নামজারি, খাজনা, খতিয়ান ও ম্যাপের আরো উন্নত অনলাইন সেবা
Published: 18th, February 2025 GMT
মিউটেশন (নামজারি), ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান, খতিয়ান ও ম্যাপ সরবরাহের অনলাইন সিস্টেমের আরো উন্নত ও সমন্বিত সংস্করণ চালু করা হয়েছে।
জনগণকে উন্নত ও সমন্বিত ভূমি সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ভূমি মন্ত্রণালয় এই উদ্যোগ নিয়েছে।
নাগরিকরা land.gov.bd ওয়েবসাইটে মাত্র একবার নিজের মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করে লগইনের মাধ্যমে ই-মিউটেশন, ভূমি উন্নয়ন কর, পর্চা-খতিয়ান ও ম্যাপ বের করতে পারবেন। এগুলো সহজেই প্রিন্ট দিয়ে সংরক্ষণ করা যাবে।
আরো পড়ুন:
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের আইনের আওতায় আনা হবে: উপদেষ্টা
পাঁচ হাজার চিকিৎসক নিয়োগে বিশেষ উদ্যোগ
মঙ্গলবার ভূমি মন্ত্রণালয় উপসচিব সেলিম আহমেদের সই করা গণবিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, নতুন সফটওয়্যারগুলো চালুর পর কিছু কারিগরি ত্রুটি ও আন্তঃসমন্বয়-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে সাধারণ জনগণ প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু সেবা পেতে ভোগান্তির মুখে পড়েছিল। বিষয়টি নজরে আসায় দ্রুত তা সমাধান করা হয়েছে।
গণবিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, এখন ব্যক্তি ও সংস্থার ভূমি উন্নয়ন কর সহজেই অনলাইনে জমা দিয়ে দাখিলা প্রিন্ট এবং অনলাইনে মিউটেশনের আবেদন করা যাচ্ছে। আবেদন মঞ্জুর হলেই ডিসিআর ফি জমা দিয়ে অনলাইনে খতিয়ান প্রিন্ট করা যাচ্ছে।
ভূমি মন্ত্রণালয় বলছে, ভূমিসেবার ওয়েবসাইটে পর্চা-খতিয়ান ও ম্যাপ তোলার ফি জমা দিয়ে ঘরে বসেই খতিয়ান ও ম্যাপ পাওয়া যাচ্ছে।
সিস্টেমটি নতুন হওয়ায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসব ভূমিসেবা পেতে কিছু কারিগরি সমস্যার খবর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে, যা সঙ্গে সঙ্গে সমাধানও করা হচ্ছে, বলা হয়েছে গণবিজ্ঞপ্তিতে।
এতে বলা হয়েছে, নাগরিকদের অসুবিধা দূর করার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ে একটি হটলাইন ১৬১২২ চালু করা হয়েছে।
ভূমি মন্ত্রণালয় বলছে, ভূমিসেবা পেতে সার্ভারসহ যেকোনো সমস্যার মুখে পড়লে নাগরিকরা তাদের সমস্যার কথা ১৬১২২ হটলাইনে জানাতে পারবেন। হটলাইন নম্বরটি ২৪ ঘণ্টাই খোলা।
এদিকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জমি বা স্থাবর সম্পত্তি নামজারির বিষয়টি স্পষ্ট করে সম্প্রতি একটি পরিপত্র জারি করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
পরিপত্র্রে বলা হয়েছে, মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশদের যৌথভাবে দাখিল করা নামজারির আবেদন বণ্টননামা দলিল ছাড়াই করা যাবে।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় বসার পর ভূমিসেবা সহজ ও ত্বরাণ্বিত করতে উদ্যোগ নিয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে অনলাইন ও দাপ্তরিক সেবা নাগরিকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রাসেল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বিচার সেবা দেওয়া দ্রুত ও কার্যকর নিশ্চিত করাই লক্ষ্য: প্রধান বিচারপতি
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, “জনগণকেন্দ্রিক বিচার সেবা প্রদান ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং সাধারণ জনগণের জন্য দ্রুত ও কার্যকর সেবা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।”
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগে শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ মিলনায়তনে ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণসহ বিচারসেবা প্রদানে দক্ষতা বৃদ্ধিতে করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি সেমিনারের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “এই সেমিনারের সময়সূচি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটি আমাদের সেমিনার সিরিজের পঞ্চম এবং রাজধানীর বাইরে অনুষ্ঠিত চতুর্থ সেমিনার।”
আরো পড়ুন:
লক্ষ্মীপুর আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপিপন্থিদের জয়
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি
তিনি বলেন, “সেমিনারটি এমন একটি সময় অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন দেশ ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং বিভিন্ন খাতভিত্তিক সংস্কার প্রস্তাবের ওপর রাজনৈতিক ঐক্যমত্য গঠনের প্রচেষ্টা চলছে।”
তিনি বলেন, “বিচার বিভাগ গত ২১ সেপ্টেম্বর থেকে সংস্কার কার্যক্রমের ক্ষেত্রে একটি অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছে, যা সর্বোচ্চ আদালতের নেতৃত্বে বাস্তবায়িত হচ্ছে। বিচার বিভাগের বিস্তৃত এবং বিশদ খাতভিত্তিক সংস্কার প্রস্তাবসমূহ প্রয়োজন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সংস্কার কমিশনগুলোর সঙ্গে ভাগাভাগি করা হয়েছে এবং তাদের প্রস্তাবে সেগুলোর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে।”
প্রধান বিচারপতি বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি ইউএনডিপির সহযোগিতায় আয়োজিত সংস্কার রোডশো এখন একটি শক্তিশালী গতি অর্জন করেছে। ফলে জেলা আদালত এবং বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেসি নিজেদের সংস্কার কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিতে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
প্রধান বিচারপতি বলেন, “২০২৫ সালের ১০ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারিতে রাজশাহী জেলা আদালত, মেট্রোপলিটন সেশন আদালত এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চালু হওয়া হেল্পলাইন, যা সুপ্রিম কোর্ট হেল্পলাইন অনুসরণ করে চালু করা হয়েছে। রাজশাহীর এই উদ্যোগটি সুপ্রিম কোর্টের ১২ দফা নির্দেশনার ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে। এর লক্ষ্য হলো জনগণকেন্দ্রিক বিচারসেবা প্রদান ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং সাধারণ জনগণের জন্য দ্রুত ও কার্যকর সেবা নিশ্চিত করা।”
প্রধান বিচারপতি বলেন, “এখন ময়মনসিংহ সেমিনারের মূল উদ্দেশ্য হবে এই সংস্কার প্রক্রিয়াকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আমাদের এখন সময় এসেছে, আমাদের সংস্কার প্রচেষ্টার স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার উপায় খুঁজে বের করার।”
জেলা বিচার বিভাগ এবং ম্যাজিস্ট্রেসিকে তাদের নিজ-নিজ অবস্থান থেকে সংস্কারক এবং উদ্ভাবক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে আহ্বান জানান প্রধান বিচারপতি। ২১ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতির অভিভাষণে উপস্থাপিত সংস্কার কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবাইকে স-স ক্ষেত্রে আন্তরিক হতে গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, “আগামী সপ্তাহ এবং মাসগুলো জেলা বিচার বিভাগ এবং ম্যাজিস্ট্রেসির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই সময় আমাদের যৌথ প্রচেষ্টা প্রতিষ্ঠানের স্বায়ত্তশাসন এবং ভবিষ্যৎ সংস্কারের পথে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। এই সংস্কার রোডশোগুলোর মাধ্যমে আমরা সঠিক প্রক্রিয়া এবং চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার কার্যকর পথ খুঁজে পেয়েছি।”
প্রধান বিচারপতি বলেন, “আমার বার্তা খুবই স্পষ্ট দায়িত্ব নিন। আমি আশা করি, এই বার্তা সারাদেশে শক্তিশালীভাবে প্রতিধ্বনিত হবে।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অ্যাম্বাসেডর মাইকেল মিলার। সেমিনারে ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন জেলায় কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা অংশ নেন।
সেমিনারে স্বাগত বক্তৃতায় ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফান লিলার দেশের বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বতন্ত্রীকরণে প্রধান বিচারপতি ঘোষিত বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ একটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেন। উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বিচার বিভাগের আধুনিকায়নে উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে পাশে থাকার আশ্বাস দেয় ইউএনডিপি।
ঢাকা/মিলন/সাইফ