ জন সেনাসদস্য।
পরে তদন্তে জানা যায়, ব্যস্ততম ওই বিমানবন্দরে দুর্ঘটনার দিন একজন মাত্র কন্ট্রোলার বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টার উভয় ধরনের আকাশযানের ওঠানামা নিয়ন্ত্রণ করছিলেন। ওই দুর্ঘটনা নিয়ে তদন্ত এখনো শেষ হয়নি।
এফএএ প্রতিদিন গড়ে ৪৫ হাজার ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে।
পিএএসএস ইউনিয়ন কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, কঠোর এই ব্যবস্থা কর্মীদের ওপর কাজের চাপ আরও বাড়াবে এবং আগে থেকেই কাজের চাপে পিষ্ট কর্মীদের ওপর নতুন দায়িত্ব পড়বে।
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কর্মচারীদের স্বেচ্ছায় পদত্যাগ নিয়ে ট্রাম্পের প্রস্তাব স্থগিত করলেন আদালত০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রে মাঝ আকাশে উড়োজাহাজ-হেলিকপ্টার সংঘর্ষ ৩০ জানুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর ম দ র ওপর ব যবস থ র কর ম সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
আনন্দের বন্যা বইছে জুলেখার পরিবারে
মায়ের কোলে থাকা সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুকে কখনও কোলে নিচ্ছেন প্রতিবেশীরা, কখনও শিশুটির ছোট বোন। আবার কেউ কেউ কোলে নিয়ে আদর করছে শিশুটিকে, কেউ আবার সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া-চাইছেন শিশুটির জন্য। ঝিনাইদহের হরিনাকুণ্ডু উপজেলার দুর্লভপুর উত্তরপাড়া গ্রামে কৃষক আব্দুর রাজ্জাকের বাড়িতে তাঁর নাতিকে নিয়ে এমনই আনন্দের বন্যা বইছে।
মঙ্গলবার সকালে ওই বাড়িটিতে গিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র। বাংলা নববর্ষের প্রথম প্রহরে সকাল পৌনে ৬টার দিকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে মা জুলেখা বেগমের কোল আলোকিত করে জন্ম নেয় ফুটফুটে ছেলে শিশু।
জানা যায়, ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার সিদ্ধি গ্রামের রাশেম মণ্ডলের স্ত্রী জুলেখা বেগম। জুলেখা বেগম অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন আর এখন তিনি গৃহিণী। তাঁর স্বামী এইচএসসি পাস করে বর্তমানে ব্র্যাক ব্যাংক কুষ্টিয়া শাখায় চাকরি করেন। ২০০৫ সালে তাদের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়েছিল। মেয়ের বাবার বাড়ি ঝিনাইদহের হরিনাকুণ্ডু উপজেলার দুর্লভপুর উত্তরপাড়া গ্রামে আর ছেলের বাড়ি শৈলকুপা উপজেলার সিদ্ধি গ্রামে। স্বামীর সঙ্গে কুষ্টিয়া শহরে থাকতেন জুলেখা। পরে সন্তানসম্ভবা হওয়ার কিছুদিন পর ঝিনাইদহের হরিনাকুণ্ডু উপজেলার দুর্লভপুর উত্তরপাড়া গ্রামে বাবা আব্দুর রাজ্জাকের বাড়িতে চলে আসেন জুলেখা।
গর্ভাবস্থায় বাবার বাড়িতে থাকার সময় নিয়মিতই সেখানে আসতেন জুলেখার স্বামী রাশেম মণ্ডল। খোঁজখবর নিতেন স্ত্রীর। গর্ভের সন্তানকে ভালো রাখতে যত্নের কমতি রাখেননি জুলেখা। তাঁর স্বামীও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, নিয়মিত চেকআপ করানোসহ অন্যান্য দিকে নজর রাখতেন। তাঁর কোনো শারীরিক জটিলতাও দেখা দেয়নি।
রোববার রাত ১২টার পর থেকে প্রসব বেদনা শুরু হয় জুলেখা বেগমের। এরপর তাঁর মা-বাবাসহ অন্যান্য আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা পাখি ভ্যানযোগে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে ওই রাত ২টার দিকে নিয়ে আসেন ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে। সে সময় হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সরা তাঁর শারীরিক খোঁজখবর নেন। এরপর সকাল পৌনে ৬টার দিকে হাসপাতালের ‘ই ও সি’ বিভাগে নরমাল ডেলিভারিতে জুলেখা বেগম জন্ম দেন এক ফুটফুটে ছেলে শিশু। জন্মের পরপরই হাসপাতাল থেকে আজান শোনানো হয় শিশুটিকে। তার ওজন হয়েছিল দুই কেজি পাঁচশ গ্রাম। এটি জুলেখা বেগমের তৃতীয় সন্তান। তাঁর বড় ছেলে নয়ন মণ্ডল এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে আর মেয়ে রাবেয়া খাতুনকে এখনও স্কুলে ভর্তি করাননি।
সদর হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. মার্ফিয়া খাতুন বলেন, নরমাল ডেলিভারিতে শিশুটির জন্ম হয়েছে। শিশু ও মা শারীরিকভাবে সুস্থ আছে, কোনো জটিলতা নেই। এর আগেও এ নারীর নরমাল ডেলিভারিতে দুটি সন্তানের জন্ম হয়েছিল। আমরা হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছাড়পত্র দিয়েছি। তবে বিশেষ করে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে, প্রথম প্রহরে এই শিশুটির জন্ম হওয়াতে আমরা খুবই খুশি, শিশুটি যেন বড় হয়ে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারে সেই প্রত্যাশা রইল।
এদিকে সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুটির মা জুলেখা বেগম বলেন, বাচ্চা হওয়ার কথা ছিল মে মাসের ৫ তারিখে। তবে একটু আগে হলেও সম্পূর্ণ সুস্থ থাকায় আমি খুবই খুশি। হাসপাতালের ডাক্তার নার্স সবাই খুবই আন্তরিক ছিল। তারা সবসময় খোঁজখবর নিয়েছে। জন্মের পর থেকেই বুকের দুধ খাচ্ছে সন্তানটা। সন্তান পেটে আসার পর থেকেই আমি এবং আমার স্বামী খুবই সতর্ক থাকতাম।
তিনি আরও জানান, আমাদের তিন সন্তান। বড় ছেলে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে, মেয়েটার বয়স ছয় বছর, ওকে স্কুলে ভর্তি করাব। এরপর ইচ্ছা ছিল একটা ছেলে সন্তান হবে। মেয়েটা জন্মের ৬ বছর পর আল্লাহ আমাদের ইচ্ছা পূরণ করেছেন। বিশেষ করে বাংলা নববর্ষের মতো বিশেষ একটি দিনে আমার সন্তান হয়েছে, আমিসহ পরিবারের সবাই খুবই খুশি। এখন আমাদের প্রত্যাশা তিন সন্তানকেই যেন লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলতে পারি। ছেলেটিকে প্রথম কোলে নিয়েছিল আমার ফুফু অর্থাৎ ছেলেটির নানি। তিনি প্রথম সাদা গেঞ্জি কিনে দিয়েছেন।
ছেলের বাবা রাশেম মণ্ডল বলেন, খুবই খুশি আমরা। বিশেষ করে নববর্ষের দিনে সন্তান হওয়াতে।
শিশুটির নানি সুন্দরী খাতুন বলেন, আমরা খুবই খুশি এমন ফুটফুটে নাতি ছেলে পেয়ে। নাতি ও আমার মেয়ে সুস্থ আছে। আল্লাহ যেন আগামী দিনেও এদের ভালো রাখে।
এদিকে শিশুটির নানা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ আনন্দ আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। নাতি-নাতনি যে কী আদরের জিনিস, সেটা যার আছে সেই ভালো জানে। সদ্য ভূমিষ্ঠ নাতিকে কোলে নিয়েছি, মনে হচ্ছে আল্লাহ যেন আমাদের বড় একটি উপহার দিয়েছে। নাতনিটা মাঝেমধ্যে এসে বলছে, নানা তুমি কি ভাইয়াকে বেশি আদর করবা। তখন বলছি, তোরা যে আমার কলিজার টুকরা। তোরা দুই ভাই ও বোন সবাই আমার কাছে সমান। তোদের কাউকেই আদরের কমতি রাখব না।
এদিকে শিশুটি জন্মের সময় সদর হাসপাতালে ছিলেন সম্পর্কে শিশুর নানি সালেহা খাতুন। তিনি বলেন, রাতে হাসপাতালে আনার সময় অনেক চিন্তায় ছিলাম। শেষমেশ হাসপাতালে সবার আন্তরিকতায় ছেলে সন্তানের জন্ম হলো। আমরা খুবই খুশি, আনন্দিত।
ছোট শিশুটিকে দেখতে এসে প্রতিবেশীরা বলেন, জুলেখার কোলজুড়ে একটি সুস্থ সন্তান জন্ম নিয়েছে। এতে আমরা খুবই খুশি। আল্লাহ যেন তাদের ভালো রাখে।