একসময় ২০ বিঘা আবাদি জমি ছিল দুর্জন খানের (৮৫)। ছিল গোয়ালভরা গরু, পুকুরভরা মাছ। সুখে-শান্তিতে বসবাস করছিলেন। কিন্তু বছর বছর তিস্তা নদীর ভাঙনে আজ তিনি ভূমিহীন। আজ নিজের বলতে কিছু নেই। এখন থাকেন নদীর বাঁধের ওপর খুপরিতে। তাঁর মতো তিস্তার ভাঙনে সর্বস্বান্ত হাজারো কৃষক স্বপ্ন দেখছেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে।

দুর্জন খানের বসতঘর নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খালিশাচাপনী ইউনিয়নের ছোটখাতা তিস্তা ডানতীর বাঁধের পাশে। আগে তিনি একই ইউনিয়নের সুপরীর টারিতে বসবাস করতেন। আজ মঙ্গলবার সকালে তিস্তাপারে দাঁড়িয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয়।

দুর্জন খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের বাড়ি থেকে তিস্তা নদীর দূরত্ব প্রায় ৭ মাইল ছিল। ৫০ বছর আগে ভাঙন শুরু হয়। এরপর বছর বছর ভাঙতে ভাঙতে পাঁচবার বাড়ি নড়াইছি। ১১ বছর আগে সর্বশেষ ভিটাটাও নদীত যায়। তখন থেকে ওয়াপদার বাঁধত আছি। এখন আমার কবর দেওয়ার মতো নিজের জায়গাটাও নাই। শুনেছি নদী খনন হবে। তাহলে আমার জমি জাগি উঠবে।’ তিনি বলেন, ‘এই নদীর কারণে আজ আমার মতো হাজার হাজার পরিবার নিঃস্ব।’

ছোটখাতা তিস্তা ডানতীর বাঁধের মফদ্দি মামুদ (৮০) বলেন, ‘এই নদী হামাক ফকির বানাইছে। এই নদী হামার বাড়িঘর ১০ বার ভাঙিছে। এলা হামরা ওয়াপদার জাগাত আছি।’ আলেফা বেগম (৮০) নামের এক নারী বলেন, ৫০ থেকে ৬০ বছর ধরে তাঁরা নদীর সঙ্গে যুদ্ধ করছেন। বাড়িঘর ভাঙতে ভাঙতে সব শেষ হয়ে গেছে। এখন তাঁরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধে বসবাস করছেন। এখন দিনে এনে দিনে খান। তাঁদের কষ্ট কেউ বোঝে না। নদী খননের আশায় তাঁরা দিন গুনছেন।

ডিমলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান প্রথম আলোকে বলেন, তিস্তাপারের মানুষেরা দীর্ঘদিন ধরে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখছেন। তিস্তায় বাড়িঘর, জমিজমা হারিয়ে পূর্ব ছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, ঝুনাগাছ চাপানী, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশাচাপানী ও গয়াবাড়ি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ ভূমিহীন হয়েছেন। অনেকে তিস্তার বাঁধে বসবাস করছেন। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে অনেক কৃষকের জমি জেগে উঠবে।

তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন। রংপুর বিভাগের পাঁচটি জেলার ১১টি স্থানে কর্মসূচি চলছে। নীলফামারীর কর্মসূচি চলছে তিস্তাপারের হেলিপ্যাড মাঠে। সেখানে কথা হয় নীলফামারী জেলা কৃষক দলের সভাপতি মগ্নি মাসুদুল আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, এই নদীতে নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার অন্তত ২০ হাজার কৃষক ভূমিহীন হয়েছেন। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে অনেকে হারানো সম্পদ ফিরে পাবেন। পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে। এলাকায় কর্মসংস্থানের সঙ্গে কৃষি উৎপাদন বাড়বে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বসব স

এছাড়াও পড়ুন:

জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন রাষ্ট্রপতি

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে ৭১ এর শহীদ বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

বুধবার ভোর ৫টা ৫০ মিনিটের দিকে তিনি ফুল দিয়ে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

পুষ্পস্তবক অর্পণের পর ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন রাষ্ট্রপতি।

এ সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানায়। প্রধান উপদেষ্টা স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে রাখা দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করেন।

রাষ্ট্রপতির পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শ্রদ্ধা জানান। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। 

এরপর একে একে বিদেশি কূটনীতিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক–সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ