স্থানীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণ নিয়ে যা বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
Published: 18th, February 2025 GMT
বিশ্বে গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্টদের যে অবস্থা হয়েছে, আওয়ামী লীগেরও সে রকম অবস্থা হওয়া উচিত বলে মনে করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি বলেন, গণহত্যা যে আওয়ামী লীগ ঘটিয়েছে, তা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। সেই জায়গা থেকে দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগের একধরনের শাস্তি নিশ্চিত হওয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলনের শেষ দিন আজ মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা।
তবে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে উদ্ধৃত করে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, যাঁরা আওয়ামী লীগ করেছেন, কিন্তু কোনো প্রকার অন্যায় এবং গণহত্যা কিংবা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নন, তাঁরা ক্ষমা চেয়ে আবার মূল ধারায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারেন।
ব্যক্তিগতভাবে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার পক্ষে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। তবে তিনি এ–ও বলেন, এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত সরকারের পক্ষ থেকে হয়নি। জনপ্রতিনিধি নির্বাচন অথবা প্রশাসক (পূর্ণকালীন) নিয়োগের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের সংস্থাগুলো পরিচালনা করার বিষয়ে খুব দ্রুতই সিদ্ধান্ত আসবে বলেও জানান তিনি।
সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেছিলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যদি আওয়ামী লীগের লোকজন অংশগ্রহণ করেন, তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনাদের অবস্থান কী অথবা জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ নিয়ে আপনাদের ভাবনা কী?
জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমরা মনে করি, যে ধরনের গণহত্যা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে সংঘটিত করেছে এবং আপনারা দেখেছেন যে জাতিসংঘের মানবাধিকার রিপোর্টে (জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদন) এসেছে, এই গণহত্যা যে আওয়ামী লীগ ঘটিয়েছে, তা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। সেই জায়গা থেকে পুরো পৃথিবীতে এ রকম গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্টদের যে নজির, আওয়ামী লীগেরও সে রকম অবস্থাই হওয়া উচিত।’
আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমরা তো গণতন্ত্রের দিক দিয়ে ইউরোপের দেশগুলোকে অনেক এগিয়ে রাখি বা মডেল হিসেবে দেখি। তো জার্মানিতে ফ্যাসিস্টদের কী হয়েছিল বা ইতালিতে কী হয়েছিল, আমাদের সামনে সে নজিরগুলো আছে। যেহেতু আন্তর্জাতিকভাবেও এই গণহত্যা ডকুমেন্টটেডও হয়েছে, সেই জায়গা থেকে আমরা মনে করি, দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগের একধরনের শাস্তি নিশ্চিত হওয়া উচিত। এখন সেটি কোন প্রক্রিয়ায় হতে পারে, কী ধরনের শাস্তি হতে পারে, এটার ব্যাপারেও সবার মতামত নেওয়ার ব্যাপার আছে। আশা করি, তারপর সরকার একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারে।’
তখন সাংবাদিকেরা আবার প্রশ্ন করেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যদি তাঁরা (আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী) বিক্ষিপ্তভাবে অংশগ্রহণ করেন, তাহলে সরকারের অবস্থান কী হবে? এই প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘দেখুন, যাঁরা গণহত্যার সঙ্গে জড়িত এবং বিভিন্ন সময়ে, বিগত ফ্যাসিবাদের সময়ে জনগণের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই এখন পলাতক অবস্থায় আছেন। গণহত্যার সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা আছে বিধায় তাঁরা পলাতক অথবা কারাগারে রয়েছেন। ইতিমধ্যে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, যাঁরা আওয়ামী লীগ করেছেন, কিন্তু কোনো প্রকার অন্যায় এবং গণহত্যা কিংবা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নন, তাঁরা ক্ষমা চেয়ে আবার মূল ধারায় (মেইনস্ট্রিম) স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারেন এবং সেই জায়গা থেকে যদি কেউ নির্বাচন করেন, তাতেও কোনো বাধা নেই। কিন্তু কেউ যদি সাজাপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন, এই গণহত্যার সঙ্গে জড়িত থাকেন, তাহলে তো কোনোভাবেই নির্বাচনে আসতে পারবেন না।’
আরও পড়ুনস্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করার পক্ষে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ৩ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট গণহত য আওয় ম অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধের দাবিতে ঢাকায় বিক্ষোভ
ফিলিস্তিনের গাজায় পাশবিক হামলা ও নিরীহ গাজাবাসীকে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে আল-কুদস কমিটি বাংলাদেশের উদ্যোগে শুক্রবার (২৮ মার্চ) বাদ জুমআ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেট থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে মিছিলটি প্রেসক্লাবে গিয়ে শেষ হয়।
মিছিলে বিক্ষোভকারীরা ইন্তিফাদা ইন্তিফাদা, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ, জায়োনবাদ নিপাত যাক, ফিলিস্তিন মুক্তিপাক ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
মিছিল শেষে প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি হয়। মানববন্ধনে বক্তারা ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধ এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় পদক্ষেপ নিতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।
বক্তারা বলেন, আজ সারা বিশ্বের মুসলিমরা যেখানে রমজান, ইফতার, সাহরি করছে সেখানে ফিলিস্তিনের শিশু-নারীরা লাশের মিছিলে শরিক হচ্ছে। বিনা নোটিশে ইসরায়েল আমাদের মুসলিম ভাই-বোনদের ওপর হামলা করছে। তাদেরকে নির্বিচারে হত্যা করে যাচ্ছে। বক্তারা ইহুদীবাদী সেনাদের এই বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানান এবং তাদের এই নৃশংস অপরাধযজ্ঞ বন্ধ করতে মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
বক্তারা বলেন, আজ রমজানের শেষ শুক্রবার, আন্তর্জাতিক আল কুদস দিবস। মুসলমানদের প্রথম কেবলা পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস দখলমুক্ত করার আন্দোলনে বিশ্ব মানবতাকে উজ্জীবিত করার প্রতীকী দিন এটি।
বিশ্বজুড়ে দিনটি এমন এক সময় পালিত হতে যাচ্ছে যখন ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইহুদিবাদী ইসরাইলের পাশবিক হামলা অব্যাহত রয়েছে।
সম্প্রতি যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করে ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকার বিরুদ্ধে পুনরায় সামরিক আগ্রাসন শুরু করে। নতুন করে শুরু হওয়া এই হামলায় এখন পর্যন্ত ৭৩০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি শহীদ এবং ১,৩৬৭ জন আহত হয়েছেন। এর ফলে ৭ অক্টোবর, ২০২৩ থেকে গাজায় শহীদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০,০৮২ জনে এবং আহতের সংখ্যা ১,১৩,৪০৮ জনে দাঁড়িয়েছে।
গাজা উপত্যকার বিরুদ্ধে ইসরাইলের আগ্রাসন পুনরায় শুরু হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠেছে।
বক্তারা বলেন, ইরানে ইসলামি বিপ্লব বিজয়ী হওয়ার পর ইমাম খোমেনি (র) ফিলিস্তিন ইস্যুকে কেন্দ্র করে রমজান মাসের শেষ শুক্রবার আন্তর্জাতিক আল কুদস দিবস পালনের আহ্বান জানান। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে তিনি দখলদার ইহুদীবাদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে সংগ্রামের পতাকা উড্ডীন করেন এবং কুদস শরীফ ও ফিলিস্তিনের ইসলামি ও পবিত্র ভূমির মুক্তির বিস্মৃত লক্ষ্য ও আদর্শকে পুনরুজ্জীবিত করেন। ইমাম খোমেইনী (র.) এর পক্ষ থেকে রমজান মাসের শেষ শুক্রবারকে আল কুদস দিবস নামকরণ ছিল একটি বৃহৎ বুদ্ধিবৃক্তিক ও গঠনমূলক রাজনৈতিক উদ্যোগ যা ফিলিস্তিনের ঐতিহাসিক মুক্তি সংগ্রামের গতিপথকে পাল্টে দেয় এবং এই পথটিকে আরো আলোকিত ও মসৃণ করে তোলে।
বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন আল কুদস কমিটি বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল মোস্তফা তারিকুল হাসান।
ঢাকা/হাসান/এসবি