‘হামাক নদী কোণা বান্দি দেও। তিস্তার সঙ্গে হামার ঘর, নদী কোণা বান্দলে হামার ঘর কোণা বাঁচি যাবে বাপ। হামার ভিটা মাটি নাই ঘর কোণা ছাড়া। হামরা রিলিফ চাই না’ কথাগুলো এভাবে বলছিলেন কুড়িগ্রামের উলিপুরে থেতরাই ইউনিয়নের তিস্তা নদীর পাড়ের বাসিন্দা মনোয়ারা বেওয়া।

প্রান্তিক পর্যায়ের এই নারী জানান, তিস্তার করাল গ্রাসে গত ৭ বছরে তার বাড়ি ভিটা ভেঙেছে ২৩ বার। সর্বশেষ ২০২১ সালের মার্চে ভেঙেছে বর্তমান বাড়িভিটার অর্ধেক। সেই বাড়িভিটা তিস্তার গর্ভে বিলীন হওয়ার শোকে তার স্বামী দুশ্চিন্তায় স্ট্রোক করে মারা যান। 

দুই ছেলে ও এক মেয়ে থাকলেও কর্মসূত্রে তারা ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করেন। বর্তমানে ভিটেমাটিটুকু ছাড়া সহায় সম্বলহীন হয়ে পড়েছেন এই নারী। স্বামী হারানোর ৩ বছরেও কপালে জোটেনি বিধবা ভাতা। 

মঙ্গলবার বাড়ির পাশে তিস্তা বাঁচাও আন্দোলনের অবস্থান কর্মসূচিতে নীরবভাবে তাকিয়ে বুকভরা আশা নিয়ে তিনি আবদার করেন তিস্তার ভাঙনরোধে তার বাড়ির ভিটেটুকু রক্ষা করার। 

শুধু মনোয়ারা নন, তার মতো আরো দুই নারী তিস্তা বাঁচাও আন্দোলনকে ঘিরে নতুন করে স্বপ্ন বুনছেন। তাদের চাওয়া তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা ও মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ঘরবাড়িসহ ফসলি জমি রক্ষা পাবে।

খোদেজা বেগম নামের এক নারী বলেন, খালি শুনি নদী খনন করে, কিন্তু নদী তো খনন করে না। হামার প্রতি বছরে ভাঙনত ধানের জমি, কালাই (ডাল) জমি তিস্তা ভাঙি নিয়া যায়। হামরা চাই নদী বান্দি দেওক হামাক।

আরেক নারী হাজরা বেওয়া বলেন, বিয়া হয়ার ৬০ বছর হইল। আগত নদী কি আছিল, এল্যা নদীত পানিয়ে নাই। চরত হাঁটু পানি ভাঙি বাজার যাওয়া নাগে, কোন জাগাত খালি বালু। হামরা নদীত পানি চাই।

প্রসঙ্গত, তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা ও মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন দাবিতে কুড়িগ্রামের রাজারহাট ও উলিপুরের দুটি পয়েন্টে দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে অবস্থান কর্মসূচি। অবস্থান কর্মসূচিতে গতকাল থেকেই বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন তিস্তাপাড়ের হাজার হাজার মানুষ। 

আন্দোলনকারীদের দাবি, দীর্ঘদিন থেকে ঝুলে থাকা তিস্তা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে রক্ষা হবে তাদের ঘরবাড়িসহ ফসলি জমি। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা বিভিন্নভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানান তিস্তা পাড়ের বাসিন্দারা। অনেকেই গতকাল থেকে এ অবস্থান কর্মসূচিতে অবস্থান করলেও, আজ সকাল থেকে যোগ দিচ্ছেন অনেকে। এছাড়াও দুটি পয়েন্ট মিলে প্রায় ৭০ হাজার মানুষের জন্য সকাল ও দুপুরের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

এদিকে জেলার উলিপুর উপজেলার থেতরাই এলাকায় তিস্তার অববাহিকায় দ্বিতীয় দিনের অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

নব্বইয়ের নস্টালজিয়া উসকে দেন প্রিন্স

সিনেমার গান
ভক্তদের মতে, নব্বইয়ের দশকের অডিও অ্যালবামের রাজপুত্র ছিলেন প্রিন্স মাহমুদ। তাঁর সুরারোপিত প্রায় প্রতিটি গানেই বুঁদ ছিলেন ভক্ত-শ্রোতারা। কিন্তু ওই সময় সিনেমার গানে পাওয়া যায়নি তাঁকে। প্রস্তাব পেলেও করা হয়ে ওঠেনি। কারণ জানতে চাইলে প্রিন্স মাহমুদ বলেন, ‘অডিওর গান নিয়ে খুব ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। ছবির গানের জন্য বেশি মনোযোগ দিতে হয়। অডিওর ব্যস্ততার কারণে সেই মনোযোগ দিতে পারিনি।’

মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’ সিনেমার মাধ্যমে বড় পর্দার সংগীতে অভিষেক হয় প্রিন্স মাহমুদের। ২০০৯ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিতে ‘জেলখানার চিঠি’ গানটিতে সুর করেন। এরপর ২০১৫ সালে অনিমেষ আইচের ‘জিরো ডিগ্রি’তে ‘প্রেম ও ঘৃণা’ গানটিও সুর করেন। মাঝে বিরতি শেষে প্রিন্স আবার সিনেমার গানে ফেরেন ২০২৩ সালে। হিমেল আশরাফ পরিচালিত ‘প্রিয়তমা’ সিনেমার ‘ঈশ্বর’ গানটি মুক্তির পর ব্যাপক সাড়া ফেলে। এটি ছিল মূলধারার বাণিজ্যিক ছবিতে তাঁর প্রথম গান। ২০২৪ সালে একই পরিচালকের রাজকুমার ছবির ‘বরবাদ’ ও ‘মা’ গান দুটির কথা, সুর ও সংগীতায়োজন করেন তিনি। এ গান দুটিও আলোচিত হয়।  

গান শুনে যেন দর্শক সিনেমা দেখার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন, সেটাই লক্ষ্য থাকে প্রিন্স মাহমুদের। তাঁর ভাষ্যে, ‘হিমেল আশরাফ আমাকে এসে বললেন, ভাইয়া, প্রিয়তমার জন্য আপনাকেই দরকার। আপনি ভালো করতে পারবেন। আর ছবির কাহিনিকার প্রয়াত ফারুক হোসেনের কথা বলেন। ফারুকের প্রথম সিনেমার জন্য জেমস ভাইয়ের গান করেছিলাম। যেটা পরে হয়নি। কাজ করার সময় ফারুক ঠিক এভাবেই বলতেন, ‘ভাইয়া, এই গান আপনি ছাড়া কেউ বানাতে পারবে না। তখন কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়েই তাঁর প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাই। খেয়াল করলে দেখবেন, “ঈশ্বর” গানের মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর সিনেমার গান ঠিক আগের মতো আলোচনায় চলে আসে। একটা সময় গান এমন মায়া ছড়াত যে গানের জন্য মানুষ হলে আসত। এই মায়া ছড়াতে চেয়েছিলাম। ঠিক তা–ই হয়েছে।’

এবারও চাঁদরাতে গান আসবে। সেটাও জংলি সিনেমার। এর মধ্যে বাবা-বাচ্চাকে নিয়ে “মায়াপাখি” নামে একটি গান করেছি। এটি ষাট-সত্তর দশকের আবহের গান। মাহতিম সাকিব গেয়েছেন। অবন্তী সিঁথিও আলাদাভাবে গেয়েছে। বাবা-মা তাঁর বাচ্চাকে বুকে জড়িয়ে যেন গানটি গাইতে পারেন, সেভাবেই তৈরি করেছি। হাবিবের জন্যও ভীষণ মায়াময় গান করেছি। চাঁদরাতে প্রকাশ পেতে পারে এটি।প্রিন্স মাহমুদ

গান জনপ্রিয়তা পাবে কি না, এ নিয়ে কখনো ভাবেন না তিনি। শ্রোতার মনে এভাবে মায়া জাগাতে পারাকেই সার্থকতা বলে মনে করেন।

‘জংলি’ প্রিন্স মাহমুদ মিউজিক্যাল
২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রিন্স মাহমুদের মিক্সড অ্যালবাম প্রকাশ পেয়েছে। প্রায় আট বছর পর জংলি সিনেমার জন্য অ্যালবাম করলেন তিনি। এতে চারটি গানের কথা ও সুর তাঁর করা। এ প্রসঙ্গে এই সুরকার বলেন, ‘ছবির গল্পটা ভালো লেগেছে, পরিচালক এম রাহিম-সিয়াম আহমেদের আগের একটি ছবিতে কাজ করার কথা থাকলেও করা হয়ে ওঠেনি। তাই এবার করলাম। তা ছাড়া তাঁরা আমাকে বললেন, এটা “প্রিন্স মাহমুদের সুরে” হবে। আমরা নব্বই দশকে যেমন আপনার গান পেয়েছি, ওইভাবে আপনাকে ছবিতে পরিচয় করাতে চাই।” গল্প ভালো লাগল। সুন্দর সুন্দর গান ব্যবহারের সুযোগ আছে। তাই রাজি হয়ে যাই। দুটো গানে সেই মায়া ছড়ানো আছে। ভালোলাগার সম্ভাবনা আছে।’

প্রিন্স মাহমুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ