গাইবান্ধায় মজলিশের খাবার খেয়ে দুই শতাধিক মানুষ অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি ১৪৪ জন
Published: 18th, February 2025 GMT
গাইবান্ধায় মজলিশের খাবার খেয়ে বিভিন্ন পেশার দুই শতাধিক নারী-পুরুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১৪৪ জন দুটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আজ মঙ্গলবার বেলা দুইটা পর্যন্ত ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭১ জন এবং গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে ৭৩ জন ভর্তি রয়েছেন। চিকিৎসকেরা বলছেন, ভর্তি হওয়া রোগীরা আশঙ্কামুক্ত।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা জানান, গত রোববার সকালে গাইবান্ধা সদর উপজেলার বাদিয়াখালী ইউনিয়নের ফুলবাড়ি রিফাইতপুর গ্রামের ইজিবাইকচালক বেলাল হোসেনের মায়ের মজলিশ (চেহলাম) অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে তাঁর স্বজন ও এলাকাবাসীসহ প্রায় এক হাজার মানুষ অংশ নেন। মজলিশে চালের আটার ডাল দিয়ে ভাত খাওয়ানো হয়। খাবার খাওয়ার পর ওই দিন মধ্যরাত থেকে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পেটব্যথা, পাতলা পায়খানা ও বমিভাব দেখা দেয়। অনেকে প্রাথমিকভাবে বাড়িতে চিকিৎসা নেন। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরদিন গতকাল সোমবার সকাল থেকেই হাসপাতালে ভর্তি হতে থাকেন। অসুস্থ হওয়া রোগীরা গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতাল এবং পার্শ্ববর্তী ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং অনেকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের মেঝেতে চিকিৎসাধীন ফুলবাড়ি রিফাইতপুর গ্রামের আবদুল হাই (৫৫) বলেন, ‘ওই মজলিশে দাওয়াত খাওয়ার পর মাঝরাত থেকে আমি ও আমার স্ত্রীর পাতলা পায়খানা শুরু হয়। সঙ্গে সঙ্গে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হই। আমাদের আরও অনেক আত্মীয়স্বজন এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখন আমরা ভালো আছি।’
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একই গ্রামের সাদা মিয়া ও সাইফুল ইসলাম বলেন, কারও রোববার মধ্যরাত থেকে আবার কারও সোমবার সকাল–দুপুর থেকে ডায়রিয়া, বমি শুরু হয়। অনেক শিশুও খুব অসুস্থ। চিকিৎসা নেওয়ার পর অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।
গাইবান্ধা হাসপাতাল ও ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল থেকে আজ বেলা দুইটা পর্যন্ত এই দুই হাসপাতালে দুই শতাধিক বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ ও শিশু চিকিৎসা নেন এবং ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে ১২৪ জন চিকিৎসা নেন। এর মধ্যে ৫১ জন রোগীকে আজ দুপুরে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। বাকি ৭৩ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
অন্যদিকে ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আজ বেলা দুইটা পর্যন্ত ৭১ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দুজনের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ব স থ য কমপ ল ক স অবস থ র ফ লছড় মজল শ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ফরিদপুরে বিএনপির দু’পক্ষের দ্বন্দ্বে সাড়ে তিনশ বছরের মেলা বন্ধ
ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে বিএনপির দু’পক্ষের দ্বন্দ্বে বন্ধ হয়ে গেল সাড়ে তিনশ বছরের ঐতিহ্যবাহী কাটাগড় দেওয়ান শাগির শাহর মেলা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় প্রশাসন মেলার অনুমতি দেয়নি।
প্রতি বছর ২৬ মার্চ আধ্যাত্মিক সাধক দেওয়ান শাগির শাহর তিরোধান দিবসে উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নের কাটাগড় গ্রামে এ মেলা হয়ে থাকে। এর আগের দিন থেকে শুরু হয়ে সপ্তাহব্যাপী চলে এই মেলা। মেলার প্রধান আকর্ষণ সাজ-বাতাসা, কদমা, বালিশ রসগোল্লা, বাঁশের তৈরি জালি, ডালা, তালপাতার হাত পাখা, বেতের তৈরি ধামাসহ বিভিন্ন তৈজসপত্র। এখানে কসমেটিক, খেলনা ও বিভিন্ন আসবাবপত্রের কয়েক হাজার দোকান বসে। থাকে নাগরদোলা, যাদু প্রদর্শনী, মোটরসাইকেল খেলা, পুতুল নাচ। মেলায় কয়েক কোটি টাকার বেচাকেনা হয়। মেলা উপলক্ষে এলাকার ১০-১২ গ্রামে শুরু হয় আনন্দ উৎসব।
স্থানীয়দের দাবি, কয়েকশ’ বছরের মধ্যে কোন কারণেই মেলাটি বন্ধ হয়নি। এমনকি ১৯৭১ সাল এবং করোনা মহামারিতেও স্বল্প পরিসরে মেলাটি চালু ছিল। দীর্ঘ দিন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউল আজম বাবু মিয়া কমিটির সভাপতি হয়ে মেলা পরিচালনা করেছেন। পট পরিবর্তনের কারণে তারা দৃশ্যপটের বাইরে চলে গেছেন। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত ১৫ মার্চ স্থানীয় বিএনপির দু’টি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ নিয়ে দুই পক্ষ থানায় দু’টি মামলা করে। দুই পক্ষ মেলা পরিচালনার জন্য দুটি কমিটি জমা দেয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় প্রশাসন মেলার অনুমতি না দিয়ে বন্ধ করে দেয়। মেলার এক সপ্তাহ আগেই বিভিন্ন পণ্যের দোকান নিয়ে দোকানিরা চলে আসেন মেলা চত্বরে। এ বছর অনেকে দোকানপাট নিয়ে এসেও ফিরে গেছেন।
এলাকাবাসী ও স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, দেওয়ান শাগির শাহ’র ৩৫১তম বার্ষিক ওরস উপলক্ষে গ্রামীণ মেলাটি আগামী ২৫ মার্চ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত অনুমোদনের জন্য রূপাপাত ইউনিয়নের বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আক্কাচ মন্টু ও উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আনিচুর রহমান টিটু ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক বরাবর গত ৫ মার্চ আবেদন করেন। অপরদিকে ১৬ মার্চ সাতদিনের অনুমোদনের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেন কাটাগড় দেওয়ান শাগির শা’র মাজারের খাদেম ইরাদত ফকির।
এক পক্ষের মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আজাদ মোল্যা বলেন, সাড়ে তিনশ’ বছর ধরে এ মেলা হচ্ছে। এ বছর স্থানীয়দের মধ্যে কোন্দলের কারণে দুই পক্ষ মেলার কমিটি বানিয়ে অনুমতির জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করেন। মেলা কমিটি নিয়ে দুই পক্ষে মারামারি হয়। মারামারির ঘটনায় মামলাও হয়। অনেকেই জেলে আছে। অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। প্রশাসন জানিয়েছিল, যদি দুই পক্ষ মিলেমিশে মেলা করতে পারেন তাহলে অনুমতি দেওয়া হবে। কিন্তু দুই পক্ষ এক হওয়ার কোন সুযোগ নেই, তাই এ বছর মেলা বন্ধ থাকবে।
বোয়ালমারী থানার ওসি মাহামুদুল হাসান বলেন, মেলা নিয়ে স্থানীয় দুটি পক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। দুই পক্ষের মামলা আছে। অনেকে আহত আছে। মেলার আগেই যদি এই অবস্থা হয় তাহলে মেলার সময় বা পরে আরও খারাপ অবস্থা হতে পারে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে এই আশঙ্কায় মেলার অনুমোদন না দেওয়ার জন্য পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
বোয়ালমারীর ইউএনও তানভীর হাসান চৌধুরী বলেন, স্থানীয় দুটি পক্ষের হানাহানির কারণে নেতিবাচক প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় পক্ষগুলোই চায় না মেলা হোক। তাই তারা কি করতে পারেন বলে আক্ষেপ করেন তিনি।