২২ দফা দাবিতে এবার অনড় কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের একাংশের
Published: 18th, February 2025 GMT
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এবার তাঁর পদত্যাগের দাবি থেকে সরে এসেছেন। তাঁরা এখন ২২ দফা দাবি বাস্তবায়নে অনড় কর্মসূচি শুরু করেছেন। আজ মঙ্গলবার তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে এই কর্মসূচি পালন করেন।
বেলা দেড়টায় শুরু হওয়া এই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের স্বৈরাচারী মনোভাব ও আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনের অপতৎপরতার প্রতিবাদ জানান। একই সঙ্গে পাঠদানকক্ষ ও আবাসিক হলসংকট নিরসনে বাজেট বরাদ্দ করাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের ব্যর্থতা, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে উপাচার্যের বাসভবনের মূল ফটক ভাঙার অভিযোগে করা মিথ্যা মামলা, সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদ জানান তাঁরা।
কর্মসূচিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সুজয় শুভ, মোশাররফ হোসেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বরিশাল মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলাম শাহেদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সমাবেশে সুজয় শুভ বলেন, ‘বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের স্বৈরাচারী মনোভাবের কারণে ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনের অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এটা জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনার বিরোধী। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি, অবিলম্বে এসব বন্ধ করুন। ক্যাম্পাসে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনুন। শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করুন।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বরিশাল মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে সাধারণ শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর যেসব সন্ত্রাসী, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী হামলা করেছিল, তাদের কোনো ধরনের বিচারের আওতায় আনতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। উল্টো আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে প্রশাসন। এতে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ শিক্ষাজীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তাই অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারসহ সব দাবি আদায়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।’
লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মোকাব্বেল শেখের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী এম ডি সিহাব, ইতিহাস বিভাগের মোশাররফ হোসেন, রসায়ন বিভাগের হাসিবুল ইসলাম, মৃত্তিকা ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের মাসুম বিল্লাহ, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান প্রমুখ।
গত বৃহস্পতিবার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ আকস্মিকভাবে উপাচার্য শুচিতা শরমিনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন ও দুজন শিক্ষক প্রতিনিধিকে সিন্ডিকেট থেকে বাদ দেওয়ার অভিযোগে তাঁর পদত্যাগ দাবি করে বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা উপাচার্যের কার্যালয় ও বাসভবনের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়। পরদিন বিকেলে ওই শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের পূর্বনির্ধারিত সভা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করেন এবং একপর্যায়ে উপাচার্যের বাসভবনের মূল ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে বিক্ষোভ করেন।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা) সানোয়ার পারভেজ বাদী হয়ে শনিবার রাতে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জনের বিরুদ্ধে বন্দর থানায় একটি মামলা করেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের গতকাল সোমবার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা থাকলেও তা করেননি। তাঁরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি থেকে সরে এসে আগের ২২ দফা, শুক্রবার ঘোষিত ১০ দফার পাশাপাশি আরও ৩ দফা দাবি যোগ করেছেন।
গতকাল সকালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে জড়ো হন এবং আগের দাবির সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে তিনটি নতুন দাবি যোগ করেন। তিনটি দাবি হলো, জরুরি ভিত্তিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার, শিক্ষার্থীদের ফ্যাসিস্ট বলার কারণে উপাচার্যের নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া এবং প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ করলে তাঁরা জানান, হঠাৎ করে উপাচার্যের কার্যালয় ও বাসভবনে বৃহস্পতিবার বিকেলে তালা দিয়ে তাঁর পদত্যাগ দাবি, এরপর শুক্রবার বিকেলে উপাচার্যের বাসভবনের মূল ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে বিক্ষোভ—এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে এই আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এরপর গতকাল তাঁরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি থেকে সরে আসেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: লনরত শ ক ষ র থ উপ চ র য র র পদত য গ
এছাড়াও পড়ুন:
চতুর্থ দিনেও বিক্ষোভে উত্তাল ইসরায়েল
যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজায় হামলার প্রতিবাদে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে ইসরায়েলের জনগণ। যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি চুক্তির দাবি এবং অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতরপ্রধান রোনেন বারকে বরখাস্তের প্রতিবাদে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে। নেতানিয়াহুবিরোধী স্লোগানে প্রকম্পিত হচ্ছে রাজপথ। টানা চতুর্থ দিনের মতো জেরুজালেমে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বাসভবনের কাছে বিক্ষোভ হয়েছে। তেল আবিবসহ দেশটির বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। নেতানিয়াহুর পতন না হওয়া পর্যন্ত তারা একত্রিত থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, ইসরায়েলের গণতান্ত্রিক ভিত্তিকে দুর্বল করছেন নেতানিয়াহু। খবর টাইমস অব ইসরায়েল ও রয়টার্সের।
যুদ্ধবিরতি ভেস্তে দিয়ে গাজায় গত মঙ্গলবার ফের হামলা শুরুর পর থেকেই নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে সাধারণ ইসরায়েলিদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছিল।
এতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে গাজার বাকি ৫৯ জন বন্দির ভাগ্য। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার রোনেন বারকে বরখাস্ত ইস্যুতে ভোটাভুটির ঘোষণার পর রাত থেকেই দেশজুড়ে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করছিলেন ইসরায়েলিরা। বরখাস্তের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার পর শুক্রবার বিক্ষোভ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
আজ্জা স্ট্রিটের দিকে অগ্রসর হওয়া একদল বিক্ষোভকারীর ব্যানারে লেখা ছিল, ‘ইতিহাস তৈরি করে জনগণ’। দলটি ‘বাম, ডান, বাম, ডান, বাম’; ‘সবাই একসঙ্গে, যতক্ষণ না (নেতানিয়াহুর) পতন হয়’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতেও তেল আবিব ও জেরুজালেমে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা নেতানিয়াহুর বাসভবনের সামনেও জড়ো হয়। তাদের কেউ কেউ উত্তেজিত হয়ে ভাঙচুর শুরু করলে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। এ সময় বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়।
শিন বেতের প্রধান রোনেন বারকে বরখাস্ত করার বিরুদ্ধে হাইকোর্ট একটি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আদালত তাঁর বরখাস্তের বিরুদ্ধে দাখিল করা আবেদনগুলোর শুনানি না করা পর্যন্ত এই আদেশ বহাল থাকবে। এতে বলা হয়েছে, তারা ৮ এপ্রিলের মধ্যে আবেদনগুলো শুনবে। এর আগে নেতানিয়াহু রোনেন বারকে বরখাস্ত করেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা সর্বসম্মতিক্রমে বারকে বরখাস্তের পক্ষে মত দেয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বারের দায়িত্বের শেষ দিন হবে আগামী ১০ এপ্রিল।
এদিকে গাজায় নির্বিচারে বোমা বর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার দেশটি। পবিত্র রমজানে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে নতুন করে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে নেতানিয়াহুর সরকার। গাজায় ক্যান্সার চিকিৎসাসেবা দেওয়া একমাত্র হাসপাতালেও হামলা চালানো হয়েছে। মধ্য গাজার ক্যান্সার রোগীদের জন্য তুর্কি ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে বোমা হামলায় গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
গাজার অন্যতম বৃহত্তম খাদ্য সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা সতর্ক করে দিয়েছে, তাদের কাছে আর ছয় দিনের জন্য পর্যাপ্ত আটা আছে। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি ত্রাণ সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর স্যাম রোজ জেনেভায় সাংবাদিকদের বলেন, মানুষকে কম দিয়ে আমরা মজুত থাকা আটা আরও কয়েকদিন বিতরণ করতে পারি। তবে তা সপ্তাহ নয়, মাত্র কয়েক দিনই চলবে।
এই হামলার পেছনে ইসরায়েলের প্রকৃত লক্ষ্য হলো গাজাকে জনশূন্য করা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। নেতানিয়াহুর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে শিন বেতের প্রধানের মন্তব্য থেকে বোঝা যায় নেতানিয়াহু সরকার কখনও যুদ্ধবিরতি চায়নি। শিন বেতের পরিচালক রোনেন বার অভিযোগ করেছেন, নেতানিয়াহু ‘প্রকৃত চুক্তিতে’ পৌঁছানোর ইচ্ছা না করেই গাজা যুদ্ধবিরতি আলোচনা পরিচালনা করেছেন।
দোহা ইনস্টিটিউট অব গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের মোহাম্মদ এলমাসরি বলেন, ইসরায়েল যুদ্ধ ফের শুরু করার আসল কারণ স্পষ্ট। যদি তারা বিপুল সংখ্যক মানুষ হত্যা এবং নারকীয় পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে, তবে তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে আশা রয়েছে যে, শেষ পর্যন্ত তারা যা চায় তা পাবে। সেটা হলো, উপত্যকাকে জনশূন্য করা। এটাই তাদের প্রকৃত লক্ষ্য।
যুদ্ধবিরতি ভেঙে মঙ্গলবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত শিশুর সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে গেছে। গাজায় ইউনিসেফের মুখপাত্র রোজালিয়া পলিন বলেছেন, এই সপ্তাহে ইসরায়েল ফের যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে গাজায় দুই শতাধিক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মঙ্গলবার গাজায় যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের পর থেকে ইসরায়েলের হামলায় ৫৯০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ইসরায়েলের আগ্রাসনে গাজায় অন্তত ৪৯ হাজার ৬১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা এক লাখেরও বেশি। নিহতের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।