স্বপ্ন দেখছেন নদীভাঙনে সর্বস্বান্ত তিস্তাপারের হাজারো কৃষক
Published: 18th, February 2025 GMT
একসময় ২০ বিঘা আবাদি জমি ছিল দুর্জন খানের (৮৫)। ছিল গোয়ালভরা গরু, পুকুরভরা মাছ। সুখে-শান্তিতে বসবাস করছিলেন। কিন্তু বছর বছর তিস্তা নদীর ভাঙনে আজ তিনি ভূমিহীন। আজ নিজের বলতে কিছু নেই। এখন থাকেন নদীর বাঁধের ওপর খুপরিতে। তাঁর মতো তিস্তার ভাঙনে সর্বস্বান্ত হাজারো কৃষক স্বপ্ন দেখছেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে।
দুর্জন খানের বসতঘর নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খালিশাচাপনী ইউনিয়নের ছোটখাতা তিস্তা ডানতীর বাঁধের পাশে। আগে তিনি একই ইউনিয়নের সুপরীর টারিতে বসবাস করতেন। আজ মঙ্গলবার সকালে তিস্তাপারে দাঁড়িয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয়।
দুর্জন খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের বাড়ি থেকে তিস্তা নদীর দূরত্ব প্রায় ৭ মাইল ছিল। ৫০ বছর আগে ভাঙন শুরু হয়। এরপর বছর বছর ভাঙতে ভাঙতে পাঁচবার বাড়ি নড়াইছি। ১১ বছর আগে সর্বশেষ ভিটাটাও নদীত যায়। তখন থেকে ওয়াপদার বাঁধত আছি। এখন আমার কবর দেওয়ার মতো নিজের জায়গাটাও নাই। শুনেছি নদী খনন হবে। তাহলে আমার জমি জাগি উঠবে।’ তিনি বলেন, ‘এই নদীর কারণে আজ আমার মতো হাজার হাজার পরিবার নিঃস্ব।’
ছোটখাতা তিস্তা ডানতীর বাঁধের মফদ্দি মামুদ (৮০) বলেন, ‘এই নদী হামাক ফকির বানাইছে। এই নদী হামার বাড়িঘর ১০ বার ভাঙিছে। এলা হামরা ওয়াপদার জাগাত আছি।’ আলেফা বেগম (৮০) নামের এক নারী বলেন, ৫০ থেকে ৬০ বছর ধরে তাঁরা নদীর সঙ্গে যুদ্ধ করছেন। বাড়িঘর ভাঙতে ভাঙতে সব শেষ হয়ে গেছে। এখন তাঁরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধে বসবাস করছেন। এখন দিনে এনে দিনে খান। তাঁদের কষ্ট কেউ বোঝে না। নদী খননের আশায় তাঁরা দিন গুনছেন।
ডিমলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান প্রথম আলোকে বলেন, তিস্তাপারের মানুষেরা দীর্ঘদিন ধরে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখছেন। তিস্তায় বাড়িঘর, জমিজমা হারিয়ে পূর্ব ছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, ঝুনাগাছ চাপানী, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশাচাপানী ও গয়াবাড়ি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ ভূমিহীন হয়েছেন। অনেকে তিস্তার বাঁধে বসবাস করছেন। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে অনেক কৃষকের জমি জেগে উঠবে।
তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন। রংপুর বিভাগের পাঁচটি জেলার ১১টি স্থানে কর্মসূচি চলছে। নীলফামারীর কর্মসূচি চলছে তিস্তাপারের হেলিপ্যাড মাঠে। সেখানে কথা হয় নীলফামারী জেলা কৃষক দলের সভাপতি মগ্নি মাসুদুল আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, এই নদীতে নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার অন্তত ২০ হাজার কৃষক ভূমিহীন হয়েছেন। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে অনেকে হারানো সম্পদ ফিরে পাবেন। পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে। এলাকায় কর্মসংস্থানের সঙ্গে কৃষি উৎপাদন বাড়বে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বসব স
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলা একাডেমিতে চলছে সাত দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) ও বাংলা একাডেমির যৌথ আয়োজনে বাংলা একাডেমিতে শুরু হয়েছে সাত দিনব্যাপী ‘বৈশাখী মেলা-১৪৩২’।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) রাজধানী ঢাকার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এ মেলার উদ্বোধন করেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিসিক চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম।
বৈশাখী মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, “পাহাড় থেকে সমতল, সারা দেশে আজ নববর্ষের আমেজ। বাংলাদেশের মানুষ আজ এক হয়ে পালন করছে নববর্ষ। সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা চলছে সারা দেশে। আমরা একটা ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসেবে ফ্যাসিবাদোত্তর বাংলাদেশে দাঁড়িয়েছি। আমরা এই উৎসব ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে চাই।”
উপদেষ্টা আরো বলেন, “বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, হস্তশিল্প, খাদ্যজাত পণ্যের বিদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। উদ্যোক্তারা এই মেলার মাধ্যমে এসকল পণ্য বিদেশে রপ্তানিযোগ্য করে তুলবে। উদ্যোক্তারা যেভাবে ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তাতে আরেকটি শিল্প বিপ্লবের দিকে এগিয়ে যাবে দেশ।”
বাংলা একাডেমি আয়োজিত এই মেলা উদ্যোক্তাদের উন্নয়নের ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, “আমরা ৫ আগস্ট পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি। আজকের র্যালিতে সব জাতিগোষ্ঠী একসাথে অংশগ্রহণ করেছে এবং একসাথে আনন্দ করছে। এটা একটা অন্তর্ভূক্তিমূলক ও রঙিন উৎসব। মেলা এমন একটা জায়গা যেখানে দুইপক্ষ খুশি থাকে। একজন ক্রয় করে এবং অন্যজন বিক্রি করে। মেলার সাংস্কৃতিক গুরুত্ব রয়েছে।”
বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, “বৈশাখী মেলার আয়োজন আমাদের জন্য একটা ভালো উদ্যোগ। বাংলা নববর্ষ আমরা উদ্যাপন করবো জাতীয় সংস্কৃতির অংশ হিসেবে। আমাদের উজ্জ্বল অতীত ছিল, সমৃদ্ধ আগামী গড়ার লক্ষ্য নিয়ে আমাদের পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন করতে হবে।”
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান।
ঢাকা/এএএম/টিপু