ক্রেতার সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডার জেরে দিনাজপুরের ৫৫ ফার্মেসিতে সাড়ে চার ঘণ্টা বিক্রি বন্ধ
Published: 18th, February 2025 GMT
দিনাজপুরে ওষুধ কেনার পর মান নিয়ে ক্রেতার সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডার জেরে সাড়ে চার ঘণ্টা ফার্মাসি বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ফার্মেসি মালিকেরা। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত শহরের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসংলগ্ন ৫৫টি ফার্মেসি বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন রোগীর স্বজনেরা।
কয়েকজন ফার্মেসির মালিক ও কর্মচারী জানান, সকাল সাড়ে ৯টায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিপরীতে সোহাগ ফার্মেসিতে ওষুধ কিনতে আসেন বিজিবির ফুলবাড়ী ২৯ ব্যাটালিয়নে কর্মরত হাবিলদার শফিকুল ইসলাম। তিনি সাতটি পৃথক প্যাকেটে সাতটি ইনজেকশন কিনে নিয়ে যান। ঘণ্টাখানেক পরে তিনি ইনজেকশনগুলো সঙ্গে নিয়ে আবারও সোহাগ ফার্মেসিতে এসে অভিযোগ করেন, ইনজেকশনের একটি ভায়েল আগে ব্যবহার করা হয়েছে। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ফার্মেসি থেকে ইনজেকশনটি পরিবর্তন করে দেওয়া হলেও ওই সদস্য দোকান সিলগালা করাসহ নানা হুমকি দেন। পরে সিভিল সার্জন আসিফ ফেরদৌস ও জেলা ড্রাগ সুপারকে সঙ্গে নিয়ে সোহাগ ফার্মেসিতে যান বিজিবির ওই সদস্য।
মুঠোফোনে বিজিবির হাবিলদার শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিজিবির এক সদস্যের স্ত্রী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। আজ সকাল সাড়ে ৯টায় ওই সদস্যসহ তিনি সোহাগ ফার্মেসি থেকে ওষুধ ও ইনজেকশন কেনেন। হাসপাতালে ফিরে এসে দেখেন একটি ইনজেকশন আগে ব্যবহার করা। বিষয়টি ফার্মেসিতে জানাতে গেলে তাঁরা খারাপ আচরণ করেন। ইনজেকশনটি বদলে দিলে তাঁরা ফেরত চলে আসেন এবং সিভিল সার্জনকে ফোনে জানান। পরে শুনছেন সব ওষুধের দোকান বন্ধ করা হয়েছে।
সোহাগ ফার্মেসির স্বত্বাধিকারী হাফিজুর রহমান বলেন, ‘বিজিবির ওই সদস্য ১০০ এমএলের সাতটি ম্যাক্সসাল ইনজেকশন কিনে নিয়ে যান। ঘণ্টাখানেক পরে ফেরত এসে দেখান একটি ভায়েলের (ইনজেকশনের) মুখ খোলা এবং অর্ধেক ওষুধ নেই। আমরা তাঁকে ইনটেক ভায়েল দিয়েছি। তাঁর অভিযোগটি সত্য নয় দেখেও আমরা পরিবর্তন করে দিয়েছি। ক্ষমাও চেয়েছি। তারপরও তিনি দোকান সিলগালা করবেন, ভ্রাম্যমাণ করাবেন, যাঁকে–তাঁকে ফোন করাসহ নানা হুমকি দিয়েছেন। আমার বাবাও বিজিবির সদস্য ছিলেন। তাঁকে আমরা যথেষ্ট সম্মান দেখিয়েছি।’
প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা ওষুধের দোকান বন্ধ থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর স্বজনেরা। দুপুর সোয়া ১২টায় চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র হাতে নুরবানু আক্তার বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে নার্স ওষুধের স্লিপ দিয়েছে। বাইরে ওষুধ কিনতে এসে দেখি সব দোকান বন্ধ। এখন যাচ্ছি ফুলবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে। সেখানকার ওষুধের দোকানগুলো নাকি খোলা রয়েছে।’
এ বিষয়ে দিনাজপুর ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ড্রাগ সুপার আমিনুল ইসলাম বলেন, মুঠোফোনে এক বিজিবি সদস্য পুরাতন ওষুধ বিক্রি এবং রোগীর স্বজনের সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগ করেছিলেন। পরে দুপুর সাড়ে ১২টায় ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁরা উভয় পক্ষের কথা শোনেন। তাঁদের ফার্মেসি খোলা রেখে উভয় পক্ষকে বসে বিষয়টি সমাধানের জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে মেডিকেল মোড় দোকান মালিক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাসিনুর রহমান বলেন, ২৯ ব্যাটালিয়নের পক্ষ থেকে ফোনে জানানো হয়েছে, ঘটনা তদন্ত সাপেক্ষে ওই বিজিবি সদস্যের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এমন আশ্বাসের ভিত্তিতে বেলা ৩টায় দোকান খুলে ওষুধ বিক্রি শুরু করা হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইনজ কশন
এছাড়াও পড়ুন:
‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার’ চালানো হচ্ছে আমার বিরুদ্ধে: টিউলিপ
বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়ে টিউলিপ সিদ্দিক জানিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার’ চালানো হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের লন্ডনের হ্যাম্পস্টিড অ্যান্ড হাইগেট আসনের এমপি ও ও সাবেক ‘সিটি মিনিস্টার’ বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, আপনারা বুঝবেন যে, এই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচারকে কোনো প্রসঙ্গ বা মন্তব্যের মাধ্যমে আমি বিশেষ গুরুত্ব দিতে পারি না। এটা পুরোপুরি আমাকে হয়রানি করার জন্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার। এমন কোনো প্রমাণ নেই যে আমি ভুল কিছু করেছি।’ খবর-বিবিসি
বাংলাদেশে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়ে সোমবার লন্ডনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি বলেন, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষগুলোর কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। পুরোটা সময় তারা মিডিয়া ট্রায়াল চালিয়েছে। আমার আইনজীবীরা উদ্যোগী হয়ে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখেছিলেন। তবে তারা কখনও এর জবাব দেয়নি।’
প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে করা তিনটি মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর বোন শেখ রেহানা এবং রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ও ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা পৃথক তিন মামলার অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে রোববার এ আদেশ দেন ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব। আদালতে দুদকের প্রসিকিউশন বিভাগের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তার করা গেল কিনা, সে-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ২৭ এপ্রিল দিন ধার্য করেছেন আদালত। ১০ কাঠা প্লট নেওয়ার অন্য অভিযোগে শেখ রেহানার মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ১৩ জানুয়ারি মামলা করেন দুদকের একজন সহকারী পরিচালক। মামলায় শেখ হাসিনা, টিউলিপসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়।
এর আগে জানুয়ারির মাঝামাঝিতে যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করেন টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি) ছিলেন। দেশটির আর্থিক খাতে দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্ব ছিল তার কাঁধে।
গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, টিউলিপের খালা বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আর্থিক সম্পর্কের বিষয়ে বারবার প্রশ্ন ওঠায় টিউলিপ সিদ্দিক মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
সম্প্রতি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অর্থনৈতিক অসঙ্গতির অভিযোগ উঠে। এরপর নিজের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ মিনিস্ট্রিয়াল ওয়াচডগকে তদন্তের আহ্বান জানান টিউলিপ। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেন মিনিস্ট্রিয়াল ওয়াচডগের উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাস।
টিউলিপ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের কাছে তার পদত্যাগপত্র জমা দেন। তবে এতে তিনি উল্লেখ করেছেন, তার বিরুদ্ধে যে তদন্ত হয়েছে সেখানে, মিনিস্ট্রিয়াল ওয়াচডগের উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাস তার বিরুদ্ধে মন্ত্রিত্বের নীতি ভঙ্গের কোনো প্রমাণ পাননি। কেয়ার স্টারমার অফিসিয়াল চিঠিতে টিউলিপ সিদ্দিককে বলেন, ‘আপনার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করার সময় এটা পরিষ্কার করতে চাই যে, মিনিস্ট্রিয়াল ওয়াচডগের উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাস আমাকে আশ্বস্ত করেছেন- তিনি আপনার বিরুদ্ধে মন্ত্রিত্বের নীতি ভঙ্গের কোনো প্রমাণ পাননি এবং আর্থিক অসঙ্গতির কোনো প্রমাণ খুঁজে পাননি।’